তাপসকিরণ রায়

tapash

                                                    --।

রানাঘাট পাল চৌধুরী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে স্কুলের বয়স্ক শিক্ষক, রমেন বাবুর বক্তৃতা চলছিল, ’’১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট আমরা স্বাধীন হয়েছি। আজ ভারত স্বাধীন--ভারতবাসী স্বাধীন--মানে আমরা স্বাধীন। কিন্তু এ স্বাধীনতা কি করে এলো? এর পেছনে অনেক ব্যথা-বেদনার ইতিহাস লুকিয়ে আছে। অনেক ত্যাগ, অনেক রক্তক্ষরণ, অনেক বলিদানের পর আমরা ফিরে পেয়েছি আমাদের স্বাধীনতা...

এই স্বাধীনতা আনতে কত আত্মত্যাগ করতে হয়েছে--কত লোক ইংরেজের গুলি খেয়ে মরেছে—যাবৎ জীবন কারাদণ্ড ভোগ করেছে--তা গুনে শেষ করা যায় না।

স্বাধীনতার জন্যে জীবনপাত করলেন সুভাষ চন্দ্র বসু, সত্য অহিংসার পথে স্বাধীনতা পাওয়ায় ব্রতী হলেন গান্ধীজী...এ ছাড়া আছেন আরও, আরও কত শত লোক।  অখণ্ড ভারতের প্রফুল্ল চাকি আর ক্ষুদিরাম বসুর কথা না বললে স্বাধীনতা সংগ্রামের কথা অসমাপ্ত থেকে যায়। মনে পড়ে সেই দেশাত্ম বোধক গানের কথা,  কোন এক স্বাধীনতা কামী কবি গেয়ে ছিলেন, ‘একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি,  হাসি হাসি পড়ব ফাঁসি দেখবে ভারতবাসী...একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি...’

বিপ্লবী ক্ষুদিরামের কথা ও কাহিনী বড় রোমাঞ্চকর।  দেশের জন্যে ওইটুকু ছেলে কি ভাবে নিজের প্রাণ বিসর্জন দিলো--হাসতে হাসতে গলায় পড়ে নিলো ফাঁসির মালা! সমস্ত ভারতবর্ষ তাঁর এই ত্যাগে--স্বাধীনতার মহান যজ্ঞের ত্যাগে--হাসতে হাসতে নিজের জীবন বিসর্জন দেওয়ার জন্যে বড় আশ্চর্য চকিত হয়ে থাকলো! ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে লাল অক্ষরে লেখা থাকবে সে কটি লাইন,  হতে পারে--সে সামান্য কটা লাইন কিন্তু মানুষের মনে তা সদা স্থায়ী দাগ ফেলে যাবে। যুগে যুগে মানুষেরা তাঁর কথা স্মরণ করে তাঁকে বাহবা দেবে, তাঁকে ধন্য ধন্য করে যাবে...’ শিক্ষক রমেন বাবুর সমগ্র বক্তৃতার মধ্যে সবচে বড় যে দিক ছিল সেটা  ক্ষুদিরাম বসুকে নিয়ে।  তিনি বলে চললেন, ''এত অল্প বয়সের ছেলেটি যদি আরও কিছু দিন বেঁচে থাকত তবে স্বাধীনতার লড়াইয়ে আরও কত কি ঘটে যেত তা কে বলতে পারে! ...এসব বিচার করে দেখলে দেখা যায় স্বাধীনতার জন্যে ক্ষুদিরামের প্রাণদান আমাদের দেশের স্বাধীনতাকে অনেকটা এগিয়ে নিয়ে এসেছিল...তাই স্বাধীনতার সবচে ছোট ও সবচে বড় নায়ক হল--ক্ষুদিরাম বসু।’ এর পর রমেন বাবু চীৎকার করে বলে উঠলেন, ‘ক্ষুদিরাম বসু কি’--উপস্থিত ছাত্র ছাত্রী ও শিক্ষকরা এক সঙ্গে চীৎকার করে উঠলেন, ’জিন্দা বাদ!’ বলা শেষ করলেন রমেন বাবু। সবাই হাততালি দিয়ে উঠলো। বিশেষ করে ছাত্র ছাত্রীরা ক্ষুদিরামের কথায় বেশ মোহিত হয়ে গিয়ে ছিল। শিক্ষকদের হাততালি শেষ হয়ে যাবার পরও তাদের হাততালি বেশ কিছু সময় চলতে থাকলো। শেষে একমাত্র শান্তনু হাততালি দিয়ে চলেছিল! সে যেন সবচে বেশী অভিভূত--ক্ষুদিরামের জীবনী তাকে খুব আকৃষ্ট করেছে! ওর মনে তখনও লেগে আছে, ’ফাঁসির মঞ্চে গেয়ে গেলো যারা জীবনের জয় গান...’ আশপাশের সবাই তখন তাকিয়ে ছিল শান্তনুর দিকে। ছোট্ট একটা ছেলে, কতই বা বয়স হবে তার, বেশী হলে আট কিম্বা নয় ! সে যেন তন্ময় হয়ে আছে—তার চোখে জেন অনেক স্বপ্নিল ভাবনা ভেসে বেড়াচ্ছে--কি চিন্তা করছে ও? হাততালি দেওয়া বন্ধ করতে ভুলে গেছে ?

সে দিন রাতে শান্তনু স্বপ্ন দেখল, সে যেন স্বাধীনতার  প্রাককালে পৌঁছে গেছে।  স্বাধীনতা সংগ্রামীদের চারিদিকে চীৎকার চেঁচামেচি চলছে। ইংরেজের বন্দুকের আওয়াজ গর্জে উঠলো--আর কত লোকের মৃত্যু হল--চারদিকে রক্ত আর রক্ত--কত সংগ্রামীদের মৃতদেহ মাটিতে বিছিয়ে পড়ে আছে! তারই মধ্যে--ওই তো ছুটে এগিয়ে যাচ্ছে একটা ছেলে।  লাল পতাকা ওর হাতে--ও যেন ছুটে এক পাহাড়ের উপর উঠে যাচ্ছে। মনে হল ওই পাহাড়ের চূড়ার দিকেই ও ছুটে চলেছে--হাতের পতাকা নিয়ে ও যেন ওই পাহাড়ের চূড়ায় উড়িয়ে দেবে—আর, আর তারপরই সমস্ত দেশ তার স্বাধীনতা ফিরে পাবে! এক সময় শান্তনু দেখল আরে, হ্যাঁ, ওই ছেলেটাই তো ক্ষুদিরাম! ক্ষুদিরাম লাল পতাকা নিয়ে ছুটে চলেছে ওই পাহাড়  শীর্ষে!

এবার শান্তনু দেখল ইংরেজের গুলি খেয়ে যে ভারতবাসীরা মৃত পড়েছিল, যাদের রক্তে পথ, ঘাট, মাঠ ভেসে যাচ্ছিল--তারা যেন তখনও মরে নি। সবাই ক্ষুদিরামের দিকে তাকিয়ে আছে--সবাই মৃত্যুর আগে যেন শেষ বারের মত চীৎকার দিয়ে উঠলো, ‘ক্ষুদি রাম, জিন্দা বাদ,’ বলে !

এ মা! এ কি হল? স্বপনের মাঝেই শান্তনু দেখল--স্বপনের পট দ্রুত পরিবর্তন হয়ে গেলো।  ও দেখল ও নিজেই যেন ক্ষুদিরাম! ওর হাতেই যেন ফড় ফড় করে উড়ে যাওয়া লাল পতাকাটা--আর ও ছুটে চলেছে পাহাড়ের গা বেয়ে ওপরে, আরও ওপরে--ওকেই যেন স্বাধীনতার পতাকা উড়াতে হবে! শান্তনুর কান চারিদিকের চীৎকারে বন্ধ হয়ে যেতে থাকলো, ও শুনতে পারছিলো, ‘শান্তনু জিন্দা বাদ!”, ধ্বনি।  দেশের সমস্ত মানুষ ওর দিকে তাকিয়ে আছে--ঠিক তারপর ভয়ঙ্কর এক গুলির আওয়াজ--সঙ্গে সঙ্গে ওর বুকে চিনচিন ব্যথা করে উঠলো। দেখল ইংরেজের গুলি ওর বুক বিদ্ধ করেছে। বুক থেকে গল গল করে রক্তের ধারা গড়িয়ে পড়ছে! ও চীৎকার করে উঠলো ‘ভারত মাতা কি জয়!’,বলে।

ব্যাস, ওই টুকু। বুকের ব্যথা নিয়ে শান্তনু ধড়ফড় করে জেগে উঠল। ওর মনে হল,  সত্যি তো, ওর বুকের ডান দিকটায় কেমন ব্যথা ব্যথা করছে !

শান্তনুর মন বড় বিষণ্ণ হয়ে গেলো। সে মনে মনে ভাবল যে ক্ষুদিরাম দেশের জন্যে প্রাণ দিয়েছে, তাই সবাই তাঁকে ভালোবাসে।  সেও তাঁকে খুব ভালো লাগে।  রমেন স্যারের কথাগুলি শান্তনুর কানে এসে বাজতে লাগলো, ‘এমন ক্ষুদিরামের জন্ম যদি আমাদের দেশে আবার হতো--তবে আমরা আমাদের প্রকৃত স্বাধীনতা খুঁজে পেতাম। আজও আমাদের দেশে গরীবের সংখ্যা অনেক বেশী--এমন পরিবার আছে যারা সারা দিনে এক বেলা খেয়ে দিন কাটাচ্ছে। তার মানে অর্থের দিক থেকে পূর্ণ স্বাধীনতা আজও আমরা পাই নি! আজও আমরা অনেক সত্যি কথা বলতে ভয় পাই--কারণ, সম্পূর্ণ সত্যি বলার স্বাধীনতা আজও আমরা পাই নি ! 

আমরা আশা রাখি স্বাধীনতার এ অপূর্ণতা শিগগির দূর হয়ে যাবে। দেশে আবার কোন ক্ষুদিরাম জন্মাবে।  রমেন স্যার স্কুলের ছেলে মেয়েদের দিকে তাকিয়ে বলে চলেছেন, ‘আমাদের এই ছেলে মেয়েদের মধ্যে থেকেই--কে বলতে পারে, আবার এক ক্ষুদিরাম জন্ম নেবে...’  শান্তনুর শরীর কাঁটা দিয়ে উঠলো। রমেন স্যারের কথাগুলি তার কানে বাজতে থাকলো...‘তোমাদের মধ্যে থেকেই কোন ক্ষুদিরাম...’ স্বাধীনতা দিবসের পর দিন রবিবার ছিল। পড়ার চাপ তেমন ছিল না। তবু মার তাগিতে শান্তনু ও তার ছোট ভাই, অতনু পড়তে বসলো। কিন্তু না, পড়ায় মন লাগছি না শান্তনুর।  মনে এলো, সেই স্বপনের কথা। সে কিনা নিজেই ক্ষুদিরাম হয়ে গেলো! কথাগুলি  চিন্তা করে ওর খুব ভালো লাগছিল।

শান্তনু পড়ার ফাঁকে একবার টি.ভি.খুলল।  স্বাধীনতার ওপরেই কোন সংবাদ দেখাচ্ছিল। এক সময় সেখানেও ও দেখল ক্ষুদিরামকে জল্লাদ ফাঁসি দিতে নিয়ে যাচ্ছে--আর সাহসী বীর ক্ষুদিরাম এগিয়ে এসে ফুলের মালার মত ফাঁসির দড়ি গলায় পরে নিলো! জেলের সমস্ত কয়েদীরা, জেলের বাইরে অপেক্ষারত--দেশবাসীরা আকাশ, বাতাস ফাটিয়ে চীৎকার করে জয়ধ্বনি দিয়ে উঠলো ‘ক্ষুদিরাম, জিন্দা বাদ ! ক্ষুদিরাম, জিন্দা বাদ !’

শান্তনুর ভালো লাগছিল, মনে হচ্ছিল ও যদি ক্ষুদিরাম হতে পারত! তবে কত ভালো হত! ওর জন্যে দেশবাসী এমনি জয় জয়কার করে উঠত। ওর মাথায় কেবল একটা মাত্র চিন্তা ঘুরছিল--সেটা হল--ক্ষুদিরামের ফাঁসি ! নায়কের মত মঞ্চে গিয়ে সে ফাঁসি নিলো। তাকে তো সবচে বড় হিরো বলতে হবে! আচ্ছা, আমি কি ক্ষুদিরাম হতে পারি না? রমেন স্যার তো বলেছিলেন, ‘হয় তো তোমাদের মধ্যে থেকেই আবার জন্মাবে ক্ষুদিরাম !’

--‘ক্ষুদিরামকে চিনিস ভাই?’ পাশে বসা ভাই, অতনুকে  জিজ্ঞেস করল শান্তনু।
ভাই, অতনু মাথা নাড়িয়ে বলে উঠলো, 'হ্যাঁ'।
--‘বলতো সে কে?’ শান্তনু ভাইকে প্রশ্ন করে।
দাদার দিকে তাকাল ভাই--যেন ক্ষুদিরামের ব্যাপারে খুব চিন্তায় পড়েছে সে এমনি একটা ভাব! একটু পরেই ও কি মনে করে একটা বই খুলল, তার থেকে একটা ছবি দাদাকে দেখিয়ে বলল, ‘এই তো ক্ষুদিরাম !’
শান্তনু দেখল, হ্যাঁ তো, একটা ছেলের ছবি, ওর সামনে ফাঁসির দড়ি ঝুলছে ! আর অনেক লোক দেশবাসী সেজে হাত ওপরে করে আছে। ভালো করে দেখল সে ক্ষুদিরামের ছবি, আর কিছু সময় চিন্তা করে সে ভাইকে বলল, ‘ভাই, আমিও ক্ষুদিরাম হতে পারি ?’
ভাই সামান্য হেসে বইয়ে আঁকা ক্ষুদিরামের ফাঁসির ছবি দেখিয়ে বলল, ‘এমনি করে ফাঁসি দিয়ে ?’
--‘হ্যাঁ, ফাঁসি দিয়ে ক্ষুদিরাম হবো আমি’ ,ধীরে বলে উঠলো শান্তনু।
ভাই তার হাততালি দিয়ে উঠলো, ‘ভালো, ভালো, ভালো--খুব মজার খেলা হবে!’
শান্তনুর ভাইয়ের কথা খুব ভালো লাগলো। সত্যি তো, খেলা অনেক মজার হবে বটে! তবে তার চেয়েও বেশী যেটা মজার হবে সেটা হবে তার নাম করে সবাই জিন্দা বাদ, করবে! কিন্তু দেশবাসী এখানে আসবে কি করে? হ্যাঁ, আসবে, যখন দেখবে শান্তনু ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়ে আছে, তখন আশপাশের অনেক লোক জড় হবে, ওরা নিশ্চয় মনে করতে পারবে অন্য আর এক ক্ষুদিরামের কথা। তা হলেই তো দেশের যেটুকু স্বাধীনতা পাওয়া বাকি আছে তা পাওয়া হবে।

শান্তনু উঠে দাঁড়ালো। ঘরের চারদিক নিরীক্ষণ করল, না উপযুক্ত জাগা সে দেখতে পেল না। এবার সে বাইরের বাগানে গেলো। অবশেষে একটা জাগা পাওয়া গেলো। ওদের বাগানের এক আম গাছের ডাল--ডালটা মাটি থেকে বেশী ওপরে ছিল না।  টুলে চেপে দড়ি বাঁধতে পারবে সে। এবার দড়ি ও ছোট টুলের জোগাড় হল।  দড়ি খুঁজে পেতে সামান্য বেগ পেতে হয়ে ছিল।  অগত্যা কাপড় মেলার রশি কেটে তার ব্যবস্থা করে নিলো ও। এবার টুলে চড়ে দড়ি হাতে নিয়ে মনে হল সেটা যেন বেশ সরু! দু প্যাঁচ দিয়ে ওটাকে মোটা বানিয়ে ক্ষুদিরামের ফাঁসির সব কিছু তৈরি হয়ে গেল। এখন দর্শক চাই। শান্তনু ছুটল ভাইকে ডেকে আনতে। ক্ষুদিরামের ফাঁসির কথা শুনে ভাই ছুটে চলে এলো দর্শকের ভূমিকা নিতে।  শান্তনু বলল, ‘ভাই, আমি যখন ফাঁসি গলায় নেবো তুই তখন তিন বার ক্ষুদিরাম জিন্দা বাদ! বলবি।’

ভাই তৈরিই ছিল।  শান্তনু টুলে চড়ে গাছের ডালে দড়ি বাঁধল। গলায় দড়ি প্যাঁচালো, দু তিন বার চেষ্টায় গিঁট দিতেও সক্ষম হয়ে গেলো। আর টুল থেকে পা সরিয়ে নিয়ে ঝুলে পড়লো ফাঁসিতে। সঙ্গে সঙ্গে আমগাছের ডাল খানিকটা ঝুঁকে পড়লো, পা দুটো মাটি থেকে দু তিন ইঞ্চি ওপরে থেকে গেল, এ ভাবেই অন্য আর এক  ক্ষুদিরাম ঝুলে পড়লো ফাঁসিতে! ভাই তার সত্যি হাততালি দিয়ে তিন বার, ’ক্ষুদিরাম, জিন্দা বাদ!’, বলে উঠলো।

শান্তনুর খুব কষ্ট অনুভব হল, পাশের টুলে পা তুলে দেবার চেষ্টা করলো, কিন্তু পারল না, ও দেখল ওর গায়ের শক্তি হারিয়ে গেছে, ক্রমশ সে চারিদিকে অন্ধকার দেখতে পেলো।  সমস্ত শরীর তার শ্লথ হয়ে গেলো।  কণ্ঠ নলি চিপে তার শ্বাস বন্ধ হয়ে গেল...
ভাই, অতনু দেখল, এ কি! দাদা তার আনন্দের খেলায় কোন সাড়া দিচ্ছে না ! দাদার কাছে গিয়ে সে দাদাকে ঠেলা দিলো, না, কোন শব্দ করছে না দাদা! মনের শঙ্কায় ও, ‘দাদা, দাদা’, বলে চীৎকার করে উঠলো।  শান্তনু সাড়া দেবার বাইরে তখন, এক এক সেকেন্ড করে সে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে চলেছে।  জিভ আড়ষ্ট হয়ে বাইরের দিকে বের হতে চাইলো, চক্ষু তার কোটর থেকে বেরিয়ে আসতে থাকলো। 

তখন আশপাশের অনেক লোক জমে গিয়ে ছিল।
শান্তনুর বাবা, মা, বাকী বাড়ির সবার কান্নার রোল পড়ে গেছে।  আমগাছের নীচে দড়ি ছিঁড়ে মাটিতে পড়ে আছে শান্তনুর দেহ। ডাক্তার বাবু দেহ পরীক্ষা করতে থাকলেন–-একবার, দু বার, তৃতীয় বার পরীক্ষার পর ডাক্তার বাবু শান্তনুর বুকে পাম্প দেবার মত করে বারংবার চাপতে থাকলেন। আর হঠাৎ ক্কক, আওয়াজ করে একটা শব্দ শোনা গেল। ডাক্তার দেখলেন শান্তনুর বুকের থেমে যাওয়া শ্বাস ফিরে এলো...ধীরে ধীরে তা স্বাভাবিক হয়ে আসতে থাকলো।

শান্তনুর উৎকণ্ঠিত মা, বাবা, একই সঙ্গে, ‘ডাক্তার বাবু ! ডাক্তার বাবু’, বলে কেঁদে উঠলেন।  ডাক্তারবাবু বলে উঠলেন, ‘আপনার ছেলে এ যাত্রা বেঁচে গেছে। এরপর থেকে ওর দিকে নজর রাখবেন।’  শান্তনুকে ঘিরে থাকা লোকেরা যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। কিছু সময় পর শান্তনু ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকাল। ও কিছু শুনতে পাচ্ছিলো না, কিন্তু তবু ওর মনে হল যেন, বহু দূর থেকে অনেক লোকজন ওর দিকে তাকিয়ে হাত তুলে বলে চলেছে,‘ক্ষুদিরাম, জিন্দা বাদ!ক্ষুদিরাম, জিন্দা বাদ! ক্ষুদিরাম, জিন্দা বাদ !’

tapash
পরিচিতি 


                                                                    
                                                                   

তাপসকিরণ রায় তাপসকিরণ রায় Reviewed by Pd on আগস্ট ১৫, ২০১৫ Rating: 5

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সুচিন্তিত মতামত দিন

Blogger দ্বারা পরিচালিত.