শব্দের মিছিল | ৭৫তম সঙ্কলন


আরও একটা বছর চলে যাচ্ছে। আর ২৪ ঘন্টা পরেই পৃথিবী স্বাগত জানাবে নতুন বছরকে। এইরকম একটা আবহে আজ প্রকাশ পাচ্ছে শব্দের মিছিল'-এর ৭৫ তম সংকলন।

আজকের দিনে, সর্বাত্মক তৈলমর্দনের যুগে, কাউকে তােষামােদ না-করে একটি মাসিক ওয়েব পত্রিকার
৭৫টি সংখ্যা নিয়মিত ব্যবধানে বের করে যাওয়া সহজ কাজ ছিল না। কিন্তু মিছিলের লেখক- পাঠক-শুভানুধ্যায়ীরাই ছিলেন মিছিলের প্রকৃত শক্তি। তাঁদের সাগ্রহ অংশগ্রহণে ও প্রেরণায় ( ইচ্ছে করেই 'অনুপ্রেরণা' শব্দটি আমরা ব্যবহার করছি না) মিছিল এই লক্ষ্যে পৌঁছতে পেরেছে।

গুগুলের আন্তর্জাতিক ওয়েব সার্চ পরিসংখ্যানে শব্দের মিছিলে এযাবৎ ৬ লক্ষাধিক মানুষের পরিক্রমা আমাদের আরও দায়িত্বশীল করে তুলেছে, মানুষের পাশে থাকতে। এই ধারা বজায় থাকলে আগামীতেও মিছিলের গতি এভাবেই অব্যাহত থাকবে, আশাবাদী।

পুরােনাে বছর চলে যাওয়ার মুখে স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, আমরা ভালাে নেই। এই দেশ, এই রাজ্য, এখানকার সমস্ত জনপদ যেন এক সস্তা খেলার সামগ্রী হয়ে দাঁড়িয়েছে নিয়ন্ত্রকদের হাতে! মানুষের স্বাধীনতা, বাঁচার অধিকার, কাজের অধিকার, সবই যেন ক্রমশ চটুল রাজনীতির হাতে পড়ে ভূলুণ্ঠিত! এরকম অন্ধকারের মধ্যে আমাদের চাই আলাের দিশা দেখানাের মতাে মানুষ, যাঁদের সংখ্যা কমে আসছে ক্রমশ।

বাঙালির কাছে ২০১৮ সালটি শেষ হলাে বড়াে বেদনার মধ্যে দিয়ে। বাংলা সংস্কৃতি জগৎ হারিয়ে ফেললাে একের পর এক কয়েকজন প্রবাদপ্রতিম নক্ষত্রকে। বাংলা গানের স্বর্ণযুগের শিল্পী দ্বিজেন মুখােপাধ্যায় চলে গেলেন। শুধু মহালয়ার গানে নয়, আমরা তাঁকে মনে রাখবাে একসময়ে আইপিটিএ-র প্রগতিশীল ও সমাজতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সৈনিক হিসেবে চলে গেলেন 'অমলকান্তি', 'উলঙ্গ রাজা', 'কলকাতার যীশু'-র সমাজ-সচেতক কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। তাঁর সব কালজয়ী কবিতা ছাড়াও আমরা মনে রাখবাে বাংলা কিশাের সাহিত্যকে তিনি কোন উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন 'আনন্দমেলা'-র সম্পাদক হিসেবে।

গতকালের দিনটি কেড়ে নিল বিশ্ববিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক মৃণাল সেন-কে। সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটক ছাড়া আর যে- মানুষটি বাংলা সিনেমাকে নিয়ে গেছেন আন্তর্জাতিক উচ্চতায়। শুধু তাই নয়, 'ভুবন সােম', 'কলকাতা ৭১', 'ইন্টারভিউ', 'মৃগয়া', 'খারিজ'...একের পর এক ছবি দিয়ে বলেছেন মানুষের কথা, সমাজের কথা, দেশের কথা। এঁরা সকলেই দীর্ঘজীবন পেয়েছেন, প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে অস্তমিত হয়েছেন, দুঃখের হলেও এটাই বাস্তব। কিন্তু আশঙ্কার বিষয় হলাে, তাঁদের চলে যাওয়ায় যে-শুন্যতা সৃষ্টি হয়েছে, তা পূরণ করার ক্ষমতা আজকের বাঙালির নেই।

এই বাস্তবতাকে মেনে নিয়েই আমরা ২০১৯-কে বরণ করি। আশা করি, সর্বার্থে এই অন্ধকার সময় কেটে আলাের দিকে আমাদের নিয়ে যাওয়ার পথের দিশা দেখাবে নতুন বছর।

- শব্দের মিছিল


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ