পলাশ কুমার পাল

palash









-




মানুষ ছুটছে... ছুটেই চলেছে... কতগুলো বল, নানারঙের- ঝুলছে, ঝুলছে, ঝুলছে... মানুষ ছুটছে... সঠিক বলটা ধরতে পারলেই জয়। জয়ের নেশায় ঝুলন্ত বলের ভিড়ে মানুষের ভিড় মানুষ হওয়ার তাগিদে।

একটা হট্টগোল পরিবেশে কেবল শব্দ। বলে বলে ঠোক্কর বা মানুষে মানুষে...
মানুষ ছুটছে...

লাল বলটা হাতে নিলে, পিঠে শত শত লাশের বস্তা নিয়ে বলটা হাতের শিরা-উপশিরা খোঁজে।
সবুজ বলে হাত দিলে কালো একটা শিকড় মৃতপ্রায় ধুঁকছে... ইতিহাসকে দিয়েছে জীবন-আনন্দ-হৃদয়-শ্বাস। এখন সে শুধু স্পন্দনহীন বালির শব্দ...

নীল বল ছুঁলে আবারও সমুদ্রমন্থনের ছবি- হলাহল বিষ আর বিষ, ধোঁয়ার মতো আচ্ছন্ন করে। ছুটতে গেলে দেখে কিশলয়েরা কালবৈশাখীতে ছেঁড়া পাপড়ির মতো মানুষের পদপৃষ্ঠ হয়ে বেঁচে!

কমলা বলে আঙুল ছোঁয়ালে শত প্রজাপতির পাপড়ি(ডানা) খসে, আর ঝরে পরে অবসাদে...
গোলাপী বলকে ধরলে আগুনের শিখাতে হাত পুড়ে যায়; যে শিখার উত্স একটা শান্ত পায়রার ডানা।

হলুদ বলে কোলাকুলি হলে একটা বিষাক্ত কামড় ঘাড়ে ক্ষত করে দেয়। আর হাত থেকে খসে পরে চড়ুইয়েরা... অভিমানে চড়ুই মরে। বুজে যায় ঘরের ঘুলঘুলি...

বেগুনী বলকে চুমু খেলে পায়ের নীচে থেকে সরে যায় পৃথিবী। মানুষ ভাসমান গ্রহ হয়ে ওঠে বা পৃথিবী পরিক্রমণে উপগ্রহ। কেউ কাউকে না ছুঁতে পেরে ব্যাকুল নয়নে চেয়ে রয় অসহায় ভাসমানতার নিয়মকে শিরোধার্য করে।

কেউ কেউ পছন্দ মতো বল ছিঁড়ে নেয়। সঙ্গে সঙ্গে বলগুলো সেই রঙের মুখোশ হয়ে এঁটে যায় সেই মানুষের মুখে। বাকিরা ছোটে আরও অন্যকিছু পাওয়ার আশায়...

নিজেদের শিল্পসত্তার প্রমাণ দিয়ে কেউ কেউ সোনালী বল ও রূপালী বলের পিছু পিছু ধায়... তাদের যুক্তিতে সোনালী সূর্য আর রূপালী চাঁদ নাকি পৃথিবীর মাতৃগর্ভ। বল ধরতে তারা দৌড়ায়... পিছনে বাকি মানুষেরা সোনালী-রূপালী বলের পিছু নেয় কৌশলে রঙীন মুখ লুকিয়ে। বা কেউ নিথর হয়ে যায় মানব-ইতিহাসে নিঃশব্দে অদৃশ্য হয়ে-

কোলাহলে সোনালী ও রূপালী বলগুলি সব ভিড়ের মধ্যে ক্রমশ আশ্রয় পেয়ে যায়- মুখোশের ভিড় বাড়ে... বাড়ে সোনালী ও রূপালী মুখোশ... অথচ পাগল এক মানুষ তখনও ছোটে... হঠাত্ একটা বাদামী বলের ধাক্কাতে থামে। তখন বলটা সুতো থেকে ছিঁড়ে গড়াতে শুরু করেছে। মানুষটা বলের পিছনে ছোটে...বল গড়ায়... গড়াতে গড়াতে কোথায় অদৃশ্য হয়! হামগুড়ি থেকে সে উঠে দাঁড়ায়। সামনে-পিছনে কোনো লোক নেই। কেবল দুটি বল- সাদা এবং কালো। দুটির বলের দুটি চোখ। বলদুটি হাতে নিলে অট্টহাস্য শোনা যায়। বাকি মানুষেরা তখন দেখে। দুটি বল মিলে হঠাত্ এক ধূসর বল হয়ে গেছে! ম্যাজিকের মতো পরিবর্তিত এই দৃশ্যে হাসি থেমে যায়। দূর হতে ঘোষিত হয় 'জয়ী'।

পিছনে ...

তখনও ঝুলন্ত বল... তখনও ভিড়- চোখ আর হাত খুঁজে ফেরে মানুষের সন্ধান... প্রত্যেকেই তখন নিজেদের জয়ের লক্ষ্যে ছুটছে। ঘোষকের না-জানা ফলাফলে তারাও একই ক্রমে বেছে নিতে থাকে বল... হয়তো শেষরেখা না ছুঁলে দৌড়ানো শেষ নয় বলে!

মানুষ ছোটে মানুষ হয়ে উঠতে... দৌড়ায়, নির্দিষ্ট দূরত্বে না পৌঁছানো পর্যন্ত... দৌড়ায়...



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ