"ফ্রিজ!" - বলে চেঁচিয়ে উঠল রাকা। আগে হলে হয়ত চমকে উঠত সিদ্ধার্থ ওরফে সিড। কিন্তু এখন আর চমকায় না সে। জলের গ্লাসের দিকে বাড়ানো হাতটাকে একইভাবে রাখে সিড; কোনদিকে না তাকিয়েই এখন বলতে পারে রাকার হাতের মোবাইলে বন্দী হচ্ছে সে। আসলে ঠিক সে নয়, মোবাইল ক্যামেরায় বন্দী হচ্ছে ডাইনিং-টেবিলে রাখা কানা উঁচু কাঁসার থালায় সাজানো গোবিন্দভোগ চালের ঘি জবজবে সেদ্ধভাত, পাশে কাঁচালংকার টিকিধারী আলুসিদ্ধর একটা বড় মণ্ড আর দুটো ডিমসিদ্ধ - তাদের মধ্যাহ্নভোজ।
মাত্র চারমাস হয়েছে ওদের বিয়ে হয়েছে। প্রথম দু'মাস রাকার নেশা ছিল শুধুই সেল্ফি তোলা। কিন্তু এই আবাসনের প্রমীলা-বাহিনী রাকার ফেসবুকীয় বন্ধুবৃত্তে আসার পর থেকে সেল্ফির সাথে খাবারের ছবি তোলা শুরু করেছে রাকা। টেবিলে খাবার সাজিয়ে আগে ছবি তুলবে সে, তারপর সেগুলো ফেসবুকে আপলোড করার পরই খাওয়ার অনুমতি মেলে।
এতদিন অফিসফেরতা সিদ্ধার্থ প্রায়ই রাকার কথামত রেস্তোরাঁ থেকে কন্টিনেন্টাল, চাইনিজ বা মোগলাই খাবার নিয়ে আসতো। রাকা খাবারগুলো সুন্দর করে ডাইনিং-টেবিলে সাজিয়ে টপাটপ ছবি তুলে ফেসবুকে চালান করত আর খুশিতে ডগমগ হয়ে সিদ্ধার্থকে শোনাতো কে কী কমেন্ট করেছে। সিদ্ধার্থ ততক্ষণে ডুব দিত সোনালী পানীয়ে।
সিদ্ধার্থ এখন খুব মুশকিলে পড়েছে! লকডাউনের বাজারে সব বন্ধ; কিন্তু বন্ধ হয়নি ফেসবুকে খাবারের ছবি উপ্লোড করা, বরং বেড়েছে। এখন আবার নতুন হুজুগ! কে কত, কম খরচে সংসার চালাতে পারে, কে কত সুগৃহিনী - নিজেকে প্রমাণ করতে মরিয়া প্রমীলাকূল।
রাকা বলে - ফ্রিজে অনেক মাছ-মাংস স্টোর করে রেখেছি কিন্তু দেশজুড়ে এত কর্মহীন মানুষ খেতে পাচ্ছেনা, আমরা কী'করে বিরিয়ানি-কোরমার ছবি পোস্ট করি বল?
তাই, বিকেলে বা রাতে সেইসব ফ্রোজেন মাছ-মাংস রাকার হাতের যাদুতে ফ্রাই কিংবা কাবাব হয়ে ডাইনিং-টেবিলে এসে পৌঁছালেও লাঞ্চের মেনু সম্বন্ধে আজকাল যথেষ্ট উৎকণ্ঠায় থাকে সিদ্ধার্থ। এই বিচ্ছিরি গরমের দুপুরে একদিন তাকে খেতে হল খিচুড়ি, আবার তারপরদিনই পান্তাভাত। আজকে যেমন কোনো এক প্রসিদ্ধ "রাম" মিষ্টান্নভাণ্ডারের গোব্যঘৃত মিশ্রিত সিদ্ধভাত।
সিদ্ধার্থর ভেতরকার চাতক পাখিটা তৃষ্ণায় "রাম,রাম" করে ওঠে!
হঠাৎ তার কানে ভেসে আসে
- কী এত ভাবছ জানু, কখন তোমায় "ফ্রী" করে দিয়েছি!
যাক, আপাতত ফ্রিজ-ফ্রী খেলা শেষ।
এইসময়ে ফোনটা বেজে ওঠে সিদ্ধার্থর, দেখে অফিস কলিগ বিক্রমের নাম ভেসে উঠেছে স্ক্রিনে।
- বস, খবর শুনেছ? কালসে আপন লোগোকা আচ্ছে দিন শুরু!
- মানে, ব্যাংকে সেই নোটবন্দী সময়ের টাকা ঢুকবে?
- আরে ইয়ার সিড, দারুকা দুকান চালু হবে।
সিদ্ধার্থর ভেতরকার চাতক উড়তে শুরু করে।
ডাইনিং টেবিলে তাল ঠুকে সে গেয়ে ওঠে -
"দেশে অন্নজলের হল ঘোর অনটন
ধরো উইস্কি সোডা আর মুরগি মটন…"
চুমকি ভট্টাচার্য
Reviewed by Pd
on
অক্টোবর ২১, ২০২০
Rating:
Reviewed by Pd
on
অক্টোবর ২১, ২০২০
Rating:

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
সুচিন্তিত মতামত দিন