শনিরবচন | বন্ধ হলো পুতিনের ধোপা নাপিত

শব্দের মিছিল putin ware

অবশেষে পুতিনের ধোপা নাপিত বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন মহাপ্রভু স্বয়ং। না দিয়ে আর উপায়ই বা কি? বাকি বিশ্বে নিজের তালুক আর প্রতাপ অটুট রাখতে এইটুকু অন্তত করতেই হতো। গোটা বিশ্বই তাকিয়ে ছিল পুতিনের কান মোলা খাওয়া দেখার আশায়। কান মোলা না হোক। একটা ধমক ধামক অন্তত না দিলে বিশ্বজুড়ে অধিপত্য ধরে রাখাও মুশকিল। ফলে সেই বিখ্যাত ধোপা নাপিত বন্ধের হুকুমনামা না দিয়ে মহাপ্রভুর রক্ষে ছিল না। ইরানের ধোপা নাপিত বন্ধ রয়েছে। উত্তর কোরিয়ার ধোপা নাপিত বন্ধ রয়েছে। না এই দুই দেশ কোন দেশে সামরিক অভিযান চালায়নি। কিন্তু তাতে কি। মহাপ্রভুর চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে দুই বেলা মহাপ্রভুর কথায় ওঠবোস করতে রাজি হয়নি। ধোপা নাপিত তো বন্ধ হবেই। কিন্তু এ কি কাণ্ড পুতিনের? সরাসরি ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা? জল স্থল অন্তরীক্ষ থেকে আক্রমণ? মহাপ্রভুর ভক্তরা একদিকে যেমন পুতিনের এহেন বেয়াদপি দেখে রাম খাপ্পা। আবার অন্যদিকে মহাপ্রভুর কাছে কেঁদে আকুল। ইউক্রেনের মতো একটি গণতান্ত্রিক দেশে রাশিয়ার এই বেয়াদপি সহ্য করা যায়? অবিলম্বে ন্যাটো বাহিনীকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামিয়ে না দিলে বিশ্বজুড়ে ন্যাটো বাহিনীর নাক কাটা যাবে না? মহাপ্রভুর এতদিনের ভক্তরা সত্যিই কেঁদে আকুল। ইউক্রেনের ঘাড়ের কাছে ন্যাটো বাহিনীর নিশ্বাস পড়ছে। অথচ পুতিনের বাড়িতে ন্যাটো বাহিনী হামলা চালাচ্ছে না। এও কি সহ্য করা যায়? মহাপ্রভুর ভক্তবৃন্দ তো ঠিক এই কারণেই ইউক্রেনের ন্যাটোতে অন্তর্ভুক্তির পক্ষে এতদিন সওয়াল করে আসছিল। আজকে ইউক্রেন যদি ন্যাটো বাহিনীর আণ্ডারে থাকতো। পুতিনের বাপের সাধ্য ছিল? কিয়েভের আকাশে একটা পটকা কি দোদোমা ফাটানোর?

মহাপ্রভুর ভক্তদের রাতের ঘুম নষ্ট। ইউক্রেনে গণতন্ত্র বিপন্ন। গণতান্ত্রিক নির্বাচন পদ্ধতিতে নির্বাচিত একটি সরকারকে উৎখাত করতে পুতিনের এই সমারিক অভিযান মেনে নেওয়া যায় না কিছুতেই। বিশেষ করে পড়শী দেশের অভ্যন্তরীন বিষয়ে নাক গলাতে সামরিক আক্রমণের সমর্থন, কোন সভ্য নাগরিকের পক্ষেই করা সম্ভব নয়। এমনটাই মনে করে থাকেন মহাপ্রভুর ভক্তবৃন্দ। না, তাঁদেরকে ১৯৭১ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা যুদ্ধে সাহায্যের উদ্দেশে ভারতবর্ষের পাকিস্তান আক্রমণের ইতিহাস স্মরণ করিয়েও লাভ নেই কোন। লাভ নেই সাদ্দাম হোসেন আমেরিকা আক্রমণ করতে পারে অনুমান করে মহাপ্রভুর ইরাক আক্রমণ ও বিগত দুই দশক ধরে ইরাকে পুতুল সরকার বসিয়ে রাখার কথা স্মরণ করিয়েও। আর আফগানিস্তানের কথা তোলাও যা। না তোলাও তাই। মহাপ্রভু, তার আপন স্বার্থে যেকোন সময়ে যেকোন দেশ, যেকোনো অজুহাতে আক্রমণ করতে পারেন। দখল করতে পারেন। যে কোন দেশে যে কোন সময়ে নিজের তৈরী পুতুল সরকার বসিয়ে দিয়ে, যে কোন দেশকে যতদিন খুশি নিজের দখলে রাখতেই পারেন। সেই অধিকার তার রয়েছে বলেই না, মহাপ্রভু। তাই মহাপ্রভুর কাজের সমালোচনা করা আর ঈশ্বরের বিরুদ্ধে গালাগালি দেওয়া। বিষয়টা একই। কে আর ধর্মনষ্ট করতে চায়? সকলেরই ধার্মিক হয়ে ওঠার দায় ও দায়িত্ব রয়েছে। প্রভুর গুণকীর্তন বিনা তা সম্ভব কি করে?

কিন্তু মহাপ্রভুর জুতোয় অন্য কেউ পা গলাবে? এ কেমন আস্পর্ধা? মহাপ্রভুর অধিকারে নাক গলাবে? এও কি মেনে নিতে হবে? কে না জানে, ইউক্রেনকে ন্যাটো বাহিনীর আণ্ডারে নিয়ে আসার বিষয়ে মহাপ্রভুর প্রয়োজন কতটা!। উত্তরে রাশিয়া আর পুবে চীনকে দুই বেলা চোখ রাঙাতে ইউক্রেনের মাটিতে ন্যাটো বাহিনীর ঘাঁটি গাড়ার প্রয়োজন ছিল ষোলাআনা। আর তার বদলে আজ কি দেখতে হচ্ছে? সেই ইউক্রেনই মহাপ্রভুর হাতছাড়া হয়ে যেতে বসেছে। যে ইউক্রেনের প্রসিডেণ্ডটকে’ই অস্ত্র সরবরাহের শর্ত হিসাবে ট্রাম্প সাহেব তাঁর নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বী বাইডেনের পুত্রের বিরুদ্ধে একটা ফলস্ কেস ঝুলিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন। সেই ইউক্রেন। মহাপ্রভুর হাতের পুতুল। মহাপ্রভুর আশীর্বাদধন্য সেই পুতুল সরকার। মহাপ্রভুর স্বার্থে যতরকমের বেআইনী কাজই হোক না কেন। পালন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। নেহাত ট্রাম্প সাহেবের বরাৎ মন্দ। বাঘের ঘরে ঘোগের বাসা! না হলে, আমন গোপন ফোনালাপও কিনা ফাঁস হয়ে যায়? ঘুঘুতো ট্রাম্পের ভিটেতেই চড়ছিল। তাই বেচারি ট্রাম্প সাহেবের আর দ্বিতীয়বার মসনদে বসার খোয়াব পূর্ণ হলো না। সে না হোক। তাই বলে যে পুতুল সরকারের টিকি বাঁধা মহাপ্রভুর হাতে। সেই টিকি কাটতেই কিনা পুতিন আক্রমণ করে বসলো ইউক্রেন? আচ্ছা, রাষ্ট্রপুঞ্জ। সিকিউরিটি কাউন্সিল। এদের কাজটা তবে কি? মহাপ্রভুর স্বার্থরক্ষা না হলে, এত অর্থ গচ্ছা দিয়ে এদের পোষা’র দরকারই বা আর কি?

মহাপ্রভু যতই পুতিনের ধোপা নাপিত বন্ধ করুক। মহাপ্রভুর ভক্তবৃন্দের মনে তবু কোন শান্তি নাই। মহাপ্রভু মুখে যতই তড়পাক না কেন। পুরো দুই দিন পার হয়ে গেল। মহাপ্রভু হাত পা গুটিয়ে বসে রয়েছে। বিষয়টা কি? মহাপ্রভুর সাকরেদরাও শুধুই চিলচিৎকার জুড়ে দিয়েছে। একটা বিমান কিংবা মিসাইলও তো পুতিনের টিকিতে গিয়ে আছড়ে পড়ছে না। ভক্তবৃন্দের রাতের ঘুম উধাও। না ইউক্রেনের নাগরিকরা পাতালরেলে আশ্রয় নেওয়ায় নয়। মহাপ্রভুর নাকের ডগায় পুতিনের আস্পর্ধা ভাঙতে মহাপ্রভুকে আড়মোড়া ভাঙতেও তো দেখা যাচ্ছে না। মিলছে না। সত্যিই হিসাব মিলছে না। শী পুতিন দোস্তি বাড়ছে। মহাপ্রভু দিবানিদ্রায়। ভক্তবৃন্দের রাতের ঘুম নষ্ট। গল্পটা তবে কি?

গল্প যাই হোক না কেন। আপাতত বিশ্বজুড়ে একজনই খলনায়ক। রাশিয়ার পুতিন। ইরাক আক্রমণ। আফগানিস্তান আক্রমণ। ন্যাটো বাহিনীর লিবিয়া আক্রমণ। অত্যাধুনিক মিসাইল নৃত্যের ভিডিয়ো প্রদর্শন। সাধারণ ইরাকি, আফগান কিংবা লিবিয়ান মানুষের মৃত্যু। দশকের পর দশক জুড়ে দেশের পর দেশে মহাপ্রভুর দখলদারী। না, এইগুলি ভিলেনি। নয়। সোনার ইরাক, সোনার আফগানিস্তান, সোনার লিবিয়া গড়ে তোলার প্রক্রিয়া শুধু। ধুয়ো যার একটাই। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা। ফলে মহান মহাপ্রভু, ও তার দুনিয়া জুড়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মহানব্রতে, কয় কোটি সাধারণ মানুষের মৃত্যু হলো। কয় কোটি সাধারণ মানু্ষ আজীবনের জন্য বিকলাঙ্গ হয়ে পড়ে রইল। আর কত কোটি মানুষ দারিদ্র্য সীমার নীচে নেমে গেল। সেসব হিসাব কোন বড়ো কথা নয়। মহাপ্রভুর পছন্দের মতো গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হলো কি হলো না। ভক্তবৃন্দের চিন্তা শুধু সেইটুকুই। এই যে ইউক্রেন। যেখানে মহাপ্রভুর পচ্ছন্দের গণতন্ত্রের বিরুদ্ধেই পুতিনের সামরিক অভিযান। মহাপ্রভুর সেই পছন্দের গণতন্ত্রে একজন মানুষের মৃত্যুই কি সমর্থন যোগ্য? তাই ভক্তবৃন্দের চোখে জল। ইউক্রেনের নাগরিকদের জন্য ততটা নয়। যতটা মহাপ্রভুর পছন্দের গণতন্ত্রের অবশ্যম্ভাবী পতনের অনুমিত দুঃখের কারণে।

তাই সব রাগ গিয়ে পড়েছে খলনায়ক পুতিনের উপরেই। সাদ্দাম নাই। কিন্তু পুতিন রয়েছে। সাদ্দামের ফাঁকা জায়গায় এখন অনায়াসে পুতিনকে বসিয়ে দেওয়া যায়। বিশ্বজুড়ে ভক্তবৃন্দের জন্য বিবিসি রয়েছে। সিএনএন রয়েছে। রয়টার রয়েছে। ফক্স নিউজ রয়েছে। ফলে এতদিন বাদে ভক্তবৃন্দ অন্তত তাদের নতুন সাদ্দাম হোসেনকে পেয়ে গিয়েছে। মহাপ্রভুর মনে কি রয়েছে। তার হাতে পায়ে আদৌ কোন জং ধরেছে কিনা? না’কি আরও বড়ো কোন দাঁও মারার অপেক্ষায়, সময়ে তা দিচ্ছে আপাতত? সময়ই সে সকল প্রশ্নের উত্তর দেবে। আপাতত হিসেব নিকেশ আর অনুমানের পর্ব চলতে থাকুক বরং। অন্তত ভক্তবৃন্দের রাতের ঘুম যতদিন বন্ধ রয়েছে। আর কিছু না হোক। পুতিনের ধোপা নাপিত বন্ধে যতটা পারা যায় নেত্য নাচন করে নেওয়া যাক বরং ততদিন।


২৫শে ফেব্রুয়ারী’ ২০২২
কপিরাইট সংরক্ষিত

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ