দমদম - বিকেল ৪.২৬ মেট্রো থেকে নেমে ছুট, ছুট, যেন অলিম্পিকে নাম দিয়েছে ছেলেটা এমন ছুটল, সবার আগে পৌছতেই হবে দম দম স্টেশনে। ৪.৩০ রাণাঘাট গ্যালোপিং বেরিয়ে গেলে ? যা আরও ২০ মিনিট ওই ভিড়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা। দুর ছাই আজকে ছেলেটাকে তাড়াতাড়ি বাড়ি যেতে হবে যে। কি যেন একটা কাজ ছিল তার, যা ভুলে গেছে। যে মেট্রো থেকে বেড়িয়ে সঠিক জায়গায় যাবার রাস্তা ভুলে যায়। হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ তার কাছে এটাই তো স্বাভাবিক।
ইএএএএস এসে গেছি ৪.৩০ ।
এ যা ... আরে আরে ও দাদা ও সাদা শোয়টার দাদা, এটা কোন ট্রেন বেড়িয়ে গেলো?
- রাণাঘাট।
- আমি ঠিক জানেন? এটা রাণাঘাট?
- না হে এটা দম দম, যেই ট্রেনটা বেড়িয়ে গেলো ওটা রাণাঘাট লোকাল । বিশ্বাস নাহলে ট্রেনের পিছনে দৌড় লাগাও নাম টা জ্বলজ্বল করা দেখতে পাবে। ফাজিল ছেলে কোথাকার।
যা বাবা আরে চটল কেন লোকটা? কি এমন জিজ্ঞেস করেছিলো ছেলেটা।
আর এদিকে - কি বাজে ট্রেন কোম্পানির লোকগুলো দেখেছো। রোজ ৩ থেকে ৪ মিনিট করে লেট করে, আর হতভাগা আজকেই তোকে টাইমে আসতে হল? অন্তত ৩০ সেকেন্ড লেট করলে কি এমন মহাভারত অশুদ্ধ হত শুনি? দুঃতোর মরুক গে যাক, আর কি বা করার দাড়াও আরও ২০ মিনিট। এই শীতের ঘাম ঝরা ভিড়ে। উফ্ কি খিদে পেয়েছে । খিদে খিদে হম হম , কি যেন আছে ব্যাগে, হ্যাঁ তার সবথেকে অপছন্দের খাবার, এক বাটি পায়েস। আরে কি ভুলো ছেলেটা বেমালুম ভুলে গেছে, কে যেন বানিয়ে এনে দিলো , কে দিলো কে দিলো? ওই দেখো আবার ভুলে গেছে। সে যেই দিক গে, খাইত আগে।"
কিন্তু সবার সামনে খাবে? নয় নয় করেও শ তিনেক লোক স্টেশনে। শান্তিতে যে কেউ একটু খাবার খাবে তারও উপায় নেই। থাক লোক বয়ে গেছে আজকে ছেলেটার “আমার খাবার আমি খাবি কার কি ?” ওই দমদম স্টেশনে, ওই অতোগুলো লোকের সামনে খোলা হল পায়েসের কৌটোটা, নলেনগুড়ের পায়েস, অ্যা পচা জিনিস মটে পছন্দ নয় তার। তবু কে যেন ভালোবেসে নিয়ে এসেছিলো তার জন্য। দুর ছাই খেয়ে তো নি, সেতো জন্মদিনেও মা জোর করে ঘার ধরে পায়েস খাওয়ায় এক বাটি। পেতে যা খিদে যা খুশি খেয়ে নেবে ছেলেটা।
এসব ভাবতে ভাবতে এক চামচ মুখে দিলো ছেলেটা। এ মা মিষ্টি কি কম! চাল গুলো আরেকটু সেদ্ধ হত, কিস্ মিস্ গুলো আরেকটু গলত যে, আর কাজু মাত্র আদ্দেক টা। কিন্তু কি অসম্ভব রকমের ভালো লেগে গেলো পায়েস টা ছেলেটার, কেন লাগলো হ্যাঁ হ্যাঁ না তার কোন কারন ছেলেটার যানা নেই। কিন্তু গোগ্রাসে পুরো পায়েসের বাটি শেষ মাত্র ৫ মিনিটে। গিনিস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড, ভাবা যায়? এমন কি পায়েসের শেষ ফোটাটাও যাতে মুখেই পড়ে তার জন্য কৌটোটা হা করে রইল মুখের ওপর কতক্ষণ কে যানে?
পায়েসের বাটি শেষ করে চারিদিকে তাকাতেই সম্বিৎ ফিরল ছেলেটার। সবাই হা করে দেখছে ওকে আর মিটি মিটি হাসছে যে। কি লজ্জার ব্যাপার সে খেয়ালই করেনি পুরো দম দম স্টেশনের পথ চলতি লোক হা করে দেখছে তার পায়েস খাওয়া। লাজুক ভাবে ছেলেটা কৌটো টা ব্যাগে ভরে দাড়িয়ে রইল লাজুক লাজুক মুখ করে।
হঠাৎ প্রায় ৭০ বছরের এক ভদ্রমহিলা ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করলো?
- আজকে তোমার জন্মদিন? পায়েসটা বুঝি মা বানিয়ে দিয়েছেন?
আজকে ছেলেটার জন্মদিন? ওই দেখো ভুলোটার এটাও মনে নেই। অনেক ভেবে বলল “না না জেম্মা আজকে আমার জন্মদিন নয়।”
তবে শেষ প্রশ্নটার উত্তর আর মনে পড়েনা ছেলেটার। পায়েস টা কি মা বানিয়ে এনেছিল আমার জন্য? মা ই হবে, হয়তো এজন্মের নয়, হয়তো অন্য কোন জন্মের।
যাই হোক খাবার পড়ে প্রচণ্ড জল তেষ্টা পেয়েছিলো ছেলেটার, হাতের সামনে জল ছিলও কিন্তু খায়নি সে। থাক না এই স্বাদটা আরও কিছুক্ষণ মুখে, কে যানে এটা তার জন্য বানানো, না অন্য কারোর জন্য কিন্তু ভালোবেসে তো বানানো। আর কিছুক্ষণ না হয় গলায় অসহ্য তৃষ্ণা নিয়ে মায়ের ভালোবাসার স্বাদটা তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করলো সে।
0 মন্তব্যসমূহ
সুচিন্তিত মতামত দিন