ঐ দিগন্তলীন বাড়িটার পাঁচিল না দেওয়া ছাদে খরগোশ টুপি, লাল-নীল সোয়েটার-জুতো পরা ছোট্ট ছেলেটা ঘুরে বেড়াচ্ছে আর মাঝে মাঝে বাবার সঙ্গে জমিয়ে খুনসুটি করছে। ওর বাবা মিস্ত্রী। মই বেয়ে জোগাড়ে সিমেন্ট ভর্তি কড়া নিয়ে উপরে উঠছে ; ছাদের সীমায় পৌঁছোতেই ‘বাবা’ তার মুগুরের মত শক্ত হাত দিয়ে তুলে নিচ্ছে বোঝা। আবার চলছে খুনসুটি। আমি দেখছি। বেশ দেখছি আর যতবার ‘বাবা’ কড়াটা তোলার জন্য ছাদের প্রান্তে এগিয়ে যাচ্ছে, ততবারই বাঁশপাতার মত কেঁপে উঠছি।একলা বাচ্চাটা যদি খামখেয়ালে ছুটতে ছুটতে ছাদের কিনারায় চলে যায় তারপর টাল কিংবা তাল সামলাতে না পেরে যদি… । হঠাৎ আজ সকালের তিনের পাতার খবরটা মনে পড়ল, ‘ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে চার বছরের শিশুর মৃত্যু।’
খুব শীত করতে শুরু করল আমার। মনে হল, দিল্লীর শীতের দুপুরের এমন ছিলেকাটা হাওয়ায় বেশীক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে নির্ঘাৎ বুকে সর্দি বসে যাবে। সিঁড়ি দিয়ে নামব নামব করেও শেষবার দিগন্তে চোখ রাখলাম। বুকটা ছ্যাঁৎ করে উঠল। ছেলেটা কই? ‘বাবা’ তো নিশ্চিন্ত মনে যোগাড়ে ছেলেটার সঙ্গে বসে সিমেন্ট মাখছে। তাহলে? ওমা! এ কী! আমার হৃদপিণ্ড গ্যালোপিং ট্রেনের মত দুদ্দাড় করে ছুটতে ছুটতে মাঝ-স্টেশনেই বিকল হয়ে গেল। একরত্তি দস্যি লেজ লোকানো লেজ পাকানো ছেলের কান্ড দ্যাখো- কেমন ছোট্ট ছোট্ট পায়ে মই বেয়ে যোগবিয়োগ, ল.সা.গু’ র সিঁড়ি ভাঙতে ভাঙতে নেমে যাচ্ছে নীচে। ময়লা জংলাফুল ঘোমটায় অর্ধেক মুখ ঢেকে কোনমতে পিটপিট করে উর্দ্ধাকাশে চেয়ে আছে গর্ভধারিণী, কখন তার পয়গম্বর নেমে আসবেন নীচে। দেখাবেন নিজস্ব হাঁয়ে সিমেন্টের গোলা বা বিশ্বরুপ।
সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে টের পেলাম, এই দারুণ শীতেও মেঘের মত হালকা হয়ে উঠেছে আমার শারদীয় শরীর।
বারান্দায় নেমে দোর দেবার আগে শেষবারের মত চাইলাম আকাশের দিকে। কেউ কোত্থাও নেই। দৃশ্য- দৃশ্যান্তরের কুশী লবরা যেন এইমাত্র যে যার পাট শেষ করে দিগন্তের পর্দা টেনে মিলিয়ে গেছে। বোধহয় লাঞ্চ-ব্রেক। আমারও, তবু চোখের সামনে আকাশটাকে ভেজিয়ে দিতে দিতে মনে হল, সব মানুষের মধ্যেই একটা মা লুকিয়ে আছে। তাই কি ‘মানুষ’ শব্দটার আদ্যক্ষর ‘মা’?
2 মন্তব্যসমূহ
একটা সুন্দর অনু গল্প পড়লাম, একে কবিতাও বলা যায়, লেখিকা একজন আদর্শ মা এর দৃশ্টিকোণ কোণ থেকে একটি ছোটো অথচ মর্মস্পর্শী বিষয় অবলোকন করেছেন গভীর ভাবে, একটা ছোট্টো ছেলে খোলা ছাদে দুষ্টুমি করছে আর তার মিস্ত্রী বাবা যোগান দিচ্ছে মূল মিস্ত্রীকে, যদি ছেলেটা অসাবধানে খোলা ছাদ থেকে পড়ে যায় এই আতঙ্কে লেখিকার মাতৃ হৃদয় আঁতকে উঠছে যা সকল মাতৃ হৃদয়েে এই আশঙ্কা জাগবে, এই আশঙ্কা সার্বজনীন ম এর আশঙ্কা যা সুন্দর ভাবে তুলে ধরতে লেখিকা সফল হয়েছেন এবং এখানেই লেখিকা স্বার্থক হয়েছেন । আমি তাঁর প্রতি আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই, একটি মাতৃ হৃদয়ের প্রভি আমার সকল শ্রদ্ধা রইলো
উত্তরমুছুনএকটা সুন্দর অনু গল্প পড়লাম, একে কবিতাও বলা যায়, লেখিকা একজন আদর্শ মা এর দৃশ্টিকোণ কোণ থেকে একটি ছোটো অথচ মর্মস্পর্শী বিষয় অবলোকন করেছেন গভীর ভাবে, একটা ছোট্টো ছেলে খোলা ছাদে দুষ্টুমি করছে আর তার মিস্ত্রী বাবা যোগান দিচ্ছে মূল মিস্ত্রীকে, যদি ছেলেটা অসাবধানে খোলা ছাদ থেকে পড়ে যায় এই আতঙ্কে লেখিকার মাতৃ হৃদয় আঁতকে উঠছে যা সকল মাতৃ হৃদয়েে এই আশঙ্কা জাগবে, এই আশঙ্কা সার্বজনীন ম এর আশঙ্কা যা সুন্দর ভাবে তুলে ধরতে লেখিকা সফল হয়েছেন এবং এখানেই লেখিকা স্বার্থক হয়েছেন । আমি তাঁর প্রতি আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই, একটি মাতৃ হৃদয়ের প্রভি আমার সকল শ্রদ্ধা রইলো
উত্তরমুছুনসুচিন্তিত মতামত দিন