শৌনক দত্ত

পরিচিতি  







যে চিঠি হয়নি লেখা



২।
হৃদীবরেষু....
দ্বিতীয়ার বিকাল
গড়িয়ে যাচ্ছে নিঃশব্দে গোধুলি উড়িয়ে সন্ধ্যার
দিকে।অস্থির এ সময়ে দাঁড়িয়ে কত কথাই বলছি,
তুমি তার বুঝতে পারছো না কিছুই কিংবা বুঝেও চুপ
করে আছো না বোঝার অভিনয়ে।তবুও
লিখছি তোমায়।লিখছি বাদাম গন্ধী সময়ের কথা।
কেমন আছো তুমি?
চুপ করে সন্ধ্যা নেমে এলে।আলো আঁধারীর খেলায়
আমি হারিয়ে যাই রোজ।তুমি জানো না।
তুমি জানো না সেই ক্ষরণের কথা।আমার ভেতর
যে তোর্ষার বাস তার ধূধূ বালু আমাকে উড়ায় আর
আমি সঙ্গীহীনতায় লিখে রাখি তোমার নাম।
জানি,আমার ডাক নাম মুছে গেছে তোমার পথের
বাঁকে!
বাতাসে কুয়াশা ভেসে আসে।ডেকে যায়
অতীত,যেখানে আমি আর নেই কোথাও।
আমি কি হারিয়ে গেছি।


৯।

প্রিয়বরেষু
শাওন,
মেঘলা আকাশের বিষন্নতা থেকে তোকে লিখছি।
কিছু কান্না থাকে সন্ন্যাসীর দুঃখের মত গোপন
কাপড় ধোয়া হরিণের ডাকের মত একান্ত।
জানি আকাশের মত চোখে তাকিয়েও তুই
ভেতরে ভেতরে কাঁদচ্ছিস অথচ আজ তোর
জন্মদিন।
বেশ কয়েকবছর বাবা মা ছাড়া জন্মদিন পালন
করতে গিয়ে বুঝেছি বাবার অনুপস্থিতিতে জন্মদিন
মানে নিস্তব্ধ পাতার মত।পাটের জাঁক দেয়া গন্ধের
মত নিঃসঙ্গতা।
বাবাহীন একটি মেয়ের দুঃখ নদীর মত।ঘাটবাঁধা পুকুর
বুজিয়ে মাল্টিস্টোরেজ বিল্ডিং এর মত অব্যক্ত।
জানি বিরক্ত হচ্ছিস।মেঘটা সদ্য কেটে গেলো এখন
কাঁচা হলুদ রোদ শান্ত।ভোরের স্বপ্নে ঘুম
ভাঙলে আমায় ডেকে নিস তুই হয়ত জানিস ও
না কাঁচের ঘরে আটকে থাকা রঙ্গিন প্রজাপতিদের
জন্য আমি প্রতিদিন কত কাঁচ ভাঙ্গি ঢিলে আর
দারোয়ান ছুটতে থাকে আমার পিছন পিছন।
দিগন্তে এসে যখন হাঁপাতে হাঁপাতে থামি তখন
আমাদের বয়স বেড়ে যায়।আমি তখন
অমরতা বিলোই আর দেখি দিগন্তে দাঁড়িয়ে হাজার
শহীদ।পদাবলী ছেড়ে মামা তখন দেশাত্বকবোধক
গায় আমি শুনি আমি মরে যাই আর
রাজনীতি বিক্রি হয়ে যায় দারোয়ানের পকেটে।
রক্তের সম্পর্ক সব নয় শাওন আত্না বাতাসের
মত সেখানেই পাঠালাম এলাচ গন্ধময় মামার
আশীষ আমার বৃষ্টিময় শুভেচ্ছা।
ইতি


১৩।

রূপশ্রী,
আজ আর তোকে প্রিয়তমাষু
লিখতে ইচ্ছে করছে না।তাই বলে ভাবিস
না প্রিয়তমা শব্দটি কলম ও মন থেকে উবে গেছে।
মেঘ কাটিয়ে রোদ উঠেছে আজ,ঝড়ের গতিপথ
সরে গেছে উড়িষ্যা হয়ে অন্ধ্রের দিকে।কতকাল
আগে ঝড়ের কাছে যে ঠিকানা রেখেছিলো তার
মৃত্যুর পর ঠিকানা কেবল
কানা চোখে বেঁচে আছে তাই আমি আজ আর
কোথাও ঠিকানা রাখতে চাই না।
বোতাম হারানো সেই সিঁথির মত
পথে হাঁটতে হাঁটতে যখন
ক্লান্তি নিয়ে দাঁড়িয়েছি দেখেছি দিনান্তের
আলো নেভা আঁচের মত
নিভে আসে সেখানে কোথাও তুই নেই।
গত দুটো মাস আমি নিজের সাথে লড়ছি।
আত্মহননের হাতছানিকে তাচ্ছিল্য
করেছি এবং করছি।অদ্ভুত এক
অস্থিরতা ঘিরে আছে।নিজেকে আর সহ্য
হয়না আমার বুকের ভেতর মৃত স্বপ্নের ক্রন্দন
আর চিতার সজ্জায় হেঁটে বেড়াই
মুখে ঝুলে থাকে ভাল আছি সাইনবোর্ড এক
ব্যঙ্গাত্বক স্মাইলিতে।
সুখী সুখী মানুষের ভিড়ে বাঁশপাতার মত বেঁচে আছি।
প্রতিবাদে নেই,মিছিলে কিংবা সংস্কারে নেই কেবল
হলদেটে হয়ে উঠছি রোজ রোজ এ কেমন জীবন
রূপশ্রী?তুই জানিস না সত্যিই জানিস না পৃথিবীর
আজ ভীষণ অসুখ!সমস্ত আবরণ মেকাপ
ধুয়ে মুছে সন্ন্যাস হাওয়ায় উলঙ্গ দাঁড়াবার সময়
এসেছে জানি অথচ কেউ কোত্থাও নেই আর তাই
বড় বেশি ভয় আমার।আচ্ছা,আমিও কি নষ্টের
ভিড়ে নষ্ট হয়ে উঠছি একটু একটু করে?
গত শতাব্দীর চিঠিতে তুই জানতে চেয়েছিলি আমার
কথা তখন বলা হয়নি আজ বলতে চাই কন্ঠ রোধ
হয়ে আসে।আমার জন্য কেউ প্রতীক্ষা করে নেই
আর তাই ঘর পোড়া দাউ দাউ আগুন
ছুঁয়ে রেখে যেতে চাইনা নষ্ট আগুন!
তুই মরে বেঁচে গেছিস এখানে এখন সহজলভ্য মৃত্যুও
টিপস চায় তাই আমার আর মরা হয়ে উঠেনা কেবল
যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা বারুদের গন্ধে ভাসে ভ্রষ্ট
রাজনীতি।
আমাকে ফিরিয়ে নে রূপশ্রী,আমি আবার তোর
সাথে সভ্যতার আদিমতা হয়ে উঠবো।নদী হবো।
অমরত্বকে তাচ্ছিল্য করে মেঘ
হয়ে ভেসে যাবো আমি আজ আর পাহাড়
কিনতে চাইনা,বিশ্বাস কর আমার শরীর জুড়ে নীল
বিষের দহন।আমাকে নিয়ে যা রূপশ্রী অবুঝ
মুগ্ধতায় তোর বুকের পরে,ছায়ায় মন্ত্রের
মতো মায়ায়...

শৌনক দত্ত শৌনক দত্ত Reviewed by Pd on নভেম্বর ২১, ২০১৪ Rating: 5

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সুচিন্তিত মতামত দিন

Blogger দ্বারা পরিচালিত.