এখন সকাল সাতটা । বাথরুমে শাওয়ার নিতে নিতেই নেট এন্যবেলেড ভিউয়ারে গলা ভেসে এলো স্বাতীর । আয়ুশ আজ নর্থ এ যাচ্ছে । আমি কুর্গেই । আজ কফি লোড হবে । অরিন্দম শুনে নেয় । ওকে , আমি একটু ইস্টে । বে ওফ বেঙ্গলের ওয়েল রিগ নিয়ে কথা ফাইনাল ।
ফ্রেশ হয়ে অরিন্দম তার প্রাইভেট জেটে উঠে বসে । এটা একদম নতুন । ইউ নিড নো ম্যান হ্যান্ডলিং । পুরোটা মেকানিকাল । ইউ জাস্ট হ্যাভ টূ স্টার্ট ইট ! আর অটোম্যাটিক ওয়াশিং মেশিন চালাবার মত তোমাকে অ্যাডজাস্ট করে নিতে হবে। গন্তব্য , যাত্রাপথ , গতি ও উচ্চতা । ব্যস , চুপ করে বসে থাকো । দেখতে দেখতে চলো । স্বাতী এখন কফি প্ল্যান্টেশান দেখছে । আয়ুশের কথা ছিল মাইকা মাইনস গুলো দেখার । সে চলল নর্থ এ । কি জানি কেন ! অরিন্দম আস্তে আস্তে! সিটটা রিক্লাইন করে । বেশি উঁচুতে উড়ছেনা প্লেন । ওই যে নীচে দেখা যাচ্ছে তার সাম্রাজ্য । ভাবতেও অবাক লাগে যে ক বছর আগেও সে ছিল একটা হাজার স্কোয়ার ফুট ফ্ল্যাটের মালিক । কিন্তু এখন ? একশো তিরিশ কোটির দেশটা এখন মাত্র এক লাখের ! সরকার এখন যাবতীয় সম্পদ এই এক লাখের মধ্যে বন্টন করে দিয়েছে । প্রকৃত সাম্য । দুর্ভিক্ষ, গরীবিয়ানা, অনগ্রসর জাতি, এসব এখন ইতিহাসের পাতায় । এখন সীমান্ত রক্ষা থেকে শুরু করে কৃষি , বাণিজ্য সব আউটসোর্সড । এই যেমন তার জেটটা । প্রতিমাসে সার্ভিস করে একটা জার্মান সংস্থা। জাস্ট একাউন্ট টু একাউন্ট ট্রান্সফার হয়ে যায় পেমেন্ট। গোটা সীমান্ত জুড়ে নিরাপত্তা রক্ষার ভার একটা অ্যামেরিকান কম্পানির হাতে । ডোমেস্টিক সাপ্লাই অবশ্য এক দেশীয় বণিক সংস্থার হাতে । কোথাকার টোম্যাটো কোথায় যাচ্ছে কেউ জানেনা । মাথাব্যথার দরকারই বা কি ? যেমন স্বাতীর কফি প্ল্যান্টেশানের কফি চাষ থেকে হারভেস্টিঙ্গ পর্যন্ত একটা ব্রাজিলীয় কম্পানির দায় । বদলে ? ওই । একাউন্ট টু একাউন্ট ! অরিন্দম আর স্বাতী কিন্তু সেই কফির স্বাদই জানেনা । তত্সত্বেও এরা সুখী । কি আরাম কি আরাম । এ এখন সব পেয়েছির দেশ ।
গোল বেধেছে আয়ুশকে নিয়ে । ও একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে হিস্ট্রি নিয়ে পড়ছিল । তখনও এখানে একশো তিরিশ কোটি । হঠাত ক বছরে এই নতুন সাম্রাজ্যের মালিক হওয়াটা সে ভালো চোখে দেখছে না । এমন ভূত চেপেছে মাথায় যে ওই মাইন এলাকায় আগে যারা থাকত , মানে ভূমিপুত্র যাকে বলে , তাদের সব রিমেইনস খুঁজে বের করতে চায়। আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা এখন একটা চৈনিক কম্পানির হাতে । তারা বিষয়টা অরিন্দমের নজরে আনে । অরিন্দম ছেলেকে ওয়ার্নিং দিয়েছিল , নো ফিডলিং উইদ দ্য পাস্ট । এখন সে নর্থ এ যাচ্ছে । যাক একটু ঘুরে আসুক । একটা ফ্রেঞ্চ কম্পানি এখন হিমালয়ান এক্সপিডিশানের দায়িত্বে ।
হঠাত নেট এন্যাবেল্ড ভিউয়ারে ছবি ভেসে ওঠে । অরিন্দম দেখতে পায় ভীষণ উঁচু , ন্যাড়া আর পাথুরে পাহাড় , মাথায় বরফ , মাঝখান দিয়ে গ্লেসিয়ার দেখা যাচ্ছে এরকম পটভূমিতে আয়ুশ দাঁড়িয়ে । হাসি হাসি মুখ । অরিন্দম হাত নাড়ে । হাসে । গুড । এনজয় ইয়োরসেল্ফ ! আয়ুশ হাসতে হাসতে পিছিয়ে যায় । দেখা যায় একটা বড় বোল্ডারের ওপর দাঁড়িয়ে আছে । ওকে ঘিরে শয়ে শয়ে মানুষ । না তো ! ওরা ফ্রেঞ্চ নয় ! ওদের গায়ের রং বাদামী কালো আর কি বিশ্রী ! রুক্ষ চুল । কোটরে ঢোকা চোখ । বেরিয়ে আসা কণ্ঠার হাড় । আর গায়ে জামাকাপড় ও যাকে বলে স্ক্যান্টি । অরিন্দম চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে পড়ল । হু আর দে ? দোস ডীমনস ? আয়ুশ হাসল । বাবা এরা ভারতীয় । ইন্ডিয়ান নয় । টেক ইট ইজি বাবা । এদের খোঁজ কেউ পায়নি । পেলেও ক্ষতি নেই । নো বডি উইল ডু এনি হার্ম । আবার হাসল আয়ুশ । অরিন্দমের রগ দপদপ করছে । আয়ুশের গলা শোনা যাচ্ছে । বাবা আমি কিছু ডোমেস্টিক সাপ্লাইয়ের অর্ডার করেছি । ফান্ড ট্রান্সফার করে দিও । ছেলের বালখিল্যপনায় বিরক্তিতে বিষিয়ে যেতে যেতেও অরিন্দম হাসি ফোটালো মুখে । ওকে ওকে । তুমি ফিরছ কবে ? আয়ুশ তীক্ষ্ণ হাসি ছড়ালো মুখে । না বাবা । আমি ফিরছি না । আমি ফিরলেই তুমি ইন্টারনাল সিক্যুরিটিকে দিয়ে মাস মার্ডারটা করিয়ে দেবে । অবশ্য এরা এমনিতেই ক্ষিদে তেষ্টায় আধমরা । ওহ তুমি তো আবার ক্ষুধা তৃষ্ণা কাকে বলে জানো না । ফার্স্ট ওয়ার্ল্ড । যাকগে । তুমি বরং টাইম টু টাইম ফান্ড ট্রান্সফারটা করে যেও । যতদিন না এই বোল্ডারে সবুজ ফোটাতে পারি । টা টা বাবা । আয়ুশের মুখটা মিলিয়ে যায় ।
অরিন্দম হতাশ হয়ে ল্যান্ডেড জেটটার পেটে বসে থাকে । আয়ুশের আইডি দিয়ে নর্থ টাইপ করতে সফটওয়্যার নিলনা । ছেলেটা তবে হারিয়ে গেল ?
1 মন্তব্যসমূহ
!!😢
উত্তরমুছুনসুচিন্তিত মতামত দিন