কবি অমিতাভ দাস এর '' এক মনা রোদ'' কবিতার বইটি শীতের সকালে এক ফালি রোদের মতই স্নিগ্ধ সুন্দর কবিতার বই । কবি মনের একান্ত অনুভূতিগুলো কবির সাবলিল ভাষা শব্দে ও ছন্দের শৈল্পিক প্রয়োগে সার্বজনীন হয়ে উঠেছে ।
চলমান জীবনের পরিবর্তনশীল সময় ,দৈনন্দিন বাস্তবতা ,মানব মনের প্রেম-ভালবাসা , সুখ- দুঃখ।,বিরহ,, মানুষ কবিতার উপজীব্য ।জীবন ও প্রকৃতি কবিতার কবিতার অনুষঙ্গ ।প্রবাহমান জীবন আর প্রকৃতি থেকে নেয়া কবিতার উপমা । সহজ ভাষায় কবির নিজস্ব ধারায় উপস্থাপিত সব কবিতা । কবির কোন কবিতাই উপমা ও অলঙ্কারের ভারে নুজ্জ্য নয় ভাষা অ শন্দের সাবলীলতায় নিজস্ব প্রকাশ ভঙ্গিতে উজ্জ্বল । কবি মনের অন্তর্নিহিত গতিপ্রকৃতি অত্যন্ত সুন্দর ভাবে প্রবাহিত কবিতায় , কবিতা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে কবিতগুলোকে ভাগ করতে পারি তিন ভাগে -
১] নিঃসঙ্গতার কবিতা- যেমন নিঃসঙ্গ,নীলে নীলে , নিছক কান্নার কাব্য , গন্তব্বে হারানো ,সন্ধে বেলার ঘুম,এতদিন কোথায় ছিলেন ।এবং আর অনেক এই কবিতাগুলতে কবিমনের নিঃসঙ্গতার চিত্র ফুটে উঠেছে যদিও কবি হাহাকারে নিমিজ্জিত নন একে সাথি করেই নব নব সৃষ্টিতে মেতে উঠেন । নির্জনতার ছায়া কবিতায় কবি যখন বলেন ''নির্জনতারও ছায়া আছে জানো ?'' গভীর বোধের ব্যপ্তিতে পাঠকও যেন নির্জনতার ছায়া দেখতে পায় । আমরা যখন পড়ি -----
শ্রাবনঘন গহনমোহে কবিতাটি... বৃষ্টিতে হেটে যায়
স্বপ্ন ভাঙ্গা এক যুবক
বড় ক্লান্ত , বড় বেশি ক্লান্ত লাগে তাকে।
এক বিষণ্ণ যুবকের ছবি ভেসে উঠে যা আমাদের অনেকেরই খুব পরিচিত দৃশ্যকল্প । পাঠকের মনেও বিষাদ খেলে যায় ।
আবার যখন কবি তার''তোমার কাছে রেখে গেলাম
নদী আর সাঁকোটি ...
জল আর জলমাখা বাতাস
দুরেই থাক !
এই কবিতায় পাঠক কবির সাথে একাত্ম হয়ে বিষণ্ণ হয়ে পড়েন...
২] ভালবাসার কবিতা - কথোপকথন , সুনয়না ,ঠোঁট চাই ঠোঁট , নদী পাড়ে আষাঢ়ের প্রভাতখানি, নেশা ভরা চিরকুট, ষোড়শী ,সেকেলে কাব্য আর অনেক তুমুল প্রেমের কাব্য এখানে কবি নিটোল প্রেমের চিত্র এঁকেছেন । যখন সুনয়নায় তিনি বলেন'' দূরে থেকেও কি অবলীলায় কাছে থাকো তুমি'' কবির সাথে পাঠকও ডুবে যায় নিটোল ভালবাসার অনুভুতিতে । কিম্বা ষোড়শী তিরিশ বছর ধরে কবির সযতনে লালিত ভালবাসা , যা পাঠক কেও নাড়া দেয় ।
কবির দুর্দান্ত প্রেমের কবিতা ষোড়শী কবির উচ্চারন'----
দুই ইঞ্ছি বাই দের ইঞ্চি
প্লাস্টিকের খাপে ---এই ওয়ালেটে
কী অবলীলায়
একরাশ শিউলির মতো হাসতে পার-
তিরিশ বছর ধরে থাকা ষোড়শী
একমাত্র তুমিই!
আবার পাঠক স্নিগ্ধ প্রেমের অনুভুতিতে আপ্লুত হয় কথোপকথন কবিতাগুলো পড়ে কবিতায় কবি যখন বলেন---
'নীল ,এই যে দিচ্ছি হ্যালো -হ্যালো নয়,
জলন-ভাল রাম চিমটি দুই তিনটি !''
''মনি উফ লাগল! এমন ছিল না শর্ত!
যদি বা ঘটে অনর্থ -তবুও তোমাকেই চাই-ই
হয়তো তোমার জন্য ,
হয়েছি প্রেমেই বন্য
জানি তুমি অনন্য ...।।
আরও কিছু কবিতা যা পাঠককে নিয়ে যায় অন্য ভুবনে এমন আবেশ তৈরি করে যে পাঠক মন্ত্র মুগ্ধের মত কবিতায় ডুবে যায় ।এমন একটি কবিতা-
ইচ্ছে আমার পাগলা ঘোড়া অবাধ স্বাধীন
ইচ্ছে আমার বৃষ্টি ফোঁটা তা-ধিন-না-ধিন!
টিনের চালে আপন তালে, নাচতে থাকে
ইচ্ছে আমার উদাস বাউল, কোথায় বিলীন ...।
এখনে পাঠক ও বিলীন হন তন্ময়তার গভিরে।আবর যখন পরি-... আমি শুধু ভালবাসায় তোমারই'' আশ্চর্য ''হই -ধ্রুবতারা হই আশ্চর্য এক স্থির হয়ে থাকি- অষ্টম ,নব্ম, দশম! অন্তিম আশ্চর্য পৃথিবীর !
এই কবিতাগুলো পাঠ করে পাঠক অনন্য এক অনুভবে তলিয়ে যায় কবিতার গভীরে অনভব করে নেয় কবি মনের অতলস্পর্শই গভীরতা ।
৩] প্রকৃতি ও অন্যান্য কবিতা- কবির সত্তায় প্রকৃতির সুন্দর অনুভবরাশি জড়িয়ে আছে অনুপম আবেশে ঋতুরঙ্গ, অপেক্ষাচরন, জীবন আনন্দে শেষ ,আলো-দ্বীপ শিউলি চাঁপা ভোর, মহাভারত পাঠ , ইত্যাদি ,তার প্রতিটি কবিতায় প্রকৃতি উঠে এসেছে উপমা অলংকার আর অনুষঙ্গ হয়ে । তার অন্যান্য কবিতা বলতে একটু ভিন্নতর কবিতাগুলোর কথা বলা হয়েছে যেমন ছায়াট্রাম কবি জীবনআন্দ দাস এর প্রতি অকিত্রিম শ্রদ্ধা নিবেদন ।এক মনা রোদ কবিতাটি কবি যাদের ছায়ায় মায়ায় বেড়ে উঠেছেন তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি ।
বিকেল বেলার শান্ত নির্জনতা
বুকের মধ্যে বিছায় সবুজ মাঠ
শাঁখের আওয়াজ সন্ধ্যা নিয়ে এল
মনের মধ্যে মহাভারত পাঠ ।
এই কবিতা পড়ে পাঠক কেমন এক ভাবালুতায় আক্রান্ত হয় নিজের মাঝে নিজেকে খুঁজে ফেরে।
আবার যখন পড়ি -----
তার ছোঁয়া শিউলির ছোঁয়া
আমি নীল দূর্বা ঘাশ
আমার কবিতা হয় ভোর
শিউলি- ছোঁয়ার নিয়ে আশ ,...
এই কবিতা পড়ে স্নিগ্ধ এক সকালের ছবি যেমন ভেসে উঠে মানস পটে তেমনি প্রকৃতি ও মন যেন একই সুরে গেয়ে উঠে গান । আলোচনার খাতিরে কবিতাগুলোকে তিন ভাগে ভাগ করলেও প্রতিটি কবিতায় মুলত প্রেম ও প্রকৃতি নির্ভর ।প্রকৃতিকে বাদ দিয়ে জীবন যেমন হয় না কবিতাও আলাদা হয় না কবি তাই দেখিয়েছেন খুব সুন্দর করে ।
সব শেষে বলা যায় এক মনা রোদ কবি অমিতাভ দাস এর অনবদ্য সৃষ্টি ।আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত পরিচিতশব্দ নিয়ে নিজস্ব এক সাবলিল অনুপম ধারা তৈরি করে উপস্থাপন করলেন ছন্দে শব্দের শৈল্পিক রুপে কবিতা যা দিয়ে তাকে আর দশজন কবি থেকে আলাদা ভাবে চেনা যায়। শব্দ প্রয়োগে এবং বিষয় নির্বাচনে কবি সচেতন একটি শব্দ ব্যবহারের ও অর্থের দ্যোতনায় কত ভিন্ন হতে পারে তা তিনি দেখিয়েছেন খুব সুন্দর ভাবে '' শ্রাবনঘন গহনমোহে কবিতায় । যেমন সে এক যুবক বড় বেশি-- বড় বেশি আত্মমগ্ন । এখানে শব্দের দ্যোতনায় কবিতাকে অন্য মাত্রা দিয়েছে। সবকটি কবিতায় কবির মননশীলতা ও নিজস্বতার ছাপ স্পষ্ট । প্রকাশে কবি নিজস্ব ধারায় সহজ শব্দ চয়নে ছন্দে ছন্দে বলে গেছেন মনেরকথা
![]() |
| ~ লেখক পরিচিতি ~ |
অমিতাভ দাস
Reviewed by Pd
on
নভেম্বর ২১, ২০১৪
Rating:
Reviewed by Pd
on
নভেম্বর ২১, ২০১৪
Rating:



কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
সুচিন্তিত মতামত দিন