একধাপ করে নামতে নামতে সূর্যটা সাথে সাথে পথ চলছিল। গাড়ি মোড় ঘুরতেই আবার মোহরকুঞ্জের গাছের আড়ালে লুকালো বোধহয়। খুব একা লাগছিল নিজেকে । রবীন্দ্রসদন পেরিয়ে হরিশ মুখার্জী রোডে গাড়ি ঢুকতেই আধখোলা কাঁচ টপকে এক ঝলক ঠান্ডা বাতাসের সাথে সানাই-এর সুর ভেসে এল ।
বিয়ের পর থেকে সানাই শুনলেই আমার মনে পড়ে মা'র মুখ আর কনকাঞ্জলি দিতে দিতে অবাধ্য মেয়ের গোঁজ হয়ে বলা ,"তোমার ঋণ শোধ করলাম মা ।" বলতে চাইনি , বলিনি মন থেকে, তবু অজানা অমঙ্গলের ভয় দেখানো কিছু বাজে নিয়ম বলিয়ে নিয়েছে জোর করে। এত অনিচ্ছায় যে কথা বলতে হয়েছিল সে কথা যে এত নির্মম সত্য হয়ে উঠবে এ কথা জানা ছিল না তখন।
মা অসুস্থ হয়ে নার্সিংহোমে-আমি জানলাম না । মা চলে গেলেন-আমি জানলাম না। জানানো হল , মাকে দাহ করে ফেরার পর । কিন্তু আমার কান্না বারণ । কারণ ? আমি পূর্নগর্ভা । কাঁদলে যদি অনাগত সন্তানের কোনও ক্ষতি হয় ? আমার নাড়ির সাথে আরও একটা প্রাণ জড়িয়ে আছে যে ! আমি কি ছিলাম না এভাবেই মা'র সাথে জড়ানো ? কেউ ভাবলো না একবারও ।
এর ঠিক পনের দিন পর যমে-মানুষে টানাটানির পর 'বৃষ্টি' এল । সবাই বলল , মা ফিরে এসেছেন । ভাবতে ইচ্ছা করল খুব, এখনও তাই ভাবতে চাই কিন্তু বিশ্বাস অন্য কথা বলে । মা'র জন্য যত কষ্ট পাই এত কষ্ট আর কারও জন্য পাই না। যখন তখন কাঁদি বাচ্চা মেয়ের মতো , শুধু একটা দিন ছাড়া । মা'র মৃত্যুবার্ষিকীতে সব চোখের জল শুকিয়ে যায় , খালি মনে হয় আমার কাঁদা বারণ । সারাদিন পাথর হয়ে থাকি , মনে হয় কাঁদলেই মা হারিয়ে যাবেন ।
বছর গুনি এক এক করে । দেখতে দেখতে নয় বছর পেরিয়ে গেছে । এমনি করেই বৃষ্টি বড় হয়ে যাবে । একদিন সেও অনিচ্ছায় কনকাঞ্জলি দিয়ে আমার সব ঋণ শোধ করে দেবে । কিন্তু মৃত্যুশয্যায় শুয়ে আমার কি একবারও ইচ্ছা করবে না , মেয়েটাকে একবার দেখি ? আমার মা'র কি একটুও করে নি ? একবারও কি অভিমানে মনে হয় নি , মামনি এলো না কেন ? নাকি , একমুঠো চালের নিক্তিতে মমতার ঋণ শোধ হয়ে যায় বলে এটুকুও চাইতে নেই ? একথা বললে কেউ বুঝবে না যে শুধু মেয়ে হয়ে নয় , একজন মা হয়ে আমি মা'র জন্য বেশি কষ্ট পাই ।
![]() |
| পরিচিতি |
সোনালী ব্যানার্জী
Reviewed by Pd
on
ডিসেম্বর ১৬, ২০১৪
Rating:
Reviewed by Pd
on
ডিসেম্বর ১৬, ২০১৪
Rating:


কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
সুচিন্তিত মতামত দিন