কথা ছিল উঁকি
দেবো অন্দরে। ভাবনা
ছিল বুড়ি
ছোঁয়া করে
পালিয়ে যাব
অন্য জীবনে। এই
একটু ব্যকরণ
শিং আর
একটু থতমত
মিশিয়ে হয়ে
যাবে ‘ইস্পানিশ’
পন্ডিত।
হায় রে!
সে যদি
দেবতার সহ্য
হতো! গিয়েছি
সবে প্রথম
দিন বুক
ঢিপ ঢিপ,
কৌতূহল আর
হুড়োহুড়ি নিয়ে। ভাবনা
এমন - ভাষা
টা বিদেশে
বলে টলে
আম্মো শিকে
নেবো ঝট
করে আর
ফুটফাট ঘ্যাম
দেকাবো।
শুধু প্রথম
পরিচয়েই মনে
হলো এটিকে
পর্যবেক্ষণ করতে হবে আরো বেশ
কিছুদিন।
টিউবে রাখা
টেস্ট করা
শিশুদের যেমন
নিখুঁত তদারকি
তে রাখেন
ডাক্তারবাবুরা। প্রথম আলাপ হয়েছিল
ঘটনাটার দেড়
বছর বাদে। গিয়েছি
একটি বইবাসা
মানে লাইব্রেরীতে। উদ্দেশ্য
কিছু ব্যকরণ
খামচাতে হবে
ইতিউতি।
র্যালক থেকে
ঘাঁটতে ঘাঁটতে
হঠাত হাতে
এলোঃ-
আকাশের প্রজাপতি, কি
সুন্দর গো
তুমি!
আকাশের প্রজাপতি সোনালি
ও সবুজ!
মোমবাতির শিখা, আকাশের প্রজাপতি
ওখানে থাকো তুমি,
ওখানে ওখানে
ওখানেই...
তুমি চাও না
থামতে, বিরত
হতে যে
চাও না
তুমি
আকাশের প্রজাপতি, সোনালি
ও সবুজ!
ওখানে থাকো তুমি,
ওখানে ওখানে
ওখানেই...
মোমবাতির শিখা, আকাশের
প্রজাপতি
ওখানেই থাকো তুমি!
প্রজাপতি, আছো কি?
আহ কি অপূর্ব
আলো ছড়িয়ে
গেলো মনের
ওপর।
অন্য ভাষার
কথা কিন্তু
মনে কেন
দোলা লাগালো
‘জল পড়ে
পাতা নড়ে’-র মত?
তাকিয়ে দেখি
কবির নাম
ফেদেরিকো গারসিয়া
লোরকা।
স্পেনের তৎকালীন
বহুনিন্দিত আর সমকালীন স্পেনের নন্দিত
এবং আঁতেল
বাঙালির প্রিয়
কবি গারসিয়া
লোরকা-র
সেই আদর
কি আমরা
করেছি? বিচ্ছিন্ন
কিছু কবিতা
হলেও নাট্যকার
লোরকা, কবি
লোরকা, চিত্রনাট্যকার
লোরকা, অপেরা
সৃষ্টিকারী লোরকা, রিপাবলিকান দের হয়ে
গলা ফাটানো
লোরকা যে
কত বিস্তারি
প্রভাবশালী তা কজনা খবর রাখি!
সেকালে তাঁর
গায়ে তকমা
ছিল সমকামী। দালি
ও বুনুয়েলের
সঙ্গে বন্ধুত্বে
বহু অমর
সৃষ্টি হতে
পারত, যদি
না মাত্র
৩৮ বছর
বয়সে হঠাত
খুন হয়ে
যেতেন তিনি
স্পেনের গৃহযুদ্ধের
সময়। চলকে উঠলো মন
এই কবিতাটি
পড়ে।
দুটো শরীর মুখোমুখি
মাঝে মাঝে ওরা
ঢেউ
আর রাত হয়ে
যায় সমুদ্র।
দুটো শরীর মুখোমুখি
মাঝে মাঝে ওরা
পাথর
আর রাত হয়ে
যায় মরুভূমি।
দুটো শরীর মুখোমুখি
মাঝে মাঝে ওরা
শিকড়
রাতের বেলা ওরা
পরস্পরকে পেঁচিয়ে
থাকে।
দুটো শরীর মুখোমুখি
মাঝে মাঝে ওরা
ছুরি
আর রাত হয়ে
যায় বিজরী।
দুটো শরীর মুখোমুখি
ওরা দুটি নক্ষত্র
হয়ে
মহাশূন্যে পড়ে আছড়ে।
এটির স্রষ্টা ওক্তাভিও
পাস।
মেক্সিকোর এই কবির এ বছর
শতবার্ষিকী। নোবেল জয়ের কারণে
ই শুধু
নন, ভারতে
মেক্সিকোর রাষ্ট্রদূত হয়ে থাকার সুবাদে
বাঙালির খুব
চেনা কবি
তিনি।
আমি কি
না গোমুখ্যু
তাই এর
আগে এঁর
কোনো কবিতাই
পড়ি নি। তা
এক পক্ষে
ভালোই হয়েছে। এক্কেবারে
কট এন্ড
বোল্ড।এর পরে সাক্ষাৎ এই কবিতাটির সঙ্গে। উফফফ কবিতা পড়ে চোখে জল চলে এলো... শুধু মনে হতে লাগলো ...এতদিন কোথায় ছিলে? সেইটেকে অনুবাদ করে ফেললাম দ্রুত-
আমি তোর
নাম দিলাম
নূরজাহান।
তোর চেয়ে উঁচু
অনেকে আছে
রে,উচ্চতমা।
তোর চেয়ে পবিত্রও
অনেকে আছে,
পবিত্রতমা।
তোর চেয়ে সুন্দরী
তো অ-নে-কে,
সুন্দরীতমা।
কিন্তু, তুই
ই আমার
নূর।
যখন পথ দিয়ে
হেঁটে যাস
তোকে কেউ
চিনতে পারে
না।
তোর মাথার স্ফটিকের
মুকুটটা কারো
চোখে পড়ে
না,
কেউ দেখে নাতোর
সোনালী লাল
মখমল কার্পেটটাও
,
যেটারওপর দিয়ে তুই
হেঁটে যাস,
যেটার আসলে কোন
অস্তিত্বই নেই।
আর যখন তুই
ভ্রূভঙ্গী করিস
সব নদীগুলো আমার
শরীর জুড়ে
ঝড়ের আওয়াজ তোলে,
আকাশেপাগলা ঘন্টি নাড়ায়,
আর পুরো পৃথিবী
জুড়ে মন্দ্রিত
হয় মন্ত্র।
শুধু তুই আর
আমি,
শুধু তুই আর
আমি,
সোনামণি,আমরা যে
তাই শুনি।
এ শুধু একজনাই
লিখতে পারে...
তাঁর নাম
পাবলো নেরুদা। স্প্যানিশ
ভাষায় এত্ত
কিছু আছে?
হায় হায়
এখন আমি
নড়ে যাবো
কি করে?
আর কেনই
বা যাবো?
এঁর ভেতর
আরো না
জানি কত
কীই আছে। খিদে
বাড়তে লাগছে। চিলের
এই কবি
নাকি আমাদের
রবি ঠাকুরের
প্রভাবে প্রভাবান্বিত
ছিলেন ।“তুমি সন্ধ্যার
মেঘমালা” গানটি
নাকি ওনাকে
যথেষ্ট বিচলিত
করে এবং
তিনি অনুরূপ
একটি কবিতাই
লিখে ফেলেন। মন্দ
লোকে তাকে চুরি বিদ্যা
বলে... কিন্তু
সব মহান
চিন্তক ই
কি কোথাও
না কোথাও
একই ভাবনায়
জারিত হন
না? ওরে
বাবা সে
সব বিদ্যে
বোঝাই লোকজন
ভাবুন আমার
তাতে কাম
কি! আমি
বরং ডুবে
যাই স্প্যানিশ
সাগরে।
ওই তো
ছেঁচে আনলাম
লেওন ফেলিপে
কে।
ইনিও স্পেনের। আসলে
স্পেনে ১৯৩৬
সাল থেকে
হওয়া গৃহযুদ্ধ
চলাকালীন শিল্পের
উত্তুঙ্গ শিখরে
পৌঁছান বহু
দিকপালেরা। এই কবিতাটি লেওনের-
কুঠার...এক প্রতীক
বেশ চলো ঘুমোতে
যাই,
ধুলোমাঠে বিশ্রামে,
এখানেই,
মাটিতে চিরকালের জন্য।
তুমি আমি আর
স্বদেশ স্পেন
আমরা ধুলিকণার চেয়ে
বেশি কিছু
তো নই।
ধুলো,
ধুলো,
ধুলো...
আমাদের শুধু কুঠার
কেবল,
কুঠার আর মরুভূমি
পীত মরুভূমি
যখন আর রয়ে
যায় না
শিকড় নয়
পাখি নয়
স্মৃতি নয়
মানুষ নয়
স্পেন,
কেন তুমি বিশ্বাসঘাতকদের
মা হয়েছ
সবসময় কেন মা
ক্ষোভ তিক্ততাময়
ধুলোর জন্ম
দাও?
প্রতিবাদের ভাষা সব
দেশেই এভাবেই
মূর্ত হয়েছে
বারবার।
এ সাগর
ডেড সী
নয় এ
হল অমৃত
সাগর।
যথারীতি সাগর
ছেঁচে তুলে
আনলাম আর্জেন্টিনার
কবি খুলিও
কোরতাসারকে । ওনাকে প্রথম চিনি
একটি ছোট
গল্প পড়তে
গিয়ে।
ওরে বাপস!
কবিতা লিখেছেন
ইনি একটি
নমুনা দেখাই
তাহলে-
এখন পাখিদের লিখি।
ওদের আসতে দেখি
না।
ওদের পছন্দও
করে উঠি
না ,
হঠাৎই ওরা এখানে
, এই এরাই,
এক ঝাঁক শব্দেরা
বয়ে যেতে থাকে
একটার
পর
একটা
পাতার তারজালিতে ,
কিচকিচ, ঠুকঠুক করতে
থাকে , ডানার
বৃষ্টি ঝরে
আর আমি তাদের
না দিয়েই
রুটি ছড়াই,
কেবল
তাদের আসতে দিয়ে
ওগুলোকে ফেলে
রাখতে থাকি। বোধহয়
ওটাও এক বৃক্ষ
অথবা হয়ত
ভালোবাসা।
এনার কথা প্রথম
বলেন আমাকে
আমার এক
স্পেনীয় বান্ধবী। তাঁকে
আমি বড়
ভালোবাসি।
তাঁর প্রিয়
কবি ইনি
সেকথা জেনে
খোঁজ খোঁজ
খোঁজ... চমক
পরতে পরতে। এই
কবির কারাবাস
দীর্ঘ।
অসুস্থ অবস্থায়
জেলে মারা
যান রাজবন্দী
হিসাবে।
দোষ হল
রাজার বিরোধিতা
করা! নাম
তাঁর মিগেল
এরনান্দেস।
এবার তার
একটি নমুনা
দেখাই-
তোমার গর্ভ
ছাড়া,
সব কিছু ধন্দ্ব।
তোমার গর্ভ ছাড়া,
সব ই তো ক্ষণমুহূর্তেরভবিষ্যৎ,
বন্ধ্যাঅতীত, কর্দমাক্ত।
তোমার গর্ভ ছাড়া,
সবটুকু গোপন।
তোমার গর্ভ ছাড়া,
সবটাই অনিশ্চিত,
সমস্ত প্রস্থিত,
ধুলারাশি মাটি হীন।
তোমার গর্ভ ছাড়া,
সব বড় অন্ধকার।
নির্মল ও গভীর
তোমার গর্ভ ছাড়া।
মারিও বেনেদিত্তি।
সেসার ভাইয়েখো,
খোসে মারতি,
সর খুয়ানা
ইনেস দে
লা ক্রুস,
গাব্রিয়েলা মিস্ত্রাল... আরো কত কত
নাম বাকী
রয়ে গেল...খাইমে সাবিনেস
সমসাময়িক কবি। আমার
পড়া সবচেয়ে
বলিষ্ঠ কবি
ইনি।
এঁর অনুবাদ
আজ পারলাম
না দিতে। অন্য
কোন প্রসঙ্গে
জানানো যাবে। ঝটিতি
এক তরুণ
কবির কবিতা
দিই।
মহিলা আমাদের
সমসাময়িক।
নাম তাঁর
আলেখান্দ্রা পিসারনিক। আর্জেন্টিনার কবি। অকালে
প্রয়াত।
তুমি যদি সাহস
করে আশ্চর্য
হতে চাও
এই বুড়ো দেওয়ালটার
সত্যিটা জেনে
তার ফাটলগুলো , তার
চোখের জল
কিভাবে
গড়তে থাকে মুখের
আকার, স্ফিংক্স
,
হাত , বালুঘড়ি ,
একটা উপস্থিতি নিশ্চিত
আসবে তোমার তৃষ্ণা
মেটানোর জন্য
,
আর তোমাকে শুষতে
থাকা এই
অনুপস্থিতি
সম্ভবত চলে যাবে।
মনে মনে ভাবি। জীবন সীমিত। সাহিত্য অনন্ত। কি করে পারব গণ্ডূষে সবটা শুষে নিতে! আমি তো অগস্ত্য নই নই জাদুকর ম্যান্ড্রেক ও। তবু আমায় ডুবাও আমায় ভাসাও হে প্রিয় ভাষা। আজ তোমার হাতেই তুলে দিলাম আমার এই অর্ঘ্যঃ-
ইচ্ছে ছিল একটা
মারকাটারি প্রেম করি।
শর্মিষ্ঠা রত্নদীপা সোনালি
ঝিলিমিলি কিংবা
শিবলি শোণিত
চন্দন রাও
নিশ্চয়ই তাই
চেয়েছে।
অথচ বইয়ের ভাঁজে
শুকিয়ে চ্যাপ্টা
হয়ে যাওয়া
গোলাপের মত
প্রেমটা নেতিয়ে রইল
শুধু।
সেই চূড়ান্ত যুবতীবেলায়
উঠতে ফিরতে আড্ডা
দিতে দিতে
এমনকি ঘাম দিয়ে
জ্বর ছাড়তে
ছাড়তেও তোমাকে
চেয়েছি।
অথবা চাকরিতে জয়েন
করে প্রথম
দিনের গল্প।
আচ্ছা প্রেম মানে
কি ফুল
তারা চাঁদ
পাখি ?
অফিসের বস কাজের
চাপ নতুন
কেনা জিন্সটার
ফিটিংস কেমন
হল
সব কিছুতেই তো
তোমাকেই চেয়েছি।
বৃষ্টি বাদল দিনে
এক হাঁটু
জলে ট্রামলাইন
ধরে হাঁটতে
হাঁটতে
ট্যাক্সিওয়ালাদের শাপশাপান্ত করে
আঁকড়ে ধরতে চেয়েছি
তোমার বুকের
ভেজা বোতাম
স্নানঘরে জলের ঝারিতে
ভিজতে ভিজতে
যখনআমার আঙুল
ছুঁতে চেয়েছে
তোমার প্রতিটি অন্ধি
সন্ধি অচেনা
চিরচেনা মানচিত্র
তখনো...
ইচ্ছে তো ছিল
একটা ঘন
আশ্লেষ ভরা
প্রেম করি
কলম কম্পিউটার প্রিন্টারের
মাঝে ভ্যাবাচ্যাকা
আমি
তোমাকে ভাবতে ভাবতে
রগ টিপে
ধরেছি ব্যাথায়।
রগে রাগে ডিপ্রেশনে
স্লিপিং পিলের
চক্করেও
তোমাকে বহুত মিস্
করেছি মি
কারিন্যিও।
তুমুল প্রেমের ইচ্ছে
আমায় ভিজিয়েছে
বারবার
অবশেষে তুমি এলে
আমার জীবনে। ভেবো
না
চুম্বনে অনাদরে কামনায়
বিতৃষ্ণায় জরজর তোমাকে চিরসাথী করে
রাখবো
হে স্প্যানিশ ভাষা...
তোমাকে স্বাগতম।
![]() |
| পরিচিতি |
জয়া চৌধুরী
Reviewed by Pd
on
নভেম্বর ২১, ২০১৪
Rating:
Reviewed by Pd
on
নভেম্বর ২১, ২০১৪
Rating:


কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
সুচিন্তিত মতামত দিন