প্রিয় পুথির মালাটা যেদিন চোখের সামনে ছিঁড়ে যেতে দেখলাম,হতবাক আর কষ্ট মিলেমিশে চোখকে প্রায় ঝাপসা করে দিয়েছিলো।তারপর ধৈর্যহারা না হয়ে পুথিগুলো কুড়িয়ে এনে একটা একটা করে গেঁথে ফেললাম। ছিঁড়ে যাওয়া থেকে মালাটা গেঁথে ফেলার সময়টুকু কি কখনো কোন কবিতা হয়ে উঠতে পারে? কবিতাতো বাস করে শব্দের বুকে,শব্দ নিয়েই খেলা।
আমি মালা গাঁথি – আমি কবিতা লিখি এইসব বাক্য যখন ভাঙি আর গড়ি তখন সমস্ত দায় যেন এই আমি – টার। “ আমি” – আত্মা বা সত্তা,অহমিকা,আমিত্ব।ব্যকরণগতভাবে উত্তম পুরুষ। “আমি” – অহম ছাড়াও হয়ত আরও কিছু আছে। যাইহোক “আমি’ – আমিত্ব,আমার চিন্তা এবং তা আমারই অস্তিত্ব,তাহলে “আমি” অর্থ সেখানে মৃত কেউ নয়।প্রথাগত চিন্তার খোসা ছিঁড়ে “আমি” আমাকে নিয়ে গেলাম চিন্তানদীর কাঁধে – বোধের মাঝে প্রবাহিত সকল অতীত থেকে আগামী পর্যন্ত...সব উৎসব এবং আনন্দময় মুহূর্তকে এক একটা সাজানো ফুল ভেবেই উদ্যান সাজাতে ব্যস্ত না হয়ে,একটু মনোযোগী কোন তস্করের ধারালো চিন্তাকে ধার করে এতটুকু ভাবতে পারি যে,জন্মহীন কি কোন মৃত্যু কল্পনা সম্ভব?তাছাড়া মৃত্যু শব্দটা আমার অপছন্দের,যেন দুঃখ প্রকাশের প্রচার মিডিয়ার একমাত্র শ্রুতিমধুর শব্দ। “আমি” অর্থাৎ আমার অহমকে এখানেই কাজে লাগাতে চাই যে,অপছন্দের মাঝে অনুপস্থিত থাকাটাকে মানুষ হিসাবে বুদ্ধিবৃত্তির অংশিদার ভাবনা ছাড়া আর কিছুই না। কারণ - এড়াবার কি কোন উপায় আজো আবিষ্কৃত হয়েছে?
“আমি” - যতই অহমিকা সম্পন্ন শব্দ হোক না কেন,জীবনে আসা আর যাওয়া কিন্তু মনুষ্য সৃষ্ট কোন বুমেরাং নয়...‘সকল খেলায় করব খেলা এই আমি’ – রবিঠাকুর “আমি” নিয়ে কতই না ভালো বলেছেন। সকল খেলাকে “আমি” একা একাই যাব মলে,তবেই না জয় জয়কার হবে আমার আমিত্ব। আমার সত্তা যখন ঘুমে যাবে,স্বপ্ন আসবে,দেখবে,ছিপ ফেলে কেউ ধরছে নিজেই নিজের ছায়াকে কিংবা অশান্ত আঙুলগুলো হাঁটছে উদ্দীপ্ত করতে কোন মৃত শরীরে – তখন সেখানে সম্পূর্ণ “আমি” উপস্থিত থাকে কতটুকু?
একটা মালায় কি সবসময় একই রঙের পুথি থাকে? না না – তা কেন? কত কত রং বেরঙের রঙিন মালা হয়। শুধু ‘আমি’ নিয়েই তো চিন্তা,চেতনা বা কাব্য হয় না,“তুমি” কে নিয়েও ভাববার আছে। “তুমি” – ব্যকরণগতভাবে মধ্যম পুরুষ,সম্বোধিত ব্যাক্তিসূচক সর্বনাম যা সাধারণত স্নেহপাত্র,ঘনিষ্ঠ আত্মীয়,বন্ধু পিতা-মাতা ও সৃষ্টিকর্তার প্রতি উচ্চারিত হয়ে থাকে। ত্বম – তুমহে ইত্যাদি।তোমাকে আমি যখন “তুমি” করে ভাবছি – সমস্ত স্থিরতা পল্লবিত হয়ে ওঠে।তুমি যখন “তুমি” হও মাথার উপর এক ক্রোশ রোদ না পুড়িয়েই অনেকটা মৌল করে তোলে। খলবলিয়ে ওঠা জল অবুঝ হয়ে মিশে যেতে চায় আদিজলের সমুদ্রে। সভ্যতার চরম উৎকর্ষে নতুন অভিষেক “তুমি” এক আশ্চর্য প্রদীপ। যা তৈরী করছে রক্ত-মাংসের কেবল এই “আমি” কে...তবে “আমি” যতটাই অহমিকার “তুমি” ততটাই স্নেহপরায়ণ ও ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের – বুকের মাঝে টনটনে ব্যথা ঝুঁকে গিয়ে দেখা না গেলেও,ব্যথায় ব্যথিত হয়ে হয়ত অনুভবটাই করা সম্ভব –
জন্ম-মৃত্যু এবং যাপিত জীবনের ভেতরে বেঁচে থাকার সময়ে,পাতাঝরা আনন্দে নেচে ওঠে যখন এই “তুমি” আর “আমি” মিলেমিশে “আমাদের” শব্দবাড়ি পৌছায়।এবং অদ্ভুত ক্রীড়ানুভূতি জন্ম দেয় দ্যুতিময় আলোতে। “আমাদের” – ব্যকরণে সর্বনাম,আমি সহ এক বা একাধিক ব্যক্তির মিলিত প্রকাশ মাত্র। “আমি” আর “তুমি” হলে সারাদিন তবে “আমাদের” হবে সন্ধ্যাটা। দিনশেষে সন্ধ্যার নিয়ন আলোতে আলোকিত হয়ে এমন কোন সংজ্ঞা উপস্থাপন করবে – চারিপাশ খুব মায়া ছড়াবে। চায়ের কাপ আর চামচের নাচানাচি,প্রেমিক প্রেমিকার বন্ধ আয়েশি চোখ নিজেদের ডুবিয়ে দেবে কোন সূর্যের তেজদীপ্ত শোষিত আমেজে – গিটার আর হেরে গলা হবে গানের এক মেলবন্ধন। তবেই জমে গিয়ে “আমি” – “তুমি”এক হয়ে “আমাদের” হব...
জোড়া দেয়া পুথির মালাটা সিদ্ধান্ত নিলাম আর গলায় পড়ব না,খুব যত্ন করে গুঁজে রাখব তোলাবাক্সে। কেননা বিশেষ থেকে সার্বিকীকরণ যাত্রা পথ এই মালাটাই তো দেখিয়ে দিল...
তেমন কোন শুভ্র দৃশ্যপট নয়,আসলে অনেক মৃত্যুর স্তব্ধতা লুকিয়ে পড়ছে আমার সমস্ত শরীরময় বিস্তৃত অসংখ্য গহ্বরের মাঝে।যেন চড়ুই আর শালিক লগআউট করে আবার লগইন করা দেয়ালের ঐ ঘুলঘুলিটা। লন্ঠনহীন আলো অথবা দাগহীন পোশাক নিয়ে শিল্পীর ক্যানভাসের বিষয়বস্তু হতে কখনোই পারব না,কেননা শিল্পীর চোখ বড় করুণ হয় - করুণা নিয়ে শুধু নেমে যাওয়া যায় বালি আর জল মিশ্রিত জলে ...
কাউকে দেখার স্বপ্ন চোখে গুঁজে রেখে যখন বেরিয়ে পড়ি পথে। এক টুকরো মেঘ ডেকে বলবে,আমি আছি সাথে,চলতে থাকো...মেঘের ডাক শুনে পেখম খুলে ময়ূর ছুটে আসবে,আমা হতে কিছু নৃত্য কৌশল ও পালক থেকে যত বিচিত্র কিছু রঙ নিয়ে নাও মুঠোয় করে।কোথা থেকে সার্কাস পার্টির এক জোকার,লাফিয়ে দাঁত খিঁচিয়ে তেড়ে এসে জোরে জোরেই বলবে,থাকবে? তুমি থাকবে সামনের বসন্তকালের সবগুলো দিন আমাদের সাথে? জানি না কেন যে আমার উদাস চোখ আটকে থাকে শেফালীর ঝোপে বড় বড় গাছের ছায়ায়
পথে নেমে পথের রুক্ষতা ভুলতে লিখে যেতে ইচ্ছে করে একটা টলটলে কিংবা নিটোল কবিতা।কিছু শাহরিক শব্দের আনন্দ ঢেলে দেই ঠিক বেড়ে চলা কবিতার নাভিমূলে,দীর্ঘ যাত্রা থেমে যায়।শেষ না হওয়া কবিতা শুরু করে পথ চলা ঈশ্বরের করুণায়,আবার করুণা! হাঁটু গেঁড়ে প্রার্থনাসরূপ গোপন নীল নোটবুক খুলে লিখতে থাকি পিছু ফিরে তাকাবার সময়টুকুতে চূড়ায় উঠে যাওয়ার অভিলাষ। আর ততবারই তিক্তমন মনে করিয়ে দেয় শরীর ভর্তি বেড়ে চলা গহ্বরের করুণ আতি!জানলাম ঈশ্বর অন্ধ...
প্রতিরাত কেন পূর্ণিমা হয় না! ভাবলেই চোখে স্বপ্ন নয় জলই আসে
ছোটো বেলা থেকে এখন অব্দি যে মোহে আচ্ছন্ন তা, নিজেকে স্লো মোশনে দৌড়াতে দেখা। সিনেমায় এমন দৃশ্যে চোখের স্যাটায়ার পড়ে যেত। কেউ কোনদিন নিজেকে দেখতে পায় না। তখন আমি সাত ক্লাসে পড়ি।যেখানে নিজেকে দেখার আস্বাদ পেয়েছি তা আমার ঘরে,আমার আয়নায়।দেখতে ক্যামন আমি? প্রশ্নে রাতের নিয়মে সবার ঘুম শেষে দাঁড়াতাম প্রিয় আয়নার সামনে।নিজেকে দেখার ইচ্ছা ততদিনে অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। একদিন ডান পায়ের তলায় আবিষ্কার করলাম একটা তিল! স্কুলের বন্ধুদের মুখে কিছু কিছু শুনেছিলাম যে কোথায় কোথায় তিল থাকলে কি কি ঘটে,তবু মায়ের কাছে দৌড়,মা এখানে তিল থাকলে নাকি বিদেশে যায়! মা হেসে বলেছিলেন,আমরা তো বিদেশেই আছি,নিজের পিতৃভূমি ছেড়ে অন্যস্থানে বাসই বিদেশ। মায়ের কাছ থেকে ফিরে এলেও মন সায় দিলো না,কারণ,আমার বন্ধু সুতপার মামা বিদেশ থাকে,এই দেশের বাইরের কোন দেশে,একদিন সুতপা দুইটা চকলেট দিয়ে এটাই বলেছিল। মুখে এখনো লেগে আছে সেই স্বাদ,যেন দুধ মালাইয়ের চকলেট। পায়ের তিলটাকে কত্ত যত্ন করতে থাকলাম,অনেক চকলেট কিনতে ও খেতে পারব।
বেশ কিছুদিন পর আরো দুই ক্লাস উপরে উঠেছি বলতে নয় ক্লাস তো তখনো কিন্তু আমার বন্ধু আয়নাই আছে। এরকমই এক রাতে খেয়াল করলাম আমার ডান পাশের গালে কি যেন একটা কালো বিন্দুর মত,হাত দিয়ে ধরলাম,বুঝলাম বিন্দু না এ তো তিল! বুকের ভেতরটা খালি হয়ে গেল,জানা ছিল না এখানে তিল হলে কি হয়? আমার এক ক্লাসবন্ধু আছে নাসরিন,ও জানতো সব,সকাল হতেই স্কুলের সময়ের কিছুটা আগেই হাজির,অপেক্ষা কখন ও আসবে! দূর থেকে দেখেই কাছে গেলাম আর প্রশ্ন করলাম তিল রহস্যের - ও বেশ কিছুক্ষন হেসে বললো,তুই খুব ভাগ্যবতী হতে যাচ্ছিস আর সাবধান সুরে,দেখিস তোর ঠোঁটে যেন কোন তিল বাসা না বাঁধে...কেন বলেছিল ও এ কথা! তবে সেই থেকে চাই ছিলাম একটা ঠোঁটে তিল আসুক,খুব চাইছিলাম খুব
তারপর কত কত মেঘ সরে রোদ,রাত শেষে দিন,আমিও যাচ্ছি উঠে একটা একটা সিঁড়ি বেয়ে যতটা উপরে সময়ে যাওয়া যায়।উচ্চশিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছে দিন,এরই মাঝে দেখা বন্ধু নাসরিনের সাথে যে কিনা স্কুলের তিল বিশেষজ্ঞ ছিলো। আমাকে দেখেই কাছে এসে জড়িয়ে ধরে বলে,তুই কি জেনেছিলি ঠোঁটে তিল থাকলে কি হয়? আমি চমকে গিয়ে মনে করার চেষ্টা করে বলি,না তো! শোন তবে,কেউ একজন হয়,যে খুব প্রিয়জন যাকে তোর মনের কথা বলতে ও তাকে চাইতে পারবি। ও কখন যে চলে গেল টের পাইনি। সেই রাতে আয়নার সামনে দাঁড়ালাম যেন কিছুটা অসহায়ের মত,কেন একটা তিল এলো না এখানে! কেউ তো আসতো,বলতোই না হয়,হ্যালো তুমি খুব ভাগ্যবতী...
আর গান নিয়েও আমার প্রচুর গ্যাঞ্জাম ছিলো -- ভ্যাসলিন ঠোঁটে মাখলে গ্লসি একটা ভাব আসতো এবং তাতে করে সেভাবে হাসি দিলে নাকি বেশ লাগতো,এমনই কিছু বলেছিল ক্লাসবন্ধুরা,রোজ লেইজারে বাসায় খেয়ে একটু আলতো মেখে একটা গ্লসি গ্লসি ভাব নিয়ে ক্লাসে যেতাম। মা বলতেন লেখাপড়ায় যদি আমি অতটা সময় দিতাম যতটা সময় নিজেকে আয়নার সামনে রেখেছি,তবে আমি মনে হয় বড় কিছু একটা স্থানে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারতাম। জীবনের অধিকাংশ সময় এবং চিন্তায় যার অবস্থান সবচেয়ে বেশি ছিল অবশ্যই সে গান,গান এবং গান। সারাদিন মুখে একটার পর একটা গানের লাইন লেগেই থাকতো,তা সিনেমা,নজরুল,রবীন্দ্র,আধুনিক কিংবা নিজের বানানো আউলা কথার গানই হোক না কেন।
তখন বিটিভিতে বাংলা সিনেমা মানেই ছিল সোনার হরিণ,ফলে মুভি অফ দ্যা উইক এ ইংরেজী সিনেমা দেখানো হতো।যাইহোক,এই ইংরেজী সিনেমা দেখার ফলে একটা বিশেষ কায়দায় যে ইংরেজী গান গাওয়া হতো গলা কাঁপিয়ে কাঁপিয়ে এবং নিচ থেকে চড়ায় আর সুরের ওঠা নামার খেলা থাকতো গলায়,যদিও ঐ ধরনের গানের নাম জানা ছিল না। তো এই গানের ওস্তাদ ছিলাম আমি। কোন অনুষ্ঠান,পিকনিক যা কিছু হতো বা আড্ডায় গাইতাম এইরকম গলা কাঁপানো ইংরেজী গান।
সবচেয়ে বুকে মুখে চোখে ঠোঁটে কানে বাজতো যেসব গান তা হলো নচিকেতা,সুমন,শিলাজিত প্রমুখ। আসলে,একটু যেন গর্ব করে এবং কিছুটা ঢং করেই বন্ধুদের থেকে আলাদা প্রমাণের চেষ্টায়ই বলতাম,জানিস আমি জীবনমুখী গান শুনি তোদের মতো মনি কিশোরের গান শুনি না। গোপনে বলছি,সর্বভূক আমি,আদনান বাবু মনিকিশোর,জেমস,খালেদ,তপন চৌধুরী আরো তখনকার যারা যারা ছিল তাদের গান শ্রেফ গিলতাম আর গিলতাম কিন্তু মুখে বলতাম আমার পছন্দ জীবনমুখী গান।
মারাত্মক আপ্লুত হয়েছিলাম,নচিকেতার - দেখে যা যা অর্নিবান,কি সুখে রয়েছে প্রাণ গানটিতে। তখন থেকেই শুধু মনে হতো নচিকেতা নয় আমি এই অর্নিবানকে দেখতে পেতাম! তারপর চোখ বন্ধ করে কলকাতা শহরে কত যে ট্রামে ঘুরেছি,এই অর্নিবানের সাথে।
চিন্তার মাঝে গান থাকার ফলে ক্লাসে স্যার পড়াতেন,আমি স্যারকে দেখতাম,শুনতাম আমার মনকে। সেদিনও এমনই স্যার পড়াচ্ছিলেন আধুনিক বিজ্ঞান ক্লাসে,আমি তাকিয়ে আছি স্যারের দিকে,মনটা ছিল গতকালই প্রথম শোনা সুমনের গানে,প্রথমত আমি তোমাকে চাই...শেষ পর্যন্ত তোমাকে চাই। এই গানটা নিয়ে ভাবছিলাম যে তোমাকে চাই বলতে কতটুকু আকুলতা সুমন বলতে পেরেছে,জীবনের সব কাজে বা প্রয়োজনে যদি তোমাকেই চাওয়া হয় তবে কেন নচিকেতা অর্নিবানকে অমন করে দেখে যেতে বলেছেন!
অমনি স্যারের হাঁক,এই মেয়ে - বলোতো প্রোটোপ্লাজম কী?
আমি থ!স্যার বুঝতে পারিনি
কিন্তু আমি মাত্রই তো পড়ালাম!কই থাকে মন?
স্যার আমি পড়াটা বুঝিনি,আবার একটু পড়াবেন?
যেন স্যার একটু জব্দই হলেন তাই চেপে গেলেন
এখন স্যারকে পেলে বলতাম,স্যার জীবন আসলে কিছুই না সবটাই প্রোটোপ্লাজমের খেলা।
বেলা দুইটা ত্রিশ অর্থ রেডিও। আর সিনেমার বিজ্ঞাপন। আহ! নাজমুল হুদার কন্ঠে, হ্যাঁ ভাই- শোনার যে আকুলতা তা বলে শেষ করার মতো না। নতুন সিনেমার বিজ্ঞাপনে ডুবে থাকতাম আর যদি টিভিতে সেই সিনেমার ট্রেলার একটু দেখা যেত সে যে কি খুশিই না হতাম,তার রেশ থাকতো পরের দিন বন্ধুদের সাথে গল্প না করা পর্যন্ত।
জানা হয়নি,নচিকেতার গান গাওয়া কিংবা সুর বাঁধা সত্যিই অর্নিবান দেখেছিল কিনা। আমি কখনো গান বাঁধলে সুমনের তোমাকে চাই সংক্রান্ত গানই লিখে জানাতাম। দুঃখ থেকে আলাদা করা যত সুখ আছে আসলে তা অসুখ। তাই চেষ্টা থাকবে আলাদা না করে একাকার করে একটা গান লিখে অর্নিবানকে জানানো যে,শেষ পর্যন্ত আমি তাকেই চাই...
আর্তনাদ আসলে গোপন সংবাদবাহক। শহরে পর্যটক আসার কথা। বৃষ্টি নামলে জিভ বাড়িয়ে দু'এক ফোঁটা খেয়ে ফেলে স্কুল পালানো মেয়েগুলি, ওরা আজ কেউ চুল বাঁধেনি। জলে মাছেদের সব মাথা এক হয়ে জোট বাঁধাও থেমে যায়, জেলে পাড়ার জালের সামিয়ানায়। কলতলায় বৌদিদের রোজকার ঝগড়া ছেড়ে চলে মুখ টিপে হাসাহাসি। অতিথি এলে রূহআফজা শরবতে লেবু নয় বরফ টুকরোর ডুবোডুবি।
অসখ্য চুমুর শব্দকোষ অতিক্রম করে ঝিঁঝিঁ র গানকে। দীর্ঘ পথের ধুসরধুলো বিশ্রাম নিয়েছিলো বৃষ্টির আলিঙ্গনে। দার্শনিক পাখিরা পালক আটকে রাখে, আঠা দিয়ে, যেন খসে না পড়ে। পত্রহীন বৃক্ষরা ভীষণ লজ্জিত, কেননা রৌদ্রের আরোহ-অবরোহ ভঙ্গি যৌনতাপ থেকেও তুমুল।
অলসদুপুর থেকে বিকেলের কানামাছি খেলা ছিলো শব্দগত। একটু পরেই যে আঁধার আসবে কোনো কোনো কবি তাকে 'অদ্ভুত' - বলেছেন! কিন্তু নির্জনতিমিরের চিৎকার কিংবা ডুবন্ত জাহাজ বলা যায় অনায়েসেই ... এমন অন্ধকারকে। পর্যটকদের শহরের ম্যাপে ঢেলেছে নাকি কেউ গ্লাস ভর্তি লবণজল - ফিসফিস করে এমনই বলেছিলো দুইটা চন্দনাপাখি। ঘামসূত্রের গল্প নিয়ে সিনেমা হবে, দূরে একটা এরোপ্লেন উড়ে গেলো।
ক্ষমতাহীন এক রাজা কোনো এক আদিম যুগে কেঁদেছিল, যা আজ ইতিহাস.....
আঁধার,শুধুই কি অন্ধকার?কেন শূন্যতা নয়!এমনওতো হতে পারে কোথাও না থাকা আশ্রয়ই শুধু অন্ধকার। শূন্যতা শুনলেই শূন্য হয়ে যাই,তখনই লোভী হয়ে ওঠে প্রকৃতি,কেন তা একটু পর বলছি। এখন শূন্যের কথায় আসি।শূন্যকে বৃত্ত,আর তার বিন্দুতে ভর করে প্রতিনিয়ত ঘুরে ঘুরে আসাই যেন নির্মাণ।প্রতিবার ঘুরে আসার বিনাশ চোখে কিন্তু কেউ পাল্টে যাচ্ছি না,মনে হচ্ছে যে নারী সেই পুরুষ কিংবা যে পুরুষ ছিল সে ই নারী।যদি তা ই হবে তবে প্রণয়,মিনতি,শূন্যতা,সঙ্গম এইসব আভাস যেন সত্তার মাঝে এ - ওকে ধারণ করে চলছি।
পূর্বের কথায় আসি,প্রকৃতি,যার মধ্য থেকে নেমে আসি ধীরে ধীরে স্তব্ধতার মতো। ধরি,যখন আকাশ ভাঙে অযথাই মেঘেদের উদ্বেগ,আকুতি জল হয়ে ঝরে আর জন্ম দিয়ে যাচ্ছে কচি কচি ঘাস,সমস্ত সবুজ-সামগ্রী যারা মাছপাখিদের উচ্ছ্বাস নিয়ে থেকে থেকে একাকী,পুনঃ পুনঃ আশ্রয় থেকে আশ্রয়ে ঘুরি,কাঠ,ইট,মুদ্রা,আলো,একহাত ভর্তি কাচের চুড়ি,পেরেক নিয়ে যাচ্ছে আবির্তিত আবর্তনের ভঙ্গিতে...
প্রথম জন্ম কান্না কি শুধুই আশ্রয়ের দাবী আদায়ের? হয়ত না,শুরু হওয়া পাপ পুণ্যের খেলার আহ্বানে সাড়া দেয়া ও হতে পারে। সাদা জলের মতো হৃদয় ও বোধের অভাব,পাপ ও পুণ্যে জ্বলে ওঠা প্রশ্রয়,বিন্দু বিন্দু অশ্রুজলের সজাগ স্নায়ুর উলঙ্গ আর্তনাদে ডুবিয়ে দিয়ে যায়,সত্তার মাঝে চিরকাল বহমান ঝর্ণার মতো...
পরম ও পুণ্যাত্মা মগ্ন যেখানে শরীরের সন্তুষ্টির বিনম্র নিঃশ্বাসের সাঁতারের মাঝে।ইন্দ্রিয়ের জলাশয়ে যত চেতনঘ্রাণ যাচ্ছে উড়ে স্বর্গ কিংবা নরকের দিকে...
বুকের মধ্যে লুকিয়ে রাখা স্পর্শমণি, জেগে যায় সব পাওয়ারই কিছু ইচ্ছায়। এলিয়ে থাকা গাছের পাতা ছুঁতেই দাঁড়াই ঝুল বারান্দায়,দেখি রেলিঙের পরে রেলিঙ, আর তাই দেখতে আকাশ উল্টে যায় সহমরণে তার উপর, এন্তার সুযোগ পেয়ে বাতাস যেন হু হু করে উড়িয়ে নিচ্ছে মেঘগুলিকে। চুল খুলে, এলোচুলে ইচ্ছে হয়, লাল-ফুল ভেবে বসিয়ে দেই যেকোনো ফুলের ডালে।
রেলিঙ কি তবে আজ ফুলের ফুলের প্রপাতে মাঙ্গলিক উৎসব ?
অচেনা প্রতিকৃতি, বিস্মৃতি বা কিছু কিছু কল্পনা কুয়াশার কণা মেখে শরীরে ফিরে ফিরে আসে। অভিজ্ঞতায় ঘটে যাওয়া যত ঘটনা, দিন ও রাত্রির মত যাওয়া আসা করে। তবুও বাকি থাকা যে দৃশ্য-অভিজ্ঞতা মুছে যায় কোন রহস্যবলয়ে, বাকিটুকু অবিনশ্বর। জোনাকির মাথায় সন্ধ্যা জ্বলে। দিন শেষে অঙ্ক মেলাবার সময়ে মুখোমুখি নিজের সামনে,নিশি বন্ধ চোখে দৃশ্য-ছবি দেখে যাওয়ার সময়ে পালটে আসে আকাশগঙ্গার ঢেউ। অপেক্ষমাণ অঙ্ক, শূন্য, অ-সহায়।
আচানক অঙ্কের দোর কপাটিতে শুভংকর । কাকে অসহায়ের নামতা শোনাই? চাইলেই অবাক করতে পারি এমন একটি জাদুর কাঠি খুঁজি, খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত হই, ইচ্ছে হয় বিরক্ত করি কিংবা ব্যাথা দিতেও মন চায়, পথ চলায় ভুল পথকে চিনতে কাঠি ঘুরিয়ে চিনে নেব বাড়ি ফেরার গলি। বাড়িটাকে বলতেই তো পারি; আমি নড়বো না এক রত্তি । ও ফুলের সাজে রেলিঙ ঘেরা বাড়ি তুমি হেঁটে হেঁটে চলে এসো আমার নাগাল সৌকর্যে ।
অথচ অলৌকিক সুরভি কাকে বলে জেনে গেছি এতদিনে ,সেই খই-শব্দে। ভেজা শব্দ, বুকের মধ্যে শেকড়-বাকড় ছড়িয়ে পরা পোষা-বন্ধ্যা শব্দ। আলো অথবা করস্পর্শে ভেঙে যাবে ঘুম, আমার সমস্ত অভিধান ঘুম। জমে ওঠা উত্সবকে অতিক্রম করেই হেঁটে যাই,আলো-অন্ধকারের খোঁজে। এক জনমের মানবী সন্ধান ।
পদশব্দ, মনে হয় নিষ্ঠুর শাসানি। তবুও অন্যমনে দাঁড়াই অপেক্ষার কড়া নেড়ে যাওয়া দরজায়। দুই পাশের রাস্তায় থমকে থাকে আলোর চাতুরি...
আর অন্ধকার ? দূর অস্ত ...
![]() |
| পরিচিতি |
জিনাত জাহান খান
Reviewed by Pd
on
অক্টোবর ০৬, ২০১৫
Rating:
Reviewed by Pd
on
অক্টোবর ০৬, ২০১৫
Rating:


কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
সুচিন্তিত মতামত দিন