সুশান্ত কুমার রায়

প্রিয় একজন ব্যক্তিত্ব ও আপনজন
আসানসোল মহুকুমা
চুরুলিয়া সবুজ গ্রাম,
পাড়ার ছোট্ট ছেলে
দুঃখু মিয়া তাঁর নাম।

গানের কবি- প্রাণের কবি
বিদ্রোহী কবি- জাতীয় কবি,
সাম্যের কবি- যৌবনের কবি
গায় প্রভাতে রাগ ভৈরবী।

মানবতা-তারুণ্য-সাম্য
নজরুলেরই কৃষ্টি,
অগ্নিবীণা-সঞ্চিতা-বিষের বাঁশি
তাঁরই অনন্য সৃষ্টি।

মাথায় বাবড়ি দোলানো
ঝাঁকড়া চুল,
বিদ্রোহী ও সাম্যের কবি
আমাদেরই নজরুল।

বাংলা সাহিত্যের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র বা দিকপাল আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। আমাদের স্বাধীনতা পূর্ব এবং স্বাধীনতা পরবর্তী নজরুল তাঁর জীবন ও কর্মে এদেশ প্রসঙ্গ অবিচ্ছেদ্য এবং অনিবার্য। বহুমাত্রিক প্রতিভায় উদ্ভাসিত কাজী নজরুল ইসলামকে বাংলা সাহিত্যের এক বিস্ময়কর প্রতিভা বলা যায় নিঃসন্দেহে। নানামুখী বর্ণিল বৈচিত্র্যময় রচনাসম্ভার নান্দনিক সংশ্রেষে অগ্নি-আলোর আভায় দীপ্যমান। কবি জন্মসূত্রে ভারতের নাগরিক হলেও সম্মাননা ও ভালোবাসার আলিঙ্গনে আমাদেরই কবি তথা জাতীয় কবির মর্যাদায় অভিসিক্ত। সেই ভালোবাসার পরশে ধন্য কবি এদেশের মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে আছেন। 

বাংলাদেশ নামক স্বাধীন সার্বভৌম দেশ রচনার ক্ষেত্রে একদিকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তেমনিভাবে নজরুলের গান ও কবিতা আমাদের মুক্তিসংগ্রামে উদ্দীপনা ও সাহস সঞ্চারিত করেছিল। এদেশের মানুষের সাথে তাঁর গভীর ও আত্মিক সম্পর্ক গ্রোথিত হওয়ায় নজরুল মানস গঠনে এদেশ বার বার প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে। 

নজরুলের চিন্তা-চেতনার এক উৎসভূমি হয়ে ওঠে আমাদের বাংলাদেশ। ফলে আমাদের জাতীয় চেতনা এবং স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বপ্ন সম্পর্কিত হয়েছে কার্যকর ভূমিকায়। বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় নজরুল স্মৃতিময় হয়ে আছে এবং থাকবে মহাকালের অসীময়তায়। এদেশের মানুষের ভালোবাসা ও আত্মীয়তার মেলবন্ধন এবং প্রাকৃতিক নৈসর্গিক দৃশ্যাবলী কবিকে দারুণভাবে আকৃষ্ট করে। কৈশোরে ময়মনসিংহ এবং পরবর্তীতে বরিশাল, কুমিল্লাসহ এদেশের নানা জায়গায় তাঁর পদচারণা স্মৃতিময়। কবি এদেশের প্রাকৃতিক নৈসর্গিক দৃশ্যাবলী ছায়াঢাকা, পাখিডাকা, সবুজ-শ্যামল নীলিমায় ভরা রূপসী বাংলাকে শৈল্পিক দৃষ্টি ও কবিসত্তা দিয়ে অবলোকন করেছেন, তুলে ধরেছেন কবিতা ও গানের মধ্য দিয়ে। 

কবির রচনায় বার বার এদেশের মা-মাটি ও মানুষের কথা, প্রকৃতির রূপ-সৌন্দর্য কবিতা ও গানে প্রেমময় রস ধারায় সঞ্চিত হয়েছে বৈচিত্র্যময় ব্যঞ্জনা আর সুরের স্বর্গীয় সুধায়। জানা যায় নজরুলকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম সংবর্ধনা জানানো হয় কুমিল্লার দৌলতপুরে। ময়মনসিংহে আগমনের মধ্য দিয়ে এদেশের সঙ্গে কবির পরিচয় ঘটে এবং ময়মনসিংহে তিনি দীর্ঘ সময় অবস্থান করেন। নজরুল এদেশকে দেখেছিলেন তাঁর গভীর বোধ ও সত্তা দিয়ে। তাই এদেশ ও নজরুল সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য ও অনিবার্য। তিনি ছিলেন জনমানবের কবি, সাম্যের কবি, তারুন্যের কবি, প্রাণের কবি, যৌবনের কবি, মানবতার কবি, বিদ্রোহী কবি এবং সর্বপরি আমাদের জাতীয় কবি। মানুষের প্রতি তাঁর মমত্ববোধ ও মর্যাদা এবং ধর্মের সংকীর্ণতার উর্ধে উঠে মানবতার কবিরূপে আত্মপ্রকাশ করেন-

‍সকল কালের সকল দেশের সকল মানুষ আসি
এক মোহনায় দাঁড়াইয়া শোন এক মিলনের বাঁশি।
একজন দিলে ব্যাথা
সমান হইয়া বাজে সে বেদনা সকলের বুকে হেথা
একের অসম্মান
নিখিল মানব জাতির লজ্জা- সকলের অপমান….।
(কাজী নজরুল ইসলাম)

নজরুল আমাদের জাতীয় জীবনের অতি প্রিয় একজন ব্যক্তিত্ব ও আপনজন। আমাদের জীবন সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ কাজী নজরুল ইসলাম।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* মন্তব্য করতে পেজটি রিফ্রেশ করুন .