শৌনক দত্ত



তুমিময় আমাদের নশ্বর জীবন। কখনো বাধার তুমি,কখনো আশ্রয়ের,কখনো নিরাপত্তার।তুমি ঘেরা আমাদের জীবন। এই তুমি একেক সময় একেক রূপে হাজির হয়। আপনি শব্দের একটি ব্যবহার থাকলেও ইংরেজী তে কেবল ইউ!এই আপনির মাঝেও একটি তুমি পাখি লুকায়িত থাকে কখনো কখনো সম্পর্কের গভীরতায় সেই তুমি পাখি খাঁচা থেকে বেরিয়ে হৃদতায় তুই হয়ে উড়ে বেরায়।

'তুমি কি কেবলই ছবি'কিংবা 'তুমি আসবে বলে আকাশ মেঘলা'গানগুলো তোমাকে ডাকতে সাহায্য করে। আমি গানের ভেতর দিয়ে তুমিকে ধরতে যাই। আমি জানি,সব গাছেই একা। আমার মতো।কিছু গাছ থেকে থেকে রবীন্দ্রসঙ্গীত গায়। দু একটি জীবনানন্দের কবিতা আবৃত্তি করে।তিন চারটি গাছ কেবল শ্রোতা।কোন কোন গাছ খুব উসখুস করে। যেন প্রিয় কেউ আসবার কথা।আমি প্রশ্ন করি,ও গাছ বলতো সুরঞ্জনা এখন কোথায়? সে কি ভুলে গেছে ফেরার পিপাসা?গায়ক গাছ তখন গেয়ে উঠে 'তুমি রবে নীরবে'!

বুদবুদের মতো প্রতীক্ষা দীর্ঘ হয়। প্রশ্ন ছুঁয়ে দেয় তরুলতা। কে ফিরে আসে? তুমি নাকি ফিরে আসে প্রকৃতি? নাকি কেউ ফেরার পথ ভুলে চোখ রাখে দূরবীনে! একা একটি শালিক কত একা। টোটো দের থেকে ফিরতে সাতটি নদী পের হতে কত পথ পেরিয়ে যাই। পাহাড়ী হাতিদের দল শুকনো নদী পেরিয়ে যেতেই ঢল নেমে আসে। আমি মাঝির প্রতীক্ষায় নাকি তুমি কে খুঁজতে খুঁজতে বসন্তদিনের সন্ন্যাস নিতে নিতে ও ব্রত ভেঙে বেরিয়ে পড়ি নদীয়া টিটির উড়ানে। সেই তুমি কে খুঁজতেই আশ্চর্য হয়ে দেখি শকুন যে অসম্ভব সুন্দর একটি পাখি,তা তার প্রজনন রঙ না দেখলে জানাই হতো না। তুমি তেমনই হিজলের ফাঁকে লক্ষ্মীপেঁচার মতো বুকের অভাব বুকের ভেতর।

তুমির জন্যেই ভালবাসা সব বুকের ভেতর পাহাড় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তুমি সেখানে জুমচাষ করো। সময়ের নিয়মে তুমি র সন্ধানে হৃদয়ে একাকীত্বে জাদুঘর গড়ে উঠেছে। এর নাম ভালোবাসা। কিন্তু তুমি কোথায়? তুমি তে আমি বাঁচতে চাই। জলরঙের ছবিতে কিংবা গানে ও কবিতায় আমি ফুল গন্ধ নিয়ে বাঁচতে চাই। ধীমাজী কিংবা করিমগঞ্জ,নাটোর অথবা নামচাই। শান্তিনিকেতন বা ওয়াকরো কেবল দেখেছি ছবি-গান-কবিতা বেঁচে আছে তোমার ভেতর দিয়ে।

কান্না ভেসে আসে বৃন্দাবন ছুঁয়ে বাতাসে রাধার কান্নায় ডুবে যায় কৃষ্ণের হাউমাউ কান্না। চৈতন্যের তুমি বিষ্ণুপ্রিয়া নাকি লক্ষ্মী? রাধার তুমি কৃষ্ণ নাকি কৃষ্ণের রাধা? তুমি জটিল হয়ে উঠছে! প্রজাপতির উড়ানে,মাছরাঙার ডানার রঙ দেখে মনে হয় ঘাসের আত্মজীবন আমি মুখস্থ করতে চাই কিন্তু সেই তুমি কোথায় তার তো দেখা নেই। পলাশে,শিমূলে কিংবা তুলাতুলার সেই সহজিয়ার তুমিই কি তবে তুমি?

প্রশ্নের পর প্রশ্ন জমে ওঠে।তুমি কি তবে ছবি? কিংবা প্রতীক্ষা? তখন কে যেন কানের কাছে বলে ওঠে 'এত তুমি কেমন তুমি চোখের তারায় আয়না ধরো'চোখের ভেতর এর দৃষ্টি বদলে নেয়াই কি তুমি?তুমি কি তবে জীবনের দরজাগুলো ভালোভাবে খুলে দেয়!  

তুমি আসলে আমিই। জোনাকীর আলোয় চাঁদের আলোয় আলোকিত হতে মনে হয়। আমিতেই তুমি,তুমিতেই আমি কেবল সন্ধানটা মুখ্য আর এই সন্ধানটা আছে বলেই প্রকৃতি এত সুন্দর আর আমি আয়নার মাঝে তুমিতেই মিলে একাকার হয়ে যাই কেবল তুমিতেই কিংবা...

পরিচিতি
শৌনক দত্ত শৌনক দত্ত Reviewed by Pd on মার্চ ২৬, ২০১৫ Rating: 5

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সুচিন্তিত মতামত দিন

Blogger দ্বারা পরিচালিত.