সুশান্ত কুমার রায়

একই সূত্রে গাঁথা ভাওয়াইয়া ও আব্বাস উদ্দিন আহমদ্
ঐতিহ্যবাহী লোকসংগীত ভাওয়াইয়া

লোকসংগীতের অমীয় সাগরে প্রাণবন্ত একটি ধারা ভাওয়াইয়া যা আজও বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল এবং ভারতের কোচবিহার, আসাম, জলপাইগুড়ি জেলার বৃহৎ এক জনগোষ্ঠীর অন্তরের গান। ভাব শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে প্রেম-প্রীতি, প্রণয়-প্রকৃতি, ভক্তি, আবেগ, স্বভাব, ধরণ, মর্ম, চিন্তা প্রভৃতি। ভাব শব্দের সম্পৃক্ততা অর্থে ইয়া প্রত্যয় যুক্ত করে ভাব+ইয়া > ভাওয়াইয়া শব্দের উৎপত্তি। অর্থাৎ ভাবের যে গান তা ভাওয়াইয়া। সংগীত গবেষকদের মতে ভারতবর্ষে বৈদিক যুগে সংগীত চর্চার ধারাবাহিক ইতিহাস পাওয়া যায়। যার প্রকৃষ্ট প্রমাণ বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম নির্দশন চর্যাপদ। চর্যাপদ মূলতঃ বাংলা সংগীতেরও আদি নিদর্শন। গবেষকরা মনে করেন চর্যাপদে সংকলিত পদগুলো রচনাকালের বহু পূর্ব থেকেই বাঙালির সংগীত ও সাহিত্য চর্চার সূচনা। একথা বলা যায় যে মূলতঃ সংগীতের মধ্য দিয়েই বাঙালির প্রথম আত্মপ্রকাশ ঘটে। আর বাঙালির গান গাওয়ার শুরু থেকেই ঐতিহ্যবাহী লোকসংগীত ভাওয়াইয়ার যাত্রা। আঞ্চলিক ভাষায় রচিত ভাওয়াইয়া গান মূলত নারী, নদী ও প্রকৃতি নির্ভর। সাধারণ পেশাজীবী মানুষের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আবেগ-অনুভূতি, নারী মনে প্রেমের আকুতি, প্রেম-ভালবাসা, বিরহ-বেদনা প্রভৃতি ভাওয়াইয়া গানের বিষয়বস্তু। শিল্পীর উদাস করা সুরের মুর্ছণার মাঝে ভাংতি এ গানের সুরের বৈশিষ্ট্য। ভাওয়াইয়া গানের সঙ্গে বিশেষ ছন্দে বাজানো হয় দোতরা, তবলা, সারিন্দা, ঢোল, মন্দিরা ও বাঁশি। এ বাদ্যযন্ত্রগুলোকে সংগত করে সংগীতের এক মধুময় মুর্ছণা ও আবেগ সৃষ্টি করা হয়। রংপুর অঞ্চলের নদী, নারী, প্রকৃতি ও সহজ সরল মানুষের ভাব, ভাবনা ও ভাষা নিয়ে রচিত এ অঞ্চলের লোকসংগীতের মূলধারা ভাওয়াইয়া। এ অঞ্চলের এ গান এক সময় উপমহাদেশে বেশ জনপ্রিয় ও পরিচিত ছিল। ভাওয়াইয়া গানের কথা আসলে যে বিষয় প্রসঙ্গগুলো আসে তা হলো গরু, গরুর-গাড়ি, নিধূয়া পাথার ( জনশূন্য রাস্তা বা পথ ) ও গ্রাম্যবধূ প্রভৃতি। তখনকার সেই দিনে মানুষ ও নানাবিধ জিনিস বা পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে গরুর গাড়িই ছিল একমাত্র ভরসা। সোয়ামীর ( স্বামীর ) বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় অধির আগ্রহে ব্যাকুল পথপানে চেয়ে থাকতো গ্রাম্যবধূ। স্বামীর বিরহে বিরহিনী নারীর বিরহে বিরহিনী নারীর করুণ অবস্থা নিয়ে- ‘পতিধন মোর দূর দ্যাশে / মৈলাম পৈল কালা চিকন ক্যাশেরে’... ( আব্দুল করিম ), ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই / কত কান্দিম মুই নিধূয়া পাথারে’... রচিত। ভাওয়াইয়া গানের সাথে যে শুধু গরু, গরুর-গাড়ি, মহিষ ও মইষালই জড়িত তা নয়। অন্তর চক্ষুর দৃষ্টিতে তাকালে আমরা পুরো বিষয়টিকে কিছুটা হলেও অনুধাবন বা আঁচ করতে পারি প্রয়াত ভাওয়াইয়া সম্রাট আব্বাস উদ্দিনের সেই ঐতিহাসিক গানের মাধ্যমে। ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই হাকাও গাড়ি তুই চিলমারীর বন্দরে’...। প্রাচীনকাল থেকে চিলমারী কুড়িগ্রাম জেলার একটি প্রসিদ্ধ নদী বন্দর হিসেবে পরিচিত। আব্বাস উদ্দিনের ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই’ গানটি চিলমারী বন্দরকে অধিকতর তাৎপর্য্য মন্ডিত করেছে। প্রতি বছর চিলমারীর অষ্টমীর চরে অষ্টমী তিথিতে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা ভীড় করেন গঙ্গা ( ব্রহ্মপুত্র ) স্নানের উদ্দেশ্যে। হাজার হাজার ভক্ত দর্শনার্থীদের ভিড়ে জমজমাট মেলা হয় যা চিলমারীর অষ্টমীর মেলা নামে সর্বাধিক পরিচিত। ভাওয়াইয়া মানে গরু- গরুর গাড়ি, ভাওয়াইয়া মানে আবহমান গ্রাম বাংলার চিরায়ত লোকসংস্কৃতি - কালের আবহে হারিয়ে যাওয়া সেইসব সোনালী সবুজ স্বপ্নময় রঙিন স্মৃতি যা আজও কালের সাক্ষী হয়ে আছে। সুজলা সুফলা শস্য-শ্যামলা ফুলে-ফলে ভরা ছায়া-ঢাকা পাখি-ডাকা চিরসবুজ অজো পাড়াগাঁয়ের আঁকাবাঁকা মেঠোপথ। যেখানে চারিদিকে শস্যে ভরা সবুজ শ্যামল মাঠ আর নানা বর্ণের পাখির সুমধুর কলতান। বটবৃক্ষের ছায়ায় কার অন্তর না জুড়ায় ! তাইতো ‘ওকি ও বন্ধু কাজল ভোমরা রে / কোন দিন আসিবেন বন্ধু কয়া যাও কয়া যাও রে / বটবৃক্ষের ছায়া যেমন রে / মোর বন্ধুর মায়া তেমন রে’...। গানটিতে একদিকে যেমন বন্ধুর প্রতি অসীম ভালবাসা ও মায়া মমতার গাঢ়ত্বের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে তেমনি গ্রাম বাংলার চিরায়ত প্রাকৃতিক ও নৈসর্গিক দৃশ্যাবলী অঙ্কিত হয়েছে। বাংলার রূপ-সৌন্দর্যে কবি শিল্পীরা মুগ্ধ হয়ে কবিতা রচনা করেন। শিল্পী তাঁর তুলির আঁচড়ে ছবি আঁকেন অকপটচিত্তে অবলীলায়। তাইতো কবি জীবনান্দ দাশের ভাষায় বলতে হয়- ‘আবার আসিব ফিরে ধান সিঁড়িটির তীরে এই বাংলায়’...। অকুতোভয় বাঙালি ভাষা সৈনিক বীর মুক্তিযোদ্ধার দেশ, নদীমাতৃক বাংলার আঁকাবাঁকা মেঠোপথ আর সোনালী আঁশের দেশ, গাংচিল শঙ্খ-শালিকের দেশ, বিজ্ঞানী-শিল্পী, কবি-সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবীদের দেশ, ব্রিটিশ শাসন-শোষণ, নিপীড়ন-নির্যাতন, লাঞ্চনা-বঞ্চনা ও গঞ্জনার দেশ, পদ্মা-মেঘনা-যমুনা-ব্রহ্মপুত্র-ভাওয়াইয়া, কীর্ত্তন, আউল-বাউল, জারি-সারি, মুর্শিদী, ভাটিয়ালী, ভাটির দেশ-কৃষিপ্রধান দেশ-বাংলাদেশ। বাঙালির আত্মপরিচয়ের কথা আসলে ‘দুধে-ভাতে বাঙালি’ কথাটি মনে পড়ে যায়। ব্রিটিশ শাসনাধীন তৎকালীন ভারতবর্ষে আনুমানিক ত্রিশের দশকে ‘দুধে-ভাতে বাঙালি’ কথাটির প্রচলন শুরু হয়। ‘দুধে-ভাতে বাঙালি’ কথাটি একদিকে যেমন বাঙালির আত্মপরিচয়ের সাক্ষ্য বহন করে তেমনি বাঙালি খাদ্যাভ্যাসেরও। খাঁটি দুধের খাঁটি কথা কার না মনে পড়ে ? সেই স্বাদ, সেই ঘ্রাণ আজও কি ভোলার মতো। হাতের মোগরা (কব্জি ) ডুবিয়ে বাঙালি দুধ-ভাত না খেলে আত্মতৃপ্তি বা পরিতৃপ্ত হতো না। এক্ষেত্রে একটি উপমা প্রচলিত আছে- ‘দুধও মিঠা দইও মিঠা আরও মিঠা ননী / তাহার চেয়ে অধিক মিঠা মা বাপ ও জননী’...। তাই আজও আবহমান গ্রামবাংলার মানুষের মুখে প্রবাদটি কালের সাক্ষী হয়ে আছে। এক্ষেত্রে ঈশ্বরী পাটনীর ‘ আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে’ উদ্ধৃটি প্রণিধানযোগ্য। তখনকার দিনে পিতা মাতারা দুধ ভাত খাইয়ে তাদের সন্তানকে আশীর্বাদ করতো। তাই আজও প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের বিশেষ করে অজো পাড়াগায়ের বয়োবৃদ্ধ লোকমুখে ‘ পিতামাতার আর্শীবাদ খা বাচা দুধ-ভাত’ নামক খনার বচনটি শুনতে পাওয়া যায়। তখন বাঙালি কৃষক বা গেরস্থের ঘরে ছিল গোয়াল ভরা গরু, গোলা ভরা ধান আর পুকুর ভরা মাছ। আর গরু হিসেব করা হতো গন্ডায়। রাখাল গাঁয়ের আঁকাবাঁকা মেঠোপথ দিয়ে গরু মাঠে চড়াতে নিয়ে যেত। সেই সাথে দ্বরাজ গলায় ভাওয়াইয়া গান জুড়ে দিতো। আবার অনেক সময় রাখাল মহিষের পিঠে চড়ে মইষালের গান গাইতো। ‘ওকি মইষাল রে / ছাড়িয়া যান না মোক / কাগাশিয়ার ঘরে রে’...। ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই / কত রব আমি পন্থের দিকে চায়ারে’...। ‘ওরে গাড়িয়াল বন্ধুরে / বন্ধু ছাড়িয়া রইতে পারিনা রে’...( আব্দুল করিম ) এবং ‘গড়তে মোদের সোনার বাংলা / জীবন করবো দান’...( কছিম উদ্দিন ), ‘বটবৃক্ষের ছায়া যেমন রে / মোর বন্ধুর মায়া তেমন রে’... ( আব্দুল করিম ) গানগুলো এখনও গ্রাম বাংলায় কালে ভদ্রে শুনতে পাওয়া যায়। ঢেঁকি ,উরুন, গাইন, যাতা যেমন বাঙালি রমনীর আত্মঅহংকার ছিল তেমনি গরু, মহিষ, গরুর-গাড়ি, লাঙ্গল, জোয়াল ছিল বিত্তবান বাঙালি বা গেরস্থের অহংকার। আর একটি বিষয় মনে পড়ার মতো আর তাহলো কোন বিশেষ মুহুর্ত বা ক্ষণ অর্থাৎ ‘গোধূলী’। আসলে ঐ ‘গোধূলী’ শব্দটির উৎপত্তিও গরুর পায়ের ধূলি হতে। 

সূর্যাস্তের পূর্ব মুহুর্তে রাখাল যখন গরু ছাগল নিয়ে মাঠ থেকে বাড়ি ফিরতো এবং পাখিরা সব আপন মনে ঝোঁপঝাড় ও বনজঙ্গলে নিজের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিতো তখন প্রকৃতিতে চারিদিকে কেমন যেন ঘন ধোঁয়াশায় আচ্ছন্ন কুয়াশার মতো অবস্থা বিরাজ করে এবং ঠিক কোন এক মুহুর্তে সূর্য শেষবারের মতো উঁকি দিয়ে নিজেকে হঠাৎ হারিয়ে ফেলে। তখনকার দিনে গরুর গাড়ির চাকা শক্ত কাঠ দিয়ে তৈরি হতো। তৎপরবর্তীতে কাঠের পরিবর্তে টায়ারের চাকার প্রচলন শুরু হয়। রং-বেরঙয়ের শাড়ি পরা নাইওরি না থাকলেও বিভিন্ন ধরনের পণ্য ও জিনিসপত্র পরিবহনের ক্ষেত্রে গরুর গাড়ি ব্যবহৃত হচ্ছে এখনও। গাড়িয়াল তবু থেমে থাকার নয়-চলছে তার গরুর গাড়ি। ‘চলরে মোর গরুর গাড়িরে / পাকা রাস্তা দিয়া / নওদাড়ি নাইওরি গুল্যা দেখি থাকে চায়ারে’...( রবীন্দ্রনাথ মিশ্র )। তখনকার দিনে সমাজে পণপ্রথা ( বিবাহের ক্ষেত্রে ) প্রচলিত থাকায় অনেক বয়সে পুরুষদের বিবাহ হতো। সে কারণে মেয়েদের বিশেষ করে সুন্দরী মেয়েদের দেমাক বা কদর ( দাম ) ছিল গগনচুম্বী। অনেক যুবকের বয়স ঢের হয়ে যেতো। এ ধরনের বয়স্ক পুরুষদের ঢেনা বলে আখ্যায়িত করা হতো। তাই তারা প্রায়শই আবোর ( দিদিমা / নানী ) কাছে বিয়ের বায়না ধরতো। এই গানের মধ্য দিয়ে বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে ফুটে ওঠেছে। ‘মুই হনুং মাওরিয়া ঢেনা আবো / কাঁয় দিবে বিয়াও / যেমন কইনার হইছে ভাও’...( হরলাল রায় )। বেশি বয়সে বিয়ে হওয়ার পর স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভালবাসার গাঢ়ত্ব বেড়ে যায় তা নিচের গানটির মাধ্যমে চিত্রায়িত হয়েছে। ‘বয়স কালের কামাইরে দিয়া / তোক সুন্দরী করচং বিয়াওরে / ওকি সুন্দরী বাইর হও সুন্দরী’...( কছিম উদ্দিন )। যদি কোন কারণে স্ত্রীর অকাল মৃত্যু হতো তখন স্ত্রীর শোকে শোকাভিভূত স্বামীর করুণ আর্তি ফুটে উঠেছে এই গানে - ‘নও দাড়িটা মরিয়া মোর বোন হইছে হানি / আধার ঘরোত পরি থাকোং পরে চোখের পানি / আবো টাপ্পাস কি টুপ্পুস করিয়া’...( আব্দুল করিম )। স্বামীর মৃত্যুতে আবার স্ত্রী - ‘ওকি হায়রে নিদয়ার কাগা / দিন দুপুরে তুই আর কান্দিস না / পতি মরা শোক না যায় রে পাশুরা’...। মেয়েকে শ্বশুর বাড়িতে নাইওর যাওয়ার ক্ষেত্রে গরুর গাড়ি ও পাল্কিই ছিল ঐতিহ্যবাহী। নাইওর শব্দটি নববধূর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ছিল। ধীর গতির কারণে দূরের যাত্রায় অনেক সময় লেগে যেতো। নিধূয়া পাথারে নিঃশব্দ রাত্রে গরুর গাড়িতে চড়ে গাড়িয়াল ভাওয়াইয়া গান ছেড়ে দিতো ( গাইতো )। জনবসতির কাছাকাছি আসলে গরুর পায়ের খট খট শব্দ ও গরুর গলার ঘন্টা বা ঘুঘড়ার শব্দ শোনা যেতো। বাপের বাড়ি ছেড়ে শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার সময় বেদনা-বিরহ ও বিচ্ছেদে মেয়ে ( নববধূ) কান্নায় ভেঙ্গে পড়তো। পাড়া প্রতিবেশি ছুটে আসতো শান্ত্বনা দেয়ার জন্য। সবশেষে সবার মায়া মমতা ভালবাসার বেড়াজাল ছিন্ন করে গরুর গাড়িতে চড়ে শ্বশুরালয়ের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিতো। তখন কোন এক সময গাড়িয়াল গেয়ে উঠতো- ‘না কান্দেন না / কান্দেন কন্যা হে’...। আধুনিকতার ছোঁয়ায় এখনকার বৌ-ঝিরা আর গরুর গাড়িতে উঠতে চায় না। পশ্চিমা অপসংস্কৃতির বেড়াজালে আজ আমরা নিজেদেরকে পরিপুষ্ট করতে লেগে পড়ে যাওয়ার অভিপ্রায়ে অবতীর্ণ হচ্ছি। এখনকার বঙ্গ ললনারা লজ্জাবোধ করে গরুর গাড়িতে চড়তে। গাড়ির চাকার শব্দে মাথা ঘোরার কথা ও ছল চাতুরতার আশ্রয় নেয়। এক্ষেত্রে গাড়িয়ালের আক্ষেপ ফুটে ওঠেছে এই গানটির মধ্যে-‘ভাইরে আগের দিন আর নাই / রিকশা ওয়ালায় তুলিয়া দিলো মোর গাড়িয়ালী কামাই / নাইওরিরা শোনেনা কাঁও গরুর গাড়ির কথা / গাড়ির চাকার ক্যার ক্যারিতে ওমার ঘোরে বলে মাথা’...। তখনকার দিনে গরুর গাড়িতে ছৈ টানানো থাকতো। পৌষ সংক্রান্তিতে গ্রাম বাংলায় নবান্নে পিঠা পায়েস খাওয়ার ধূম পড়ে যেতো। নানা বাহারি নঁকশী পিঠা তৈরিতে বাঙালি রমণীরা খুব পটু ছিলেন। বাঙালি রমণীরা শুধু পিঠা তৈরিতে ক্ষান্ত হতেন না যতক্ষণ না করে সেগুলো আত্মীয় স্বজন ও পাড়া প্রতিবেশীদের খাইয়ে স্বাদ ভক্ষণ করাতেন। লোক পাঠিয়ে দিয়ে নতুন জামাইকে নিমন্ত্রণ করিয়ে নিয়ে আসা হতো। মেয়েকে শ্বশুর বাড়িতে নাইওর যাওয়ার সময় দুধ দই, চিড়া, মুড়ি, আম-কাঁঠাল ও মাছের ভাড় দেয়ার প্রথা প্রচলিত ছিল। যা আজও প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের অনেক অজো পাড়া গাঁয়ে দেখতে পাওয়া যায়। গরুর-গাড়ি, পাল্কি , উরুন, গাইন, যাতা, ঢেঁকি, হুকা, ঝাঁপি, লাঙ্গল, জোঁয়াল আজ সবই আমরা কালের আবহে হারাতে বসেছি। সবচেয়ে বড় যে কথাটি মানুষের মনের যে প্রশান্তি তা আর নেই। সামাজিক অশান্তি ও চরম দুর্দশা-হতাশা ও অমানিশার কালো অন্ধকার ভর করছে। আজকাল ভাওয়াইয়া আর মানুষ শুনতে চায়না। ‘ও মুই দেখিনু রে ভাবিয়া / ভাইরে নিরলে বসিয়া / নাইরে আগের যুগ যামানা ভাই / গেইছে রে বদলিয়া’...( নীলকমল মিশ্র )। সংগীত সংগীত না হয়ে ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। সঙ্গীতের সঙ্গে মানুষের আত্মার সম্পর্ক নেই বললেই চলে । আত্মিক দৃষ্টিকোণ থেকে সংগীত পরিবেশিত হয়না এখন। গানের মধ্যে তেমন কোন ভক্তি ও আবেদন পরিলক্ষিত হয় না। এখন সংগীতের মধূময় মূর্ছণা, ভক্তি, আবেগ অনেকটা বিবর্জিত। উত্তর জনপদের ভাওয়াইয়া গানকে বিশ্বের সংগীত সভায় প্রতিষ্ঠিত করেছে প্রয়াত ভাওয়াইয়া সম্রাট আব্বাস উদ্দিন আহমদ। তাঁর উত্তরসূরী প্রয়াত মো. কছিম উদ্দিন, মহেশ চন্দ্র রায়, হরলাল রায় এবং ওপার বাংলার হরিশ চন্দ্র পাল, সুরেন্দ্রনাথ রায় বসুনিয়া, নায়েব আলী (টেপু) শ্রীমতি প্রতিমা বড়য়া (পান্ডে) প্রমূখ ছাড়াও দুই বাংলার অনেক খাতনামা অনেক ভাওয়াইয়া শিল্পী, গবেষক, সংগ্রাহক, সংগঠক, গীতিকার ও সুরকার যাঁরা ভাওয়াইয়া গানের প্রবহমান ধারাকে সমৃদ্ধ করেছেন। ভাওয়াইয়াকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয়ে হাল ধরেছেন বাংলাদেশ টেলিভিশনের এক সময়কার জনপ্রিয় লোকসংগীতের অনুষ্ঠান ‘ভরা নদীর বাঁক’ এর উপস্থাপক ও ভাওয়াইয়া শিল্পী মুস্তাফা জামান আব্বাসী । শিল্পী মুস্তাফা জামান আব্বাসী বাংলাদেশ টেলিভিশনে ‘লৌকিক বাংলা’ নামে আরও একটি জনপ্রিয় লোকসংগীত অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন এবং অনুষ্ঠানটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। ভাওয়াইয়াকে যদি আমরা লোকসংগীত হিসেবে মযার্দার আসনে অধিষ্ঠিত করতে পারি তাহলে তা আঞ্চলিকতার গন্ডি ছাড়িয়ে বিশ্ব সংগীত দরবারে বিশ্বখ্যাতি বা আসন অলংকৃত করতে সচেষ্ট হবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

ভাওয়াইয়া সম্রাট আব্বাস উদ্দিন আহমদ্

ভাওয়াইয়া সম্রাট আব্বাস উদ্দিন আহমদ্ আমাদের সংগীত ইতিহাসে একটি অমর নাম। বাংলা লোকসংগীতের স্বনামধন্য শিল্পী এই মহান ভাওয়াইয়া সাধক পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার বলরামপুরে ১৯০১ সালের ২৭ অক্টোবর জন্ম গ্রহন করেন। পিতা প্রয়াত জাফর আলী আহমদ্ ও মাতা হীরামন নেসা। শৈশব থেকে গানের দিকে আব্বাস উদ্দিনের নেশা আর কোচবিহার ভাওয়াইয়া গানের অঞ্চল। বালক আব্বাস লোকমুখে যে গান শোনেন তাই শিখে ফেলেন। গ্রামের স্কুল শেষ করে আসেন কোচবিহারে সেখান থেকে তুফানগঞ্জে। সেখানকার সরকারি ডাক্তার মোবারক হোসেন সুন্দর সুরেলা মিষ্টি কন্ঠে রবীন্দ্র সংগীত গাইতেন। স্কুল ছুটির পর আব্বাস তার কাছে গিয়ে গান শেখেন। ইন্টারমিডিয়েট পাশ করার পর আব্বাস রাজশাহী কলেজে ভর্তি হন। সে সময় আচার্য্য প্রফুল¬ চন্দ্র রায় রাজশাহী এলে তার সম্মানে আয়োজিত সভায় নজরুল ইসলামের ‘ঘোর ঘোররে ঘোররে আমার সাধের চাকা ঘোর’... গানটি গেয়ে আব্বাস উদ্দিন যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেন। প্রফুল¬ চন্দ্র স্বয়ং তার প্রশংসা করেন। কিন্তু রাজশাহীতে স্বাস্থ্য না টিকার কারণে আব্বাস উদ্দিনকে কোচবিহারে যেতে হলো ততদিনে তিনি অত্যন্ত চমৎকার গাইছেন। সে সময় কাজী নজরুল ইসলাম কোচবিহারে যান। সেই সময় আব্বাস উদ্দিনের সাথে তার প্রথম যোগাযোগ। 

এরপর নজরুলেরই আমন্ত্রণে দার্জিলিং এর এক সভায় আব্বাস উদ্দিন গান গাইতে যান। কলকাতায় বেড়াতে গিয়ে বিমল দাস গুপ্তের মাধ্যমে আব্বাস উদ্দিন গ্রামোফোন কোম্পানীর সঙ্গে যোগাযোগ করে রেকর্ডে গান গাইবার সুযোগ পেলেন। শৈলেন রায়ের লেখা ‘স্মরণ পাড়ের ওগো প্রিয়’... এবং ‘কোন বিরহীর নয়ন জলে’... গান দুটি প্রথম রেকর্ড করেন। দুটি গানই অতি জনপ্রিয় হয়। এই সাফল্যে গান গাওয়াকেই জীবনের লক্ষ্য হিসেবে স্থির করে তিনি কোচবিহার থেকে কলকাতায় চলে আসেন। এবারও দু’খানা গান তিনি রেকর্ড করলেন এবং দুটি গানই জনপ্রিয়তা পেল। কাজী নজরুল ইসলাম তখন গ্রামোফোন কোম্পানীর গীতিকার, সুরকার ও প্রশিক্ষক। নজরুল ইসলাম আব্বাস উদ্দিনকে খুবই স্নেহ করতেন। আব্বাস উদ্দিন একদিন কাজী নজরুল ইসলামকে ইসলামী গান রচনা করতে বলেন এবং এ শ্রেণির গান রেকর্ড করার জন্য গ্রামোফোন কোম্পানীর সমর্থন আদায় করেন। ‘ও মন রমজানের ঐ রোজা শেষে’... এবং ‘ইসলামের ঐ সওদা লয়ে’... কাজী নজরুল ইসলামের প্রথম রচিত ইসলামী গান আব্বাস উদ্দিনই রেকর্ড করেন। নজরুল ইসলামের ইসলামী গান রচনা ও সে সব রচনাকে জনপ্রিয় করার ব্যাপারে আব্বাস উদ্দিনের একটি বড় ভূমিকা ছিল। কলকাতাতেই আব্বাস উদ্দিনের সাথে পল্ল¬ী কবি জসীম উদ্দিনের পরিচয় ও ঘনিষ্ঠতা। উভয়ে মিলে কলকাতা শহরে লোকসংগীত প্রচারে ব্রতী হন। লোকসংগীত সম্পর্কে কলকাতা তথা নগরবাসী মানুষের মনে গভীর উৎসাহ জাগে। লোকসংগীতের প্রথম দিকে আব্বাস উদ্দিন কিছু ভাটিয়ালী গান রেকর্ড করেন। এরপর আসে তার ভাওয়াইয়া গান রেকর্ড করার পালা। ভাওয়াইয়া তো তার অঞ্চলের গান আর শৈশব থেকেই তিনি এ গান গাইছেন। মাঝে মাঝে সুর ভেঙ্গে যাওয়া সুরে তার আশ্চর্য দখল। ফলে ভাওয়াইয়া গানে আব্বাস উদ্দিন অসামান্য সাফল্য অর্জন করেন। আঞ্চলিক ভাষায় রচিত ছোট ভাই আব্দুল করিমের লেখা কয়েকটি পালাও তিনি রেকর্ড করেন। উপমহাদেশের খ্যাতিমান দোতরা বাদক কানাইলাল শীলের সাথে আব্বাস উদ্দিনের যোগাযোগ অত্যন্ত ফলদায়ক হয়েছিল। তাঁর সংগীত সংগ্রহ যেমন আব্বাস উদ্দিন ব্যবহার করতে সমর্থ হন তেমনি তার গানের সঙ্গে কানাইলালের দোতরা বাদন অভাবনীয় সৌন্দর্য সৃষ্টি করে। লোকসংগীতের অমীয় সাগরে প্রাণবন্ত একটি ধারা ভাওয়াইয়া। বর্তমানে বাংলাদেশের বৃহত্তর রংপুর দিনাজপুর জেলা, ভারতের কোচবিহার, পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি ও পশ্চিম দিনাজপুর এবং আসামের গোয়ালপাড়া অঞ্চলের মাটি ও মানুষের হৃদয়ের গভীর থেকে উৎসারিত গান ভাওয়াইয়া। এদেশের পল্ল¬ী অঞ্চলের কৃষাণ-কৃষাণীর শ্রমজীবী নর-নারীর দৈনন্দিন আচার অনুষ্ঠানের সাথে মিশে আছে এ গানের সুর-ভাব-ভাবনা ও বিষয়। বাংলার পল্ল¬ীর বাংলার হিন্দু-মুসলমানের বাংলার সহজ-সরল সাধনার দুঃখ বেদনা আশা-নিরাশা প্রাণ ফিরে পেয়েছে এই মহান শিল্পীর মধ্যে। আর তাইতো খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের কন্ঠে গীত এ ভাওয়াইয়া গান বাঙালি জনজীবন ছাড়িয়ে বিস্তৃত আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে। ভাওয়াইয়া গানকে প্রথম সাংগীতিক মর্যাদায় অভিসিক্ত করে একে আঞ্চলিকতার গন্ডীর বাইরে এদেশের সর্বাঞ্চলে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিচিত ও প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে অগ্রণী ও ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেন বাংলার সংগীত ভূবনের অনন্য পুরুষ ভাওয়াইয়া সম্রাট আব্বাস উদ্দিন আহমদ্। ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই হাকাও গাড়ি তুই চিলমারীর বন্দরে’..., ‘ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দেরে’..., ‘কি ও বন্ধু কাজল ভোমরারে’..., ‘আগা নাওয়ে ডুবু ডুবু পাছা নাওয়ে বইসো’..., ‘কিসের মোর রাধন কিসের মোর বাড়ন’..., ‘তোরষা নদী উতাল পাতাল কারবা চলে নাও’..., ‘নদীর কূল নাই কিনারা নাইরে’..., ‘ও কি একবার আসিয়া সোনার চান্দ মোর যাও দেখিয়ারে’... এরকম কালজয়ী গানগুলো অখন্ড সুরের মুর্ছণায় অগণিত মানুষের অন্তর ছুঁয়েছে অপার মহিমায়। 

পৃথিবী বিখ্যাত হিমালয় পর্বত মালার পাদদেশ হয়ে তিস্তা ধরলা, তোরষা নদীর সবুজ পাড়ের এক বিশাল ভূখন্ড জুড়ে যে গান মানুষের অন্তর ছুঁয়েছে হৃদয়কে নাড়িয়েছে আলোড়িত করে স্পন্দিত করেছে সেই ভাওয়াইয়া উত্তরাঞ্চলের মানুষের ভাবের গান- প্রাণের গান- অন্তরের গান। উত্তরবঙ্গের নর-নারীর প্রেম-প্রীতি, বিরহ-বেদনা, ভালবাসা দিগন্ত বিস্তৃত মাঠ গরু মহিষ মহিষাল মাহুত যেন তার গানের সুরে রূপ পায়। শুধু ভাওয়াইয়ায় নয় অনাদৃত উপেক্ষিত পল্ল¬ীগীতি তথা লোকসংগীতকে অবলুপ্তির যাত্রাপথ থেকে রক্ষা করেন আব্বাস উদ্দিনই বললে অত্যুক্তি হবে না। বিংশ শতাব্দীর ত্রিশের দশকের শুরুতে আব্বাস উদ্দিন তার জন্মভূমি উত্তরবঙ্গের ঐতিহ্যবাহী লোকসংগীত ভাওয়াইয়া নিজ কন্ঠে গ্রামোফোন রেকর্ড করার পাশাপাশি এর সংগ্রহ ও প্রচারের উদ্যোগ নেন। আব্বাস উদ্দিনের শিল্পী হিসেবে ভূমিকা ছিল বহুমুখী। তাঁর সংগীত সাধনা সমাজের গভীরতম চেতনা থেকে উদ্ভুত। জীবনের সঙ্গে শিল্পীর যোগাযোগ যেমন ছিল অতি ঘনিষ্ঠ তেমনি মাটির সান্নিধ্যও ছিল নিবিড়। তার অপূর্ব সুরেলা কন্ঠে গাওয়া ভাওয়াইয়া গানের সুর ঐশ্বর্য ও ভাব সম্পদ অচিরেই দেশের সমগ্র সংগীত পিপাসুদের মন জয় করতে সক্ষম হয়। লোকসংগীতকে বাংলা গানের অভিজাত মহলে প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে তার অবদান অনস্বীকার্য। তাই তারই অক্লান্ত প্রচেষ্টায় বিজয়ীর বেশে ভাওয়াইয়ার সুর মুর্ছনা দেশের সীমা ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বময়। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভক্তির সময় আব্বাস উদ্দিন ঢাকায় চলে আসেন। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট রাত বারটার পর ঢাকা বেতার থেকে প্রথম সংগীত পরিবেশন করেন। ১৯৫৫ সালে ফিলিপাইনের ম্যানিলায় আয়োজিত এশীয় সংগীত সম্মেলনে বাংলা লোকসংগীত সম্পর্কে ভাষণ দেন। সেখান থেকে রেঙ্গুনে ফেরার পথে কয়েকটি সভায় যোগ দেন ও গান গেয়ে শোনান। ১৯৫৬ সালে তিনি জার্মানীর স্টুটগার্ট শহরে আয়োজিত আন্তর্জাতিক লোকসংগীত সম্মেলনে যোগ দেন। বাংলা লোকসংগীত সম্পর্কে বিশ্ব সভায় প্রদত্ত তার ভাষণ ও তার গান শ্রোতামন্ডলীর অকুন্ঠ প্রশংসা লাভ করে। প্রকৃতি বিধৌত সাধারণ মানুষের প্রিয় গান ভাওয়াইয়া আজকের আধুনিক মানুষের গলায় গীত হচ্ছে নানা মাধূর্যে। ভাওয়াইয়া বিচরণ হয়ে আসছে সময় থেকে সময়ান্তে কাল থেকে কালান্তরে যুগ থেকে যুগান্তরে। ভাওয়াইয়া লোক মানসের ফসল। একদিকে হৃদয়িক প্রেমই ভাওয়াইয়ার বড় অহংকার অন্যদিকে তেমনি বিরহী হৃদয়ের চঞ্চল আকুতির করুণ সুর মুর্ছনা ধ্বনিত হয় ভাওয়াইয়ায়। আদি-করুণ-হাস্য ও শান্ত রসে সিক্ত এ গান। আধ্যাত্ববোধ যেমন গভীরভাবে সৌন্দর্য চেতনার সাথে গ্রোথিত তেমনি আব্বাস উদ্দিনও গভীরভাবে ভালোবেসে ছিলেন তার দেশ, মাটি ও মানুষকে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এই সোনার দেশ থেকেই তিনি পেয়েছিলেন তাঁর গান ও সুর। ১৯৫৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর সেই চিরায়ত প্রথাকে বরণ করে সবাইকে ছেড়ে চলে যান। তাঁর অবিস্মরণীয় সুরেলা কন্ঠের অবিনাশী গান আজও হারিয়ে যায়নি বরং তা পলে অনুপলে মানুষকে উজ্জীবিত করেছে ধ্বনিত হচ্ছে মানুষের হৃদয়ের তন্ত্রীতে তন্ত্রীতে। বৈষয়িক জীবনের প্রচন্ড কোলাহলেও ভাওয়াইয়া গান বাজে অন্তরে অন্তরে দোলা দেয় অনন্তকাল অমর ঐতিহ্যে। “ও কি গাড়িয়াল ভাই হাকাও গাড়ি তুই চিলমারীর বন্দরে”....।



sk_roy11@yahoo.com


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* মন্তব্য করতে পেজটি রিফ্রেশ করুন .