ইন্দ্রাণী সরকার

আমিনার সাথে আলাপ হয় খড়গপুরে যখন দাদু দিদার বাড়ি যাই । মামাত ভাই বোনেদের সাথে পুতুল নাচ দেখতে গিয়েছিলাম । পেছনে দাঁড়িয়ে খানিকটা হাসাহাসি চলল  একদফা । খেলা শেষে দেখি একটি সালোয়ার কামিজ পরা মুসলিম মেয়ে দুটি ছোট ছেলের হাত ধরে দাঁড়িয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে হাসছে । মুখটা খুব মিষ্টি তবে গায়ের রংটা একটু মাজা । নাম জানতে চাইলে বলল ওর নাম আমিনা আর ওই ছেলেদুটি ওর ছোট দুই ভাই । তারপর বলল সময় থাকলে ওদের বাড়িতে একটু যেতে কারণ বাড়ি খুব কাছেই । আমার ভাই বোনেরা যেতে চাইল না, ওরা বাড়ি যেতে চায় । আমি একাই আমিনার  সাথে ওদের বাড়ির দিকে রওনা দিলাম । 

ওদের বাড়িটা বেশ ছোট ছিল । ঘরগুলি বিশেষ বড় নয় । দেখলাম ওরা যৌথ পরিবার, বাবা কাকারা একসাথে থাকেন । আমিনার মা খুব যত্ন করে আমায় খেতে বসালেন। মা খুব সুন্দরী আর বোরখা পরেছিলেন । ওর ভাই দুটি খুব মিষ্টি তবে বেশ দুরন্ত মনে হল । ঘরের বাইরে ছোট্ট একফালি বারান্দায় দুজনে মিলে খুব দৌড়াদৌড়ি করতে লাগল । খানিকক্ষণ পর আমি আমিনাকে বাড়ি ফেরার কথা বলতে ও আমায় আমার বাড়ি অবধি এগিয়ে দিতে চাইল । আমি খুব মুগ্ধ হলাম ওর ব্যবহারে । ও বলল আমি এখানে বেড়াতে এসেছি যদি অন্ধকারে পথ হারিয়ে ফেলি তাই ও সঙ্গে থাকতে চায় । আমরা দুজনে বাড়ির দিকে রওনা দিলাম । ও বাড়ির কাছে এসে বলল যে ভেতরে আর ঢুকতে চায় না । অনেক রাত হয়ে গেছে আর একদিন আসবে । বাড়ির ভেতরে গিয়ে দেখলাম সবাই একটু চিন্তিত । তবে আমায় ও বাড়ি পৌঁছে দিয়ে গেছে জেনে ওরা খুব আশস্ত্ব হল ।

তারপর মাঝে মাঝেই আমরা দুজন একসাথে বেড়াতে যেতাম । রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতে আমরা অনেক দূর পর্যন্ত চলে যেতাম । 

কিছুদিন পর ওখানে হিন্দু মুসলমানদের মধ্যে গন্ডগোল শুরু হল । দাদু দিদা আমায় ডেকে বললেন এখন আমিনার সাথে না দেখা করতে । আমার মনটা খুব খারাপ লাগত । আর আমিনাকেও ধারে কাছে দেখতে পেতাম না । কিছুদিন পর সব কিছু আবার শান্ত হলে একদিন গুটিগুটি ওদের বাড়ির দিকে রওনা দিলাম । গিয়ে দেখলাম বাড়ি খালি । এদিক ওদিক তাকাতে পাশের বাড়ির একজন ভদ্রলোক এসে দাঁড়ালেন । তাঁকে আমিনাদের কথা জিজ্ঞাসা করতে উনি বললেন যে ওদের সমস্ত ফ্যামিলি অনেক দুরে কোথাও চলে গেছে । ওরা কেউ জানে না । আমি খুব মন খারাপ করে ফিরে এলাম । অনেকদিন পর্যন্ত তার কথা মাঝে মাঝে মনে পড়ত ।

পরিচিতি