শৌনক দত্ত



নিউকোচবিহার রেলস্টেশন থেকে শহরের দিকে যে রাস্তাটি গেছে তার ডান পাশে বাইশগুড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় তার দুটো বাড়ী পেরিয়ে যে পথ মরা তোর্ষার পাড়ে শ্মশানে গেছে তার আগেই মানব কল্যান সংঘাশ্রম।আঠারো হাত বিশিষ্ট সারা বছর প্রতিষ্ঠিত দূর্গা ও নবমরাত্রি পূজা হয় বলে এই আশ্রমের আলাদা একটি সুনাম ও দর্শনপ্রিয়তা রয়েছে। আমি এই আশ্রমেই থাকি সংসারী হয়ে সন্ন্যাসী আচারে। কোচবিহার শহর থেকে খুব একটা দূরে না হলেও এখানের আশেপাশের গ্রামগুলো থেকে গ্রাম গ্রাম গন্ধ ভেসে বেড়ায়।

রাঙাদির মুখে গল্পটা প্রতিদিন শুনছি। সন্ধ্যারতি দিতে এসেই প্রতিদিন এই গল্পটাই রাঙাদি বলে প্রথমে। পাশের গ্রামের মিনতি কে নাকি ভূতে ধরেছে। গল্পটা প্রতিদিন কানে আসে কিন্তু আড্ডায় যোগ দিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করিনা।আজ বাজারে গিয়ে শ্যামলের কাছেও শুনলাম একই ঘটনা তবে মিনতি শ্যামলের প্রতিবেশি তার মুখে শুনলাম বড় রূপবতী মেয়ে আচার ব্যবহার খুব ভাল কোচবিহার কলেজ এ পড়ে। কে জানে কি হলো গত অমবস্যা থেকে সূর্য উঠার আগেই সে বাড়ীর সামনের পুকুরে নেমে পড়ে রাতে উঠে নিজের ঘরে ঢুকে পড়ে এভাবেই চলছে। অনেক চেষ্টা করেও কেউ তাকে জল থেকে তুলতে পারেনা আবার কেউ কেউ ভয় পায় মিনতি নাকি কতকথা বলে শাস্ত্রের অশাস্ত্রের। বিষয়টা কৌতহল জাগালো। আশ্রম এসে দেখি প্রচুর ভিড়। এত লোক দেখে একটু ঘাবড়েই গেছি। আমাকে আর শ্যামলকে দেখে একজন এগিয়ে এলো তার আর শ্যামলের কথায় বুঝলাম মিনতির ভয়ে সংঘাচার্যের কাছে গ্রাম ভেঙ্গে এসেছে সমাধানের সন্ধানে।

ভোরে এসে বসেছি পুকুর ঘাটে। পুকুরে মিনতি। আশেপাশের গ্রাম থেকেও লোকজনের ভিড় সময়ের সাথে সাথে বাড়ছে। মিনতি মন্ত্র বলছে পূর্বজনমের কথা বলছে। আমাকে দেখে শ্বেত পাথরের রাধাকৃষ্ণ,বটতলার গল্প বলছে। সূর্য ঢলে গেলে লোক কমতে থাকে আমি উঠিনা মিনতিও উঠেনা। আমি ঘাট ছেড়ে উঠতেই মিনতি জল থেকে উঠে এক দৌঁড়ে ঘরে। ঘরে এসে আঁড়ালে দাঁড়ায় মিনতি কিন্তু তার জানা ছিলো না তার ঘরে বসে থাকবো আমি মানব কল্যান সংঘাশ্রমের গুরু। তন্ত্র মন্ত্র করা ডুগডুগি পাগলা,ইমান দরবেশ আরো কয়েকজন।

বাবা ওরে চন্ডালে ধরছে। ডুগডুগি পাগলা বলে ওঠে। ইমান দরবেশ দ্বিমত তার মতে মিনতির উপর জীনের আছড় পড়েছে। গুরুজী হাত তুলে সবাইকে থামিয়ে দিয়ে ইশারায় বাইরে যেতে বললেন। ঘরের বাইরে আমরা সবাই প্রতীক্ষায় বাবা বেরিয়ে এসে বললেন মিনতির বাবা মা কোথায়? উনারা এগিয়ে এলেন। আমাকে পাঠানো হলো শহরে।অনেক খুঁজে দীপেশকে বের করলাম সে কিছুতেই আসবে না আমার সাথে অগত্যা শূন্য ফিরতে হলো। বাবা এলেন দীপেশের বাড়ীতে ওর মা বাবার সাথে কথা বললেন। অনেক বাকবিতন্ডা পরিশেষে মিটলো। দীপেশের বিয়ের তারিখ ঠিক করা হলো।

সময় নিরন্তর হাঁটে,আজ মিনতি আর দীপেশ আশ্রমে কোল আলো করে আছে তাদের সন্তান। বাবা আমাকে ওদের সন্তানের নাম রাখতে বললেন আমি রাখলাম মন্ত্র.নেহাত বাবা সেদিন বুঝেছিলেন মিনতি দীপেশের সন্তান গর্ভে নিয়ে মরতেও পারছেনা লোকলজ্জার ভয়ে জলেই লুকিয়েছিলো নিজেকে ...।


পরিচিতি

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ