স্ববিরোধ
১।
একটা শুন্য পথের যাত্রী তুমি আমি,
শুধু বিশ্বাস নামের ভাইরাস অনুগামী।
জীবাণু নিস্ক্রিয় নির্ভরশীলতা ছাড়া,
বিশ্বাসেরা নয় জীবাণুর চেয়ে দামি।
শতমত শতপথের ব্যঞ্জন রাধা হাঁড়িতে,
বিশ্বাসের হাওয়াই মিঠাই খুব খাচ্ছে সবে।
জন্ম মৃত্যু বিপদে নিতেনিত্য ব্ল্যাকমেইল
চলে। বিশ্বাস ছাড়া ধর্ম বেঁচেছে কবে?
যুগে যুগে নতুনের জয়গান, কালি কলমে
নিয়ম কানুন, বিধি বিধান আঁকছে কেউ।
নদীর বাঁকে পথের সীমারেখা, আকাশ ছুঁয়ে
দূর দিগন্তে আছড়ে পড়ে সুসভ্যতার ঢেউ।
যতই বলি বিশ্বাসী আমি করণকার্যে ফাঁকি,
না দেখে তবু খুব সুন্দর নিজের ছবি আঁকি।
২।
প্রতিদিন একই কাজ। রুটিন বদলায় না,
মানুষ খাঁচা বানায়, পাখি বানায় কারখানা,
গাছেদের চোখে মুখে জমে আছে মৃত ক্ষোভ,
শুধু দৃশ্যমান চারপাশে অদৃশ্য লাভ-লোভ।
ঘুরে হাঁটেঘাটে ট্রেনবাসে অসহায় লোকজন,
দেখি আঁধারে হোঁচট খায় সত্যেরা প্রতিক্ষণ।
দাঁত মাজার মতো, মেজে যায় মনের বোধ,
মৃত্তিকায় লাশের ছবি মরা চায় প্রতিশোধ।
মন মরে বোধ মরে মরে যায় মরা চর,
মাটির তলায় দেখি শুধুই মরার ঘর।
আছে উপরে খাবার দোকান খাচ্ছে সবাই,
বাকীতে মগ্ন মানুষ নগদের হিসাব নাই।
বোবা ছেলে কথা বলে লাল রক্ত পিয়ে-
গৃহকর্ম ধর্ম হলেও- আজো ধর্ম স্থির বইয়ে।
৩।
কি যে নিদারুণ কষ্ট বুকে নিয়ে হাঁটি-
তুমি বুঝবেনা অহস্য সুন্দর পরিপাটি।
সোনা আগুনে গলে পুড়েপুড়ে হয় খাঁটি,
কতদিন খাইনা জানে সামনের দাঁতদু’টি।
জানে দিগন্ত আকাশ জানে বৃক্ষরাজী,
আমি কষ্টের বাগানে সাপ পুষি আজি।
আমি ছোবলে ছোবলে নীলরঙে সাজি,
একটাজীবন ধরেছি কষ্টের নামে বাজি।
কষ্টের পাখা মেলে বেদনার আকাশে,
প্রতিমুহূর্ত উড়ছি একা ভুল ভালোবেসে।
ব্যথানাশক হতাশার চাদর চোখে ভাসে,
শুধু আমার দামিকষ্ট মূল্যবিহীন হাসে।
নিজেকে সান্ত্বনা দেই মাথায় দিয়ে চাটি,
আমি কষ্টের বৃক্ষ এক। স্থির কিন্তু হাঁটি।
৪।
ব্যর্থতা ছায়ার মতো। ঘুরছে অবিরাম।
কিছুতেই থামেনা সে, যতই বলো থাম।
সামনে পিছে ঘুরে মিছে- কিছু ছায়া স্থির,
কিছু ছায়া ছাড়িয়ে যায় সীমানা প্রাচীর।
আলোর গতি বন্ধ হলে উৎপত্তি স্ব-ভাবে,
কিছু ছায়া উধাও হয় রোদের অভাবে।
সেই ছায়াময় ব্যর্থতার করাল গ্রাসে,
কালো অধ্যায় লেখা হয় ব্যর্থ ইতিহাসে।
মায়ার মতো ঘুরে ছায়া জড়িয়ে দু'পায়ে,
সখ্যতায় জুড়ি নেই যেমন মায়ে ছায়ে।
যতই দেখাও আঁধার ভীতি ছাড়েনা পিছু,
ছায়াজাত মানুষ ঘুরে ব্যর্থতার পিছু।
ব্যর্থতা সাফল্যের ছায়া শাশ্বত জয়,
ছায়াটা তুমিই জেনো অন্য কেউ নয়।
৫।
যতবার তুমি শব্দ ছুঁয়ে বলো,
কবিকে তুমি আর বাসোনা ভালো।
কবি জানে- ঠিক ততবার তুমি-
খোঁজো কাব্য-গান আপন সত্ত্বা চুমি।
বলতে পারো এসব কথার ছল,
কবি শব্দ নিয়েই খেলছে যে কেবল!
ভাবতে পারো এসব কবির খেলা,
সত্য এটাই- শব্দস্থির অস্ত গেলে বেলা।
ভালোবাসার উল্টো পিঠেই ভয়,
যতিরফেরে কবির ছন্দ বদল হয়।
আঁকড়ে ধরে নিজের মনের সব,
শব্দে গাঁথে কবি কালের অনুভব।
তুমি যতই ভাবো শব্দে মগ্ন কবি-
কবি কিন্তু অহোরাত্র আঁকে তোমার ছবি।
৬।
থেমেছে কোলাহল।স্থির শান্ত জনজীবন,
টানটান উত্তেজনায় ভরা উড়ন্ত খেলা
ছেড়ে পাখিদের দল- ঘিরেছে ভুবন।
দিনের সবচে নির্মলক্ষণ গোধূলিবেলা।
সবচে কুৎসিত মুখটাও মায়াময় এখন,
অসহ্য মানুষটাও হঠাৎ আপন লাগে।
ঘরহারা মানুষের ঘুমানোর আয়োজন
রাতের বার্তা আসে সরল অনুরাগে।
দূরে আকাশ ক্রমশ লাল হতে কালচে
মহাশূন্যের অসীম অন্ধকার গোলগ্রহে।
দিন রাতের সন্ধিক্ষণ মামুলী বিষয়,
আসল ছেড়ে নকল এখন মূল আগ্রহে।
দূরে দেখি হেঁটে যায় এক বৃদ্ধ একেলা,
কে তুমি? জবাব আসে- গোধূলিবেলা।
৭ ।
অসাধারণ! অ প্রত্যয়ে ভর দিয়ে হাঁটে
অতি সাধারণ। যদি মনের ভার কাটে-
জনারণ্যে হারিয়ে যায় সময় দহন,
গতি পায়না স্থানুবিষয় লব্ধ দৃশ্যায়ন।
পায়ে পায়ে হেঁটে যায় সময়ের গাড়ি-
সাদা পৃষ্ঠায় আঁকিবুঁকি নাই কমা দাড়ি।
রেখাটা সরল হলে দেখা হয় উৎসমূল,
সবটাই শুদ্ধ তখন ভুল শব্দটাই ভুল।
যদি মানুষ সমানে সমান বলে সকলে-
মানবিক গুন ধারণ হয়না কেন কালে?
প্রত্যয়ের ব্যত্যয় হলে পথে ধুঁকে মন-
মানুষ সেই যার মানবিক কার্য-করণ।
সাক্ষ্যদেয় সময় বৃক্ষ সেই অ-সাধারণ,
বুকের মাঝে আছে যার ঘনসবুজ বন।
৮।
তাড়াহুড়া। সময় ধমক দিয়ে উঠলো,
সময়ের আগেই কেন ফুলকলি ফুটলো?
তখনো জল গড়িয়ে যাচ্ছে মাটির বুকে,
দেখি সময় কাঁদছে অসময়ের শোকে।
সময় চিরন্তন সময়ের আগে পরে নাই-
অতীত বর্তমান ভবিষ্যৎ স্থানু সবটাই।
সময় স্থির মাছরাঙার জলজ দু'পায়ে,
সময় ধাবমান এই মহাকাল সাথে নিয়ে।
উপস্থিতি সময়ের নিখুঁত পরিমাপক,
সময় এক পায়ে দাঁড়ানো কানা বক।
এই যে ভাবছো,পড়ছো- কাঁপছে হৃদয়,
জেনো সবটাই উপলব্ধ সময়- অসময়।
সময় নদীর স্রোত নয়, থামেনা সে,
সময়ের ছবি আছে কালের ক্যানভাসে।
৯।
কবিতা একটা দরপত্রের নাম শুধু,
কবিতা নিজের নয় সে অন্যের বধূ।
অন্যের অনুভবে কাঁপে নিজের মন,
কবিতা কবিরও নয় শব্দের মিলন।
শব্দের গাঁথা মালা অক্ষরের বুনট,
কবিতা সকলের কথা বলে ঝটপট।
কবিতা সরল হয় মায়ের মতোন,
কালের সাক্ষী কবিতা জানে এ ভুবন।
কথারা কাব্য হয় কবিতার নামে,
দ্বীনের ক্লান্তি যেন রাত চুইয়ে থামে।
থাকে বাক্যে উপমায় কালান্তরের ছবি,
প্রকৃত কবিতার নাই কোন কবি।
কবিতা সায়ম্ভু অলৌকিক নয় সে,
সভ্যতার বিনির্মাণ কবিতার পরশে।
১০ ।
প্রেম একটা রোগ। মানবিক অভ্যাস।
প্রেম শাশ্বত সুন্দর, মানুষ প্রেমের দাস।
অভ্যাসের পথিক যেন পিঁপড়ার দল,
প্রেম কিছুনা, সরল মানবিক মনোবল।
পাঠকও ভাবছে প্রেম তবে কি এমন?
স্ববিরোধে কাঁপছে কবির দ্বৈত মন।
দয়িতার নাম যদি হয় কোন ফুলে।
তবে প্রেমের অংকুর নিশ্চয় সুপুষ্ট ফলে।
প্রেম কাহারে কয়? প্রেম কি তবে-
মায়ের দুধে ক্ষুধার পরাজয়? অনুভবে
এই সত্যতা ধরে রেখে ভাবি দিনমান।
প্রেম অমূল্য! আকাশ নয় মনের সমান।
প্রেম প্রেম করে কত তাল বাহানা,
প্রেম দু'চোখের অবারিত মুগ্ধ সীমানা।
কালের লিখন- কবি, লেখক, গীতিকার, পুঁথিকার, শিশু সাহিত্যিক, সাহিত্য সমালোচক, আত্মতাত্ত্বিক দার্শনিক, লোকসাহিত্য ও লালন গবেষক।
কালের লিখন
Reviewed by Pd
on
মে ০৯, ২০১৫
Rating:
Reviewed by Pd
on
মে ০৯, ২০১৫
Rating:

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
সুচিন্তিত মতামত দিন