জারিফা জাহান











গিনিপিগের  সভ্যতা কাহিনী


১।
জন্মকথা।ভ্রূণ থেকে রক্ত-মাংসে উত্তরণ।
আশ্চর্য কৌতুহলী প্রক্রিয়া অথচ ভাবো
যে প্রক্রিয়ায় গিনিপিগের কোনো ভূমিকা নেই পরীক্ষিত হওয়া ছাড়া
সে প্রক্রিয়াই ঠিক করবে সভ্যতায় গিনিপিগের অবস্থান।
পদবী হতে পারে সিংহাসন অথবা চপার,সেই ঠিক করবে ধর্ম,বর্ণ।
আগামী হাওয়ায় মাংস-হাড়ের দলা টুকরো টুকরো গড়াতে পারে মাটিতে
অথবা হতে পার কিছু সমব্যথী সুখী গিনিপিগ,রক্ত দেখে বৃষ্টি নামিও বুকে।

২।
নম্বর নিয়ে খেলা,ক্রমাগত তার আধিক্যই নির্ধারণ করবে গিনিপিগের ভবিষ্যত।
প্রথম,দ্বিতীয়,তৃতীয় মানে তুমি বুদ্ধি পাঁজরে নিয়ে ঘোরো
কত অঙ্কের জীবনযাপন করবে তাই এত ইঁদুর দৌড়।
তোমার ভেতর যত কাব্য আছে,তুলিটান কিংবা গান
সেসব বিঁধে অলিন্দের ঝিল্লি ছিঁড়ে যাক এফোঁড়-ওফোঁড়
ভুলেও বাঁধ দিওনা স্রোতে,খড়কুটো হয়ে হারিয়ে যাবে অগোচরে।  

৩।
গিনিপিগের লিঙ্গ নির্ধারণ এক অভ্যাসবশত আনন্দফল অথচ সিফিলিস।
এক্সের সাথে ওয়াই না মিললেই মাংসের দলা খাবারের জন্য শুঁকে নিতে পারে ভাগ্য
তাকে যেমন খুশি ছুঁড়ে ফেলা যায়, সার দেয়া যায় মৃতদেহের চাষে
সম্মান,অধিকারে নুন-মরিচ দিয়ে ভয়ের কুলুপ এঁটে দেয়া হয় মুখে।
এরপর বোবা সেজে উলু বনে হারাও 'ভালো মেয়ে',
শিকল ছিঁড়ে ভগ্নাংশ মুখর হলেই অমনি 'নারীবাদী'।

৪।
হলুদে,চন্দনে,ফেয়ারনেস ক্রিমে লেখা আছে সৌন্দর্যের সংজ্ঞা।
গিনিপিগের আত্মবিশ্বাস,গ্রহণযোগ্যতা সাদা রঙের পোড়া কাফনের শিস
কালো ঈশ্বরের কাছে করজোড়ে চাই সাদা গিনিপিগ
মেলানিনের হিসেবে পেট ভরে না
কবে যে আমরা জানাজায় কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কালো রাস্তায় নেমে ফর্সা=সুন্দরের
সহজ সমীকরণ পাল্টাবো।

৫।
নাস্তিক বা মিউচুয়াল আস্তিক সবাই
ধর্মকে আস্তিনে গুটিয়ে অন্তরালে রেখে দেয় যেমনটা কংকাল ঢেকে রাখা হয় মাংস-চামড়ার মোড়কে।
সুযোগ পেলে বা অন্যমনস্কতায় অভিনয় ভেঙে থুতু ফেলা গিনিপিগটা ছটফট করে
কোষ্ঠী বিচার,জাত,মাঙ্গলিক দোষ কাটানো,তালাক দেয়া আলুনির সংসার বিরক্তিকর
ধর্মের অজুহাতে যুদ্ধে মৃতদের হৃদয় ছুঁয়ে জানি ভালবাসা হেরে গেছে।

৬।
প্রাথমিক 'ধর্ষিতা'র জন্য সমবেদনা পায়ের পাতা নীল ম্যাগাজিনে এ ছুঁয়ে ফেলার মত।
বই ভেবে মাথা নোয়ানো উচিত না শুধু অগোচর বনিতা বিলাস সংশয়ে
গিনিপিগেরা জড়ো হয়,আলো জ্বালে,বাগ্মিতায় গমগম করে সমাবেত
শুধু 'ধর্ষিতা' পরিচিতা হলে নির্ভয়ার মায়ের মত সাহস করে বলতে পারিনা নাম।
টিভি ক্যামেরা, প্রেস, মেডিক্যাল টেস্ট,কোর্ট সবেতে সেদিনের
প্রতি সেকেন্ডের গল্প বারবার একা শুনিয়ে যদি 'নাবালক'
কালো রক্তকে চুটকিতে দলছুট করে , প্রার্থনা করি
গিনিপিগের যোনি আর স্তনটুকু বাদে দেহ ঝুলিয়ে রেখো মাংসের দোকানে,
শাঁখের গুঁড়োর মত চিন্হ বয়ে বেড়াবেনা এত নিক্তিমাপা ঠুনকো সম্মান।    

৭।
'সংরক্ষণ' এক নেশার ওষুধ, আত্মহত্যার মত।
গিনিপিগ তা অস্বীকার করে, প্রতিবাদ জানায় হতবুদ্ধি হিসেবে
শুধু যখনি তার স্বার্থে মুঠো মুঠো আশারা হোলি খেলে যায় আগাম আভাসে
তখন না চাইলেও মিউচুয়াল সংরক্ষিত হই , নান্দনিক জীবিকা বুদবুদ যেভাবে ফাটে যানবাহনে।

৮।
অচেনা লোকের গিলে খাওয়ার চাহনি কেমন ঘেন্নার।
রাস্তার ধারে জঞ্জালের মত খানখান ক্যানভাস, যা শুধুই নষ্টামির পরিচায়ক
নষ্ট আমি, কারণ প্রতিবাদ করলে রক্ষকের কাছে অগ্নিপরীক্ষা আর বাঁচতে চাইলে
নেবিউলাস অবয়বে করুণা মিশিয়ে কিছুদিন ফার্স্টপেজ এ।
অচেনা তাই হীরে হলেও আগাছা হয়ে বাড়ুক,তাতে ভুল করে যদি হৃদয় জড়িয়ে যায়
শাস্তি চেনা নির্ণায়ক, অচেনা লোকের কাছে নিজেকে বিক্রি করে দত্তক নেয়া প্রেমের 'সংসার' 'সংসার' খেলা।

৯।
গৃহবধূর সম্মান ছুঁয়ে যায় সেই রাস্তায়,যার শেষ শ্মশানে,দাউদাউ চিতা হাত বাড়িয়ে ডাকে।
সে শুধুই 'গৃহবধূ',তাই সে অশিক্ষিত
কারণ শিক্ষার মাপকাঠি গিনিপিগ উপার্জনসংখ্যায় করে
অথচ দেখো,যখনই সে সংখ্যাকে আয়তনের তোয়াক্কা না করেই ভালো 'বাসা' বানাতে যায়
সেই মুহূর্তে সে প্রতিভাত আদর্শের সংজ্ঞায়ক।
ভালবাসা মেয়ে-জামাইয়ের জন্য ফুলদানিতে তোলা থাকে, তাকে ছেলে মুড়ি-বাতাসা করলে
গিনিপিগের গুহায় ঝিলিক মারে আঁশু, পর হয়ে যাওয়া পৃথিবীটার মত।

১০।
এখনই মৃত্যু আসবে সাদা শিউলির গন্ধ মেখে যন্ত্রণামেহনে শাশ্বত স্বপ্ন বুনতে।
কিন্তু এত কোলাহল,প্রতিশোধ কিসের?
বাঁচার সময় সখকে বুড়ি ছোঁওয়া করে গিনিপিগকে পিছিয়ে এনেছে মৃত্যুচিন্তা,পাপ-পুণ্য
অথচ আজ জ্বর হয়ে যখন জলপট্টি দিচ্ছে মরণ
আমি এত ভীতু কেন?জাতিস্মরের মত ফিরে ফিরে আসছে জীবন।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ