শীতে ঝরে গেছে জীর্ণ পাতা, নেড়া গাছ, শুকনো পাতা বিজন পথে পড়ে
ধূলায়। মাঝে মাঝে কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া গাছে গাছে, লাল ফুলে ভরে আছে।
এসেছে বসন্ত।
কবি অনিল রায়, ল্যাপটপের সামনে বসে ভাবছেন, বড় আশ্চর্য মানুষের মন, নিজের মগজের নির্ভর করা যায় না।এই জীবনের শেষ প্রান্তে পৌঁছে কেন ব্যাকুল, উতল হয় মন, এ বয়সে, যখন বার্ধক্যের ভারে, জরাগ্রস্ত শরীর, মন মনরে তুই কেন এত উতল হয়ে, তোর আবার ফিরে পাওয়া প্রেম, ভালোবাসা, কেন এই বৃদ্ধ বয়সে আবার নামলি প্রেম যমুনার জলে?
কবি অনিল রায়, ল্যাপটপের সামনে বসে ভাবছেন, বড় আশ্চর্য মানুষের মন, নিজের মগজের নির্ভর করা যায় না।এই জীবনের শেষ প্রান্তে পৌঁছে কেন ব্যাকুল, উতল হয় মন, এ বয়সে, যখন বার্ধক্যের ভারে, জরাগ্রস্ত শরীর, মন মনরে তুই কেন এত উতল হয়ে, তোর আবার ফিরে পাওয়া প্রেম, ভালোবাসা, কেন এই বৃদ্ধ বয়সে আবার নামলি প্রেম যমুনার জলে?
হঠাৎ পেছন থেকে নরম হাতে কে জড়িয়ে ধরলো তাকে? ভালোলাগা, ভালোবাসার স্পর্শে, সারা একী শিহরণ? চোখে মুখে লাবণ্য, সমুদ্রের নীল ঢেউয়ের দৃষ্টিতে বিদ্যুত হেনে, মুক্ত ছড়ানো হাসি হেসে সুপর্ণা, বন্ধু বিকাশের আদরের মনি, নাতনী, সদ্য যৌবনা তরুনী ধমক দিয়ে বলে, ' কী এত রাত দিন বসে বসে ভাবো, দাদু?
কোঠরে থাকা পেঁচা, চল আমার সঙ্গে, মিলিনিয়াম পার্কে যাবো।গাড়ি এনেছি, চল চল বেড়িয়ে পড়ি, বেলা বহে গেলো---"
গঙ্গার ধারে একটা আসনে দুজনে পাশাপাশি বসেছি, মিলিনিয়াম পার্কে। গঙ্গার ওপারে আকাশে, নানা রঙের আলপনা, আসন্ন সূর্যাস্তে, বৃত্তাকার কুসুম রঙের সূর্য, গোধূলির গোধুলী কনে দেখা আলোয় আলোময় আকাশ।মনেও উঁকি দেয় ঐ আলোর দূতী।
" নদী তুমি চললে কোথায়? সঙ্গে নেবে, গান শোনাবো, সাগর তোমার প্রেমিক, তার কাছেই যাওয়ার এত তাড়া, এসো, কিছু মনের কথা --- " আবৃত্তি শেষ করে, অনিল হাত নিজের হাতে নিয়ে পরম মমতায়, বলে,
" দাদু তুমি নদীর সাথে মনের কি কইবে গো?" সূর্যাস্তের আলো এসে পড়েছে, সুপর্ণা মুখে।
অনিল রায় তাকে কাছে টেনে নিয়ে বলেন, " সে অনেক কথা, তোর কি সময় আছে এতো কথা শোনার?"
" তোমার জন্য আমার অঢেল সময়, বলো না দাদু" আদরে গলে পড়ে সে।
" নদী সাঁতরে গিয়ে ছিলাম, অতল জলের ডুব দিয়ে পৌঁছে গেলাম, জল পরীর দেশে, সে এক আশ্চর্য সৌন্দর্যে অপরূপ ভীষণ সুন্দর দেশ, চারিদিকে, হীরে, চুনী, পান্না, দিয়ে গড়া বিশাল কারুকার্য করা এক প্রাসাদ।
এক দল অপূর্ব সুন্দরী পরী এসে আমার হাত ধরে চলল নিয়ে তাদের রানী সুরঙ্গমা কাছে।"
" জল পরীদের রানী সুরঙ্গমা ! রবীন্দ্রনাথের নাটকে---"
" তুই ঠিক ধরেছিস, রবীন্দ্রনাথ এখন আমাকে ভীষণ ভাবে--"
" এবার তোমার নদীর কাছে তোমার গোপন কথা বল।"
" শোনাবো তোকে, এখন তুই গান শোনা "
" ওগো নদ, আপন বেগে পাগলা -পারা
আমি স্তব্ধ চাঁপার তরু গন্ধ ভরে তন্দ্রাহারা।"
সে বার বিকাশ ওর পরিবারের সাথে আমাকেও জোর করে গোপালপুর সমুদ্র সৈকতে এনেছে। আমার সহধর্মিণী আমাকে একা রেখে চলে যাওয়ার, বিপত্নীক, নিঃসন্তান আমার মতো একজনকে বিকাশ, ওর পরিবারের সবাই আমার প্রতি এত সহমর্মিতা আমি কৃতজ্ঞ।
সাগর পারে বসে বিকাশ,আমি দেখছি, " তুই দেখ বিকাশ, কেমন দূর থেকে সমুদ্রের ঢেউ ছুটে আসছে। আছড়ে পড়ছে, যেন জানিয়ে যাচ্ছে, তার হৃদয়ের গোপন ব্যথা, জমা যত দুঃখ, ফিরে যাচ্ছে। এই ভাবেই কী আমাদের বার বার ফিরতে হয় বিকাশ?"
" তোর মতো আমি কবি, দার্শনিক নই। কিন্তু আমি বলবো, জীবনে উত্থান পতন, অনেক সুখ দুঃখের মধ্যেও কখন হতাশ হইনি, সে শুধু তোর জন্য অনিল।"
" চলো চলো আমার সাথে চলো, দুটো বুড়ো বসে বসে সময় করছো নষ্ট?"
আমাদের দুজনের দু হাতে ধরে সূপর্ণা বালির উপর দিয়ে, সাগর জলে পা ভিজিয়ে, সমুদ্রের ঢেউ ভেঙে ভেঙে সমুদ্রের গভীরে---।
শ্যামল সোম
Reviewed by Pd
on
ডিসেম্বর ১৬, ২০১৪
Rating:
Reviewed by Pd
on
ডিসেম্বর ১৬, ২০১৪
Rating:

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
সুচিন্তিত মতামত দিন