কুন্তল কুণ্ডু




দেবব্রত বিশ্বাসের কথা মনে হয় প্রথম পড়েছিলাম মাধ্যমিকের কোন বাংলা রচনা বইএ "একটি ঝড়ের রাতের অভিজ্ঞতা" বাইরে প্রকৃতির উতাল রূপ দেখে লেখকের "আজি ঝড়ের রাতে তোমার অভিসার, পরাণ সখা বন্ধু হে আমার" গানটি মনে পড়ে গিয়েছিল। সে না হয় গেল, আবার দেবব্রত বিশ্বাসের নামটা চোখে পড়ে গেল আরেকটি বাংলা রচনায়। "তোমার একটি বিশেষ দিনের অভিজ্ঞতা" জানিনা, রচনা বইএর লেখকের মনে জর্জ বিশ্বাসের প্রতি একটা বিশেষ ভাল লাগার জায়গা ছিল হয়ত। তো সেখানে যার বিশেষ দিন, সেই ছেলেটির বাবা গত হয়েছেন অনেক দিন আগে, দুঃখের বিষয় সেই দিনটিই ছেলেটির জন্মদিন। সকালবেলায় বাবার ছবিতে মালা দিয়ে, মা কে প্রণাম করে এই বিশেষ দিনটি শুরু হয়। মধ্যবিত্ত সংসারে মা সামান্য লুচি পায়েস করে কাঁসার থালে সাজিয়ে দেন ছেলের জন্য। সাথে হাতে তুলে দিলেন একটি রঙচঙে উপহারের মোড়ক। ছেলেটি তখন আমাদের বয়সী ছিল, মাধ্যমিক দেওয়ার বয়স। মোড়ক খুলে দেখে একটা গল্পের বই আর একটা গানের ক্যাসেট (সত্যি তখন জন্মদিনে ক্যাসেট দেওয়ার একটা রেওয়াজ ছিল, আমিও পেয়েছি)। উমাপ্রসাদ মুখার্জীর ভ্রমণকাহিনীর একটা বই আর দেবব্রত বিশ্বাসের "আকাশ ভরা সূর্যতারা" ছিল উপহারের মোড়কে। ছেলেটির মনে পরে ছোটবেলায় বাবার উদাত্ত গলায় গাওয়া গানটির কথা। বেশ মনখারাপ করা ভাল লেখা। 

এরপরে জানার আগ্রহে বাবাকে বলি দেবব্রত বিশ্বাসের কথা। "খুব বিরাট মানের শিল্পী" এই ছিল বাবার প্রথম অভিব্যাক্তি। সেই সময় আমি মায়ের থেকে প্রতি মাসে ৪০ টাকা নিতাম, মাসে ১ টা করে ক্যাসেট। সেই মাসের টাকাটা পাওয়া মাত্র ছুটলাম বালুরঘাটের ইউনিভার্সাল নামে একটা ক্যাসেটের দোকানে (এখন আর নেই)। এবং পেয়েও গেলাম সেই ক্যাসেট যা কাল্পনিক রচনায় ছেলেটি পেয়েছিল। বিকেলে রেকর্ডারে গমগমে কণ্ঠে গেয়ে উঠলেন জর্জ বিশ্বাস। সেই প্রথম শোনা, প্রথম আলাপ। সম্পুর্ন ভিন্ন আঙ্গিক, মনে হচ্ছিল আমাদের সামনেই বসে উনি একাত্ম হয়ে গেছেন রবীন্দ্রনাথে, চারপাশে কি হচ্ছে খেয়াল নেই। সেই শুরু, আজও ওনাকে শোনা শেষ হল না। 

পরিচিতি 

কুন্তল কুণ্ডু কুন্তল কুণ্ডু Reviewed by Pd on জুলাই ১১, ২০১৫ Rating: 5

কোন মন্তব্য নেই:

সুচিন্তিত মতামত দিন

banner image
Blogger দ্বারা পরিচালিত.