![]() |
| পরিচিতি |
সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ। পুজো এবার আর্লি । পয়লা অক্টোবরই সপ্তমী পড়েছে । অষ্টমী নবমী একই দিনে । একটা ছুটি মিস। গান্ধিবাবার জন্মদিনের ছুটিটাও ফাঁকিবাজ কপালে এবার বাড়ন্ত । ভোরে রাধিকাপুর এক্সপ্রেস এ কোলকাতায় নেমেই ফেসবুকে স্ট্যাটাস মারা হয়ে গ্যাছে । তিনটে অব্ধি আছি কোলকাতায় । রায়গঞ্জ ছেড়ে আসার সময় দেখে এসেছি প্যান্ডেল বাঁধা চলছে । চন্দননগরের লাইটিং ।
মনটা একটু একটু খারাপ । গ্যাল পুজো । এবং অঞ্জলি । এবং টই টই । এবং ফাস্টফুড । এবং মেলা । এবং রাতজাগা । কোলকাতায় আমাদের আস্তানার কাছেই একটা পুজো হয় । জোড়তোড় সেখানেও । যাক , ভাইদের সাথে দ্যাখা হবে । চিয়ার আপ । বুম্বুম আছে ওখানে । আমার মেয়েরাও খুশি । আর মা তো ফেব্রুয়ারি মাসে কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্টএর পর ভাইকে দ্যাখেই নি । খুব টেনশানে আছে । আমার বর একটু গাইগুই করছে । ওর বাড়ি যাওয়া হোল না পুজোয় । ওকে বললাম ফিরে এসে যাবো । মেয়ের ছুটির হিসেব মেলাতে গিয়ে এরকম ডেট ফিক্স করতে হয়েছে । কি আর করা ।
নটায় আসার কথা ছিল । অ্যাস ইউজুয়াল লেট । জয়ী এলো পৌনে দশটায় । রেডি হয়েই ছিলাম । প্রি পেইড ট্যাক্সি উড়িয়ে নিয়ে চলল দক্ষিণেশ্বর । জয়ী পুজো দিল । আমি নমো নমো । রোদ্দুরে বিশাল লাইন । ছাতা আনতে ভুলে গেছি । ফোনটাও ।
লাইনে দাঁড়িয়েই আমার অর্ধাঙ্গকে জয়ীর নাম্বার টা দিয়ে রাখলাম । সেলফি তুল্লাম ভুলভাল । ঘাটে দাঁড়িয়ে এবং আঘাটায় । পেটে ছুঁচোর কেত্তন টের পাচ্ছি । ভয়ে বলছি না । এমনিতেই ভক্তি কম বলে চাপে থাকি । যাক , পূজারিণীরও মনে হল অবশেষে , মাথা ধরেছে । আমি সুযোগটা হাতছাড়া করলাম না । বলে উঠলাম , খালি পেটে থাকার জন্য গ্যাস হয়েছে বোধহয় । নিয়ে গ্যাল এক ধাবায় । তন্দুরি চিকেন আর লাছছা পরোটা সাঁটিয়ে গন্তব্য ওর কোয়ার্টার ।ঢুকতেই ওর ছেলে জয়জিৎ অভিযোগ জানালো , ওদের আমি এখনো কেন নেমন্তন্ন করি নি আমাদের বাড়ি । সত্যিই তো । চটপট ভুল স্বীকার করে রেহাই পেলাম সে যাত্রা । আড্ডা জমে গ্যালে সময় ফুড়ুৎ । তিনটে বাজে । আমার বাড়ির লোকের ফোন আসা শুরু হয়ে গ্যাছে । এর মধ্যেই আবৃত্তিকার প্রযুক্তি আর সুব্রতবাবুর ফোন পেলাম । ওদের বাড়ি নেমন্তন্ন করলেন । এবার স্বীকার করার উপায় নেই । ফের আসছি বইমেলার সময় । তখন দ্যাখা করবো কথা দিলাম। গল্পকার শীর্ষেন্দু দত্ত কে কথা দিয়েছিলাম , কফি হাউসে আড্ডা মারবো । তাও মুলতুবি । অবশেষে পৌনে চারটায় আমাদের বাড়ি থেকে আমার দুই কন্যা , তাদের পিতৃদেব এবং আমার মা কে পিক আপ করে সোজা দমদমএয়ারপোর্ট । জয়ী আমাদের সি অফ করে গ্যাল । গোটা রাস্তা আমার বড়মেয়ের সাথে বকবক করেছে । বাবাই তো খুব ফ্যান হয়ে গ্যাছে জয়ী মাসির । পথে দ্যাখা দুগগা মায়ের সাথে । অবোধ সন্তানেরা বাঁশের কাঠামোয় বেঁধে দুর্গা প্রতিমা নিয়ে যাচ্ছে মণ্ডপে । সে নিয়ে খানিক গুলতানি হল ।
এয়ারপোর্টে ঢোকার মুখে বাঁ দিকে এক ফাঁকা জমিতে কাশের গুচ্ছ । বাবাইকে দ্যাখালাম । চেক ইন হয়ে গ্যাছে প্রায় । একটা হ্যান্ড লাগেজ আটকে দিল । মা ভালোবেসে সমর্পিতার জন্য এক কেজি ঘি নিয়েছে । ব্যাস , সেটার জন্য এক্সট্রা পাঁচশো টাকা দিয়ে এক্সট্রা কেবিন লাগেজ হিসেবে দেখাতে হল । পরতায় পোষায় না ঘিয়ের দাম বিচার করলে । একবার ভাবলাম বলি , ওটা তোমরাই রেখে দাও , বাল বাচ্চা সহ খেয়ে নিও , কিন্তু মায়ের সেন্টিমেনটের কথা ভেবে বাদ দিলাম ।
আগেরবার হায়দ্রাবাদে থাকা কালীন এটি তেলেঙ্গনার স্বীকৃতি পেয়েছে । সেই সময়কার বাজি আর ফুলের উৎসব মনে পড়ে গ্যাল । আর ঘগোলাপি পার্টির লোকজনের উচ্ছ্বাস । চন্দ্রবাবু নাইডুর হাতে গড়া হাইটেক সিটি বেহাত হয়ে গ্যাছে । শহর জুড়ে নয়া মুখ্যমন্ত্রীর কাট আউট । চন্দ্রবাবু বেচারাকে বিজয়ওয়ারা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে । এয়ারপোর্টে ঢুকতেই বিশাল বিশাল ফুলের তোরণ । ওদের ফুলের উৎসব চলছে । বেরোতেই দেখি ভাই দাঁড়িয়ে আছে গাড়ি নিয়ে । চল্লিশ কিলোমিটার রাস্তা ওর রেইন ট্রি পার্কের ফ্ল্যাট থেকে এয়ারপোর্ট । নিজে এসেছে ড্রাইভ করে । বুকের ভেতরটা আবেগে ভেসে যাচ্ছে । ছমাস আগে ওকে রেখে গেছি ঘরে বন্দী । একগাদা লাইফ সাপোর্টিং সিস্টেমের ভরসায় । সে আজ এভাবে , এখানে , আনন্দ আর অশেষ কৃতজ্ঞতা ঈশ্বর নামক ভদ্রলোকটিকে । যাই হোক , পথে বেরিয়ে আসতেই দেখি রাস্তাতেও দুধারের গাছে টুনি জ্বলছে , আর কয়েকহাত দূরে দূরেই রংবেরঙের ফুলের তোরণ । অ্যাজ ইফ সব আমাদের জন্য । সব আমাদের জন্য ... হা হা ...
পুজো মার্কেটিং করে আনি নি । ফালতু বোঝা টানবো কেন ? পরদিন থেকেই শুরু হল তুমুল মার্কেটিং । হেন মল নেই হায়দ্রাবাদে আমরা ঢুঁ মারি নি । সেই সাথে আছে বিরিয়ানি আর পিতজা । সেই সাথে আছে লং ড্রাইভ আর হুল্লোড় । সেই সাথে আছে বাচ্চাদের পনেরোই আগস্ট রোজ রোজ । ভাইয়ের এবারের কুক পাশের ফ্ল্যাট এ বাঙালি রান্না শিখেছে কিছুমিছু । মুখে দেবার যোগ্য কিছু পেলেই হোল আমাদের । রান্নার চাপ কমে গ্যাছে । সেই টাইমে ফুর্তি আনলিমিটেড । সপ্তমীর দিন আবার আমার ছোট মেয়ের জন্মদিন পড়েছে এবার । তাই আগের দিন করাচী বেকারিতে যাওয়া হোল কেকের অর্ডার দিতে । এই সেই বিখ্যাত বেকারস চেন , সন্ত্রাসবাদী হামলায় কেঁপে উঠেছিলো কয়েক বছর আগে । জীবন বড় বাঁচতে জানে । জীবন বড় সাঁতলে ন্যায় আনন্দ । কম্পিউটার দেখে কেক পছন্দ করলো বাবাই আর সমর্পিতা । গোটা সময় পোগো আর বুম্বুম বেলুন নিয়ে দাপাদাপি করে গ্যাল । ডমিনোজ পিতজা থেকে দেওয়া ফ্রি এর মাল । পোগো প্রচুর হাততালি কুড়িয়েছে সেখানে লুঙ্গি ড্যান্স করে । ওরা গানটা বাজানোর সময় জানতো না কি সাঙ্ঘাতিক ড্যান্সার পা রেখে ধন্য করেছেন ওদের বিপণী ।
জন্মদিনের সকালবেলা ভাবলাম মন্দিরে পুজো দিয়ে আসি । আমি আর ওর বাবা বেরোলাম মন্দির খুঁজতে । আয়াপ্পার মন্দির , জগন্নাথ মন্দির এসব আছেই । সেসব জায়গায় পুজো দেওয়া বেশ ঝামেলার । আগেরবার জগন্নাথ মন্দিরে ভানডারা দিতে গিয়ে টের পেয়েছিলাম । সুতরাং ছোটখাটো কিছু চাই । দুনিয়া হাটকে শেষ পর্যন্ত কেয়ার ইন পেশেনট হসপিটালের উল্টোদিকেই এক মন্দির দেখেছিলাম মনে পড়লো । হসপিটালের জানালা দিয়ে কটা দিন সতৃষ্ণ চোখে বাইরের পৃথিবীর যে কটা দৃশ্য দেখতাম , এই মন্দিরটা তার মধ্যে একটা । মন্দিরের সামনেই ফুল , নারকেল বিক্রি হচ্ছিলো । সন্দেশ কিনেই এনেছিলাম । এটাও একটা খানদানী মুসলমান ভদ্রলোকের দোকান থেকেই । মন্দির আসলে একটা নয় । তিনটে মন্দিরের সমষ্টি । যেটাতে পুরোহিত পেলাম সেটাতেই ঢুকলাম । পুজো শুরু হল । ভদ্রলোক ভীষণ নিষ্ঠার সাথে প্রচুর সময় নিয়ে মন্ত্রপাঠ করলেন । আমাদের বললেন , অঞ্জলি দিতে । আর তা দিতে গিয়ে চক্ষু চড়কগাছ । এতক্ষণ খেয়াল করি নি এটা কোন মন্দির । এখন দেখি , হনুমানজির সামনে আমরা করজোড়ে আশিস ভিক্ষা করছি আমাদের পুঁচকে হনুমানটার জন্য । যেটাকে আমি প্রায়ই জিজ্ঞেস করি , ‘বেটা তোমার লেজ টা কোথায় খুলে রেখেছ?’ আর ও নিজের পেছনে হাত দিয়ে আমায় দ্যাখায় , ‘এই যে’।
সন্ধ্যেবেলা বেলুন ফোলানো , ফুলের গৃহসজ্জা , কেক কাটা , সেই ক্রিম এর তার মুখে মাখানো , স্নো স্প্রে ফচ ফচ , ফটো সেশান , যে যার জুড়িদার আর ট্যাঁও ভ্যাও সামলে । ভাই নেট হাতড়ে নোট নিচ্ছে । গুগুলে রুট ম্যাপ । দুগগা ঠাকুর খুঁজতে বেরবো । পাঁচ দশ মাইল অন্তর অন্তর একটা করে বাঙালি অ্যাসোসিয়েশান একটা করে অনুষ্ঠান ভবন বুক করে পুজো করেছে । ঝক্কাস ব্যবস্থা । বেজায়গায় বাঙ্গালিত্ব প্রমাণের জন্য বাঙালির বাঙ্গালিয়ানা এখানে বেশি বেশিই । প্রতিটি পুজোর সাথে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মঞ্চ , মেলা , হ্যান্ডিক্রাফট , পুজোসংখ্যা ম্যাগাজিন , খানা পিনার স্টল , লুচি আলুর দম ছোলার ডাল রাধাবল্লভি ঘুগনি ফুচকা ... আহা বেঁচে থাকা কি ভালো কি ভালো ... ভাই অষ্টমীর অঞ্জলির খোঁজ নিতে গ্যাল । সকাল সাতটার মধ্যে অঞ্জলি । নোটিস বোর্ডে নির্ঘণ্ট । বাঁচাও । এত পথ ঠেঙ্গিয়ে সাতটার মধ্যে আসতে হলে তো রাত্তির টা জেগেই কাটানো উচিত । আড্ডা মেরে রাতের খাওয়া সেরে শুতে শুতেই তো রাত দেড়টা দুটো বাজে রোজ । অগত্যা ঠিক হল ছোট দুই বাচ্চা নট অ্যালাওড । পোগো কে পাহারা দেবে ওর বাবা , আর বুম্বুমকে ওর পিপো । বাবাই নিজেকে আর ছোট ভাবতে রাজী নয় । নরম্যালি ঘুম থেকে ওঠে সাড়ে আটটায় । কাজেই ওটা ওর দায়িত্ব , উঠতে পারলে যাবে । পাঁচটায় স্নান সেরে ছটার মধ্যে বেরিয়ে পড়লাম । ফুলের ঢিবি খালি বসতে শুরু করেছে রাস্তার ধারে । গাড়ি থামিয়ে ফুল কিনলাম । ভোগ হিসেবে করাচী বেকারি থেকে জন্মদিন উপলক্ষে আনা কালাকান্দ । অত সকালে কিছু পাওয়া যাবে না বলে , ওটা দুগগা মায়ের জন্য বাঁচিয়ে রাখা হয়েছিল । হিন্দুদের দুগগা পুজোর ভোগ সাপ্লাই করছে করাচী বেকারি । আয় হুজুগে দেখে যা , ফালতু কেন গাল পাড়িস হিন্দু মৌলবাদী বলে !
আগেরবার হায়দ্রাবাদে থাকা কালীন এটি তেলেঙ্গনার স্বীকৃতি পেয়েছে । সেই সময়কার বাজি আর ফুলের উৎসব মনে পড়ে গ্যাল । আর ঘগোলাপি পার্টির লোকজনের উচ্ছ্বাস । চন্দ্রবাবু নাইডুর হাতে গড়া হাইটেক সিটি বেহাত হয়ে গ্যাছে । শহর জুড়ে নয়া মুখ্যমন্ত্রীর কাট আউট । চন্দ্রবাবু বেচারাকে বিজয়ওয়ারা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে । এয়ারপোর্টে ঢুকতেই বিশাল বিশাল ফুলের তোরণ । ওদের ফুলের উৎসব চলছে । বেরোতেই দেখি ভাই দাঁড়িয়ে আছে গাড়ি নিয়ে । চল্লিশ কিলোমিটার রাস্তা ওর রেইন ট্রি পার্কের ফ্ল্যাট থেকে এয়ারপোর্ট । নিজে এসেছে ড্রাইভ করে । বুকের ভেতরটা আবেগে ভেসে যাচ্ছে । ছমাস আগে ওকে রেখে গেছি ঘরে বন্দী । একগাদা লাইফ সাপোর্টিং সিস্টেমের ভরসায় । সে আজ এভাবে , এখানে , আনন্দ আর অশেষ কৃতজ্ঞতা ঈশ্বর নামক ভদ্রলোকটিকে । যাই হোক , পথে বেরিয়ে আসতেই দেখি রাস্তাতেও দুধারের গাছে টুনি জ্বলছে , আর কয়েকহাত দূরে দূরেই রংবেরঙের ফুলের তোরণ । অ্যাজ ইফ সব আমাদের জন্য । সব আমাদের জন্য ... হা হা ...পুজো মার্কেটিং করে আনি নি । ফালতু বোঝা টানবো কেন ? পরদিন থেকেই শুরু হল তুমুল মার্কেটিং । হেন মল নেই হায়দ্রাবাদে আমরা ঢুঁ মারি নি । সেই সাথে আছে বিরিয়ানি আর পিতজা । সেই সাথে আছে লং ড্রাইভ আর হুল্লোড় । সেই সাথে আছে বাচ্চাদের পনেরোই আগস্ট রোজ রোজ । ভাইয়ের এবারের কুক পাশের ফ্ল্যাট এ বাঙালি রান্না শিখেছে কিছুমিছু । মুখে দেবার যোগ্য কিছু পেলেই হোল আমাদের । রান্নার চাপ কমে গ্যাছে । সেই টাইমে ফুর্তি আনলিমিটেড । সপ্তমীর দিন আবার আমার ছোট মেয়ের জন্মদিন পড়েছে এবার । তাই আগের দিন করাচী বেকারিতে যাওয়া হোল কেকের অর্ডার দিতে । এই সেই বিখ্যাত বেকারস চেন , সন্ত্রাসবাদী হামলায় কেঁপে উঠেছিলো কয়েক বছর আগে । জীবন বড় বাঁচতে জানে । জীবন বড় সাঁতলে ন্যায় আনন্দ । কম্পিউটার দেখে কেক পছন্দ করলো বাবাই আর সমর্পিতা । গোটা সময় পোগো আর বুম্বুম বেলুন নিয়ে দাপাদাপি করে গ্যাল । ডমিনোজ পিতজা থেকে দেওয়া ফ্রি এর মাল । পোগো প্রচুর হাততালি কুড়িয়েছে সেখানে লুঙ্গি ড্যান্স করে । ওরা গানটা বাজানোর সময় জানতো না কি সাঙ্ঘাতিক ড্যান্সার পা রেখে ধন্য করেছেন ওদের বিপণী ।
জন্মদিনের সকালবেলা ভাবলাম মন্দিরে পুজো দিয়ে আসি । আমি আর ওর বাবা বেরোলাম মন্দির খুঁজতে । আয়াপ্পার মন্দির , জগন্নাথ মন্দির এসব আছেই । সেসব জায়গায় পুজো দেওয়া বেশ ঝামেলার । আগেরবার জগন্নাথ মন্দিরে ভানডারা দিতে গিয়ে টের পেয়েছিলাম । সুতরাং ছোটখাটো কিছু চাই । দুনিয়া হাটকে শেষ পর্যন্ত কেয়ার ইন পেশেনট হসপিটালের উল্টোদিকেই এক মন্দির দেখেছিলাম মনে পড়লো । হসপিটালের জানালা দিয়ে কটা দিন সতৃষ্ণ চোখে বাইরের পৃথিবীর যে কটা দৃশ্য দেখতাম , এই মন্দিরটা তার মধ্যে একটা । মন্দিরের সামনেই ফুল , নারকেল বিক্রি হচ্ছিলো । সন্দেশ কিনেই এনেছিলাম । এটাও একটা খানদানী মুসলমান ভদ্রলোকের দোকান থেকেই । মন্দির আসলে একটা নয় । তিনটে মন্দিরের সমষ্টি । যেটাতে পুরোহিত পেলাম সেটাতেই ঢুকলাম । পুজো শুরু হল । ভদ্রলোক ভীষণ নিষ্ঠার সাথে প্রচুর সময় নিয়ে মন্ত্রপাঠ করলেন । আমাদের বললেন , অঞ্জলি দিতে । আর তা দিতে গিয়ে চক্ষু চড়কগাছ । এতক্ষণ খেয়াল করি নি এটা কোন মন্দির । এখন দেখি , হনুমানজির সামনে আমরা করজোড়ে আশিস ভিক্ষা করছি আমাদের পুঁচকে হনুমানটার জন্য । যেটাকে আমি প্রায়ই জিজ্ঞেস করি , ‘বেটা তোমার লেজ টা কোথায় খুলে রেখেছ?’ আর ও নিজের পেছনে হাত দিয়ে আমায় দ্যাখায় , ‘এই যে’।
সন্ধ্যেবেলা বেলুন ফোলানো , ফুলের গৃহসজ্জা , কেক কাটা , সেই ক্রিম এর তার মুখে মাখানো , স্নো স্প্রে ফচ ফচ , ফটো সেশান , যে যার জুড়িদার আর ট্যাঁও ভ্যাও সামলে । ভাই নেট হাতড়ে নোট নিচ্ছে । গুগুলে রুট ম্যাপ । দুগগা ঠাকুর খুঁজতে বেরবো । পাঁচ দশ মাইল অন্তর অন্তর একটা করে বাঙালি অ্যাসোসিয়েশান একটা করে অনুষ্ঠান ভবন বুক করে পুজো করেছে । ঝক্কাস ব্যবস্থা । বেজায়গায় বাঙ্গালিত্ব প্রমাণের জন্য বাঙালির বাঙ্গালিয়ানা এখানে বেশি বেশিই । প্রতিটি পুজোর সাথে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মঞ্চ , মেলা , হ্যান্ডিক্রাফট , পুজোসংখ্যা ম্যাগাজিন , খানা পিনার স্টল , লুচি আলুর দম ছোলার ডাল রাধাবল্লভি ঘুগনি ফুচকা ... আহা বেঁচে থাকা কি ভালো কি ভালো ... ভাই অষ্টমীর অঞ্জলির খোঁজ নিতে গ্যাল । সকাল সাতটার মধ্যে অঞ্জলি । নোটিস বোর্ডে নির্ঘণ্ট । বাঁচাও । এত পথ ঠেঙ্গিয়ে সাতটার মধ্যে আসতে হলে তো রাত্তির টা জেগেই কাটানো উচিত । আড্ডা মেরে রাতের খাওয়া সেরে শুতে শুতেই তো রাত দেড়টা দুটো বাজে রোজ । অগত্যা ঠিক হল ছোট দুই বাচ্চা নট অ্যালাওড । পোগো কে পাহারা দেবে ওর বাবা , আর বুম্বুমকে ওর পিপো । বাবাই নিজেকে আর ছোট ভাবতে রাজী নয় । নরম্যালি ঘুম থেকে ওঠে সাড়ে আটটায় । কাজেই ওটা ওর দায়িত্ব , উঠতে পারলে যাবে । পাঁচটায় স্নান সেরে ছটার মধ্যে বেরিয়ে পড়লাম । ফুলের ঢিবি খালি বসতে শুরু করেছে রাস্তার ধারে । গাড়ি থামিয়ে ফুল কিনলাম । ভোগ হিসেবে করাচী বেকারি থেকে জন্মদিন উপলক্ষে আনা কালাকান্দ । অত সকালে কিছু পাওয়া যাবে না বলে , ওটা দুগগা মায়ের জন্য বাঁচিয়ে রাখা হয়েছিল । হিন্দুদের দুগগা পুজোর ভোগ সাপ্লাই করছে করাচী বেকারি । আয় হুজুগে দেখে যা , ফালতু কেন গাল পাড়িস হিন্দু মৌলবাদী বলে !
পৌঁছে গাড়ি পারকিং দেখে হাঁ । কত বাঙালি জুটেছে রে বাবা ? মণ্ডপে ঢাক বাজছে । এক প্রস্থ অঞ্জলি হয়ে গ্যাছে । পরের টার্নের জন্য অপেক্ষা কিজিয়ে ... ঠিক হ্যায় ...আটটার আগে নো চান্স ... চলো মন চায়ের স্টল ... চা খেয়ে মিনারেল ওয়াটারের বোতল কিনে হাত ধুয়ে ফেললাম ... পাপ নিও না মা আমার ... সন্ধ্যে বেলা স্থানীয় রামকৃষ্ণ মিশনের পুজো দেখতে গেলাম । হুসেন সাগর লেক পেরিয়ে হু হু হাইওয়ে মাখছি । নেকলেস রোড ধরে । রঙ্গিন আলোর মালা , হুসেন সাগরের জলে চিক চিক করছে ... দলে দলে লোক চলেছে সেজেগুজে , হাতের থালায় রংবেরঙের ফুলের ঢিবি ... গাড়ি আটকে গ্যাছে জ্যামে ... খালি রঙ আর ফুল আর লোক আর খুশি আর আলো আর ম্যাজিক ... যে ম্যাজিক লুটে পুটে খায় আম জনতা , যে টনিকে উছলে ওঠে তার ভাঙা ঘর ভাঙা মন ... হুসেন সাগরের মাঝখানে বিরাট বুদ্ধ মূর্তি ... তাকে ঘিরে বোটিং চলছে , চলছে লাইট অ্যান্ড সাউনড শো ... এই না কয়েকবছর আগে এক সন্ধ্যের সন্ত্রাসবাদী হামলা কেড়ে নিয়েছিলো কতগুলো প্রাণ ... আজকের কেউ মনে রাখে নি সে কথা ।ঘুম থেকে উঠেই বাই উঠলো আতর কিনতে হবে । আর মুক্তোর জুয়েলারি । আগের বার দেখে এসেছি , চারমিনারের নীচে সার সার আতরের দোকান । বাজারে সার সার মুক্তোর গভর্নমেন্ট রেজিস্টার্ড দোকান । অতএব চলো চলো । আমার সারথি হিসেবে পটালাম আমার একমাত্র বরটিকে । বাহন হিসেবে নেওয়া গ্যাল ভাইএর বাইক । রোদ্দুরের মা বাপ নেই । চামড়া জ্বালা করছে । পঁচিশ কিলোমিটার বৈধ পথ । ফেরার পথে হারিয়ে মারিয়ে চল্লিশে ঠেকল । চারমিনারের গেটে পুরনো কয়েনের দোকান । দামদর করে ইস্ট ইনডিয়া কোম্পানির আমলের দুটো তামার পয়সা কিনেই ফেললাম । আমার পতিদেব বিভিন্ন রকম অঙ্গভঙ্গি করেও আমাকে ঠকার হাত থেকে নিবৃত্ত করতে পারলো না । আমি সম্মোহিত প্রায় দু টুকরো ইতিহাস নাকি ঠকবাজি পকেটস্থ করে ক্ষান্ত হলাম । এর পর টিকেট কেটে চারমিনারের ভেতরে ঢুকে ওপরে ওঠার সিঁড়ি তে দু ধাপ ওঠার পরই ফবিয়াক্রান্ত হয়ে গ্যালাম । যদি মাঝপথে নামার দরকার হয় , কোন উপায় নেই , দুটো লোক পাশাপাশি যেতে পারবে না । এক জনের এক মুখী ওঠার ব্যবস্থা । নামতে হবে অন্য রাস্তায় । ওরে বাবা , ইতিহাস মাথায় থাক । যাবো না আমি । ওর ও আর ওপরে যাওয়া হোল না । বদলে নীচেই একটা ফটো সেশান সেরে নিলাম , চারমিনারের চার পিলার ধরে ধরে । এরপর সেই পুরনো আতরের দোকান , সেই পুরনো দোকানী , খুশবুতে বুঁদ আমি খুঁজেই পাই না কোন সুগন্ধিটা আমার চাই , দোকানি আমার দু হাতের তালু ভরে লাগিয়েই যাচ্ছে একের পর এক । এরপর চোখ বুজে যাকে পাবি তাকে ছোঁ করে গোটা চারেক ভ্যারাইটি নিয়ে রণে ভঙ্গ দিলাম । একটা ওড়না কিনবো কিনা ভাবছিলাম । রোদ থেকে মুখ ঢাকার জন্য । এই প্রথম মনে হল , ইশ আমি কেন হিজাব পরে এলাম না ।
শেষমেশ আইসক্রিম খেয়েই ছেড়ে দিলাম । গ্যালরে আমার ডায়েটিং এর চোদ্দটা বেজে গ্যাল । যাক , আগে তো প্রাণে বাঁচি । তারপর ও গ্যাল বাইক আনতে পারকিং এ । এই ফাঁকে আমি এক মুক্তোর গয়না কিনে ফেলেছি । ক্যাশ সর্ট । কার্ড একসেপ্ট করা হয় , বলেছিল । ও হরি , আমার সাথে লোক দিয়ে বলে , পাশেই এ টি এম । ইতিমধ্যে ও চলে এসেছে বাইক নিয়ে । নো পারকিং জোন । পুলিশের হুটার এই মাত্র তুলে দিয়ে গ্যাছে রাস্তার ধারের হকার দের । আজ আবার অনারেবল প্রেসিডেন্ট অফ ইনডিয়া এই শহরে উপস্থিত । তাই সাজো সাজো রব । কি কেল ! হঠকারীতার জন্য আমায় একপ্রস্থ গালি দিয়ে সে যাত্রা অবশ্য ওই আমায় উদ্ধার করলো । রোদের প্রকোপেই কিনা কে জানে , ফেরার সময় রাস্তা গুলিয়ে একাকার । আমি ডাইনে বললে ও বাঁয়ে যায় । আর তা করতে গিয়ে বোধহয় এই প্রথম ও সত্যিই ভুল করল । একি অগস্ত্য যাত্রা রে বাবা । পথ আর ফুরোয় না । ঝকঝকে রাস্তা ছেড়ে আমরা ঢুকে পরেছি পুরনো মহল্লায় । এ শহর পশ্চিমবঙ্গের মতই লাগছে এখন । পুরনো বাড়ি মসজিদ দোকান , বকরী ঈদের জন্য ম্যাটাডর , ট্রাক ভরে ভরে আনা খাসি আর ভেড়ার বাজার , তাদের খাবারের জন্য ঘাসের ঢিবি, তাদের নাদির গন্ধ । এসব পেরিয়ে দেখি সামনে এক শোভাযাত্রা । সাদা ধবধবে জামা কাপড় পরা এক দঙ্গল লোক সুশৃঙ্খল ভাবে চলছে । ব্যান্ডপার্টি বাজছে । ফুলের বারিষ করতে করতে চলছে তারা । সামনের লোকগুলোর কাঁধে একটা চারকোনা বাক্স , প্রায় সাত ফুট বাই চার , তাতে ফুলের স্তূপ । তার ভেতরে কি দ্যাখা যায় না । একটু এগিয়ে বুঝতে পারলাম ব্যাপারটা । রাস্তার লাগোয়া মহাশ্মশানে ধোঁয়া উঠছে , লোকে লোকারন্য । ব্যান্ডপার্টি বাজছে এখানেও । মনে পড়ে গ্যাল , বেলুড় মঠের স্বামীজির কথা , ‘কোন সাথীর দেহান্ত হলে আমরা দুঃখ করি না , আনন্দ করি , গান গাই , মিষ্টি বিতরণ করি’ ... ইশ আমরা সবাই এভাবে কেন দেখি না !
বাবাই ধরে পড়েছে , ওকে চারমিনার দ্যাখান হয় নি , ও এনটিআর পার্কে যাবেই যাবে তাই । পোগোকে সাথে নেওয়া একটু চাপ , তার খাওয়া ঘুমের রুটিন ওলট পালট হলে তার দিম্মা আমায় জাস্ট বানাবে ... কিন্তু বেচারি রোজ একা একা করেী বা কি । খেলতে পারবে এখানে । রাইডও কিছু কিছু ভালোই লাগবে ওর । নিলাম জোরজার করেই , তার আবার গাড়িতে চড়লেই ঘুম পায় । তিনি ঘুমোতে ঘুমোতে সেভাবেই চললেন । পৌঁছেই ব্যাটা পুরো টনটনে । তাকে তখন সামলানো দায় । দৌড়ে বেড়াচ্ছে । একা একা জল খেতে গিয়ে এক প্রস্থ জামাকাপড় ভেজালেন । দিদিয়ার স্কার্ফ দিয়ে ঢেকে ঢুকে তাকে আরেক প্রস্থ পরানো গ্যাল । দুই বোনে এন্তার মজা করতে করতে প্রায় তিনটে বাজে । আমরা তো ভেতরেই কার রেস্টুরেন্ট এ খেয়ে নিলাম , তার তো খিধে পাওয়ার কথা এতক্ষণে । তার দুধ গুলে শুরু হল সাধ্য সাধনা , খাবে না বলে এক ধাক্কায় খানিকটা ঢেলে দিল আমার গায়ে । আমি মেজাজ হারালাম । পরক্ষণেই লজ্জিত হয়ে ভাবতে বসলাম আমার মা কি করে রোজ চারবেলা এই অসাধ্যটি সাধন করে ! খেয়েই আবার লাট্টুর মত বনবন । শেষে ওর বাবা বলল , ‘আমি তো একা একা হাঁটতে পারি না , তুমি আমাকে ধরে ধরে নিয়ে চল’। নতুন দায়িত্ব পেয়ে সে মহা খুশি , আমরাও হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম । বেরিয়েই উল্টোদিকে হুসেন সাগর লেক । কিন্তু সময় নেই ঢোকার , এনার্জিও বাড়ন্ত । কারোর স্নান হয় নি তাছাড়া ।
অতএব ...
পরদিন ডেসটিনেশান সালারজং । বাবাইকে সাথে আনলে চারমিনার থেকে ফেরার পথেই সেরে যেতে পারতাম । একদম গায়ে গায়েই প্রায় । আনি নি যখন , কি আর করা । ফের একই রুটে ঠ্যাঙ্গানো ছাড়া পথ নেই । আর ওর বাবা বদ্ধপরিকর, মেয়েকে ইতিহাস শিক্ষা কিছু দিয়েই ছাড়বে ! আমার আর এই বয়সে কোন শিক্ষাই আকাডেমিক্যালি কাজে আসবে না , তবে গাইড হিসেবে যেতে তো পারিই , এই আর কি । সালারজং মিউজিয়মের আইভরি রথটা , টিপু সুলতানের ডাইনিং টেবিল , হাতির দাঁতের চাদর , দাবার ঘুঁটি , অস্ত্র ভাণ্ডার , রত্ন ভাণ্ডার , মার্বেলের ভেনাস , বিখ্যাত ঘড়ি , নিজামদের ছোট থেকে বড় বেলার ব্যবহৃত গুচ্ছের জিনিস এক দিনে দেখে ওঠা কষ্টকর । আমি সহজ পন্থা বাছলাম । বেছে বেছে কিছু গ্যালারি দেখে ক্যান্টিনে আশ্রয় নিলাম । ঘরে সবকটা টেবিল ভর্তি । আমি আর বাবাই আমাদের খাবারের প্লেট নিয়ে পাশের লনে চলে গ্যালাম । যারা টেবিল পায় নি তারা বেশ ঘাসের ওপরই বসে গ্যাছে পিকনিক এর মুডে । স্প্রাইট শেষ করেই বাবাই উঠে পড়লো । ও সব দ্যাখা শেষ করেই ছাড়বে । ওর বাবা আর ও রওনা দিল । আমি বসে রইলাম বাগানে । দেখতে লাগলাম বিচিত্র ভারত । তার নানা ভাষী লোক , নানা কিসিমের পোশাক আর খানা । এর মধ্যেই এক বাঙালি পরিবার ও খেয়ে গ্যাল পাশের টেবিলে । মজা লাগলো ওদের আলাপচারীতা শুনে , মা বাবা আর ছেলের ... । আচ্ছা , যদি টের পেত আমি ওদের কথা বেশ বুঝছি , এভাবে কথা বলতে পারতো নিজেদের মধ্যে ? চশমার আড়ালে চটপট চালান করে দিলাম মুচকি হাসিটা । ঘণ্টা খানেক বিশ্ব দর্শন করার পর বাবাইরা ফেরত এল , জিভ বের করে হাঁপাতে হাঁপাতে । পারলে ও তখন আমার কোলে চড়ে বাড়ি ফেরে আর কি !
অক্টোবরের দুপুর । গাড়ির এ সি থেকে বেরনো মাত্র নাকে মুখে লুএর বাতাস লাগলো যেন । ঢোকার মুখেই পরপর বাহারি টুপি আর রোদচশমার দোকান । আমরা ওয়েল প্রিপেয়ারড । আগেও এসেছি এখানে । তাই জানতাম , লাগবে এগুলো । টিকেট কাউনটারের সামনে বিক্রি হচ্ছে বুকলেট । ইতিহাস ভূগোল । পিকচার পোস্টকার্ড । পাকড়াও করবে অগুন্তি গাইড । পয়সা চায় না । আপনাকে সাহায্য করতে চায় । বাকিটা আপনার চক্ষুলজ্জা । এসব কাটিয়ে বীর দর্পে উঁচু খিলান পেরিয়ে ঢুকতেই দেখুন পাবলিক হাততালি মারছে , কেউ মুখের সামনে হাত দুটো জড় করে হো হো করে চিৎকার করছে । না মশাই , মোটেই আপনাকে নবাবজাদার অভ্যর্থনা জানাচ্ছে না । বালা হিসার দরজা দিয়ে গোলকোনডা দুর্গে ঢোকার মুখে এই প্রকোষ্ঠে প্রতিধ্বনি হয় । তারই প্রাকটিক্যাল চলছে । পাঁচ মাইল পরিধি বিশিষ্ট এই দুর্গে নয়টি দরজা , বাহান্নখানা জানালা আর আটচল্লিশ টা সুড়ঙ্গ আছে । ঠা ঠা রোদ্দুরে মাথা ঠিক রাখা দায় । ছাতা রোদ চশমা জলের বোতল ক্যামেরা বাচ্চা বাচ্চার দিম্মা সব্বাইকে হ্যাট হ্যাট সামাল সামাল করতে করতে পাথরের এবড়ো খেবড়ো সিঁড়ি তে ব্যালেন্স করতে করতে ওপরে উঠছি । খুপরির পর খুপরি । পরিখা । উঁচু প্রাচীর । গোলোক ধাঁধাঁর মত সিঁড়ি । লম্বা সারসার খোপের প্যাসেজ পেরিয়ে ডাইনে বাঁয়ে অন্ধকার ঘর চামচিকের ঝাপট চিমসে গন্ধওলা গোলগম্বুজ গুলো পেরিয়ে দুটো রাস্তা ... একটা চলে গ্যাছে সামনের বড় দরবারী হলের দিকে , এখন সেখানে লাইট অ্যান্ড সাউনড প্রদর্শনী , আর অন্যটা গিয়ে উঠেছে পাক খেতে খেতে ঝোপ ঝাড় পাথুরে চড়াই কাঠবেরালির দৌড় পাখির ক্যাচম্যাচ পেরিয়ে হুই যে গোলকোনডা দুর্গের এক্কেবারে মাথায় , পাথরের ওপর পা তুলে দাঁড়িয়ে ফটো শুটের জন্য পোজ মারতে মারতে হাঁপাতে হাঁপাতে ঘামতে ঘামতে রোদ্দুরে ঝলসাতে ঝলসাতে আপনি মুহূর্তে পায়ের ব্যাথা ভুলে যাবেন গ্যারান্টি , যেই মাত্র আপনি নিম্নমুখী দৃষ্টিপাতের সৌজন্য দ্যাখাবেন । দেখতে পাচ্ছেন গোটা দুর্গের লে আউট । দেখতে পাচ্ছেন ঐ দূরে হায়দ্রাবাদ শহর । কুতুবশাহী ইতিহাস মোড়া নিজামের শহর। কোহিনূর হীরের রোম্যান্সের শহর।
ফেরার পথে কুতুবশাহী সমাধিক্ষেত্র । আরকেওলজিক্যাল ডিপার্টমেন্ট অধিগৃহীত এই জায়গা অন্যতম ট্যুরিসট আকর্ষণ । এই বংশের নবাবদের আর তাদের বেগমদের আর তাদের নবাব হতে না পারা অসংখ্য সন্তানের সমাধিক্ষেত্র । মাঝখানে এক দীঘি । মৃতদেহ সমাধিস্থ করার আগে এখানে স্নান করান হত । অসংখ্য তেতুল , কাঠ গোলাপ , সবেদা , আর বোগেনভেলিয়া দিয়ে সাজানো এই সমাধিস্থল । দিনের বেলাতেও গা ছমছম করে । কার নিঃশ্বাস নাকি দীর্ঘনিঃশ্বাস গায়ে এসে লাগে । এখানে ঢোকার মুখেই আছে একটি অসমাপ্ত সমাধি , মৃত্যুর আগে নির্মাণ সমাপ্ত করতে পারেন নি এক হতভাগ্য । তিনি নবাবীও পান নি । কাঠগোলাপের তলে প্রচুর ফুল পড়ে আছে । বাবাই আর বুম্বুম কুড়োতে লেগে গ্যাল । পোগোর আবার অল্পে হয় না , ‘আমি ফুল পাড়ি’, বলে গাছের গুঁড়ি বেয়ে ওঠার চেষ্টা করতে লাগলো । ফেসবুকে যার ছবি দেখে জয়ীর মন্তব্য , ওর আসল বাড়ি খুঁজছে পোগো !
ভাইদের মহল্লার কাছেই টিলার ওপর এক কৃষ্ণ মন্দির । ভাই বলল , ‘তোরা বাইকে করে গিয়ে আগে দেখে আয় , গাড়ি ওঠার রাস্তা আছে কিনা । তারপর আমরা যাবো । পথ খুঁজে খুঁজে হাজির হলাম ছোটখাটো পাহাড়টির আগায় ছোট্ট এক মন্দিরে । শুধু কৃষ্ণ নয় , তার মা আর সখীদেরও মূর্তি আছে সুন্দর । তবে এটার গুরুত্ব অন্যখানে । এটা একটা ওয়াচটাওয়ারের কাজ করে প্রায় । এখান থেকে নীচে তাকালে দুর্দান্ত ভিউ পাওয়া যায় শহরটির । মন্দির ঘিরে প্রচুর ফুল গাছ । আরে না ... শিউলিও আছে তাদের মধ্যে । গাছের তলায় কিছু ফুল , কিছু কুঁড়ি গেরুয়া বোঁটায় ... আহা , শরত , তোমায় ছেড়ে এসেছি না অনেকদূরে ?
এক সন্ধ্যেয় শিল্পারামন যাওয়া হোল । নাইট বাজার । অডিটোরিয়াম । যুগলবন্দী চলছে তবলা আর বাঁশির । এক দিকে ডান্ডিয়া নৃত্য তো অন্যদিকে স্থানীয় বাজনা , হাঁড়ি কলসি ঢোল খোল সহযোগে । বাবাই উটের পিঠে চড়ে জন্ম সার্থক করলো ,
আমি আর বুম্বুম সেই উটের পেছন পেছন দৌড়ে । কুলপি খেল সবাই । আমি দেখেই খুশি । বেরোনোর মুখে দেখি এক বুড়ো ভদ্রলোক টেবিল পেতে কি সব বিক্রি করছেন । দেখতে গিয়ে আমি আর সমর্পিতা যে চিৎকারটা দিলাম , লোকে লটারিতে বাম্পার প্রাইজ পেলে টেলে দ্যায় । ওখানে বিক্রি হচ্ছে নারকেলের নাড়ু । পরদিন লক্ষ্মীপুজো । খেয়ে না খেয়ে গুচ্ছের নাড়ুর প্যাকেট কিনে বিজয়গর্বে বাড়ি ফেরা হল । লক্ষ্মীপুজোয় পান আর গোটা সুপুরি লাগবে । বাজার ঘুরে বস্তু টা কি কাঊকে বোঝাতে না পেরে ও একটা পুঁচকে ছোলা নারকেল এনে বলল , ‘মনে কর , এটাই সুপুরি’! আমি ভুনি খিচুড়ি, বেগুন ভাজা , লুচি , সুজি করলাম । পোগো আর ওর বাবা একটা জলশঙ্খকেই বীরবিক্রমে বাজিয়ে গ্যাল । সমর্পিতা বাংলা পড়তে পারে না । ফেসবুকে পাঁচালীর বই হাতে পোজ দিয়ে ছবি পোস্ট করলো , আর পাঁচালি পড়লো মা । মা আবার জোকার দিতে পারে না । প্রক্সি দিল জামাই ।
শেষদিন হায়দ্রাবাদে । দশদিনের সফর ফুরাল । আরেকবার হয়ে যাক প্যারাডাইসের বিরিয়ানি । আবার কবে হবে ... ছুঁয়ে যাচ্ছি জগন্নাথ মন্দির । মানত পূরণের পুজো । ভাইএর অপারেশানের আগে এসেছিলাম পুজো দিতে । ভাইএর জন্য আমি , আমার জন্য আমার পাগলা । অপারেশানের পর একলা এসে বসেছিলাম মন্দিরের সিঁড়িতে , ওর ওপর অভিমানে । উল্টোদিকের পাহাড়ে ময়ূরের আস্তানা আবিষ্কার করেছিলাম সেই বিকেলে । বাবাইকে ময়ুর দ্যাখাব বলেছিলাম । হোল না । রাত হয়ে গ্যাছে মন্দিরে আসতে । দ্যাখাব , রে , পরে কখনো । জগন্নাথ , তুমি জগতের পিতা , আমি আর তোমায় কি জানাবো ... শুধু ফিরে আসতে দিও তোমার দেউলে সকলের মঙ্গলার্থে স্বার্থ তিরোহিত অবনত সমর্পণে ... যাচ্ছি ...
পরদিন ডেসটিনেশান সালারজং । বাবাইকে সাথে আনলে চারমিনার থেকে ফেরার পথেই সেরে যেতে পারতাম । একদম গায়ে গায়েই প্রায় । আনি নি যখন , কি আর করা । ফের একই রুটে ঠ্যাঙ্গানো ছাড়া পথ নেই । আর ওর বাবা বদ্ধপরিকর, মেয়েকে ইতিহাস শিক্ষা কিছু দিয়েই ছাড়বে ! আমার আর এই বয়সে কোন শিক্ষাই আকাডেমিক্যালি কাজে আসবে না , তবে গাইড হিসেবে যেতে তো পারিই , এই আর কি । সালারজং মিউজিয়মের আইভরি রথটা , টিপু সুলতানের ডাইনিং টেবিল , হাতির দাঁতের চাদর , দাবার ঘুঁটি , অস্ত্র ভাণ্ডার , রত্ন ভাণ্ডার , মার্বেলের ভেনাস , বিখ্যাত ঘড়ি , নিজামদের ছোট থেকে বড় বেলার ব্যবহৃত গুচ্ছের জিনিস এক দিনে দেখে ওঠা কষ্টকর । আমি সহজ পন্থা বাছলাম । বেছে বেছে কিছু গ্যালারি দেখে ক্যান্টিনে আশ্রয় নিলাম । ঘরে সবকটা টেবিল ভর্তি । আমি আর বাবাই আমাদের খাবারের প্লেট নিয়ে পাশের লনে চলে গ্যালাম । যারা টেবিল পায় নি তারা বেশ ঘাসের ওপরই বসে গ্যাছে পিকনিক এর মুডে । স্প্রাইট শেষ করেই বাবাই উঠে পড়লো । ও সব দ্যাখা শেষ করেই ছাড়বে । ওর বাবা আর ও রওনা দিল । আমি বসে রইলাম বাগানে । দেখতে লাগলাম বিচিত্র ভারত । তার নানা ভাষী লোক , নানা কিসিমের পোশাক আর খানা । এর মধ্যেই এক বাঙালি পরিবার ও খেয়ে গ্যাল পাশের টেবিলে । মজা লাগলো ওদের আলাপচারীতা শুনে , মা বাবা আর ছেলের ... । আচ্ছা , যদি টের পেত আমি ওদের কথা বেশ বুঝছি , এভাবে কথা বলতে পারতো নিজেদের মধ্যে ? চশমার আড়ালে চটপট চালান করে দিলাম মুচকি হাসিটা । ঘণ্টা খানেক বিশ্ব দর্শন করার পর বাবাইরা ফেরত এল , জিভ বের করে হাঁপাতে হাঁপাতে । পারলে ও তখন আমার কোলে চড়ে বাড়ি ফেরে আর কি !অক্টোবরের দুপুর । গাড়ির এ সি থেকে বেরনো মাত্র নাকে মুখে লুএর বাতাস লাগলো যেন । ঢোকার মুখেই পরপর বাহারি টুপি আর রোদচশমার দোকান । আমরা ওয়েল প্রিপেয়ারড । আগেও এসেছি এখানে । তাই জানতাম , লাগবে এগুলো । টিকেট কাউনটারের সামনে বিক্রি হচ্ছে বুকলেট । ইতিহাস ভূগোল । পিকচার পোস্টকার্ড । পাকড়াও করবে অগুন্তি গাইড । পয়সা চায় না । আপনাকে সাহায্য করতে চায় । বাকিটা আপনার চক্ষুলজ্জা । এসব কাটিয়ে বীর দর্পে উঁচু খিলান পেরিয়ে ঢুকতেই দেখুন পাবলিক হাততালি মারছে , কেউ মুখের সামনে হাত দুটো জড় করে হো হো করে চিৎকার করছে । না মশাই , মোটেই আপনাকে নবাবজাদার অভ্যর্থনা জানাচ্ছে না । বালা হিসার দরজা দিয়ে গোলকোনডা দুর্গে ঢোকার মুখে এই প্রকোষ্ঠে প্রতিধ্বনি হয় । তারই প্রাকটিক্যাল চলছে । পাঁচ মাইল পরিধি বিশিষ্ট এই দুর্গে নয়টি দরজা , বাহান্নখানা জানালা আর আটচল্লিশ টা সুড়ঙ্গ আছে । ঠা ঠা রোদ্দুরে মাথা ঠিক রাখা দায় । ছাতা রোদ চশমা জলের বোতল ক্যামেরা বাচ্চা বাচ্চার দিম্মা সব্বাইকে হ্যাট হ্যাট সামাল সামাল করতে করতে পাথরের এবড়ো খেবড়ো সিঁড়ি তে ব্যালেন্স করতে করতে ওপরে উঠছি । খুপরির পর খুপরি । পরিখা । উঁচু প্রাচীর । গোলোক ধাঁধাঁর মত সিঁড়ি । লম্বা সারসার খোপের প্যাসেজ পেরিয়ে ডাইনে বাঁয়ে অন্ধকার ঘর চামচিকের ঝাপট চিমসে গন্ধওলা গোলগম্বুজ গুলো পেরিয়ে দুটো রাস্তা ... একটা চলে গ্যাছে সামনের বড় দরবারী হলের দিকে , এখন সেখানে লাইট অ্যান্ড সাউনড প্রদর্শনী , আর অন্যটা গিয়ে উঠেছে পাক খেতে খেতে ঝোপ ঝাড় পাথুরে চড়াই কাঠবেরালির দৌড় পাখির ক্যাচম্যাচ পেরিয়ে হুই যে গোলকোনডা দুর্গের এক্কেবারে মাথায় , পাথরের ওপর পা তুলে দাঁড়িয়ে ফটো শুটের জন্য পোজ মারতে মারতে হাঁপাতে হাঁপাতে ঘামতে ঘামতে রোদ্দুরে ঝলসাতে ঝলসাতে আপনি মুহূর্তে পায়ের ব্যাথা ভুলে যাবেন গ্যারান্টি , যেই মাত্র আপনি নিম্নমুখী দৃষ্টিপাতের সৌজন্য দ্যাখাবেন । দেখতে পাচ্ছেন গোটা দুর্গের লে আউট । দেখতে পাচ্ছেন ঐ দূরে হায়দ্রাবাদ শহর । কুতুবশাহী ইতিহাস মোড়া নিজামের শহর। কোহিনূর হীরের রোম্যান্সের শহর।
ফেরার পথে কুতুবশাহী সমাধিক্ষেত্র । আরকেওলজিক্যাল ডিপার্টমেন্ট অধিগৃহীত এই জায়গা অন্যতম ট্যুরিসট আকর্ষণ । এই বংশের নবাবদের আর তাদের বেগমদের আর তাদের নবাব হতে না পারা অসংখ্য সন্তানের সমাধিক্ষেত্র । মাঝখানে এক দীঘি । মৃতদেহ সমাধিস্থ করার আগে এখানে স্নান করান হত । অসংখ্য তেতুল , কাঠ গোলাপ , সবেদা , আর বোগেনভেলিয়া দিয়ে সাজানো এই সমাধিস্থল । দিনের বেলাতেও গা ছমছম করে । কার নিঃশ্বাস নাকি দীর্ঘনিঃশ্বাস গায়ে এসে লাগে । এখানে ঢোকার মুখেই আছে একটি অসমাপ্ত সমাধি , মৃত্যুর আগে নির্মাণ সমাপ্ত করতে পারেন নি এক হতভাগ্য । তিনি নবাবীও পান নি । কাঠগোলাপের তলে প্রচুর ফুল পড়ে আছে । বাবাই আর বুম্বুম কুড়োতে লেগে গ্যাল । পোগোর আবার অল্পে হয় না , ‘আমি ফুল পাড়ি’, বলে গাছের গুঁড়ি বেয়ে ওঠার চেষ্টা করতে লাগলো । ফেসবুকে যার ছবি দেখে জয়ীর মন্তব্য , ওর আসল বাড়ি খুঁজছে পোগো !
ভাইদের মহল্লার কাছেই টিলার ওপর এক কৃষ্ণ মন্দির । ভাই বলল , ‘তোরা বাইকে করে গিয়ে আগে দেখে আয় , গাড়ি ওঠার রাস্তা আছে কিনা । তারপর আমরা যাবো । পথ খুঁজে খুঁজে হাজির হলাম ছোটখাটো পাহাড়টির আগায় ছোট্ট এক মন্দিরে । শুধু কৃষ্ণ নয় , তার মা আর সখীদেরও মূর্তি আছে সুন্দর । তবে এটার গুরুত্ব অন্যখানে । এটা একটা ওয়াচটাওয়ারের কাজ করে প্রায় । এখান থেকে নীচে তাকালে দুর্দান্ত ভিউ পাওয়া যায় শহরটির । মন্দির ঘিরে প্রচুর ফুল গাছ । আরে না ... শিউলিও আছে তাদের মধ্যে । গাছের তলায় কিছু ফুল , কিছু কুঁড়ি গেরুয়া বোঁটায় ... আহা , শরত , তোমায় ছেড়ে এসেছি না অনেকদূরে ?এক সন্ধ্যেয় শিল্পারামন যাওয়া হোল । নাইট বাজার । অডিটোরিয়াম । যুগলবন্দী চলছে তবলা আর বাঁশির । এক দিকে ডান্ডিয়া নৃত্য তো অন্যদিকে স্থানীয় বাজনা , হাঁড়ি কলসি ঢোল খোল সহযোগে । বাবাই উটের পিঠে চড়ে জন্ম সার্থক করলো ,
আমি আর বুম্বুম সেই উটের পেছন পেছন দৌড়ে । কুলপি খেল সবাই । আমি দেখেই খুশি । বেরোনোর মুখে দেখি এক বুড়ো ভদ্রলোক টেবিল পেতে কি সব বিক্রি করছেন । দেখতে গিয়ে আমি আর সমর্পিতা যে চিৎকারটা দিলাম , লোকে লটারিতে বাম্পার প্রাইজ পেলে টেলে দ্যায় । ওখানে বিক্রি হচ্ছে নারকেলের নাড়ু । পরদিন লক্ষ্মীপুজো । খেয়ে না খেয়ে গুচ্ছের নাড়ুর প্যাকেট কিনে বিজয়গর্বে বাড়ি ফেরা হল । লক্ষ্মীপুজোয় পান আর গোটা সুপুরি লাগবে । বাজার ঘুরে বস্তু টা কি কাঊকে বোঝাতে না পেরে ও একটা পুঁচকে ছোলা নারকেল এনে বলল , ‘মনে কর , এটাই সুপুরি’! আমি ভুনি খিচুড়ি, বেগুন ভাজা , লুচি , সুজি করলাম । পোগো আর ওর বাবা একটা জলশঙ্খকেই বীরবিক্রমে বাজিয়ে গ্যাল । সমর্পিতা বাংলা পড়তে পারে না । ফেসবুকে পাঁচালীর বই হাতে পোজ দিয়ে ছবি পোস্ট করলো , আর পাঁচালি পড়লো মা । মা আবার জোকার দিতে পারে না । প্রক্সি দিল জামাই ।
শেষদিন হায়দ্রাবাদে । দশদিনের সফর ফুরাল । আরেকবার হয়ে যাক প্যারাডাইসের বিরিয়ানি । আবার কবে হবে ... ছুঁয়ে যাচ্ছি জগন্নাথ মন্দির । মানত পূরণের পুজো । ভাইএর অপারেশানের আগে এসেছিলাম পুজো দিতে । ভাইএর জন্য আমি , আমার জন্য আমার পাগলা । অপারেশানের পর একলা এসে বসেছিলাম মন্দিরের সিঁড়িতে , ওর ওপর অভিমানে । উল্টোদিকের পাহাড়ে ময়ূরের আস্তানা আবিষ্কার করেছিলাম সেই বিকেলে । বাবাইকে ময়ুর দ্যাখাব বলেছিলাম । হোল না । রাত হয়ে গ্যাছে মন্দিরে আসতে । দ্যাখাব , রে , পরে কখনো । জগন্নাথ , তুমি জগতের পিতা , আমি আর তোমায় কি জানাবো ... শুধু ফিরে আসতে দিও তোমার দেউলে সকলের মঙ্গলার্থে স্বার্থ তিরোহিত অবনত সমর্পণে ... যাচ্ছি ...
শর্মিষ্ঠা ঘোষ
Reviewed by Pd
on
নভেম্বর ২১, ২০১৪
Rating:
Reviewed by Pd
on
নভেম্বর ২১, ২০১৪
Rating:


কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
সুচিন্তিত মতামত দিন