" আজও দেরী করলে
মাসি? এ
সময় টা
একা আমি
কি করে
পেরে উঠি
বলতো??"- দরজা খুলতে খুলতে ব্যস্ত
স্বরে বলে
উঠল সৌমি.. উমনো-ঝুমনো চুলে
ছিটে বিরক্তি।" যাও যাও সিংকের এঁটো
বাসন গুলো
তাড়াতাড়ি মেজে
দাও, তোমার
দাদা কে
খেতে দেবো
যে.."
তড়িতে সিংকের বাসন
গামলায়, প্লেট
আর বাটিতে
সাবধানে লিকুইড
সাবান ঘসে
জালি দিয়ে.."
দেরী কি
আর সাধে
হয় গো?
পলুর বাপের
জ্বর টা
যে কিছুতেই
সারছেনি.. অটো টা বাড়িতে পড়ি
আছে, পলুর
বাপের বন্ধুরে
ভাড়া খাটতি
দে এছি..
সোম্সার টা
তো চালাতি
হবে।"
" জ্বর সারছেনা কেন?
সেদিন যে
হিয়ার বাবা
তোমায় ৫০০
টাকা দিলো..
তার কি
হলো? ব্লাড
টেষ্ট করাওনি
বুঝি?"- ফ্রাইংপ্যানে মাছ টা উল্টে
দিয়ে প্রশ্ন
ছুড়ল সৌমি।
পলকে মুখ নিচু,
গলায় কাঁপন। " আজ্ঞে তা তো
দিয়েছে.. কিন্তু
সে টাকা
পলুর বাপ
রাখলি তো..মারধোর করে
ছাইড়ে নিলো
আর সব
টাকা গেনুর
ভাঁটিখানারে দে আসলো.. এই দ্যাখো
গো একোনো
দাগ আচে।"
চট্ করে দেখে
নিলো দরজাটা..
নাহ এখনও
বাথরুম থেকে
বেরোয়নি তরুন। শুনলে
যে কি
ভাববে! বিতৃষ্ণা.. বিতৃষ্ণা।
ভালো লাগছে না কিছু সৌমির.. কিচ্ছুনা। এই
পলুর মাকে
সে তরুনের
থেকে বলে
কয়ে টাকাটা
পাইয়ে দিলো,
আর আজ
তার এই
অবদান? "নিয়ে নিলো" আশ্চর্য তুই
কিছু বলবি
না?? স্বামী
বলে?? বেইমান
বেইমান.. কাউকে
বিশ্বাস করতে
নেই।
নাহ্!!
তরুন বেরোলে এক কাপ চা
ভালো করে
খেতে হবে,
মাথা টা
হ্যাং হয়ে
রয়েছে।
এরপর তো
আবার হিয়ার
সুনামি শুরু
হবে.. স্কুলে
আছে তাই
ঘরটা জিরোচ্ছে
একটু.. উফ্।
কি হলো এসো..
টেবিলে ভাত
দিয়েছি।
"- টিফিন-বক্স গুছোচ্ছে সৌমি। ইদানিং
একটু ফ্যাট
জমেছে তরুনের,
তাই টিফিনে
ফলই দেয়..
আর আলাদা
কৌটোয় অল্প
একটু টকদই। কি
যে বিরক্ত
হয় তরুন। রোজ
এইসময় মুখখানা
দেখলেই হাসি
পায় সৌমির। বাচ্চা
একদম।এখনও টিফিন
নিয়ে ঘ্যানঘ্যান
করে।
উফ্ কি যে জ্বালা.. দুটো বাচ্চা নিয়ে
জেরবার।
এক- হিয়ার,
দ্যা লেডি
গুন্ডা.. আর
এক.. কে
আবার উনি
স্বয়ং।
নাজেহাল সৌমি..
" এই আসছি" -তরুন
ব্যাগ নেয়।"
"এই যে টিফিন
আর জল..
সবটা খেয়ো
কিন্তু"
" আচ্ছা ঠিক আছে,
এখন দাও"-
মিচকে হাসে
তরুন।
" উফ্ এখনও?.. এই
যে..এবার
এসো, মাসি
আছে।"-
সৌমি ঠেলে
সরিয়ে দেয়
তরুনকে।
কী যে করে
না.. বিয়ের
আট বছর
হয়ে গেল..
সেই প্রথম
দিনের দুষ্টুমি
টা ভোলেনি।- চকচকে
মুখটা লালচে
হয়ে যায়
সৌমির।
দরজা বন্ধ করে
তড়িঘড়ি ওপরে। মাসি
বোধহয় ঘর
মুছছে, একটু
থাকতে হয়
কাছে..কোন,
টেবিল আর
খাটের নিচ
সুযোগ পেলেই
মোছে না
মাসি।
তার ওপর
টানা বকবকম.. কী করে যে
পারে মাসি..
শুনলে মাসি
একটু খুসি
হয়, তাই
শোনে ও..
কেই বা
শোনে ওদের
কথা.. এটুকুতেই
যদি খুশি
হয় তো
হোক না। নাহ্
অমন অকেজো
মারকুটে বর
নিয়েও ভালোই
আছে মাসি..
অজান্তেই মন
টা ভালো
হয়ে যায়!
এগুলোই সুখ। আহ্..
কিন্তু এই চিনচিনে
ব্যাথাটা আবার
কিসের? অকারণেই
মন ভার,
পাথর চেপে
আছে মনে
হচ্ছে।
সৌমি কি
ভালো নেই?
চোখ পাকায়
মনকে, ঠারেঠোরে
ধমকায়।
" ভালোই তো আছিস,.. সুখে থাকতে
কোন ভুতে
কিলোয় তোকে?
যত্তসব...
এককাপ চা নিয়ে
ড্রইং রুমের
সোফাটায় হেলান
দিলো.. বেডরুমের
ছয়/সাতের
ছড়ানো কাগজ
গুলো সেন্টার
টেবিলে গুছিয়ে
রেখেছে মাসি। পড়বেক্ষন
পরে।
বাড়িঘর এত
নোংরা করে
তরুন.. বিশেষ
করে অফিস
যাওয়ার সময়টাতে!
নাহ্ মাথাটা এখনও
টিপটিপ করছে,
চা টা
কি ভালো
ছিলো না?
তা কি
করে হয়?
মকাইবাড়ি টী
এস্টেটের সবথেকে
দামী চা
তো এমন
বিট্রে করে
না.. নাকি
সৌমির সেই
মনটাই আবার
জাগছে? যা
মাঝেমধ্যেই আপাদমস্তক নাড়িয়ে দেয় ওকে।
ভালোই তো আছে..
তরুন-হিয়া-শ্বশুরবাড়ি-বাপেরবাড়ি-শপিং-পার্টি-বেড়ানো সব.. সব রয়েছে।
তবু.. কী
যে নেই..
দক্ষিণেরর বারান্দায় চড়ুই
টা অনেকক্ষণ
লাফাচ্ছে, সৌমির দিকে একবার তাকিয়েই
লেজ নাড়িয়ে
সটান ফুড়ুৎ। পাথরের
মেঝেতে পালক
পড়ে আছে
একটা, তাকিয়ে
আছে সৌমি..কোথা থেকে
একটা হাওয়া
এসে উড়িয়ে
দিলো পালকটাকে..
বড্ড হালকা। চিলেকোঠার
কবিতা গুলোও
এমন
এলোমেলো হয়ে গেছিলো বোধহয়..ওগুলো
তো হালকাই
ছিলো।
তাকিয়েই আছে
সৌমি.. ওর
তো অনেক
কিছুই পড়ে
আছে এখনও
ওই চিলতে
ঘরটাতে...
পরিচিতি |
1 মন্তব্যসমূহ
গল্প টা কেমন তা বলার তঘেকে বরং এটা বলি যে গল্প টা পরে আমার কি প্রতিক্রিয়া হলো। অফিসে বসে আছি, কাজের ফাঁকেই টুকটাক ফেসবুক আর তাতেই এই গল্পের সন্ধান পাওয়া। এমনি তে তো সকাল থেকে ভালই ছিলাম, বেশ কাজ কর্ম করছিলাম। গল্প তা পড়েই সেই চিনচিনে ব্যথাটা আমিও টের , বুঝলাম ভালো থাকতে গেলে কবিতা দের এড়িয়ে চলতে হয়।
উত্তরমুছুনসুচিন্তিত মতামত দিন