রেল-কথা : রেলের কথা
ধারাবাহিক ‘কলম’এ গত চারটি পর্বে ১৯৪২ পরবর্তী আমার পচাত্তর বছরের পথচলায় সামাজিক সংস্পর্শ – আমাদের সমাজকাঠামোর নানান দিক বদল, নানান বাঁক আর উথাল পাথালকে ছুঁয়ে যেতে চেয়েছি । আগের চারটি পর্বে চল্লিশ থেকে সত্তর এই চারটি দশকের উথাল-পাথালের কিছু বৃত্তান্ত প্রস্তুত করেছিলাম । আপাতত সেখানেই থেমেছি । থেমেছি, কারণ যে বিশ্বাসের ভিত্তিভূমিকে বুকের মধ্যে আগলে রেখেছিলাম, তা কেমন যেন আলগা হয়ে গেলো আশির মধ্যভাগে এসে । কি করে যেন পৌঁছে গেলাম সমস্ত আবেগকে নিরাশ্রয় করা এক শূন্যতাবোধে । আস পরবর্তী সেই তিনটি দশকের কথাও লিখবো, তবে এখন নয়, সময় ও সুযোগ পেলে পরে এই কলমেই ।
৩৮টা বছর, অর্থাৎ এ পর্যন্ত আমার আয়ুকালের অর্ধেকের চেয়েও বেশি চাকুরি করেছি রেলে । তখন সবে একবছর আগে স্কুলফাইনাল পাশ করে কলেজে ভর্তি হয়েছি টুশানির সামান্য টাকার ভরসায় । সংসারের দায় নিতে হবে তো ! এদিক ওদিক দু একটা দরখাস্ত করছি । একদিন খবরের কাগজে রেলের পাতাজোড়া কর্মখালির বিজ্ঞাপন দেখলাম । শিয়ালদা স্টেশন থেকে দুটাকা দিয়ে রেল সার্ভিস কমিশনের ফর্ম কিনলাম । ভর্তি করে ফেলে দিলাম রেল সার্ভিস কমিশনের বাক্সে । তারপর লিখিত পরীক্ষা , তার ফলপ্রকাশ, ইন্টাভিউ, পুলিশ ভেরিফিকেশন ইত্যাদিতে কেটে গেলো চারটি বছর । অবশেষে একশো দশ টাকা মাসমাইনের কনিষ্ঠ কেরানীর চাকরিটা পেলাম আর কাটিয়ে দিলাম ৩৮টা বছর । সে সব কথা থাক, আমি বলি রেলের কথা – রেলকথা ।
“এ প্রাণ, রাতের রেলগাড়ি,
দিল পাড়ি--
কামরায় গাড়িভরা ঘুম,
রজনী নিঝুম”। ....
রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন ১৯৪০এর ২৮শে মার্চ নবজাতক কাব্যগ্রন্থের ‘রাতের গাড়ি’ কবিতায় । তখন এ দেশে রেলগাড়ির, মানে রেল চলাচল ব্যবস্থার বয়স সাতাশি বছর । রবীন্দ্রনাথের চেয়ে আট বছরের বড় । যাইহোক, এটা আমার লেখার বিষয় নয় । রেলের কথা বলতে গিয়ে তাঁকে ছুঁয়ে রাখলাম মাত্র । আসলে রেলগাড়িকে ঘিরে আমাদের যত কথা, যত আবেগ, যত অভিজ্ঞতালব্ধ স্মৃতি তা শেষ হবার নয় । আমাদের লোকগাথা, সিনেমা, সাহিত্য, গান, গান, কবিতা, ছড়া, ছবি, প্রবাদ, গল্প-গাথায় রেল কতবার কতভাবে এসেছে তার কোন লেখা-জোখা করাই সম্ভব নয় । কাশবন পেরিয়ে দূর থেকে ‘পথের পাচালী’র অপু-দুর্গার রেলগাড়ি দেখা তো মিথ হয়ে আছে । এখন অবশ্য সময়ের সঙ্গে বদল ঘটে গেছে অনেক । ‘রেল কাম ঝমাঝম / পা পিছলে আলুর দম’ বলে রেলকে নিয়ে এখন আর ছড়া কাটি না । এখন আর কালো ধোঁয়া ছাড়ে না রেলের ইঞ্জিন, প্রবাদ হয়ে যাওয়া ‘কু ঝিক ঝিক’ আওয়াজও বন্ধ হয়ে গেছে অনেক দিন । তবু, রেল আজও আমাদের যাপনের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে মিশে আছে সেই দিন থেকে, যেদিন প্রথম ভূমিতে পাতা লোহার রেল দিয়ে কাঠের বগিগুলো গড়িয়েছিল জর্জ স্টিভেনসনের আবিষ্কার করা বাষ্পীয় ইঞ্জিনের টানে । সেদিন থেকেই ‘মানুষ চলে কলের বলে’ ।
বাঙালির জনচেতনায় রেলগাড়ির আবির্ভাব কেমন ছাপ ফেলেছিল তার নানান কৌতুহল জাগানো গল্প-কথা পুরনো দিনের সংবাদপত্র ও সাহিত্যে খুঁজে পাওয়া যাবে । পনেরোই অগস্ট তারিখটা আমাদের ইতিহাসের এক স্মরণীয় দিন-স্বাধীনতা দিবস । আরো তিরানব্বই বছর আগের এক পনেরোই অগস্ট বাংলার সামাজিক ইতিহাসে অন্যরকমভাবে স্মরণীয় দিন হয়ে আছে । ঐ দিনই হাওড়া থেকে হুগলী পর্যন্ত পাতা ২৪ মাইল রেলপথে প্রথম রেলের গাড়ি গড়িয়েছিল ।
ইংরাজ মিল মালিকরা তাদের কলকারখানার জন্য সস্তায় কাঁচামাল সরবরাহ ব্যবস্থার স্বার্থে ভারতে রেলব্যস্থার প্রবর্তন করেছিল । এদেশে রেলব্যবস্থার সূচনালগ্নে মনিষী কার্ল মার্কস ১৮৫৩র ২২শে জুলাই ‘নিউইয়র্ক ট্রিবিউন’ লেখা এক প্রবন্ধে ভবিষ্যৎবাণী করে লিখেছিলেন “আমি জানি, ইংরেজ শিল্পপতিরা ভারতবর্ষকে রেলওয়ে ব্যবস্থার দ্বারা সমৃদ্ধ করতে চাইছে, নিজেদের উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় কার্পাশ তুলা ও অন্যান্য কাঁচামাল সস্তা দরে ও দেশ থেকে নিয়ে আসার একমাত্র উদ্দেশ্য...। এই রেলপথই হবে ভারতে সত্যকার আধুনিক শিল্পের অগ্রদূত”… । ভারতে রেল ব্যবস্থার সূচনালগ্নে করা কার্ল মার্কসের সেই পর্যবেক্ষণ যে কত অভ্রান্ত ছিল তা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না । আজ থেকে একশো তেষট্টি বছর আগে প্রবর্তিত সেই রেলব্যবস্থা এখন মানবদেহে রক্ত সঞ্চালনকারি ধমনির মত বিশাল ভারতের বিস্তীর্ণ শরীরে ছড়িয়ে পড়েছে, হয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম রেলব্যবস্থার একটি । এতো বড় দেশের সামগ্রিক দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ বরাবর রেলওয়ে ব্যবস্থা প্রসারিত । এখন ভারতের রেলপথের মোট দৈর্ঘ্য ১,০৮৭০৬ কিলোমিটার (ট্রাক কিলোমিটার) । রেলওয়ে স্টেশনের সংখ্যা ৭১১২টি । প্রতিদিন ২ কোটি ৩০ লক্ষে যাত্রী এবং ২০ লক্ষ টনেরও বেশি পণ্য ভারতীয় রেলপথে চলাচল করে। ভারতীয় রেল বিশ্বের বৃহত্তম বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানও বটে এবং সেইসঙ্গে সরকারী পরিষেবাকর্মীর নিয়োগকর্তা । ভারতে রেলওয়ে কর্মচারীর সংখ্যা ১৪ লক্ষ । এগুলি নিরেট তথ্য মাত্র ।
ঔপনিবেশিক ইংরেজরা তাদের কারখানায় সস্তায় কাঁচামাল সরবরাহের তাগিদে রেললাইন পাতার কথা ভেবেছিল । ১৮১৪তে জর্জ স্টিভেনসন নামে এক ইংরেজ বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিস্কার করেন । এরপর ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রেললাইন পাতা ও রেল চলাচল শুরু হয়ে যায় । ইংরেজরা ১৮৩২ সালে প্রথম ভারতে রেল ব্যবস্থা প্রবর্তনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল । কিন্তু পরের এক দশকে এই ব্যাপারে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ১৮৪৪ সালে গভর্নর-জেনারেল বেসরকারি সংস্থাগুলিকে ভারতে রেলপথ স্থাপন করার অনুমতি দেয়, আর ১৮৪৪এর মে মাসেই ইংল্যান্ডে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ইস্ট ইন্ডিয়ান রেলওয়ে কোম্পানি’, যার গঠনে প্রধান উদ্যোগী ছিলেন বাষ্পীয় ইঙ্গিনের আবিস্কারক জর্জ স্টিভেনসনের ভাইপো স্যার রোনাল্ড ম্যাকডোনাল্ড স্টিভেনসন । ঐ সময়েই আর একটি কোম্পানি গঠিত হয়েছিল ‘গ্রেট ইন্ডিয়ান পেনিনসুলার রেলওয়ে’ নামে । রোনাল্ড ম্যাকডোনান্ড স্টিভেনসনই ছিলেন নবগঠিত ‘ইস্ট ইন্ডিয়ান রেলওয়ে’ কোম্পানির ভারতের ম্যানেজিং ডিরেকটর । তাদের অফিস ছিল কলকাতার ২৯ নম্বর থিয়েটার রোডে । এরাই ১৮৫৪র ১৫ই অগস্ট হাওড়া থেকে হুগলী পর্যন্ত ২৪ মাইল পথে রেলগাড়ি চালিয়েছিল । এ দেশে অবশ্য প্রথম রেল চালিয়েছিল গ্রেট ইন্ডিয়ান পেনিনসুলার রেলওয়ে কোম্পানি ১৮৫৩ সনের ১৬ই এপ্রিল মুম্বাইএর বোরি বন্দর থেকে থানে পর্যন্ত ৩৪মাইল পথে । প্রথম রেল চালানোর গৌরব অবশ্য বাংলাও পেতে পারতো । কিন্তু পায়নি তিনটি কারণে । ‘গুডউইল’ নামক যে জাহাজে করে লন্ডন থেকে রেলের বগিগুলি আসছিল, সেই জাহাজটি গঙ্গাসাগরে কাছে এসে ডুবে যায় । ফলে আবার নতুন করে বগিগুলি বানাতে হয় । আর যে জাহাজে করে রেলের ইঞ্জিন আসছিল সেটি ভুলক্রমে চলে যায় অস্ট্রেলিয়ায় । সেখান থেকে ইঞ্জিন ফেরত আনতে চলে যায় আরো কিছু সময় । তৃতীয় কারণ – হাওড়া-পান্ডুয়া রেলপথে চন্দন নগর ছিল ফরাসীদের অঞ্চল । তাদের অঞ্চলের ভেতর দিয়ে রেল চালানোর অনুমতি পেতেও কিছুটা সময় লাগে । ততদিনে গ্রেট ‘ইন্ডিয়ান পেনিনসুলার রেলওয়ে’ কোম্পানি মুম্বাই থেকে থানে রেল চালিয়ে দিয়েছে । দক্ষিণ ভারতে প্রথম রেল চলে আরো দু বছর পরে ১৮৫৬ সনের ১লা জুলাই ব্যাসামপদি থেকে আর্কট পর্যন্ত পথে । বলে রাখি, রেলের ইতিহাস-ভুগোল লেখা আমার উদ্দেশ্য নয়, স্বল্প পরিসরে তা সম্ভবও নয় । আমি এদেশে রেলগাড়ির আবির্ভাবের সূচনালগ্নটিকে ছুঁতে চেয়েছি মাত্র । আমি বরং সেদিনের বাঙালির জনজীবন রেলগাড়ির আবির্ভাবকে কিভাবে দেখেছিল সেই কথা বলি ইতিহাসের তথ্য ঘেঁটে ।
১৮৫৪, মানে কলকাতা তখন অন্ধকারেই । কয়েকটা মাত্র খোয়া বাঁধানো চওড়া রাস্তা । যাত্রি পরিবহন বলতে পালকি ও গোরুর গাড়ি, আর সাহেব ও অভিজাতদের জন্য ঘোড়ার গাড়ি ও নদীপথে নৌকা ও বাজরা । তখনও কলকাতা থেকে গঙ্গা পেরিয়ে ওপারে যাবার জন্য কোন ব্রীজ হয়নি, ঘোড়ায় টানা ট্রামও চালু হয়নি, আসেনি বিদ্যুতের আলো । এই প্রায় অন্ধকার বাংলায় রেল এলো । আর্মেনিয়ান ঘাটে রেলের টিকিটঘর করা হয়েছিল । সেখানে টিকিট কেটে নৌকা বা স্টিমারে ওপারে গিয়ে ট্রেন ধরতে হত । স্টিমারের ভাড়া রেলের টিকিটের সঙ্গে জোড়া থাকতো । ১৪ই অগস্ট ১৮৫৪ তারিখে ‘ইন্ডিয়া গেজেট’ ও বেঙ্গল হরকরা’ সংবাদপত্রে রেলওয়ে কোম্পানীর বিজ্ঞাপনে ‘১৫ই অগস্ট থেকে হাওড়া হুগলীর মধ্যে রেলগাড়ি চলবে, ট্রেন থামবে বালী, শ্রীরামপুর ও চন্দন নগর স্টেশনে এবং ১লা জানুয়ারি থেকে তা হাওড়া ও পান্ডুয়া পর্যন্ত চলবে এবং সব স্টেশনে থামবে’ সে কথা জানানো হয় । বিজ্ঞাপনে আরো বলা হয়, ১লা জানুয়ারি থেকে সস্তায় মাসিক টিকিট পাওয়া যাবে ।
তো, রেলগাড়ি চললো । হাওড়া থেকে হুগলী পৌছাতে সময় লেগেছিল ৯১ মিনিট, টিকিটের দাম ছিল প্রথম শ্রেণী ৩টাকা, দ্বিতীয় শ্রেণী ১টাকা দু আনা আর তৃতয় শ্রেণী ৭ আনা (মানে এখনকার হিসাবে ৪২ পয়সা ) । গোড়ার দিকে সেদিনের মানুষ ভয়-ভীতি আর ভক্তির চোখে দেখেছিল রেলগাড়ি নামক সেই যন্ত্রদানবের আবির্ভাবকে । অভিবাদনও জানিয়েছিল অবশ্যই । সেই সময়কার সংবাদপত্র প্রতিবেদন থেকে জানা যায় প্রথম দিনের রেলগাড়ি চাপার জন্য দরখাস্ত করেছিলেন তিনহাজার নানুষ যদিও স্থান সঙ্কুলান ছিল শ’তিনেক মাত্র । ভয়-ভীতির গল্পও কম নয় ! তারা বলতো ‘অগ্নিরথ’ । অগ্নিরথকে পূজো করার দেবতা বলেও ভেবেছিল । কেউ কেউ নাকি মনে করেছিল যে, এই অগ্নিরথের গতি ছয় দিনের পথ ছয় ঘন্টায় পেরোচ্ছে, তাহলে সেই হিসাবে মানুষের আয়ুও কমে যাবে । যার ছেষট্টি বছর বাঁচার কথা তার আয়ু সংক্ষিপ্ত হয়ে ছত্রিশ বছরের শেষ হয়ে যাবে । ব্রাহ্মণরা দরখাস্ত করেছিলেন তাদের জন্য পৃথক কামরার ব্যবস্থা করতে । শূদ্রদের সঙ্গে এক গাড়িতে গেলে ছোঁয়াছুঁয়িতে তাদের জাত যাবে যে ! রেল অবশ্য সেই আবেদন নাকচ করে দিয়েছিল ।
তারপর এই একশ’তেষট্টি বছরে অনেক, অনেক পথ পেরিয়েছে রেল । সেই সব বৃত্তান্ত বলার সুযোগ নেই এখানে । ১৯০১এ রেলওয়ে বোর্ড গঠিত হল,১৯২৫এর ১লা জানুয়ারি বড় রেল কোম্পানিগুলিকে সরকার কিনে নিল আর তাদের পরিচালনভার সরকার নিয়ে নিল । তারপর স্বাধীনতার কয়েক বছরের মধ্যে বাকি সব ছোট ছোট বেসরকারী রেল কোম্পানীগুলিও সরকারী পরিচালন আওতায় চলে এলো । স্বাধীনতার পরে, ১৯৫২ তে সুবিশাল রেলওয়ে পরিচালন ব্যবস্থাকে পুনর্গঠিত করা হল কয়েকটি অঞ্চল বা জোন’এ এবং প্রতিটি জোনকে কয়েকটি বিভাগ বা ডিভিশন’এ ভাগ করে । রেল ব্যবস্থার প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে রেওয়ে অঞ্চলের সংখ্যাও বেড়েছে । এখন সারা দেশে রয়েছে সতেরোটি রেলওয়ে অঞ্চল যাদের অধীনে রয়েছে উনসত্তরটি ডিভিশন ।
রেলের কথা মহাভারতের মত, শেষ হয় না। সেই কবে আজ থেকে একশ’তেষট্টি বছর আগে চোদ্দটি বগিতে চারশ’ জন যাত্রি নিয়ে মুম্বাইএর বোরি বন্দর থেকে ৩৪মাইল পথে যে রেলের গাড়ি গড়িয়েছিল তা এখন এই বিশাল দেশের দৈর্ঘ্য-প্রস্থের জনজীবনে রক্ত সঞ্চালনকারি ধমনির মত । এক লক্ষ ট্রাক কিলোমিটারে প্রতিদিন সে এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তে পরিবহন করছে দু কোটি ত্রিশ লক্ষ যাত্রি ও দু লক্ষ টনেরও বেশি পণ্যসামগ্রী আর যে কাজে যুক্ত রয়েছে চোদ্দ লক্ষের বেশি রেল কর্মচারী । বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম রেল ব্যবস্থা । আর ঐতিহ্যের দিক দিয়ে রেলব্যবস্থা যে দেশের বৃহত্তম ও প্রাচীনতম ঐতিহ্য,তা ভুলবে কে ? এই ব্যবস্থার সঙ্গে জুড়ে ছিলাম আমার আয়ুকালের অর্ধেকেরও বেশি সময় । অবসর নিয়েছি পনেরো বছর হল, কিন্তু সেও তো জুড়ে থাকাই ।
৩৮টা বছর, অর্থাৎ এ পর্যন্ত আমার আয়ুকালের অর্ধেকের চেয়েও বেশি চাকুরি করেছি রেলে । তখন সবে একবছর আগে স্কুলফাইনাল পাশ করে কলেজে ভর্তি হয়েছি টুশানির সামান্য টাকার ভরসায় । সংসারের দায় নিতে হবে তো ! এদিক ওদিক দু একটা দরখাস্ত করছি । একদিন খবরের কাগজে রেলের পাতাজোড়া কর্মখালির বিজ্ঞাপন দেখলাম । শিয়ালদা স্টেশন থেকে দুটাকা দিয়ে রেল সার্ভিস কমিশনের ফর্ম কিনলাম । ভর্তি করে ফেলে দিলাম রেল সার্ভিস কমিশনের বাক্সে । তারপর লিখিত পরীক্ষা , তার ফলপ্রকাশ, ইন্টাভিউ, পুলিশ ভেরিফিকেশন ইত্যাদিতে কেটে গেলো চারটি বছর । অবশেষে একশো দশ টাকা মাসমাইনের কনিষ্ঠ কেরানীর চাকরিটা পেলাম আর কাটিয়ে দিলাম ৩৮টা বছর । সে সব কথা থাক, আমি বলি রেলের কথা – রেলকথা ।
“এ প্রাণ, রাতের রেলগাড়ি,
দিল পাড়ি--
কামরায় গাড়িভরা ঘুম,
রজনী নিঝুম”। ....
রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন ১৯৪০এর ২৮শে মার্চ নবজাতক কাব্যগ্রন্থের ‘রাতের গাড়ি’ কবিতায় । তখন এ দেশে রেলগাড়ির, মানে রেল চলাচল ব্যবস্থার বয়স সাতাশি বছর । রবীন্দ্রনাথের চেয়ে আট বছরের বড় । যাইহোক, এটা আমার লেখার বিষয় নয় । রেলের কথা বলতে গিয়ে তাঁকে ছুঁয়ে রাখলাম মাত্র । আসলে রেলগাড়িকে ঘিরে আমাদের যত কথা, যত আবেগ, যত অভিজ্ঞতালব্ধ স্মৃতি তা শেষ হবার নয় । আমাদের লোকগাথা, সিনেমা, সাহিত্য, গান, গান, কবিতা, ছড়া, ছবি, প্রবাদ, গল্প-গাথায় রেল কতবার কতভাবে এসেছে তার কোন লেখা-জোখা করাই সম্ভব নয় । কাশবন পেরিয়ে দূর থেকে ‘পথের পাচালী’র অপু-দুর্গার রেলগাড়ি দেখা তো মিথ হয়ে আছে । এখন অবশ্য সময়ের সঙ্গে বদল ঘটে গেছে অনেক । ‘রেল কাম ঝমাঝম / পা পিছলে আলুর দম’ বলে রেলকে নিয়ে এখন আর ছড়া কাটি না । এখন আর কালো ধোঁয়া ছাড়ে না রেলের ইঞ্জিন, প্রবাদ হয়ে যাওয়া ‘কু ঝিক ঝিক’ আওয়াজও বন্ধ হয়ে গেছে অনেক দিন । তবু, রেল আজও আমাদের যাপনের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে মিশে আছে সেই দিন থেকে, যেদিন প্রথম ভূমিতে পাতা লোহার রেল দিয়ে কাঠের বগিগুলো গড়িয়েছিল জর্জ স্টিভেনসনের আবিষ্কার করা বাষ্পীয় ইঞ্জিনের টানে । সেদিন থেকেই ‘মানুষ চলে কলের বলে’ ।
বাঙালির জনচেতনায় রেলগাড়ির আবির্ভাব কেমন ছাপ ফেলেছিল তার নানান কৌতুহল জাগানো গল্প-কথা পুরনো দিনের সংবাদপত্র ও সাহিত্যে খুঁজে পাওয়া যাবে । পনেরোই অগস্ট তারিখটা আমাদের ইতিহাসের এক স্মরণীয় দিন-স্বাধীনতা দিবস । আরো তিরানব্বই বছর আগের এক পনেরোই অগস্ট বাংলার সামাজিক ইতিহাসে অন্যরকমভাবে স্মরণীয় দিন হয়ে আছে । ঐ দিনই হাওড়া থেকে হুগলী পর্যন্ত পাতা ২৪ মাইল রেলপথে প্রথম রেলের গাড়ি গড়িয়েছিল ।
ইংরাজ মিল মালিকরা তাদের কলকারখানার জন্য সস্তায় কাঁচামাল সরবরাহ ব্যবস্থার স্বার্থে ভারতে রেলব্যস্থার প্রবর্তন করেছিল । এদেশে রেলব্যবস্থার সূচনালগ্নে মনিষী কার্ল মার্কস ১৮৫৩র ২২শে জুলাই ‘নিউইয়র্ক ট্রিবিউন’ লেখা এক প্রবন্ধে ভবিষ্যৎবাণী করে লিখেছিলেন “আমি জানি, ইংরেজ শিল্পপতিরা ভারতবর্ষকে রেলওয়ে ব্যবস্থার দ্বারা সমৃদ্ধ করতে চাইছে, নিজেদের উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় কার্পাশ তুলা ও অন্যান্য কাঁচামাল সস্তা দরে ও দেশ থেকে নিয়ে আসার একমাত্র উদ্দেশ্য...। এই রেলপথই হবে ভারতে সত্যকার আধুনিক শিল্পের অগ্রদূত”… । ভারতে রেল ব্যবস্থার সূচনালগ্নে করা কার্ল মার্কসের সেই পর্যবেক্ষণ যে কত অভ্রান্ত ছিল তা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না । আজ থেকে একশো তেষট্টি বছর আগে প্রবর্তিত সেই রেলব্যবস্থা এখন মানবদেহে রক্ত সঞ্চালনকারি ধমনির মত বিশাল ভারতের বিস্তীর্ণ শরীরে ছড়িয়ে পড়েছে, হয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম রেলব্যবস্থার একটি । এতো বড় দেশের সামগ্রিক দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ বরাবর রেলওয়ে ব্যবস্থা প্রসারিত । এখন ভারতের রেলপথের মোট দৈর্ঘ্য ১,০৮৭০৬ কিলোমিটার (ট্রাক কিলোমিটার) । রেলওয়ে স্টেশনের সংখ্যা ৭১১২টি । প্রতিদিন ২ কোটি ৩০ লক্ষে যাত্রী এবং ২০ লক্ষ টনেরও বেশি পণ্য ভারতীয় রেলপথে চলাচল করে। ভারতীয় রেল বিশ্বের বৃহত্তম বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানও বটে এবং সেইসঙ্গে সরকারী পরিষেবাকর্মীর নিয়োগকর্তা । ভারতে রেলওয়ে কর্মচারীর সংখ্যা ১৪ লক্ষ । এগুলি নিরেট তথ্য মাত্র ।
ঔপনিবেশিক ইংরেজরা তাদের কারখানায় সস্তায় কাঁচামাল সরবরাহের তাগিদে রেললাইন পাতার কথা ভেবেছিল । ১৮১৪তে জর্জ স্টিভেনসন নামে এক ইংরেজ বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিস্কার করেন । এরপর ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রেললাইন পাতা ও রেল চলাচল শুরু হয়ে যায় । ইংরেজরা ১৮৩২ সালে প্রথম ভারতে রেল ব্যবস্থা প্রবর্তনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল । কিন্তু পরের এক দশকে এই ব্যাপারে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ১৮৪৪ সালে গভর্নর-জেনারেল বেসরকারি সংস্থাগুলিকে ভারতে রেলপথ স্থাপন করার অনুমতি দেয়, আর ১৮৪৪এর মে মাসেই ইংল্যান্ডে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ইস্ট ইন্ডিয়ান রেলওয়ে কোম্পানি’, যার গঠনে প্রধান উদ্যোগী ছিলেন বাষ্পীয় ইঙ্গিনের আবিস্কারক জর্জ স্টিভেনসনের ভাইপো স্যার রোনাল্ড ম্যাকডোনাল্ড স্টিভেনসন । ঐ সময়েই আর একটি কোম্পানি গঠিত হয়েছিল ‘গ্রেট ইন্ডিয়ান পেনিনসুলার রেলওয়ে’ নামে । রোনাল্ড ম্যাকডোনান্ড স্টিভেনসনই ছিলেন নবগঠিত ‘ইস্ট ইন্ডিয়ান রেলওয়ে’ কোম্পানির ভারতের ম্যানেজিং ডিরেকটর । তাদের অফিস ছিল কলকাতার ২৯ নম্বর থিয়েটার রোডে । এরাই ১৮৫৪র ১৫ই অগস্ট হাওড়া থেকে হুগলী পর্যন্ত ২৪ মাইল পথে রেলগাড়ি চালিয়েছিল । এ দেশে অবশ্য প্রথম রেল চালিয়েছিল গ্রেট ইন্ডিয়ান পেনিনসুলার রেলওয়ে কোম্পানি ১৮৫৩ সনের ১৬ই এপ্রিল মুম্বাইএর বোরি বন্দর থেকে থানে পর্যন্ত ৩৪মাইল পথে । প্রথম রেল চালানোর গৌরব অবশ্য বাংলাও পেতে পারতো । কিন্তু পায়নি তিনটি কারণে । ‘গুডউইল’ নামক যে জাহাজে করে লন্ডন থেকে রেলের বগিগুলি আসছিল, সেই জাহাজটি গঙ্গাসাগরে কাছে এসে ডুবে যায় । ফলে আবার নতুন করে বগিগুলি বানাতে হয় । আর যে জাহাজে করে রেলের ইঞ্জিন আসছিল সেটি ভুলক্রমে চলে যায় অস্ট্রেলিয়ায় । সেখান থেকে ইঞ্জিন ফেরত আনতে চলে যায় আরো কিছু সময় । তৃতীয় কারণ – হাওড়া-পান্ডুয়া রেলপথে চন্দন নগর ছিল ফরাসীদের অঞ্চল । তাদের অঞ্চলের ভেতর দিয়ে রেল চালানোর অনুমতি পেতেও কিছুটা সময় লাগে । ততদিনে গ্রেট ‘ইন্ডিয়ান পেনিনসুলার রেলওয়ে’ কোম্পানি মুম্বাই থেকে থানে রেল চালিয়ে দিয়েছে । দক্ষিণ ভারতে প্রথম রেল চলে আরো দু বছর পরে ১৮৫৬ সনের ১লা জুলাই ব্যাসামপদি থেকে আর্কট পর্যন্ত পথে । বলে রাখি, রেলের ইতিহাস-ভুগোল লেখা আমার উদ্দেশ্য নয়, স্বল্প পরিসরে তা সম্ভবও নয় । আমি এদেশে রেলগাড়ির আবির্ভাবের সূচনালগ্নটিকে ছুঁতে চেয়েছি মাত্র । আমি বরং সেদিনের বাঙালির জনজীবন রেলগাড়ির আবির্ভাবকে কিভাবে দেখেছিল সেই কথা বলি ইতিহাসের তথ্য ঘেঁটে ।
১৮৫৪, মানে কলকাতা তখন অন্ধকারেই । কয়েকটা মাত্র খোয়া বাঁধানো চওড়া রাস্তা । যাত্রি পরিবহন বলতে পালকি ও গোরুর গাড়ি, আর সাহেব ও অভিজাতদের জন্য ঘোড়ার গাড়ি ও নদীপথে নৌকা ও বাজরা । তখনও কলকাতা থেকে গঙ্গা পেরিয়ে ওপারে যাবার জন্য কোন ব্রীজ হয়নি, ঘোড়ায় টানা ট্রামও চালু হয়নি, আসেনি বিদ্যুতের আলো । এই প্রায় অন্ধকার বাংলায় রেল এলো । আর্মেনিয়ান ঘাটে রেলের টিকিটঘর করা হয়েছিল । সেখানে টিকিট কেটে নৌকা বা স্টিমারে ওপারে গিয়ে ট্রেন ধরতে হত । স্টিমারের ভাড়া রেলের টিকিটের সঙ্গে জোড়া থাকতো । ১৪ই অগস্ট ১৮৫৪ তারিখে ‘ইন্ডিয়া গেজেট’ ও বেঙ্গল হরকরা’ সংবাদপত্রে রেলওয়ে কোম্পানীর বিজ্ঞাপনে ‘১৫ই অগস্ট থেকে হাওড়া হুগলীর মধ্যে রেলগাড়ি চলবে, ট্রেন থামবে বালী, শ্রীরামপুর ও চন্দন নগর স্টেশনে এবং ১লা জানুয়ারি থেকে তা হাওড়া ও পান্ডুয়া পর্যন্ত চলবে এবং সব স্টেশনে থামবে’ সে কথা জানানো হয় । বিজ্ঞাপনে আরো বলা হয়, ১লা জানুয়ারি থেকে সস্তায় মাসিক টিকিট পাওয়া যাবে ।
তো, রেলগাড়ি চললো । হাওড়া থেকে হুগলী পৌছাতে সময় লেগেছিল ৯১ মিনিট, টিকিটের দাম ছিল প্রথম শ্রেণী ৩টাকা, দ্বিতীয় শ্রেণী ১টাকা দু আনা আর তৃতয় শ্রেণী ৭ আনা (মানে এখনকার হিসাবে ৪২ পয়সা ) । গোড়ার দিকে সেদিনের মানুষ ভয়-ভীতি আর ভক্তির চোখে দেখেছিল রেলগাড়ি নামক সেই যন্ত্রদানবের আবির্ভাবকে । অভিবাদনও জানিয়েছিল অবশ্যই । সেই সময়কার সংবাদপত্র প্রতিবেদন থেকে জানা যায় প্রথম দিনের রেলগাড়ি চাপার জন্য দরখাস্ত করেছিলেন তিনহাজার নানুষ যদিও স্থান সঙ্কুলান ছিল শ’তিনেক মাত্র । ভয়-ভীতির গল্পও কম নয় ! তারা বলতো ‘অগ্নিরথ’ । অগ্নিরথকে পূজো করার দেবতা বলেও ভেবেছিল । কেউ কেউ নাকি মনে করেছিল যে, এই অগ্নিরথের গতি ছয় দিনের পথ ছয় ঘন্টায় পেরোচ্ছে, তাহলে সেই হিসাবে মানুষের আয়ুও কমে যাবে । যার ছেষট্টি বছর বাঁচার কথা তার আয়ু সংক্ষিপ্ত হয়ে ছত্রিশ বছরের শেষ হয়ে যাবে । ব্রাহ্মণরা দরখাস্ত করেছিলেন তাদের জন্য পৃথক কামরার ব্যবস্থা করতে । শূদ্রদের সঙ্গে এক গাড়িতে গেলে ছোঁয়াছুঁয়িতে তাদের জাত যাবে যে ! রেল অবশ্য সেই আবেদন নাকচ করে দিয়েছিল ।
তারপর এই একশ’তেষট্টি বছরে অনেক, অনেক পথ পেরিয়েছে রেল । সেই সব বৃত্তান্ত বলার সুযোগ নেই এখানে । ১৯০১এ রেলওয়ে বোর্ড গঠিত হল,১৯২৫এর ১লা জানুয়ারি বড় রেল কোম্পানিগুলিকে সরকার কিনে নিল আর তাদের পরিচালনভার সরকার নিয়ে নিল । তারপর স্বাধীনতার কয়েক বছরের মধ্যে বাকি সব ছোট ছোট বেসরকারী রেল কোম্পানীগুলিও সরকারী পরিচালন আওতায় চলে এলো । স্বাধীনতার পরে, ১৯৫২ তে সুবিশাল রেলওয়ে পরিচালন ব্যবস্থাকে পুনর্গঠিত করা হল কয়েকটি অঞ্চল বা জোন’এ এবং প্রতিটি জোনকে কয়েকটি বিভাগ বা ডিভিশন’এ ভাগ করে । রেল ব্যবস্থার প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে রেওয়ে অঞ্চলের সংখ্যাও বেড়েছে । এখন সারা দেশে রয়েছে সতেরোটি রেলওয়ে অঞ্চল যাদের অধীনে রয়েছে উনসত্তরটি ডিভিশন ।
রেলের কথা মহাভারতের মত, শেষ হয় না। সেই কবে আজ থেকে একশ’তেষট্টি বছর আগে চোদ্দটি বগিতে চারশ’ জন যাত্রি নিয়ে মুম্বাইএর বোরি বন্দর থেকে ৩৪মাইল পথে যে রেলের গাড়ি গড়িয়েছিল তা এখন এই বিশাল দেশের দৈর্ঘ্য-প্রস্থের জনজীবনে রক্ত সঞ্চালনকারি ধমনির মত । এক লক্ষ ট্রাক কিলোমিটারে প্রতিদিন সে এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তে পরিবহন করছে দু কোটি ত্রিশ লক্ষ যাত্রি ও দু লক্ষ টনেরও বেশি পণ্যসামগ্রী আর যে কাজে যুক্ত রয়েছে চোদ্দ লক্ষের বেশি রেল কর্মচারী । বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম রেল ব্যবস্থা । আর ঐতিহ্যের দিক দিয়ে রেলব্যবস্থা যে দেশের বৃহত্তম ও প্রাচীনতম ঐতিহ্য,তা ভুলবে কে ? এই ব্যবস্থার সঙ্গে জুড়ে ছিলাম আমার আয়ুকালের অর্ধেকেরও বেশি সময় । অবসর নিয়েছি পনেরো বছর হল, কিন্তু সেও তো জুড়ে থাকাই ।
তথ্যসূত্র -
(১) কলিকাতা দর্পণ / রাধারমন মিত্র
(২) সংবাদপত্রে সেকালের কথা
0 মন্তব্যসমূহ
সুচিন্তিত মতামত দিন