সুশান্ত কুমার রায়

মনীষী পঞ্চানন বর্মা রংপুর ক্ষত্রিয় সমিতি
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার মাথাভাঙ্গা থানার খালিসামারী গ্রামে পহেলা ফাল্গুন ১২৭২ বঙ্গাব্দে মনীষী পঞ্চানন বর্মা জন্মগ্রহন করেন। মাতা চম্পলা দেবী ছিলেন অতি শুদ্ধাচারী ও শিব পূজারীনী এবং পিতা খোসাল চন্দ্র সরকার একজন ধার্মিক ও শিব ঠাকুরের একনিষ্ঠ সাধক। এই নিঃসন্তান দম্পতি পুত্র সন্তান কামনায় একাগ্রচিত্তে শিবের আরাধনা করতেন। তাঁদের প্রার্থনায় শিব সন্তুষ্ট হন এবং ঠাকুরের আশীর্বাদে বাবা-মায়ের কোল আলোকিত করে ফাল্গুন মাসের শিব চতুর্দশী তিথিতে মনীষী ঠাকুর পঞ্চানন বর্মা এ ধরাধামে আসেন। মাথাভাঙ্গা থানা শহরে অবস্থিত মাইনর স্কুল থেকে ১৮৮৫ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম বিভাগে মাইনর পাশ করেন। রাজশাহী বিভাগের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেন এবং তৎকালীন সময়ে মাসিক চার টাকা হারে বৃত্তি লাভ করেন। পরবর্তীতে ১৮৮৯ সালে ইনট্রান্স বা প্রবেশিকা পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন। কোচবিহারে অবস্থিত ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে এফ.এ. এবং বি.এ. পাশ করেন। সেই সময়ে তাঁর পিতৃ বিয়োগ ঘটে। তিনি ১৮৯৪ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম বিভাগে বি.এ. পাশ করার পর কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে সংস্কৃত সাহিত্যে এম.এ. এবং ১৮৯৮ খ্রিষ্টাব্দে এল.এল.বি. পাশ করেন। তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি কোচবিহার রাজ্যে ক্ষত্রিয়দের মধ্যে সর্ব প্রথম এম.এ. পাশ করেন বলে জানা যায়। শিক্ষা জীবন শেষ করে তিনি কোচবিহারে চলে আসেন। এম.এ. পাশ করার পর পঞ্চানন বর্মা কুচবিহার রাজ্যের রাজ সরকারের উচ্চ পদে চাকুরি করার জন্য ইচ্ছা পোষণ করেন এবং পত্রিকায় চাকুরি বিজ্ঞপ্তি দেখে নিয়োগের জন্য আবেদন করেন। তখন রাজ সরকারের কর্মচারীদের অধিকাংশই ছিল উচ্চবর্ণের হিন্দু ব্রাহ্মণ। উচ্চ বর্ণ হিন্দুরা উচ্চ শিক্ষিত ও অহংকারী ছিলেন। রাজবংশী ক্ষত্রিয়দেরকে তাঁরা কোচ বলে সম্বোধন করতেন। তাই পঞ্চানন বর্মার উপযুক্ত শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকা সত্বেও জন্মসূত্রে রাজবংশী এবং তথাকথিত আদি অধিবাসী কোচবিহারী যুবক হওয়ায় তাঁকে জেনকিনস্ স্কুলের শিক্ষক পদে নিয়োগ না দিয়ে বোর্ডিং সুপারিনটেনডেন্ট পদে নিয়োগ দেয়া হয়। এই অবস্থায় তিনি ১৯০১ খ্রিষ্টাব্দে রংপুরে এসে নিজেকে আইন পেশায় নিয়োজিত করেন। আইন পেশার পাশাপাশি তিনি বৃহত্তর রংপুরের আটটি জেলার রাজবংশী ক্ষত্রিয়দের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করে তাঁদেরকে একত্রিত করেন। রাজবংশী ক্ষত্রিয়দের দুঃখ-দুর্দশা ও জীবন-যাপন প্রণালী পর্যবেক্ষণ করে ক্ষত্রিয় সমাজের সার্বিক উন্নতির জন্য শুরু করেন ‘ক্ষত্রিয় আন্দোলন”। তিনি উত্তরবঙ্গের অবহেলিত, উপেক্ষিত, অশিক্ষিত, কুসংস্কারে নিমজ্জিত ও দারিদ্র্যক্লিষ্ট ক্ষত্রিয় সমাজের স্বকীয় সম্মান ও মর্যাদা পুনরুদ্ধারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হন। ক্ষত্রীয় সমাজ গঠন, নিজস্ব ভাষা-সংস্কৃতির সংরক্ষণ এবং বিকাশে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। ক্ষত্রিয় সমাজকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য এ প্রসঙ্গে বলতেন-“ হিন্দু-মুসলমান, বিচার নাইরে, মানুষ জন্ত নয়রে ভিন্, ঊলসি ধায়া আর্তের উদ্ধার, এই হলো ক্ষত্রিয়ের চিন্”। তিনি তাঁর সহপাঠী কুন্ডীসদ্য পুস্করিণীর জমিদার সুরেশচন্দ্র রায় চৌধুরী মহাশয়ের সহযোগিতায় ‘উত্তরবঙ্গ সাহিত্য পরিষদ’ নামে একটি সমিতি গঠন করেন। উভয়ের প্রচেষ্টায় সাহিত্য পরিষৎ একটি মাসিক পত্রিকা প্রকাশ করে। যেটির মাধ্যমে পঞ্চানন বর্মা রাজবংশী ক্ষত্রীয় সমাজের ভাষা, আচার-ব্যবহার, কৃষ্টি-কালচার, পূজা-পার্ব্বণ, প্রাচীন ইতিহাস-ঐতিহ্য সকলের মাঝে তুলে ধরেন। 

পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে তাঁর যশ ও কীর্তি সেই সময়ে সনাতন ধর্মাবলম্বী ক্ষত্রীয় সমাজকে সংস্কার মন্ত্রে দিক্ষীত করে তোলে। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ এর প্রাচীনতম শাখা হলো “রঙ্গপুর সাহিত্য পরিষৎ” শাখা। ১৩১১ বঙ্গাব্দে জমিদার সুরেশচন্দ্র রায় চৌধুরী “বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ”-এ পরিষৎ এর শ্রীবৃদ্ধি ও প্রসারকল্পে একটি প্রস্তাব পাঠান। ঠিক এই সময়ে পরিষৎ এর অন্যতম নেতৃত্ব দানকারী শ্রীযুক্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাশয় কর্মক্ষেত্রের পরিধি বিস্তারের জন্য এক নতুন প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। মূল সভার একাদশ সাংবাৎসরিক কার্যবিবরণীতে সে প্রস্তাবের মর্ম উদ্ধৃত হয়। রঙ্গপুরে শাখা সভা গঠন সম্পর্কে প্রথম আলোচনা বসে ১৩১১ বঙ্গাব্দের ১২ই চৈত্র ‘রঙ্গপুর পাবলিক লাইব্রেরী’তে।  সভাপতিত্ব করেন আইনজীবী রজনীকান্ত ভট্টাচার্য। অতঃপর ১৩১১ বঙ্গাব্দের ১১ই বৈশাখ সোমবার ‘রঙ্গপুর টাউন হল’ এ আটাশ জন সদস্য নিয়ে গঠিত হয় “রঙ্গপুর সাহিত্য পরিষৎ”। সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন কুন্ডীসদ্য পুস্করণীর জমিদার সুরেশচন্দ্র রায় চৌধুরী এবং সভাপতি পদ অলংকৃত করেন মহিমারঞ্জন রায় চৌধুরী। মনীষী পঞ্চানন বর্মা প্রথম থেকেই পত্রিকার সহিত যুক্ত ছিলেন এবং প্রথম বর্ষে সহকারী সম্পাদকের ভূমিকা পালন করেন। ‘রঙ্গপুর সাহিত্য পরিষৎ’ শাখা প্রত্নবস্তু ও দুঃষ্প্রাপ্য পুথি সংরক্ষণ ও সংগ্রহে বিশেষভাবে উদ্যোগী হয়। মনীষী পঞ্চানন বর্মা শুধু সাহিত্য সম্পাদনাতেই সম্পৃক্ত ছিলেন না উত্তরবঙ্গের লুপ্ত সাহিত্যকে পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করেন। সংগঠকের ভূমিকা হিসেবে পঞ্চাননের কার্যাবলী তাৎপর্যপূর্ণ। গৌরিপুর থেকে উত্তরবঙ্গের নানা স্থানে বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে তাঁর হৃদ্যতা গড়ে ওঠে যা ক্ষত্রিয় আন্দোলনকে বেগবান করে তোলে। ১৩১৫ বঙ্গাব্দের ২২ আষাঢ় (২৬ জুন, ১৯০৮) রঙ্গপুর টাউন হলে অনুষ্ঠিত কার্যবিবরণীতে পঞ্চানন বর্মা নিজে উত্তরবঙ্গের বেশ কয়েকজন কৃতি সন্তানের নাম প্রস্তাব করেন। তাঁদের মধ্যে গোবিন্দশঙ্কর সর্ব্বাধ্যক্ষ (সম্পাদক, জল্পেশ টেম্পল কমিটি), শ্যামাপ্রসন্ন রায় (পোষ্টমাস্টার, মাথাভাঙ্গা), কেদারনাথ মজুমদার, কুমার ভবেন্দ্র নারায়ণ (সিভিল সার্জন, কোচবিহার), কুমার গজেন্দ্র নারায়ণ (কোচবিহার) এবং তৎকালীন গোয়ালপাড়া থেকে সভ্য নির্বাচিত হন রাজা প্রভাত চন্দ্র বড়ুয়া, প্যারীমোহন দত্ত, রবীন্দ্রনাথ রায় চৌধুরী (জমিদার, লক্ষ্মীপুর), সতীশ চন্দ্র বড়ুয়া (আগমনী), দামোদর দত্ত চৌধুরী (হালসাং, গৌরীপুর)। ১৩১৭ বঙ্গাব্দের ১৮ বৈশাখ রংপুরে প্রথম ক্ষত্রিয় সম্মিলনী অনুষ্ঠিত হয়। তিনি সারা দেশের ক্ষত্রিয়দের ডাক দেন এবং সমগ্র ভারতবর্ষের শতশত প্রতিনিধি নিয়ে রংপুরে ক্ষত্রিয় সমিতি গঠন করেন। এই সভায় দিনাজপুর, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, দার্জিলিং, গোয়ালপাড়া ও আসাম হতে প্রায় চারশত জন ক্ষত্রিয় প্রতিনিধি সমবেত হন। সভায় সভাপতির আসন অলংকৃত করেন জলপাইগুড়ির উকিল মধূসুদন রায়। এই সভায় প্রথম ক্ষত্রিয় সমিতি গঠিত হয়। ক্ষত্রিয় সমিতির কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি এডহক কমিটি গঠন করেন। সভায় সমবেত প্রতিনিধিগণ এক বাক্যে পঞ্চানন বর্মাকে ক্ষত্রিয় সমিতির সম্পাদক নির্বাচিত করেন। সভায় কিছু সংখ্যক সদস্য নিয়ে কার্যকরী কমিটি গঠিত হয়। ক্ষত্রিয় সমিতির কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি এডহক কমিটি গঠন করেন। সেই সময়ে তিনি উপনয়ন সংস্কার, ক্ষত্রীয় সমিতি গঠন ছাড়াও বিভিন্ন ধর্মীয় সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়েন। ঠাকুর পঞ্চাননের রংপুরে পদার্পণের কিছুদিন পূর্বে শ্যামপুরের জমিদার স্বর্গীয় হরমোহন খাজাঞ্চীর সভাপতিত্বে রংপুর ব্রাত্য ক্ষত্রিয় সম্প্রদায়ের উন্নতি বিধায়িনী সভা নামে একটি সমিতি গঠিত হয়। ১৮৯১ খ্রিষ্টাব্দে রংপুরের জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট এর নির্দেশক্রমে যে আদমশুমারী অনুষ্ঠিত হয়, তাতে রাজবংশী সম্প্রদায়কে কোচ নামে অভিহিত করা হয়। সরকারের ওই নির্দেশের প্রতিবাদ করার জন্যই মূলতঃ সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। সমিতির ভাষ্য ছিল, কোচ এবং রাজবংশী দুটো পৃথক সম্প্রদায়। এই দাবির ফলে ম্যাজিষ্ট্রেট সাহেব স্থানীয় পন্ডিত সাহেবের মতামত জানতে চান।

ফলশ্রুতিতে রংপুর শহর তথা এই অঞ্চলের ব্রাহ্মণ সমাজের শিরোমণি মহামহোপাধ্যায় পন্ডিত স্বর্গীয় যাদবেশ্বর তর্করত্ন মহোদয় নানাশাস্ত্র পর্যালোচনা করে অভিমত ব্যক্ত করেন যে “ কোচ এবং রাজবংশী তাঁদের উভয়ের ধর্মীয় আচার, পূজা-পদ্ধতি, দেব-দেবী ও ভাষা সম্পূর্ণ পৃথক”।  তিনি আরও প্রমাণ করেন যে, রাজবংশী প্রাচীন আর্যজাতির বংশধর কিন্তু কোচরা অনার্য। আর্যদের মধ্য থেকে কিছু সংখ্যক ক্ষত্রিয় পূর্ব ভারতে যান এবং তাঁদের একটি অংশ করতোয়া নদীর উপকূলে পৌন্ড্র নামে রাজ্য গড়ে তোলেন এবং ওই রাজ্য তখন পৌন্ড্ররাজ্য নামে অভিহিত হয়। এই জন্য পৌন্ড্র ক্ষত্রিয় বলা হয়। কিন্তু কালক্রমে তাঁরা নানা কারণে তাঁদের ধর্মীয় বিধি আচার ও উপনয়ন সংস্করনাদি ভুলে যায়, তখন তাদেরকে ব্রাত্য ক্ষত্রিয় বলা হয়। যেহেতু ক্ষত্রিয়রাই পুরাকালে রাজা হতো, তাই তাঁরা ক্ষত্রিয়দের বংশধর “রাজবংশী” নাম গ্রহন করে। বাংলা ১৩১৭ বঙ্গাব্দের ১৮ বৈশাখ ক্ষত্রিয় (রাজবংশী) সমাজের সর্বাঙ্গীণ উন্নতি বিষয়ে আলোচনার জন্য রংপুর নাট্য মন্দিরে এক সভা আহুত হয়। এই সভায় দিনাজপুর, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, দার্জিলিং, গোয়ালপাড়া ও আসাম হতে প্রায় চারশত জন ক্ষত্রিয় প্রতিনিধি সমবেত হন। সভায় সভাপতির আসন অলংকৃত করেন জলপাইগুড়ির উকিল স্বর্গীয় মধূসুদন রায়। এই সভায় প্রথম ক্ষত্রিয় সমিতি গঠিত হয়। সভায় সমবেত প্রতিনিধিগণ এক বাক্যে পঞ্চানন বর্মাকে ক্ষত্রিয় সমিতির সম্পাদক নির্বাচিত করেন। সভায় কিছু সংখ্যক সদস্য নিয়ে কার্যকরী কমিটি গঠিত হয়। ক্ষত্রিয় সমিতি গঠিত হওয়ার পর ঠাকুর পঞ্চানন বর্মা ভারতের কলিকাতা, নবদ্বীপ, মিথিলা, কামরূপ ও বৃন্দাবন ভ্রমণ করেন এবং বিখ্যাত শাস্ত্রজ্ঞ পন্ডিত ব্যক্তিবর্গের সন্ধান করে শাস্ত্রাদি ইতিহাস বিশ্লেষণ করে ক্ষত্রিয়দের প্রকৃত পরিচয় বের করেন। সেই সময়ে পন্ডিত ব্যক্তিগণ রাজবংশীদের ক্ষত্রিয় হিসেবে স্বীকার করে নিল ঠিকই কিন্তু ব্রাত্য বলিয়া আখ্যা দিলেন। পন্ডিতগণের মতে ক্ষত্রিয় হয়ে যদি গলায় পৈতা না দেয় তাহলে তাঁর তিন পুরুষ গত হলে শাস্ত্রমতে তাঁকে ব্রাত্য বলে। তখন অশৌচ হয় এবং সমাজে পতিত বলে গণ্য হয়। তাঁদের গীতা, বেদ, পুরাণ, মহাভারত প্রভৃতি ধর্মীয় শাস্ত্র ও পূজা করা উচিত নয় মর্মে জানানো হয়। তখন পন্ডিতগণ প্রায়শ্চিত্ত করিয়া উপনয়ন গ্রহন করার পরামর্শ দেন। তদুপলক্ষ্যে ব্রাত্যত্ব মোচনের উদ্দেশ্যে পঞ্চানন বর্মা ২৭শে মাঘ, ১৩১৯ বঙ্গাব্দে উপমহাদেশের বিখ্যাত পন্ডিত ও ব্রাহ্মণগণকে নিমন্ত্রণ করে পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জে নিয়ে আসেন। সমগ্র ভারতের ব্রাত্য ক্ষত্রিয়গণকে উপনয়ন গ্রহন এবং যজ্ঞানুষ্ঠানের জন্য ডাক দেন। সেই দিন শতশত পন্ডিত, ব্রাহ্মণের সামনে হোমাগ্নি প্রজ্জ্বলন পূর্বক মাথা মুন্ডন করে করতোয়া নদীর পবিত্র জলে স্নান-আহ্নিক করে সাবিত্রী মন্ত্রে দিক্ষীত হন। এ অনুষ্ঠানে প্রায় দশ লক্ষ ব্রাত্য ক্ষত্রিয় পৈতা গ্রহন করেন এবং দ্বীজরূপে ক্ষত্রিয় হয়ে আত্মপ্রকাশ করেন। এই দিনে পঞ্চানন বর্মা নিজে এবং শিমুলবাড়ির জমিদার হরিকিশোর বর্মা ও চন্দ্রকিশোর বর্মা, ডিমলার কামিনী কুমার সিংহ উপনয়ন গ্রহন করেন। তাই ২৭ মাঘ দিনটি ক্ষত্রিয় সম্প্রদায়ের ইতিহাসে একটি ঐতিহাসিক দিন। পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জের করতোয়া নদীর তীর সংলগ্ন স্থানটি পূণ্যভূমি যা ক্ষত্রিয় সমিতর ডাঙ্গা হিসেবে পরিচিত। তবে উচ্চ বর্ণ হিন্দুদের পাশাপাশি বৃটিশ সরকারও রাজবংশী ক্ষত্রিয়দেরকে ব্রাত্য ক্ষত্রিয় ও কোচ হিসেবে চিহ্নিত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত ছিলেন। তারপরও পঞ্চানন বর্মা বৃটিশদের পক্ষে ফান্স, বেলজিয়াম ও মিশরে দশ হাজার ক্ষত্রিয় সৈন্য পাঠিয়ে দেন যুদ্ধে অংশগ্রহনের জন্য। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ হয়েছিল বৃটিশ ও জার্মানদের মধ্যে। সেই যুদ্ধে রাজবংশী ক্ষত্রিয়রা শৌর্য ও বীর্যের পরিচয় দেয়। ক্ষত্রিয়দের এই সাহস দেখে বৃটিশ গর্ভনর ক্ষত্রিয়দেরকে বন্ধু হিসেবে স্বীকৃতি দেন। ১৩২১ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানদের বিরুদ্ধে পঞ্চানন বর্মা সৈন্য সংগ্রহের কাজে যথেষ্ট পারদর্শীতা এবং ক্ষত্রিয় সৈন্যরা অতি দক্ষতার সহিত যুদ্ধ করায় বৃটিশ সরকার পঞ্চানন বর্মাকে ‘রায় সাহেব’ উপাধি প্রদান করেন। 

অতঃপর পঞ্চানন বর্মা বৃটিশ সরকারের পার্লামেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহনের সুযোগ পান এবং বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন। বৃটিশ সরকার তাঁকে Member of British Empire-এ ভূষিত করেন। তবে ওকালতীর এক পর্যায়ে দুটি ঘটনা তাঁকে ভীষণভাবে ব্যাথিত করে তোলে। প্রথম ঘটনাটি হলো, একদিন পঞ্চানন বর্মা জর্জ কোর্টে মামলা পরিচালনার জন্য তড়িঘড়ি করে কোর্টে হাজির হওয়ার সময় ভুলক্রমে এক মৈত্র মহাশয়ের টোগা বা টুপি পরিধান করেন। কোর্ট থেকে ফিরে টোগাটি মৈত্র মহাশয়কে ফেরৎ দিতে গেলে তিনি ঘৃণাভরে বলেন-“ I hate to use a Toga to by a Rajbanshi” বলে টোগাটি মাটিতে ফেলে দেন। আর দ্বিতীয় ঘটনাটি হলো, রংপুর জিলা স্কুলের হিন্দু ছাত্রাবাসে অবস্থিত দুই-তিন জন রাজবংশী ছাত্র নিষেধ করা সত্বেও ছাত্রাবাসের রন্ধনশালায় ঢুকে পাচককে রান্না হয়েছে কিনা এ কথা জিজ্ঞাসা করায় অস্পৃশ্য জাত বলে রাগান্বিত হয়ে রান্নার ব্যাঞ্জনাদি বাহিরে ফেলে দেয়। পঞ্চানন বর্মাকে এই কথা বললে তিনি ওকালতি থেকে অর্থোপাজনের লালসা ত্যাগ করে এই অধঃপতিত রাজবংশী সম্প্রদায়ের কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করেন। বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন (Bengale Tenancy Act) যে সংশোধিত হয় তার অন্যতম সদস্য ছিলেন এবং তাঁর পান্ডুলিপি প্রজাদের অনুকুলে গৃহিত হয়। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত রংপুর মিউনিসিপালিটির কমিশনার এবং জিলা বোর্ডের মেম্বার থেকে জিলার জনহিতকর কাজ করেছিলেন। ঠাকুর পঞ্চানন বর্মা নিজেকে সম্পূর্ণ বিলিয়ে দিয়েছিলেন মানুষের কল্যাণের জন্য। তিনি নিজের ও পরিবারের সুখ স্বাচ্ছন্দের কথা বিবেচনা না করে জাতির কল্যাণে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছিলেন। এক পর্যায়ে দুরারোগ্য ফাইলেরিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। সেই সময়ে এখনকার মতো উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা ছিলো না। সামান্য কিছু চিকিৎসা নিয়ে কিছুটা উপশম হয়ে পুনরায় তিনি নিজেকে সমাজসেবার কাজে ব্যস্ত রাখেন। ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দে জুলাই মাসে আইন সভার অধিবেশনে যোগদান করতে যখন কলকাতা যান তখন পুনরায় রোগে গুরুতর আক্রান্ত হয়ে পড়েন। স্বল্প চিকিৎসায় রোগের কোন উপশম না হওয়াতে তাঁকে কলকাতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তৎকালীন বৃটিশ সরকারের মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বাবু বিজয় সিংহ মহাশয়ের নির্দেশে হাসপাতালে তাঁর সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু তাঁর নিজের কোন সঞ্চিত অর্থ ছিলো না এবং তাঁর একমাত্র পুত্র পুষ্পজিৎ বর্মা তখন বেকার ছিলেন। একান্ত অনুগত সঙ্গী নগেন্দ্র নাথ রায় এবং বাবু প্রেমহরি বর্মা তাঁর চিকিৎসার প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করতেন। তবুও তিনি কারো কাছে সাহায্যের হাত বাড়াননি। আমাদের এই অধঃপতিত সমাজের লোকজন এতটাই অকৃতজ্ঞ যে, তাঁর এই দুর্দিনে কেহই এগিয়ে আসেননি। চিকিৎসা সাহায্য তো দূরের কথা, তাঁর জন্য কেউ দিলেন না সামান্য প্রতিদান। অবশেষে তিনি ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দের ৯ই সেপ্টেম্বর (২৩ শে ভাদ্র, ১৩৪২ বঙ্গাব্দ) কলকাতার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যকালে তিনি একমাত্র পুত্র পুষ্পজিৎ বর্মা এবং পত্নী বিষ্ণুমণি দেবীকে রেখে যান। যে ক্ষত্রিয় সমাজের লোকের জন্য এতো কিছু করলেন, তাঁরা তাঁর মরদেহটি কলকাতা থেকে কর্মস্থল রংপুরে আনার কোন ব্যবস্থা বা প্রয়োজন বোধ তখন কেউ করেন নাই। নিমতলা শ্মশানঘাটে তাঁর পুত্র, পত্নী এবং অনুগত দুই-একজন ভক্তসঙ্গীর উপস্থিতিতে তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়। ঠাকুর পঞ্চানন বর্মা ক্ষত্রিয় সম্প্রদায়ের শিক্ষা, আর্থিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য অনেক কার্যক্রম গ্রহন করেছিলেন । প্রথমে রংপুর শহরে রাজবংশীদের জন্য একটি ছাত্রাবাস নির্মাণের সংকল্প করেন। ছাত্রাবাস নির্মাণ কাজের জন্য বৃটিশ সরকারের কাছে জমি এবং অর্থের জন্য আবেদন করেন। অনেক আলোচনার পর বৃটিশ সরকার একখন্ড জমি এবং কিছু অর্থ বরাদ্দ করতে সম্মত হয়। তবে শর্ত ছিলো যে, প্রয়োজনীয় অর্থের এক তৃতীয়াংশ পঞ্চানন বর্মা যোগাড় করে জমা দিলে সরকার বাকি টাকা প্রদান করবেন। এই উদ্দেশে তিনি অনেক পরিশ্রম করে সমগ্র রংপুর জিলা ঘুরে তৎকালীন ক্ষত্রিয় সমাজের জমিদার ও অবস্থা সম্পন্ন লোকের কাছ থেকে টাকা যোগাড় করেন। 

রংপুর সেন্ট্রাল রোডে ছাত্রাবাসটি স্থাপিত হওয়ায় ছাত্রদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা হয়, যা পরবর্তীকালে এই অবহেলিত ক্ষত্রিয় সমাজের সন্তানদের শিক্ষা লাভের পথ উম্মোচিত হয়। তাঁর সারা জীবনের কষ্টার্জিত সম্পদ তিনি দান করে গেছেন, বর্তমানে যেটি বাংলাদেশ ক্ষত্রিয় সমিতির কেন্দ্রীয় কার্যালয়, সেন্ট্রাল রোড, রংপুর হিসেবে পরিচিত। আমাদের ক্ষত্রিয় সমাজের উন্নয়নের জন্য যে সকল কাজ করে গেছেন তা স্বল্প পরিসরে বর্ণনা করা সম্ভব নয়। পঞ্চানন বর্মা লর্ড লোথিয়ান কমিটি কর্তৃক রাজবংশী সম্প্রদায়কে তালিকাভূক্ত না করার কারণ সম্পর্কে এবং কেন আমরা তালিকাভূক্ত হবো না মর্মে সমিতির সভায় আলোচনা করেন। তারই ফলশ্র“তিতে লর্ড লোথিয়ান কমিটি দলিত শ্রেণির জন্য সুপারিশ করেন তাঁদের সরকারি সুযোগ, ভোটাধিকার প্রয়োগ এবং অন্যান্য বিষয় সংরক্ষণে। একটি অবহেলিত পশ্চাদপদ ক্ষত্রিয় সমাজকে সরকারি পর্যায়ে তপশিলীভূক্ত করার ব্যবস্থা করেন। পাকিস্তান আমলে সমিতির সাংগাঠনিক পদে যে সকল মহৎ ব্যক্তিগণ দ্বায়িত্ব পালন করেছিলেন তাঁদের মধ্যে সতীশ চন্দ্র বর্মন, ফুলকিশোর রায়, বসন্ত কুমার রায়, মহেশ চন্দ্র রায়, ভরত চন্দ্র অধিকারী, নিত্যানন্দ বর্মন, রাশীনাথ কার্জী, ভূপাল চন্দ্র অধিকারী, রণজিৎ কুমার রায়, খোকারাম বর্মন ছাড়াও বেশ কিছুু দ্বায়িত্বশীল লোক ছিলেন। কিন্তু পরিতাপের বিষয় যে, তিনি পরলোকগমনের পর সমিতির সকল কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। অতঃপর ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে দেশ বিভাগের পর যে রাষ্ট্রতন্ত্র গঠিত হয় এবং পূর্ব পাকিস্থানের আইন সভাগুলিতে তপশিলী ফেডারেশনের সদস্য প্রবেশের সুযোগ না পাওয়ায় নেতৃত্বের অভাবে দিনদিন সংগঠনটির প্রভাব এবং কার্যক্রম ক্ষীণ হয়ে পড়ে। পঞ্চানন বর্মার প্রয়াণের পর নগেন্দ্র নারায়ণ রায় সম্পাদকের দ্বায়িত্ব পালন করেন। নগেন্দ্র নারায়ণ রায় এর মতে, ক্ষত্রিয় সমিতি সংগঠনটি তৎকালীন সময়ে যে আদর্শে পঞ্চানন বর্মা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তাঁর প্রয়াণের পর সেটির তেমন একটা তৎপরতা পরবর্তীতে পরিলক্ষিত হয়নি। তাঁর একটা কারণ হিসেবে তিনি সমিতির আদর্শ, উদ্দেশ্য ও কর্মসূচীর সঠিক ধারাবাহিক তথ্য স্বল্পতাকে চিহ্নিত করেছেন। দ্বিতীয়ত সমিতির দ্বায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সাংগঠনিক তৎপরতার অভাবের কথা উল্লেখ করেন। দেশ বিভাগ, রাজনৈতিক স্থবিরতা এবং দেশ ত্যাগের ঘটনাও পিছিয়ে দেয় ক্ষত্রিয় সমিতির ধারাবাহিক কার্যক্রমকে। অতঃপর পরবর্তীতে ডোমার হতে বাবু গোরাচাঁদ অধিকারী, দিনাজপুর হতে বসন্ত কুমার রায়, রাজেন্দ্র নাথ রায়, কৈলাস চন্দ্র রায়, ঠাকুরগাঁও হতে বাবু গিরিশ চন্দ্র বর্মন, রশ্মিমোহন সিংহ, পঞ্চগড় হতে পুরঞ্জয় সরকার, দীনেশ চন্দ্র রায়, নীলফামারী হতে ব্রজগোপাল রায়, বিনোদ কুমার রায়, প্রফুল্ল কুমার রায়, ভোলানাথ রায়, রংপুর হতে ধীরেন্দ্র বর্মন, কালীপদ বর্মন, স্বপন কুমার বর্মন, সুধীর চন্দ্র রায়, ললিত চন্দ্র রায়, লালমণিরহাট থেকে মদন মোহন রায়, মহেন্দ্রনাথ বর্মন, শৈলেন রায়, অশ্বিনী কুমার বর্মন, গোপাল চন্দ্র রায়, গাইবান্ধা হতে রাজেন্দ্রনাথ বর্মন, দুর্লভ রায়, নির্বালেন্দু বর্মন, কুড়িগ্রাম থেকে সুধীর কুমার রায়, সুনীল চন্দ্র বর্মন প্রমুখের সহযোগিতায় ১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দ হতে ক্ষত্রিয় সমিতির কার্যক্রম পুনরায় শুরু হয়। এখানে উল্লেখ্য যে, ক্ষত্রিয় সমিতি রংপুর নামে যেটি ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে কার্যক্রম শুরু করে ১৯৯২ খিষ্টাব্দে সেটির বাংলাদেশ ক্ষত্রিয় সমিতি নামকরণ করা হয়। বৃহত্তর রংপুর- দিনাজপুর জেলার আটটি জেলা কমিটি নিয়ে ১৯৯১ খিষ্টাব্দে পেরোল বাড়ির সেই ঐতিহাসিক মাঠে মহাসম্মেলনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় কমিটি গঠিত হয়। ৫১ সদস্য বিশিষ্ট কার্যকরী কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে গোরাচাঁদ অধিকারী এবং সভাপতি হিসেবে বসন্ত কুমার রায় সভাপতির পদ অলংকৃত করেন। 

১৯৯২ থেকে ১৯৯৮ খিষ্টাব্দ পর্যন্ত গোরাচাঁদ অধিকারী এবং ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৮ খিষ্টাব্দ পর্যন্ত নৃপেন্দ্র নাথ রায় সম্পাদকের পদে অধিষ্ঠিত হন। ১৯৯১ খিষ্টাব্দে সমিতি পুনর্গঠনের কাজ শুরু হলে সমিতির সংবিধান রচনা, কেন্দ্রীয় কার্যালয় সংস্কার, পূর্বের অর্ধ-নির্মিত পার্থ সারথী মন্দিরের পূর্ণাঙ্গ রূপদান, ছাত্রাবাস সংস্কার ও বসবাস উপযোগী করা, বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ, অফিস কক্ষ মেরামত, আসবাবপত্র ক্রয়, পূজা ও সমিতির কার্যাবলীর আবশ্যিক দিবস পালন চালু হয়। সমিতি যে মুহুর্তে পূর্ণ সাংগঠনিক শক্তি নিয়ে পুরোদমে এগিয়ে যেতে থাকে সেই মুহুর্তে শুরু হয় নেতৃত্বের কোন্দল। বর্তমানে তত্ত্বাবধায়ক কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কালীন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। আশা করা যায় সকল সমস্যা, বিভেদ- বেড়াজাল ডিঙ্গিয়ে পুনরায় সমিতি পুনর্জাগরিত হবে। নেতৃত্ব নয় সার্বজনীন মঙ্গল কামনাই হোক বাংলাদেশ ক্ষত্রিয় সমতির একমাত্র উদ্দেশ্য। পঞ্চানন বর্মার দীক্ষায় দিক্ষীত হয়ে সমিতি তাঁর কার্যক্রম অব্যাহত রাখুক, সভা-সমিতি, পূজা-পার্ব্বণ, পঞ্চানন স্মরণ সভা পালনের মধ্য দিয়ে নব উদ্যোমে এগিয়ে চলুক বাংলাদেশ ক্ষত্রিয় সমিতি-আর এই প্রত্যাশা আমাদের একান্ত কাম্য।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* মন্তব্য করতে পেজটি রিফ্রেশ করুন .