একাদশতম গল্পবৈঠক

একাদশতম গল্পবৈঠক
গত ২৫শে মার্চ অমর কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বাসভবনে গল্পবৈঠকের একাদশতম বৈঠক আয়োজিত হয়। প্রধান অতিথির আসন অলংকৃত করেছিলেন বর্ষীয়সী সাহিত্যিক শ্রীমতী নবনীতা দেবসেন। অগ্রজা শ্রীমতী কণা বসুমিশ্র ও তৃষ্ণা বসাক ছিলেন বিশেষজ্ঞের ভুমিকায়। বইথকে কয়েকটি অনুগল্প পাঠ হয়। দুটি ছোট গল্প পাঠ করেছেন ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় ও মহুয়া মল্লিক। অনুগল্পে অংশ নেন বুবুন চট্টোপাধ্যায়, ভাস্বতী বন্দ্যোপাধ্যায়, জয়া চৌধুরী, শাশ্বতী সরকার, যশোধরা রায়চৌধুরী প্রমুখ দশ জন গল্পকার। এছাড়া একটি ছোট বিতরক সভার আয়োজন হয়, যার বিষয় ছিল ফেসবুকে সাহিত্য - পক্ষে ও বিপক্ষে। মত চারজন বক্তা ছিলেন যারা বিতরকে অংশ নিলেন। প্রথমে গল্পের কথায় আসা যাক। প্রতিটি গল্প মানোত্তীর্ন হল কিনা সে বিচার অভিজ্ঞ সাহিত্যিকরা করলেন। অবশ্যই সেসব আলোচনা গল্পকারদের ভবিষ্যতের পাথেয়। তবু বিশেষ উল্লেখের দাবী রাখে ভাস্বতী বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্পটি। মহুয়া মল্লিকের গল্প একটি সাম্প্রতিক মর্মান্তিক দুর্ঘটনাকে মনে করায়। ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়ের গল্পে অপরাজিতা দেবীর মেলটি বাউন্স না করে একটি উত্তর এলে খুব আনন্দ হত। রোজ কত কি ঘটে যাহা তাহা, এমন কেন সত্যি হয়না আহা। তমালী রায়ের গল্প বর্তমান সময়ের পরিবর্তিত সমাজ মানস। রজতশুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্পে শব্দ ও বাক্য নিয়ে নানা মজার খেলা। তাতে কখনও শ্লেষ কখনও ব্যাঙ্গ কখনও বা নিছক মজা। 

বিতর্কে ফেসবুক সাহিত্যের ক্ষতি করছে, এই সম্পর্কে বুবুন চট্টোপাধ্যায় পক্ষে বললেন। জানালেন প্রত্যন্ত এলাকায় পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়া যাচ্ছে লেখকের বার্তা। যশোধরা রায়চৌধুরী জানালেন সব লেখা লেখা হচ্ছেনা। সৈয়দ হাসমত জালাল বললেন একটি বিশেষ পদ্ধতির মাধ্যমে লেখা নির্বাচন হয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত হত। ফলে ভালো লেখা পরিবেশনের দ্বারা পাঠককে সমৃদ্ধ করা যেত। যা আর হয়না। কনিস্ক ভট্টাচার্য জানালেন, এর ফলে নতুন যেসব পাঠক তৈরি হচ্ছে, তাদের মান সম্পর্কেও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। সাহিত্যিকের তো একটা দায় থাকেই ভালো পাঠক তৈরির। 

প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা দিতে একেবারেই নারাজ ছিলেন নবনীতা দেবসেন। কিন্তু যখন বলতেই হল তখন একটি ছোটখাট বিস্ফোরণ ঘটালেন। বললেন, এভাবে তাৎক্ষণিক লেখা ফাঁকি রয়ে যায়। দেখনদারি রয়ে যায়। লেখা লিখে ফেলে রাখার মতো ভালো কিছু হয়না। নিজের লেখা নিজে অজস্রবার কাটাকুটি করা যায়। হয়ত ফেলেই দেওয়া যায়। লজ্জা সঙ্কোচের আগল ভেঙে এখন পরস্পরের পিঠ চাপড়ে দল তৈরি করে সৎ সাহিত্য সৃষ্টি হয়না। নিভৃতি প্রয়োজন। নিজের সঙ্গে নিজের কথা বলা প্রয়োজন। তবেই সাহিত্য কালের দরবারে নিজেকে পেশ করতে পারবে।

দৈনিক আজকাল পত্রিকা ও চব্বিশ ঘণ্টা নিউজ চ্যানেলে এই সভার ছবি ও প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। 


প্রতিবেদন - 
 অনিন্দিতা মন্ডল 
কলকাতা 


একাদশতম গল্পবৈঠক একাদশতম গল্পবৈঠক Reviewed by Pd on মার্চ ২৯, ২০১৭ Rating: 5

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সুচিন্তিত মতামত দিন

Blogger দ্বারা পরিচালিত.