দর্শনা বোস


বিদ্রোহী কবি নজরুলেরর কালজয়ী রচনা,তাঁর গান,তাঁর করা সুর মানুষের মনে চিরকালীন স্থান অধিকার করে আছে। এই বিদ্রোহী কবির দেশপ্রেমের দিকটি দু একটি ঘটনার মাধ্যমে তুলে ধরলাম।

বাঁকুড়া জেলার যুব ও ছাত্র সম্মেলন। সেখানে আবার নজরুলের ডাক পড়ল। কবি সম্মত হলেন।বাঁধনহারা কবি সম্মেলনের উদ্দেশ্যে যাত্রাও করলেন।  সম্মেলন হবে  বাঁকুড়া কলেজ প্রাঙ্গণে। ওই সময়ে কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন জনৈক ইংরেজ--নাম ব্রাউন সাহেব। বিদেশী হলেও সুপন্ডিত ব্রাউন সাহেব ও তাঁর স্ত্রী ভারতের মুক্তি আন্দোলনের প্রতি বেশ সহানুভূতিশীল ছিলেন।

গাড়ী থেকে নামলেন নজরুল, বাঁকুড়ার ছাত্র যুবক তাদের প্রিয় কবিকে জয়ধ্বনি দিয়ে স্বাগত জানাল। কবি অবাক হয়ে দেখলেন,নতুন দৃশ্য।উপস্থিত সকল যুবক ছাত্র মালকোঁচা পরা। সকলের হাতে সমান মাপের বাঁশের লাঠি। চোখেমুখে সূর্যালোকেরর রাজটীকা। যেন নতুন যুগের সৈনিকদল। বিস্মিত কবির বিস্ময় আরও বাড়ে। সে এক অপূর্ব ছবি। হাসি উজ্জ্বল মুখে কবি এগিয়ে গেলেন সারবন্দী ওই যুবসেনাদের সামনে। দেখলেন পাশাপাশি ওরা দাঁড়িয়ে। যেন যুদ্ধজয়ের যাত্রা। হিন্দু মুসলমান ভেদ নেই। চোখেমুখে দৃপ্ত শপথ - স্বাধীনতা, শান্তি, প্রগতি। কবি এবার গলা ছেড়ে অাবৃত্তি করলেন,

      "যে লাঠিতে আজ টুটে গম্বুজ, পড়ে মন্দির চূড়া,
       সেই লাঠি কালই প্রভাতে ভাঙিবে  শত্রু দুর্গ চূড়া।
         প্রভাতে হবে না ভায়ে ভায়ে রণ,
       চিনিবে শত্রু, চিনিবে স্বজন। 
         করুক কলহ, জেগেছে ত তবু, বিজয়কেতন উড়া,
         ল্যাজে তোর যদি লেগেছে আগুন,স্বর্ণলংকা পূড়া"

কবিতা শেষ,ভিড় ঠেলে করজোড়ে এগিয়ে এলেন মিস্টার ও মিসেস ব্রাউন। চারধারে বিপুল জনতার মধ্যে থেকে জয়ধ্বনি উঠল। বিপ্লবী কবির শিরায় শিরায় তখন ভাব উল্লাসের বিদ্যুৎ শিহরণ।  নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারেন না। কি সাংঘাতিক কান্ড।  ব্রাউন দম্পতি' র হাতে কিনা নিষিদ্ধ "বিষের বাঁশি " অার "ভাঙা গান"। ইংরেজ সরকার বাজেয়াপ্ত করেছে কদিন আগেই। বইগুলি যে অগ্নিঝরা বই। পাতায় পাতায় আগুন। বিস্মিত কবির প্রশ্নের উত্তরে ব্রাউন দম্পতির সহজ সরল উক্তি, দুর্মদ যৌবন অর তারুণ্যের ছন্দে ভরা এ বই, এই বৃদ্ধ বয়েসেও যেন নতুন করে উদ্দীপ্ত হই।

কবি এবার হুংকার দিয়ে উঠলেন,তাঁর রক্তে আবার দোলা লাগল। ভুলে গেলেন বর্তমানকে। মুহূর্তেই ফিরে গেলেন করাচীর সেই সেনাশিবিরে। বোমা, বারুদ,মেশিনগান অার ট্রেঞ্চ। বাইরে বেরিয়ে এসে উচ্চ কন্ঠে অাবৃত্তি শুরু করলেন,

      "ঐ খেপেছে পাগলি মায়ের দামাল ছেলে কামাল ভাই,
     অসুরপুরে শোর উঠেছে,জোরসে সামাল,সামাল ভাই।"



দর্শনা বোস দর্শনা বোস Reviewed by Pd on মে ০৯, ২০১৫ Rating: 5

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সুচিন্তিত মতামত দিন

Blogger দ্বারা পরিচালিত.