শাঁওলি দে

||ডোর||
'মা দিদি আমায় মারছে।'রৌণকের চিৎকার এ গোটা বাড়ি মাথায়। রান্নাঘরে টুকটাক কাজ সারছেন রৌণকের মা। ওখান থেকেই উত্তর দিলেন,'দাঁড়া আমি আসছি। 'বসার ঘর থেকে ধুপধাপ আওয়াজ আসছে। মা বুঝলেন লেগেছে দুই ভাই বোনের যুদ্ধ। এসব ক্ষেত্রে মায়েরই যত বিপদ। তিনি কার পক্ষে এই নিয়েও দুন্দুমার বেঁধে যাবে দুজনের। মেয়ে বলবে,'মা তুমি ভাইকে বেশি ভালবাস। 'ছেলে বলবে,'তুমি দিদিকে কিচ্ছু বল না।' টাওয়াল দিয়ে হাত মুছতে মুছতে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলেন তিনি। চোখে প্রশ্রয়ের হাসি। নরম গলায় বললেন,'থাম না তোরা, এত বড় হলি এখনও... বাবা আসলে সব বলে দেব কিন্তু!'

'দাও বলে। আমি জানি বাবাই ঠিক বুঝবে আমকে।'মেয়ের গলায় আত্মবিশ্বাস। রৌণক ডান হাতের বুড়ো আঙুলটা এগিয়ে কাঁচকলার ভঙ্গি আর জিভটা বের করে ভেংচি কাটতে কাটতে বলল,'কক্ষনো না।বাবাই আমাকেই বুঝবে।'

এই হইচই'এর মধ্যেই কলিংবেলটা সকলকে চমকে দিয়ে বেজে উঠল তার নিজস্ব যান্ত্রিক নিয়মে। দৌড়ে গিয়ে দরজাটা খুলে দিল রিক্তা।বাবার আসার সময় এখন। এবার বাবা ঠিক ভাইকে বকবে। খুব ভালো হবে। ভাবল রিক্তা।

বাবা ঘরে ঢুকেই ধপ করে সোফায় বসে পড়ল,'একটু জল দাও তো তাড়াতাড়ি, একটা ভালো খবর আছে বলি। 'জল এগিয়ে দিল রিক্তাই।সকলেই বাবার দিকে তাকিয়ে আছে। বাবা রৌণকের কাছে উঠে এসে ওর মাথায় হাত রেখে সস্নেহে বলে উঠলেন,' তোর হোস্টেলের সব ব্যবস্থা হয়ে গেছে। সামনের মাস থেকেই তুই দার্জিলিং এর বাসিন্দা।'

দার্জিলিং, রৌণকের স্বপ্নের কলেজ। স্বপ্নের জায়গা। কলকাতার ভিড় থেকে অনেক দূরে-কিন্তু কই তেমন আনন্দ তো হচ্ছে না। বরং কস্টই লাগছে এখন।ওই তো দিদিভাই'এর চোখেও জল চিকচিক করছে। মা বাবাই আর দিদিভাইকে ছেড়ে ওই কি থাকতে পারবে? গুটি গুটি পায়ে দিদিভাই'এর কাছে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরল সদ্য কলেজে পা দেওয়া রৌণক। দু ভাই বোন কাঁদছে অঝোরে। রৌণক-রিক্তার মা বাবাই'এর চোখেও জল...ওদের চোখের সামনে দুলছে অদূর ভবিষ্যতের এক অবশ্যম্ভাবী দৃশ্যের মহড়া।


শাঁওলি দে   শাঁওলি দে Reviewed by Pd on মে ০৯, ২০১৭ Rating: 5

কোন মন্তব্য নেই:

সুচিন্তিত মতামত দিন

banner image
Blogger দ্বারা পরিচালিত.