আমার মা ছিলেন গ্রামের মেয়ে। সেই সুবাদে আমার মামারবাড়িটি ও ছিল গ্রামে। সেই সময় গ্রাম্য প্রকৃতির ঔদার্য দেখেলে মুগ্ধ না হয়ে উপায় থাকতো না। আর আমি ছোটো থেকেই এই প্রকৃতির টানেই মামারবাড়ি যাওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকতাম। স্কুলে সাত দিনের ছুটি থাকলেও চলে যেতাম মামার বাড়ি। যদিও আমার মামার বাড়িটি ছিল পাকা,কিন্তু ওখানে বেশির ভাগ বাড়িই ছিল মাটির। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে শান্ত প্রকৃতির পাখির ডাক আমাকে পাগোল করে দিত। আর পাগোল করে দিত সদ্য গোবরমাটি দিয়ে লেপা মাটির উনুনের কাঠপোড়া ধোঁয়ার গন্ধ। মনে ভাবতাম এটাই বুঝি গ্রামের গন্ধ।আমার সব সময় মনে হয় গ্রামের একটা আলাদা গন্ধ আছে। আজ এই কংক্রিটের জঙ্গলেও আমি মাঝে মাঝে সেই গন্ধ পাই,যখন ভোর বেলা চায়ের দোকানে আঁচ দেওয়া হয়।কিছুটা বাস্তব আর কিছুটা কল্পনায় মিলিয়ে নিই।
সেই যেবার ছেলেটির সাথে আমার প্রথম দেখা হয়েছিল, সেবার গ্রীষ্মের ছুটিতে মামার বাড়ি যেতে পারিনি। পুরো এক মাসের ছুটিটা বিছানায় শুয়েই কেটে ছিল, ‘টাইফয়েড’। প্রচন্ড মন খারাপ নিয়েই পুজো পর্যন্ত স্কুলে গেলাম। পুজোর ছুটিতে মার সাথে গেলাম মামারবাড়ি।প্রায় যেতাম বলে এখানে আমার অনেক বন্ধুও ছিল,মজার যে ঘাটতি হবে না সেটা ভালো করেই জানতাম।
বাড়ি থেকে প্রায় পঞ্চাশ ফুট দূরেই চারটে লাল মোড়ামের রাস্তা এসে মিলেছে। চার মাথার উত্তর-পূর্ব কোনে রয়েছে বেশ খানিকটা সবুজ ঘাসের মাঠ আর মাঠের শেষ প্রান্তে রয়েছে ‘মা সিদ্ধেশ্বরী’ কালি মন্দির। ঐ মাঠেই প্রতি বছরের মত সেবারও দুর্গা পুজোর প্যান্ডেল হয়েছিল। আমি তখন ক্লাস নাইন,হৃদয়ের গহন গভীরে যৌবনের ছোঁয়া লেগেছে তখন। মন্দিরের বারান্দায় বসে পুজো দেখছি। আমার বাম পাশে বসে আছে বীণা আর ডান পাশে মালিনি,তার পাশে জবা।প্যান্ডেলের গেটের কাছে দাঁড়িয়ে আছে এক দঙ্গল ছেলে। মাঝে মাঝে ঝারি মারা চলছে। ওদের ঠিক পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল একটা মেয়ে কুকুর। হঠাৎ সেটা আউ-উ-উ-উ করে সুর তুলল আর কোথা থেকে ছুটে চলে এলো একটা ছেলে কুকুর। ঘুর ঘুর করে গা শুঁকতে লাগল মেয়ে কুকুরটার। আমাদের মধ্যে মালিনি বরাবরই ডেঁপো টাইপের মেয়ে ছিল।ঐ বয়সে যে অনুভূতি গুলো আমরা প্রকাশ করতে লজ্জা পেতাম,সেগুলো ও নির্লজ্জের মত বলে দিত। ওর কাছ থেকেই আমরা প্রথম বিয়ের পরের নিষিদ্ধ গল্প শুনে ছিলাম। ওর এক দূর সম্পর্কের বৌদির কাছে শোনা গল্প আমাদের এসে বলত। আমার সে সব শুনতে অদ্ভূত এক অনুভূতি হত। শুনতে লজ্জা পেতাম আবার কৌতূহলটাও আটকাতে পারতাম না,তাই শুনতে শুনতে মালিনি কে বারবার বলতাম—‘এই থামতো এবার’।
কুকুর দুটোকে দেখে মালিনি হঠাৎ বলে উঠলো—‘ এ ত দেখছি আশ্বিন মাসেও কুকুরের ভাদ্র মাস চলছে রে’।বলেই হা হা করে হাসিতে ফেটে পড়ল।আমি দেখলাম ঐ ছেলেদের ভিড় থেকে দুটো বড় বড় টানা টানা চোখের ছেলের গভীর দৃষ্টি আমাদের উপর নিবদ্ধ।চোখ দুটোই কি ছিল জানি না,কিন্তু হঠাৎ করে আমার হৃদয়ের গতিটা বেড়ে গেল। আমি মালিনির কানের কাছে মুখটা নিয়ে গিয়ে ফিসফিস করে বললাম—‘ঐ দেখ, ছেলেটা তোকে কেমন করে দেখছে’। জবাও ব্যাপারটা লক্ষ্য করেছিল। এমনিতে জবা মুখচোরা মেয়ে,কিন্তু মালিনির ছোঁয়া লেগে বোধ হয় হঠাৎ করে মুখটা খুলে বলে উঠল—‘ এমন ভাবে দেখছে যেন, মালিনিকে রসগোল্লার মত মুখে পুড়বে আর গপ করে গিলবে’। আমাদের খঁচানোর ঠেলায় অস্থির হয়ে মালিনি ওর ঝুমুর বসানো ঘাগড়ায় আওয়াজ তুলে ছুটে পালাতেই কুকুরটাও ওর পিছনে ছুটলো। মালিনির ঘাড়ে দু’পা তুলে দাঁড়াতেই ঐ ছেলেটা ছুটে এসে কুকুরটার কান ধরে টেনে কিছুটা দূরে ছুঁড়ে দিল কুকুরটাকে। মালিনি তখন ভয়ে অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে আছে।সবার মধ্যে হৈ হৈ পড়ে গেল।ভয়ে মালিনি বেশ কয়েকদিন জ্বরে ভুগলো।বাকি কটাদিন খুব একটা আনন্দে কাটাতে পারলাম না।
[২]
একাদশীর রাত থেকে শুরু হল ভীষণ বৃষ্টি। টানা পাঁচদিন অবিরাম ছন্দে চলল সে বৃষ্টি। এই ক’টাদিন বাড়ি থেকে বেরতেই পারলাম না।অনুভব করলাম মনাটা কোনো এক অজানা কারণে শান্তি পাচ্ছেনা,অস্থির হয়ে আছে।কিন্তু হাজার চেষ্টা করেও বুঝতে পারলাম না। ওদিকে নদীর জল গ্রামে ঢুকতে শুরু করেছে।ছোটো মামারা সবাই কোমর বেঁধে তৈরি বাঁধ মেরামতির কাজে।পাঁচ দিন পর দুপুরের দিকে বৃষ্টিটা একটু ধরতেই মালিনি এলো আমাদের বাড়ি। মাকে অনেক বুঝিয়ে আমাকে নিয়ে গেল নদীর পাড়ে,যেখানে বাঁধ দেওয়ার কাজ চলছে।মালিনির পিছন পিছন আমি গিয়ে দাঁড়ালাম বাঁধ থেকে কিছুটা তফাৎ রেখে।মালিনি অবশ্য গিয়েছিল ওর প্রেমিককে দেখতে।ছেলেটা নাকি বাইরে থাকে,মানে কোলকাতায়।আমার মামারবাড়ির গ্রামেই নাকি ওর মামার বাড়ি।প্রতি বছর পুজোতে নাকি এখানে আসে ওর সাথে দেখা করতে। মালিনির প্রেমটার কথা আমি ছাড়া আর কেউ জানতো না। মালিনি খুঁজে চলেছে ওর প্রেমিককে আর আমি দেখছি গ্রামের লোক কি ভাবে পরিশ্রম করে বাঁধ মেরামতির কাজ করে চলেছে। সবার গায়ে মাথায় কাদা-মাটি মাখা। হাল্কা শীতের আমেজেও গা ঘামে ভিজে চকচক করছে। কেউ মাটি কাটছে,কেউ মাটি ভর্তি ঝুড়ি মাথায় করে বইছে আবার কেউ ধরাধরি করে বালির বস্তা সাজিয়ে চলেছে। আমি এই সব দেখতে দেখতে হঠাৎ চমকে উঠলাম,হৃৎপিন্ড থেকে খুব দ্রুত গতিতে শব্দ উঠতে লাগলো।যেন কোনো আবেশে আমি আচ্ছন্ন হয়ে গেলাম।সারাদিন ধরে যে ভালো না লাগাটা ছিল সেটা হঠাৎ উধাও হয়ে গেল। ঠিক তখনি আমি বুঝলাম আমার মনের অস্থিরতার আসল কারণ।মালিনি জোড়ে জোড়ে ঠেলাতে শুধু শুনতে পেলাম মালিনি বলছে—‘ঐ দেখ,ঐ দেখ---ঐ যে বালির বস্তাটা রাখল ওটায় আমার প্রেমিক, আমার মনের মানুষ। জানিস বৈশাখী,ও না ভীষণ রোমান্টিক,ভীষণ আকর্ষনীয়---আরও কত গুলো ভীষণ সহযোগে উপমা জুড়ল তার সবগুলো আমার কর্ণকূহরে প্রবেশই করলো না। আমি শুধু মনে মনে বললাম,--‘আমার মনের মানুষ এর থেকে ঢেড় বেশি সুন্দর’।আশে-পাশে সব গ্রাম বণ্যায় ভেসে গেছে। পুজো শেষ হলেও আমারা সবাই জলবন্দি হয়ে রইলাম।মানুষের চরম দুর্দশার গল্প প্রতিদনই শুনতে পেতাম ছোটো মামার মুখে।মামারবাড়ির উঠোনটা বেশ বড় ছিল।সেইখানেই মামাদের ক্লাবের ছেলেরা সবাই মিলে তৈরি করল ত্রাণ শিবির।প্রতিদিন হাঁড়ি হাঁড়ি খিচুড়ি রান্না করত আর সন্ধ্যার আগেই সেই খিচুড়ি ড্রামে ভরে গ্রামের ছেলেরা বাণভাসিদের বিলি করত।এই সময়টা আমার বেশ আনন্দেই কাটছিল কারণ,যার জন্য আমার মন কেমন করত সে ও এই শিবিরের কাজে যুক্ত ছিল।প্রায় সারাদিন ধরে আমি তাকে আড়াল থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতাম। আশ্চর্যের ব্যাপার হল আমি যে তাকে সারা দিন দেখতাম অথচ কখনও ওর সাথে আমার চোখাচোখি হয় নি।মাঝে মাঝে ভীষণ রাগ হত আমার দিকে তাকাত না বলে। আর যতক্ষণ আমার মনে রাগ থাকত ততক্ষণ আমি বাইরেই যেতাম না। প্রতিবার ওর সামনে বাইরে বেরোনোর আগে একবার আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে ভাল করে দেখে নিতাম।জামাটা টেনে ঠিক করতাম,মুখের সামনে ঝুলে থাকা চুল গুলোকে হাত দিয়ে চেপে চেপে বসিয়ে দিতাম।বারবার এটা-ওটা নানা অছিলায় ওর সামনে দিয়ে যাওয়া আসা করতাম।
গ্রামের সবার মাঝে ও ছিল ভীষণ অন্য রকম।সবসময় টিপটপ। কখনও ওকে খালি গায়ে কাজ করতে দেখিনি। বৃষ্টিতে ভিজে কাজ করার সময়ও গায়ে থাকতো টি-শার্ট আর হাঁটুঝুল বারমুন্ডা। আর ঠিক সেই কারণেই হয়ত আমিও নিজেকে গুছিয়ে রাখার চেষ্টা করতাম। প্রায় পনেরো-কুড়িদিন পর সেবার আমরা বাড়ি ফিরতে পেরেছিলাম।
[৩]
বাড়ি ফিরেই পরীক্ষা,তারপর মাধ্যমিক। মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে না দিতেই শুরু হল উচ্চমাধ্যমিকের পড়াশোনা। মাঝের বছর গুলো তাই সে রকম ভাবে আর মামার বাড়ি যেতে পারতাম না। তার মাঝেই যদিও বা কখনও যেতাম তখনই আমার দু’চোখ শুধু তাকে খুঁজতো।কিন্তু কখনও কারোর কাছে নিজের মনের কথা প্রকাশ করিনি,মালিনির কাছেও না। কতদিন মামার কাছে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ওর নামটা জানতে চেষ্টা করেছি,পারিনি।প্রতিবারই ধরা পড়ার ভয়ে বেশি কৌতূহল প্রকাশ করতেই পারিনি।মালিনির কাছেও জানতে চাইনি কারণ ও ভীষণ চালাক মেয়ে,জানতে চাইলেই আমাকে ধরে ফেলত।সেই দু-তিন বছরের মধ্যে মাত্র দু’বার ওকে এক ঝলকের জন্য দেখেছিলাম।কিন্তু মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম,ও ছাড়া আর কারোর কাছে আমি ধরা দেব না।নিজেকে সেই ভাবেই সযত্নে রক্ষা করছিলাম। মাঝে মাঝে মালিনির চিঠি আসতো।প্রায় প্রতিটি চিঠিতেই ওর মনের মানুষের কথা লিখে ভরিয়ে রাখত,আর ওর মনের মানুষের দেওয়া হাতে আঁকা এক বিশেষ আকৃতির কার্টুনের ছবি আর ওকে লেখা চিঠির একটা জেরক্স আমাকে পড়তে পাঠাত। মালিনি একবার বলেছিল—‘ জানিস বৈশাখী,ও ভীষণ রোমান্টিক। দেখা হলে প্রথমে ঠোঁটে একটা চুমুখায়,তারপর নিজের হাতে আঁকা কার্টুনের ছবি আর চিঠি দেয় সঙ্গে থাকে টাটকা সাদা টগরের থোকা’। আমি ওর প্রেমিকের লেখা সব চিঠিই পড়তাম। অপূর্ব সে ভাষা,পড়ে মুগ্ধ হতাম। প্রতিটি চিঠির সম্বোধনে শুধু তুমি কথাটা থাকতো, কোনো নাম থাকত না। মনে মনে ভাবতাম মালিনি ভাগ্যবতী। মালিনির চিঠির রেশ আমার মনেও এমন প্রভাব ফেলেছিল যে, আমি আমার মনের মানুষের সাথে ঐ চিঠির মানুষটাকে বারবার এক করে ফেলতাম।মালিনির মুখে শোনা ওর প্রেমের গল্প গুলো স্বপ্ন হয়ে আমার কাছে আসতো।সেখানে মালিনির জায়গায় আমি আর আমার মনের মানুষ থাকতো।
উচ্চমাধ্যমিকের পর রেজাল্টের জন্য অপেক্ষা করছি। বন্ধুরা সবাই কম্পিউটার শিখছে। ওটা আমি বাপির কাছে আগেই শিখে নিয়েছিলাম।ঠিক করলাম,মামারবাড়ি যাব।ভাবা মাত্রই কাজ। মা আমাকে রেখে দিয়ে বাড়ি ফিরে গেল।মামারবাড়িতে খুব মজা করে সময় কাটাচ্ছি। একদিন সকালে আম বাগানের মাচায় বসে আমি ,মালিনি,জবা আর বাণী খুব আড্ডা মারছি।হঠাৎ মালিনি আমার হাত টা নিয়ে রাখল ওর ঠোঁটের উপরে,যেখানে তাকিয়ে দেখলাম ছোট্ট একটা কালসিটে দাগ।আমি আঁত্কে উঠে বললাম—‘এমা! মালিনি,এটা কি হয়েছে তোর?—ইস্! খুব ব্যাথা বল?—ধাক্কা লেগেছিল বুঝি?’ ও মাথা নেড়ে ঠোঁট নেড়ে ইশারায় বলল—‘না রে, অন্য ব্যাপার’। আমি যখন ওর রহস্যময় আকার ইঙ্গিত বুঝতে পারছিনা তখন ও আমাকে আড়ালে ডেকে নিয়ে গিয়ে বলল---‘ জানিস না ও ভীষণ অসভ্য। এটা ওর আদরের দাগ। তারপর হি হি করে হেসে বলল—‘ কাল ও এসেছে,সন্ধ্যা বেলায় দেখা করতে গিয়েছিলাম।কিছুতেই ছাড়ছিল না জানিস---এমন ভাবে ---বলেই আবার হি হি করে হেসে উঠলো।আমি ওর সুন্দর ফর্সা মুখের মাঝে জেগে থাকা লাল ঠোঁটের কালো দাগের দিকে তাকিয়ে রইলাম।ওটা ওর সৌন্দর্যকে যেন আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
প্রায় মাস খানেক থাকার পর ঠিক আগের দিন সন্ধ্যার মুখে মালিনি এলো। আমাকে জোড় করে নিয়ে গেল ওর সঙ্গে। বলল—‘কাল তো চলে যাবি,আবার কবে আসবি তার ঠিক নেই,চল দূরে দাঁড়িয়ে দেখবি আমার প্রেমিক নিখিলেশকে।কাছে নিয়ে যাব না,ও একদম পছন্দ করে না আমার সঙ্গে দেখা করার সময় সঙ্গে কেউ থাকুক।কিছু মনে করিস না’। আমাকে গ্রামের স্কুলের পাঁচিলের পিছনে দাঁড় করিয়ে দিয়ে ও এগিয়ে গেল। দেখলাম দূর থেকে হেঁটে আসছে ওর প্রেমিক নিখিলেশ। ঘোলাটে অন্ধকার তখন,কাছে এসেই চিঠি আর টগর ফুলের থোকাটা হাতে দেওয়ার সময় আমি ভালো করে লক্ষ করলাম,আমার চিনতে একটুও ভুল হল না। অস্ফুটে একটা শব্দ বোধহয় বেড়িয়ে এলো আমার মুখ থেকে—‘ না,হতে পারে না,কিছুতেই হতে পারে না’! বিষ্ময়ে যার দিকে তাকিয়ে রইলাম,সে আমারই মনের মানুষ। যন্ত্রণায় মুচড়ে উঠলো হৃৎপিন্ডটা। চোখ জল আটকাতে না পেরে যন্ত্রণায় টনটন করে উঠল। আমি ছুটে পালিয়ে এলাম।
এরপর দীর্ঘ পাঁচ বছর কেটে গেল নিখিলেশকে আমি দেখিনি। কলেজের পাঠ চুকিয়ে বাবা-মা’র দেখা পাত্র বর্ণিল কে বিয়ে করলাম। বিয়ের পর প্রণাম পর্ব সারতে বরকে নিয়ে দু’দিনের জন্য মামারবাড়ি গিয়েছিলাম। দেখা হল মালিনির সাথে। ও গ্রামেরই একটা ছেলেকে বিয়ে করে সুখে সংসার করছে। জিজ্ঞাসা করলাম—‘ কি রে তোর নিখিলেশ কোথায় গেল?’---ও মাথানিচু করে রইল। তারপর ছুটে ঘর থেকে নিয়ে এলো একটা ছোটো ব্যাগ। আমার দিকে চোখ তুলে বলল –‘বৈশাখী, আমি তোর সঙ্গে যা করেছি তা ক্ষমার অযোগ্য। এই নে,এ সবই তোর,শুধু তোর জন্যই লিখেছিল নিখিলেশ। ও শুধু তোকেই ভালোবাসতো। আমি তো শুধু বাহক ছিলাম’। আমি ওর কাঁধটা ঝাঁকিয়ে বললাম—‘ কি বলছিস তুই?—আর ঐ কালসিটে দাগটা?’—ও বলল—‘ওটা দরজায় ধাক্কা লেগেছিল’। আমি নিজেকে ঠিক রাখতে না পেরে আরও জোড়ে ওকে ঝাঁকিয়ে বললাম—‘ কেন এমন করলি মালিনি? কেন এভাবে আমাদের আলাদা করে দিলি?’
ও বলল—‘হিংসা,সহ্য করতে পারিনি নিখিলেশের মত একটা ছেলে আমাকে উপেক্ষা করে তোর মত সাধারণ মেয়ে কে ভালবাসবে’।নিখিলেশ কে ভোলার চেষ্টায় কুড়ি বছর কাটিয়ে দিয়েছি দেশের বাইরে। সবে মাত্র কিছুদিন হল দেশে ফিরেছি। আজও ভুলতে পারিনি নিখিলেশ কে। এখনও গ্রামের সে উনুন পোড়া গন্ধটা মাঝে মাঝে পাই। সকালে ঘুম থেকে উঠতেই কলিং বেলের আওয়াজ শুনলাম। ভাবলাম দুধের প্যাকেট বুঝি। দরজা খুলতেই দেখি এক থোকা টাটকা সাদা টগর।
রুমকি রায় দত্ত
Reviewed by Pd
on
মে ০৯, ২০১৫
Rating:
Reviewed by Pd
on
মে ০৯, ২০১৫
Rating:


কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
সুচিন্তিত মতামত দিন