দীপুমালা



কোন এক বৈশাখী ঝড়ে


ফাগুনে আগুন ধরেছে
ভালোবাসা পুড়ে ভস্ম হয়েছে
আমি দাঁড়িয়ে আছি কৃষ্ণচূড়ার ছায়ায় স্মৃতি মন্থনে
স্বপ্নেরা চারিদিকে ওড়াউড়ি করে
আমি একা শুধু একা দাড়িয়ে
ভাবনাগুলি ঘুরে বেড়ায় সাড়ে তিন হাত মাটির জমিনে।

বসন্তের রঙ মেখে ভালোবাসা পালিয়ে যায়
আমি হাত বাড়িয়ে ছুঁতে চেষ্টা করি, পারি না
মন বাড়িয়ে ছুঁয়ে দেই
মাখিয়ে দেই প্রজাপতি রঙ।
তোমার সুখের জমিনে, বীজ বপন করি নীরবে
দুরে থাকি তোমার নিরাপদে
তুমি সুখি থাক সুখি হও
যৌবনের এই সন্ধিক্ষণে।

হঠাৎ করে একদিন, হারিয়ে যাবে তুমি
ভালোবাসার খোঁজে
ভরবে উদর তোমার, নতুন অতিথি আগমনে
ভালো থাকো নিরাপদে থাকো এই ভাগুনে
রঙে রঙিন হোক তোমার যৌবন, সুখে হোক প্লাবিত।

আমি যেমন আছি তেমনি থাকবো
উদাস দুপুরে ফাগুনের আগুনে,
পুড়ে হবো মুখ পোড়া
শুণ্যতা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি, শুণ্য একা।

মেঘ কষ্টগুলো কষ্ট চেপে, দুর গগনে ভেসে যায়
তোমার লাল টিপ, নীল আকাশের নীলে মিশে যায়
কোন এক বৈশাখী ঝড়ে উড়ে যায় সব ভালোবাসা
লন্ডভন্ড জীবন আর হয়ে ওঠেনা সুসজ্জিত।



কেন এলে



একদিন হঠাৎ করে, তুমি এলে
বৈশাখী হাওয়ায়
অক্টোপাসের মতো জড়িয়ে ধরলে, অষ্ট হাতে
গোলাপের সৌরভে, মাতালে আমায়
ভালোবাসায়;
নীল দংশনে
আমি শপে দিলাম হাত, তোমার হাতে।

দীর্ঘ রাত্রিগুলি, হোলনা দীর্ঘ
দুঃখগুলি, সুখে মধুর
চোখের নোনা জল, চোখেই শুকালো
এইতো ভালোবাসার দিনকাল।

সুখের দিনগুলি আর সুখে রহিলো না
আবার এক অমাবষ্যার ঝড়ে
ঝরে গেলে তুমি;
হারিয়ে গেলে দুরে কোথাও।

কাঁটার আঘাতে, ক্ষত-বিক্ষত আমি
চোখের জলে নদী বহে নিরবধী;
ভুলি কেমনে- ভালোবাসার রঙিন দিনগুলি
চোখের নোনা জলে, চোখ পুড়ে যায়
তবু কেন যে, তোমার বিরহে
মন পুড়ে যায়।

কেন এলে, কেনই বা গেলে
বহিবার শক্তি, দাও হে প্রভু,
এই অভাগারে, ভালোবাসা রচিবার।



কোন এক ফাগুনে



তোর একটু ভালোবাসার জন্য
আমি কতনা কি করেছি-
যদি একটু ভালোবাসা পেতাম
তাহলে, ছিঁড়ে এনে দিতে পারতাম
আকাশের চাঁদ।
আর তোর জন্য, পাড়ি দিতে পারতাম
সাত সমুদ্র, তেরশ নদীর দেশ
আর হৃদয়টা ছিঁড়ে
দিয়ে দিতে পারতাম, তোকে।

আমার সব স্বপ্নগুলো
শুধু তোর জন্য;
আর দুঃখ-কষ্ট বেদনাগুলো
শুধু আমার জন্য।
তুই কথা দিয়ে কথা, রাখলি না
ভালোবেসে, ভালোবাসলি না।
ভেবেছিলাম, তুই আমার হবি!
হলি, অন্য কারো।
এখনো আনমনে বসে থাকি
ভাবি, তুই আবার আসবি ফিরে-
কোন একদিন, কোনা এক ফাগুনে।



আমি শুধু তোমাকে চাই



আমি শুধু তোমাকে চাই-
আমিতো তোমার হৃদয় আকাশে
কখনো বুনো হাঁস,
কখনো গাঙচিল হয়ে
উড়ে বেড়াতে চাই।

তোমাকে, নানা বসন্ত রঙে রাঙিয়ে
মাথায় মাধবীলতা ফুলে ঘাসে সাঁজিয়ে
সাতশো গোলাপের পাপড়ি
তোমার পায়ে, লুটিয়ে দিয়ে
তোমাকে চাই।

পলাশের বনে কোকিল ডাকে
নবান্নের ধানে মৌ মৌ গন্ধে
বাতাসে কাশফূল দোলে
দক্ষিনা বাতাসে তোমাকে চাই।

মসিনা কাপড়ে তোমার দেহ ঢেকে
তার সুগন্ধি, শিরা-উপশিরায়
মনে প্রাণে যৌবনে জোয়ারে
উপলব্ধি করতে চাই।

যখন তখন, যেখানে সেখানে
নানা আয়োজনে, নানা মেলায়
উৎভ্রান্তের মতো পাগলামীতে
ভোর রাতের কুয়াশায়
চাদরে জড়িয়ে তোমাকে চাই।

আমি শুধু তোমাকে চাই
বার বার, শত বার, হাজার বার
কোটি কোটি বার
তোমাকে চাই।



বৈশাখের দেশে


আমিতো চলেছি
সমান্তরাল পথ বেয়ে
কু ঝুক ঝুক, কু ঝুক ঝুক শব্দে
ডোবা নালা, নদী আর দিগন্ত জোড়া
সবুজ ফসলের ক্ষেত, পিছনে ফেলে।

কলা ঝিকা মান্দার আর পলাশের
হাতছানি ফেলে
কৃষ্ণচূড়া ফুঁটেছে অই
খেজুর আর বট বৃক্ষের ছায়ায়
কাকের কলরবে, বুলবুলি ধান ক্ষেতে।

আমের মুকুল আর কাঁঠালের ঘ্রাণ
ঝির ঝির বৃষ্টি
পাতি হাঁস, ভাসে অই
কলাবতীর কলা ফুলে, সাঁজানো বিছানা
ছুঁটেছে নজরুলের রানার
গরুর গাড়ীর দোল দোলায়;
রবিন্দ্র নাথের বৈশাখী রঙে
রাঙিয়াছে চারিদিক।

আমি ছুঁটে চলেছি-
জীবনানন্দের বনলতার দেশে
কচুরী ফুল আর ডাহুক আমায় ডাকে
এসো ফুল কমলীলতা, মাছরাঙার দেশে
তালের ডোঙ্গায় ভেসে ভেসে।

বনফুল আর বনঘ্রাণ
বনলতা আমায় ডাকে;
ভালোবেসে এসো, মেঠো পথে
রাখালের বাঁশি আর মাঝি-মাল্রার গানে
পথ চলেছে পথের ঠিকানায়
আমি চলেছি- তোমার আশায়
ভালোবাসায় ভালোবেসে।




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ

সুচিন্তিত মতামত দিন