ঝিলিমিলি



ফেসবুকের মাধ্যমে বন্ধু হয় – কেউ খুব নির্মল বন্ধুত্বের পরিচয় দিয়ে থাকেন , লেখায় মন্তব্য করেন আর তার মাধ্যমে অনেক বন্ধু পাঠক হিসাবে মনের কাছাকাছি এসে থাকেন। যাকে সার্বজনীন বা সাবলীল প্রেম বলে থাকি । 

আমি প্রথমত ব্যাক্তিগত প্রেমের কথা ব্যাক্ত করতে চাইছি। সম্পর্ক তৈরি করার জন্য কেউ কেউ ভালোবাসা অনুভব করে ইনবক্সে কথা রাখেন, মোবাইল বা স্কাইপিতে কথা বলেন , কেউবা বিশেষ গুণাবলী বা ছবি দেখে কেউ বা প্রেম অনুভব করেন, মনে মনে ধুঁকে মরে্ন – এবং এক সময় সামলিয়েও নেন। কারও কারও বোধ কম, তারা এক তরফাভাবে প্রেম করতে চায়। তাই দেখা যায় সকলেই প্রায় অনেকের সাথে মোটামুটি সদভাব নিয়ে বুদ্ধি করে চলেন যেন বন্ধুত্ব বজায় থাকে, আর তাদের সম্মানটুকুকে ধরে রাখেন। 

কারণ এই ভালোবাসা বোধ করার পিছনে তাদের নিজস্ব কোন কৌশল নাই খারাপ উদ্দ্যেশের – এ মানবিক প্রেমের বহিঃপ্রকাশ মাত্র। তবে অনেকের ছবির সাথে ব্যাক্তি মানবের বাস্তব দেখার অনেক পার্থক্য আছে। সেই সঙ্গে সম্মুখে কথোপকথন বা তাদের ব্যাবহারের বিস্তর পার্থক্যও হওয়াটাও স্বাভাবিক।  কিন্তু ফেস বুকে এত আড়াল যে কথা বলা বা স্কাইপি করেও বাস্তবকে ঠিক ধরা যাবে না অনেক ক্ষেত্রে। বহুদিন যোগাযোগের মাধ্যমে হয় তো এইটুকু বোঝা যায় কে কোন ধরণের মানুষ- তারপরেও সম্পুর্ন দেখা ঠিকভাবে হয় না। 

আর ফেসবুকের প্রেমের বন্ধন যা কিনা হৃদয়ের নিভৃতে রচিত সেটাও যুক্তি এবং বিশ্বাসের কাছে ন্যাস্ত করেই হয় অনেকটা ঈশ্বরকে ভালোবাসার মত। বিশ্বাস করলে ঈশ্বর আছেন আর না করলে ঈশ্বর উধাও ঠিক এমনি ভার্চুয়াল প্রেমের প্রকৃতি। এখানে সকল যুক্তিকে গ্রাহ্য করার নয় – কারণ দিব্য আলোকের অনুপস্থিতির একটা অনিশ্চয়তা বোধ থেকেই যায়। কাজেই প্রেমের পাত্রপাত্রী নিজেদেরকে স্বচ্ছ রাখেন নিজেদের প্রেমের সম্মান দিয়ে এবং প্রেমাস্পদের কাছে যদি সেইভাবে প্রেমকে নিরাপদের আলয়ে রাখতে পারেন তবে স্বচ্ছধারায় প্রেমের ঝর্না বইবে। আর এখানে পরাজয় ঘটলে প্রেমের ইতিবৃত্ত ঘটে যায় বিশ্বাস অবিশ্বাসের দোলাচলে পরে। 

আবার অনেকে বলেন মুক্ত প্রেমের কথাকে। তারা মানেন এইভাবে যে তাদের দুজনেই আরও কাউকে ভালবাসতে পারবে সেখানে কেউ কাউকে বাধা দিবে না। এখানে মনের দিক থেকে উভয়কে হতে হয় মজবুত বন্ধনের করে –কেউ একজন অন্য সঙ্গী / সঙ্গিনীর প্রতি ঝুঁকে পরলে যেন মন সহজে না ভাঙ্গে অথচ তাদের প্রেমের বন্ধনগুলো যেন চির না খায়। তবে এখানে প্রেমটা সুন্দর রাখার চেষ্টা করলেও দেওয়ালে একটু আঘাত পায় –মনের বন্ধনখানি যেন এখানে জোড়াতালি দেওয়া। বন্ধুত্ব হতে পারে একজনের একাধিক করে কিন্তু বিশেষতঃ একাধিক প্রেমিক বন্ধুত্ব সাধারণত কম দেখা যায় যদিও আধুনিকতার ছোঁয়া পেতে বিশ্বমানবপ্রেমের সংজ্ঞা দিয়ে তাকে নামকরণ করা হয়  – এই বাধনগুলো খুব শক্তিশালী হবে আশা কম করা যায়, মানবিক প্রেমের বৈশিষ্টে আমার করে ভাবা বা দখল করার ব্যাপার থাকে –এখানে আমার জিনিষটাকে বাজারে ছেড়ে দিতে হচ্ছে, হাত বদল হয়ে যাচ্ছে যা আমি জানতেও পারি আবার না জানালেও কিছু বলার নাই যেহেতু পরিকল্পিতভাবে প্রেমের এই ক্ষেত্রটি। 

তারপর ফেসবুকের অনেক প্রেম স্বার্থকতা পায় পরিণয়ে বেধে কিংবা দেখা সাক্ষাতের মাধ্যমে মানব মানবীর কোন প্রেমের একটা সমঝোতা হয়ে যায়। যাদের দেখা না হয় আর কোন ভাবে বিশেষ লক্ষ্যে না পৌঁছানোর ব্যাপার থাকে – শুধুমাত্র চলার ছন্দে একটি শক্তির চালনা হিসাবে নিজেরই বিশেষ অঙ্গ বা আত্মা স্বরূপ প্রেমকে জীবিত রাখা হয়, একসময় এসে দেখা যায় হতাশা সেখানে এসেও বাধে দেখা সাক্ষাতের অভাব পেয়ে। প্রেম কার সঙ্গে কার জোড়া লাগছে ভাবাও যায় না – বর্ন-ধর্ম –বয়স ছাপিয়ে প্রেম প্রণিধান হয়ে দাঁড়ায়। বাস্তবের ধাক্কা খেলেও প্রেমের ক্ষতি হয় না, প্রেম হয় তো পূরাতন হয় –এরই মধ্যে নতুন উদ্দীপনায় নতুন প্রেম টানে, কেউ তাতেই সাড়া দেয় কারণ ভার্চুয়াল প্রেমে বিপদ নাই ধরা পরার মানসে –অনেকে অবশ্য প্রেমিকার নাম ঘোষণা করে রাখে। বেশীর ভাগ দেখা যায় স্থির বলে কিছুই নাই এই পৃথিবীতে, স্বামী স্ত্রীর মনেও চির খাচ্ছে সুস্থ গতির অভাবে। কেউ  যেন কাউকে ঠিক ধরে রাখতে পারছে না। তুমি যে আমার ওগো তুমি যে আমার – এই সুন্দর কথা বিশ্ব থেকে সম্পুর্ন উধাও হতে চলছে যার ফলে আসলে খুব একটা ভালো কিছু আনছে না। আমাদের পারস্পরিক যে বন্ধন তাতে করে আমরা একজন আর একজনকে বাঁচিয়ে রাখি ভালোবাসা দিয়ে দিয়ে। 

আমাদের সারমর্ম সেভাবেই হওয়া উচিত যেন প্রেম নির্মলেই থাকে, যেভাবে হোক না কেন তার সুস্থ কাঠামো হোক। কারণ এই প্রেমপ্রীতি আমাদের সমগ্র মানুষকেই বাঁচিয়ে রাখে। হয় তো এরও একটা শৈল্পিক, দার্শনিক বা অন্যান্য কোন ভাবগত ইতিবাচক দিক রয়ে গেছে।  

এবার আসি ফেসবুক আমাদের কিভাবে উপকার বা অপকার করতে পারে। ফেসবুকের উপস্থিতির কারণে আমাদের পারিবারিক এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা কমে যাচ্ছে উদাসীনতার কারণে। আমরা সমাজের মানুষের সঙ্গ সরাসরি পছন্দ না হলেও এফবির স্মরণাপন্ন হয়ে নিজেদের  বিনোদনের কাজ সেরে নেই। কিন্তু আশেপাশের মানুষের অস্তিত্বের একটা স্বীকৃতি থেকেই যায়। বিপদ আপদে তাদেরকে আমাদের দরকার হয় আর প্রতিবেশী বলে পারস্পরিক মেলামেশা না থাকার দরুন আমরা আরও একা হয়ে পরি, এমন কি আজকাল পরিবারের ভেতরের ছেলে মেয়েরা পর্যন্ত প্রাইমারী স্কুল থেকে মা-বাবার সান্নিধ্য হারা হয়ে যাচ্ছে এই এফবি বা নেটের যথেচ্ছ ব্যাবহারের ফলে। আর ঘরের ভেতরে মেহমানদের খাতির যোগে পরিবারে একটা নির্মল হাওয়া বয়ে যায়, ঘরের সন্তান, স্বামী-স্ত্রী সহ সবাই উপভোগ করেন যা কিনা দাম দিয়েও কোথাও কেনা যাবে না। আমরা দিনে দিনে এই সমাবেশ হারিয়ে ফেলছি –পরিবর্তে ফেসবুক বন্ধুদের একত্রিত করে সমাবেশ করি। তবে কোনটার গুরুত্ব কোনভাবেই কম নয়। এফবিতে সময়গুলো দারুণভাবে অপব্যায় হয় নেশাগ্রস্থ হয়ে যাবার ফলে যেখানে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ আগেভাগে করা উচিৎ ছিল ।  এফবিতে আমাদের আনন্দ হয়। আমরা এখানে দলবদ্ধ হয়ে সকলেই লিখি, ছবি আপলোড করি, মন্তব্য করি আর সেই সাথে অনেক অজানা তথ্য সম্পর্কে সম্যোক জ্ঞান লাভ করতে পারি। সামাজিক কুসংস্কার, রাজনীতির কূটচালনা, ব্যাক্তি মানুষের অমানবিক  অন্ধকারগুলো দূর করার জন্যে বিদ্রোহের দ্রুততায় ফেসবুকের মাধ্যমে যে গ্রুপ বা সঙ্ঘ গড়ে উঠেছে সাহিত্যের পরিসরে তা মানব কল্যাণের জন্য যথেষ্ট দাবী রাখে। 

তবে অনেক সময় একটা নেশা ঘোরের ভেতরেই নয় শুধু, মুক্ত আকাশ বহির্ভূত একটা ঘরের ভেতরে আটকা থাকি সেই ঘন্টার পর ঘন্টা যা স্বাস্থ্যনীতির বিপরীতে কাজ করে। ফলে নিজের দেহ মনের যথেষ্ট যত্ন থেকে বঞ্চিত হতে হয়। অবশ্য যারা চাকুরীজীবি তারা সময়ের একটা সমবন্টন করলেও দেখা যায় স্বামী বা স্ত্রীদের কেউ এক জন আর একজনকে সঙ্গ দেবার পরিবর্তে রাত্রি জাগরণ করছেন এফবির খাতিরেই। আর প্রতিটি মানুষ নিজেকে একটা সময়ে একাকী পায় সে কথা নতুন নয় –একার সঙ্গে যুঝাযুঝি সেই আদ্দিকালের কথা, কিন্তু ফেস বুকের অবদানে মানুষ যেন সঙ্গী জোগাড় করে হাফ ছেড়ে বাঁচতে চায় ছেলে বুড়ো মধ্য বয়সের সবাইসহ। এখানে একটা ইতিবাচক কথা হল মানুষ তাদের মতামত আদান প্রদান করে দেখতে পারে তারা আসলে একাই সকল সমস্যার মোকাবেলা করেন না।

পৃথিবীতে অনেকের অবস্থাই তাদের সমপর্যায়ের বা কিছুটা এদিক আর সেদিকের করেই থাকে। এভাবে তাদের অনেক সমস্যাই মিটে যায় চিকিৎষকের স্মরণাপন্ন না হয়েই। তবেই ফেসবুকে সম্পর্ক তৈরি করতে গিয়ে বাড়তি আবেগ ত্যাগ করাই ভাল। কারণ প্রতিটি মানুষের ঘরে-বাইরের একটা নিয়মমাফিক কাজের তালিকা আছে আর সেগুলো বেঁচে থাকার তাগিদেই হয়ে থাকে। কোন কারণে দৈনন্দিন রুটিনের অতিরিক্ত অবহেলা করা হলে তার জীবনের ভারসাম্য হারিয়ে যাবে, তার চলার ভেতরে ছন্দটা ঠিক থাকবে না। কাজ ফেলে দেখা যায় তাদের সকলের প্রায় ঘোড়া দৌড়ানর মত অবস্থা এই এফবির মাঠেই দিকবিদিক শূন্য হয়ে যা কস্মিনকালেও তাদেরকে শান্তি দিতে পারে না। এফবিতে স্ট্যাটাস, ছবি, লেখালেখির গুণাগুণের বাইরেও নারী-পুরুষ বা অল্প বয়সী ছেলেমেয়েদের আরও বিভিন্নমুখী মেধা রয়ে গেছে –সেই সকল চর্চা করতে গেলে সেখানেও যথেষ্ট সময় দিতে হয় নিয়ম বেধে যা কিনা এফবির নেশায় পরে মানুষ এসব সৌন্দর্যমন্ডিত প্রতিভার গুণগত দিক হারিয়ে ফেলে। 

সবাইকে লেখক হতে হবে, সুন্দরী হয়ে ছবি তোলে তাক লাগিয়ে দিতে হবে তা তো নয়। অনেকে ঘরে ভালো রান্না করেন, সেলাই করেন, গান- নাচ-নাটক, খেলাধূলায় বা আরও কিছুতেও দারুণ নৈপণ্যতা দেখাতে পারেন। অবশ্য এফবিকে কোন কোন সূত্রে ব্যাবহার করা যেতে পারে কারণ ন্যাটওয়ার্ক বা পরিচিতির একটি আবেদন সর্বদাই আছে। তবে মূল রসদ যা সাধনার সময়ের সাথে সম্পৃক্ত থাকে সেই সময় থেকে বিচ্যুত হয়ে যেন নিছক সময়ের অপব্যাবহার এফবিতে না হয় যা জীবনকে কিছুই দিতে পারে না। দিন রাত্রি একটি নিয়মের মধ্যে থেকেই আবর্ত হয়, মানুষের শরীর মনও তার বাইরের কিছু নয় –তার মনের বা জৈবিক চাহিদা থাকতেই পারে তবে ছকের ভেতরে এনে তাকে একটা পরিধি দিতে হবে অন্যথায় সুস্থ সবলভাবে নিজের সকল সৃষ্টিকে প্রকাশ করা যাবে না। সে ক্ষেত্রে এফবি আনন্দের না হয়ে ক্ষতির বিশেষ কারণ হয়ে দাঁড়াবে উদ্দেশ্য বিহীনতার শিকার হয়ে এবং তখন সুস্থভাবে বেঁচে থাকার অবলম্বনের পরিবর্তে এফবি মানুষের জন্য অকল্যাণ ডেকে এনে তাদেরকে অসুস্থ করে তুলবে সন্দেহ নাই। 

কাজেই পরিকল্পিত, সমব্যাবহার ও মার্জিত পরিসরে জীবনের সর্বোময়ে ফেসবুকের একটা মাত্রা পেলে ফেসবুক ব্যাক্তি মানুষের তথা সমাজের অনেক উপকারের স্বার্থে চিহ্নিত হবে বলাই বাহুল্য আর ফেসবুকের এই যাত্রাপথ সাফল্যের চাবিকাঠি হতে পারবে বিশ্বমানবের হয়ে।        

                     
পরিচিতি 




ঝিলিমিলি ঝিলিমিলি Reviewed by Pd on ডিসেম্বর ১৬, ২০১৪ Rating: 5

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সুচিন্তিত মতামত দিন

Blogger দ্বারা পরিচালিত.