নীরজা কামাল




এবারের ‘একমুঠো প্রলাপে’ আমরা আমন্ত্রণ জানিয়ে ছিলাম জন্মসূত্রে বাংলাদেশী , অধুনা আমেরিকা নিবাসী কবি ও সাহিত্যিক , কবি কচি রেজা ওরফে নীরজা কামাল কে । অনন্য মেধা , সারল্য , কবিত্ব , রোম্যান্টিকটার এক ঐশ্বরিক মিশেল এই কবি গ্লোবাল খ্যাতিসম্পন্ন । তার সঙ্গে এই আন্তরিক আলাপচারিতায় উঠে এসেছে কবির অন্তর বাহির ... আমরা মন্ত্রমুগ্ধ শুনেছি তার বীণ ... ভেবে গেছি প্রকৃত বৈদগ্ধ্য মানুষ কে আকাশ করে , রূপ সাগরে ডুব দিলাম তাই অরূপরতন আশা করে ... ভালোবাসি তোমাকে , কচি ... তুমি এমনি প্রিয় হয়ে থেক অন্তরে আমাদের ... শুভেচ্ছা ‘আত্মার সান্নিধ্যের’ পক্ষ থেকে ...   


‘কচি রেজা ‘ বলেই প্রথম চিনেছি তোমায়। তুমি এখন লিখছ ‘নীরজা কামাল’ নামে । এই নামান্তরের কারণ কি ? 

নামের ব্যাপারে জানতে চাইছ ? নাম নিয়ে আমার , আমাদের পরিবারে দুর্বলতা আছে। কোন নামের অর্থ  তো দরকার বটে আবার একটু শ্রুতিমধুর হওয়াও চাই । আর  আমার দাদু  কারু  রাখা নামে  ডাকবেন না । নিজেই বিশেষ ( মাঝে মাঝে আজগুবি ) নাম রাখবেন এবং ডাকবেন । দেখো, আমার বড় বোনে'র নাম রুচি। আমি পরের জন ,  স্বাভাবিকভাবেই হয়ে গেলাম কচি । এটা ডাকনাম । জান তো স্কুলের জন্য একটা বড়ো নাম রাখতেই হয় । সেই নামটা ই নীরজা । দাদুর দেয়া নামটাও বলি , তুফান। তাইলে ভাবো । কি অদ্ভুত নাম ।

‘যতটা বেজে উঠি / সব-বলে যায় সাক্ষাৎকার’ ... তোমারই কবিতার থেকে তুলে আনলাম । তা তুমি কতোটা নিজেকে ‘বাজাবে’ থুরি বলবে আমাদের এই মুখোমুখি কথাকালে ? কতোটা আন্তরিক যেতে পারি বল তোমার সীমানায় ?  

 সাক্ষাৎকারে ও যদি না কুলায় কবিতা তো রইলোই । জীবনের যৎযাবতীয় বাঁকা সোজা যাপন বিবৃতির চেস্টা তো করেই যাচ্ছি ।  কিছু না বলা রয়ে গেলেও জেনো, আমি শতভাগ আন্তরিক থাকব ।

তোমার জন্ম তো বাংলাদেশের গোপালগঞ্জে। তোমার পড়াশুনো , বেড়ে ওঠা গোটাটা জুড়েই কি কেবল বাংলাদেশ ? তুমি তো লেখায় দেখি পুরো গ্লোবাল টাইপ !  একটু বল কচি তোমার পারিবারিক পরিমণ্ডল সম্পর্কে। তোমার মা বাবা বা অন্যকারও কতোটা হাত আছে তোমার কবি হয়ে ওঠায় ? সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য কিছু কি ছিল তোমার বাবা বা মায়ের বাড়ির দিকে ? 

ছোটোবেলা থেকে বাইরে। তাই  পড়াশোনা স্বাভাবিক ভাবেই বাইরেই ।  শুরুটা যদিও ছিল নিজ দেশেই। বাড়িতে তুমুল সব সাংস্কৃতিক ব্যাপার ছিল। আবৃতি , নাচ, গান, নাটক এইসবের কেন্দ্রই ছিল আমাদের বাড়ি। বাবা ২য় বিশ্ব যুদ্ধের সময়... আমার মা তখন নোতুন বৌ , মাকে নিয়ে অনিচ্ছায় কোলকাতা ছাড়েন ।  গোপালগঞ্জ ছোট্ট শহর । কিন্তু বাবা ওখানেই নাটক, কবিতা, পত্রিকা এইসব করতেন। প্রায় দিন স্কুল থেকে  বাড়ি এসে দেখতে পেতাম, ৭/৮ জন ছেলে মেয়ে অভিনয়ের মহড়া দিচ্ছে না হয় আবৃতি শিখছে বাবার কাছে । কাকুরাও অভিনয় করতেন। বাবা কবিতা'ও লিখতেন আর পাশাপাশি আমাদের লেখার জন্য খুব উৎসাহ দিতেন। জগতে বাড়ি গাড়ি সম্পদ যেন কিছু নেই । আছে কেবল গান-অভিনয়-লেখালিখি। মা'ও সায় দিতেন। এটাই শেষ নয় অথবা এভাবেই শেষ হলে হয়ত কি হতো জানিনা। কিন্তু হয়নি। তবে আমি কিছুই হতে চাইনি। জীবনে আবৃতি করেছি বাবা প্রচুর উপঢৌকনের লোভ দেখাত বলে । আমার ভালোবাসা বই পড়ার প্রতি । 

‘নীরজার চিঠি’ তে কি তুমি আত্মজীবনী লিখছ ? কবির জীবন কতোটা ‘রিয়াল’ , কতটা কবিতা ?


নীরজার চিঠি আসলেই কিছু স্মৃতিচারন । সত্যি-মিথ্যে কিছু নেই। যা মনে আছে তাই লিখেছি।


‘ জন্ম, হায় কে চায় জন্ম! রোজ এই দিনযাপন, হরিদ্রাভ সন্ধ্যাপান আর যন্ত্রণা চুষে ঘুমের বুক থুবড়ে থাকা ‘ – এমন করে কেন বল কচি ? কিসের বিষণ্ণতা তোমার কবিতা জুড়ে ? একি মরবিড ফ্যান্টাসি ? নাকি , শুধুই কথার কথা ? 

জীবন কি ফ্যান্টাসি বলো? যদিও এই  ঐশ্বর্য , এই প্রবল প্রখর জীবনের আয়ূ মাত্র কটা বছর। শক্তি কমে যায় , রোগ-শোক নিজের এবং অন্যের আনন্দ কি খানিক ম্লান করে দেয়না জীবন? যতই সলতে চিপে তেল বের করে জ্বলে উঠি অথবা উঠতে প্রয়াস করি , কারু প্রতিবন্ধি শিশু আছে , ধরো , বলতে পারো---তার সীমাহীন কস্ট ? নিজের জীবন আর বেঁচে থাকা আসলেই ফ্যান্টাসি মনে হয়। দুঃখের আয়ূ যতক্ষন-ই হোক কি তীব্র কি কাঁটাময় ।

‘ শীতকাল এলে আমার ও নীরজার আমাদের লাল কোট কীভাবে যেন রঙের বিষয়টা ও এক, কাঠের বাড়ির কথা মাঝে মাঝে মনে পড়লে কেউ একজন আমরা হয়ে যাই দুরন্ত ফ্রক, তারপর সিঁড়ি দিয়ে ধুপ ধাপ উড়ে উড়ে নামে এক খয়েরি কিশোরী,’... শুধু শীতকাল কেন কচি ? নীরজা কি আলাদা স্বত্বা হয়ে বিরাজ করে অন্যসময় ? কোথায় এদের যুগলবন্দী ? কোথায় এরা ‘অন্য’? 

নীরজা এবং কচি এক আবার এক নয় । বলতো, সকাল বেলার যে আমি রোজ পাখিকে নিজের হাতে পাউরুটি খাওয়াই সেই আমি ,একটু একটু বেলা যখন চড়ছে , বদলে কি যাইনা? যাচ্ছিনা? সব সময় তো প্রতিমা সেজে থাকা সম্ভব নয়। সম্ভব নয় , আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা। সব প্রসাধন ধুয়ে যাবার পর খড়ের কঙ্কাল'টাই সত্য। অর্থ্যাৎ কংকাল ও মিথ্যে নয়। আমি খড় । আমি মাটি। এসবের উপরে আমি আমার রাগ ক্রোধ হিংসা হতাশাকে রঙ দিয়ে রঙিন করি যখন অচেনা একটু লাগে বৈকি । এইটুকু দরকার । পশুর সাথে এইটুকুই পার্থক্য যে মানুষ মুখোশ পরে । আমি অবিশ্বাস বেড়ালের নূপুরের প্রথম কবিতার প্রথম লাইন এইভাবে  লিখেছি, ‘ এইযে মুখ একিন্তু আমার নয়—“ কিন্তু আসলে কি তাই? ঘায়ের পচা চামড়া যা ফেলে দেই সেও আমার , যা প্রসাধিত করি সেও আমি , আমার। তাই নীরজা আর কচি এক-ই।

‘প্রেমে নয় ছলনায় চিনেছি পাথর / পুত্র অথবা প্রেমিক কারো অধীন নই, স্বার্থপর প্রশংসার ফাঁদে দেবী ও নই / অ্যাংলো স্যাক্সন জাদুমন্ত্রে আমাকে বলা হয়েছে 'তুমি ধরিত্রী হও আলিংগনে উর্বর-- / অথচ কোনো বিবাহ ই মানি না আমি,’ লিখেছ তুমি ... তোমাকে কি তথাকথিত ‘ফেমিনিসট’ বলব কচি ? তসলিমা নাসরিন সম্পর্কে তোমার ভাবনা কি ?

প্রথমে মাপ চেয়েছি এই বলে যে , কি জানি নিজের কাছে মনে হয় আমার অর্ধ পরিক্রমাও এখনও শেষ হয়নি। সাক্ষাৎকারে আসলে বলার কিছু নেই অথবা ঢের এত আছে যা না বলা'ই থাক না । আর এই কবিতা আমি লিখেছিলাম নিউ ইয়র্ক যখন । ভুলেও গেছিলাম। যদিও উভয় বাংলার ৫ কবির কবিতা নিয়ে প্রকাশিত বই , নাকছাবির ইতিকথায় প্রকাশিত হয়েছে । প্রায় ২৩/২৪ টি প্রশ্ন আমার প্রতি উৎক্ষিপ্ত ---
উত্তরে এমন আবোল-তাবোল কথা মনে আসছে যেন বলি , কবিতা এবং কবিতা এবং কবিতা হওয়ানোর প্রচেস্টা ছাড়া আমার কোনো উদ্দেশ্য নেই । থাকে না। পুরুষ কেন বৃক্ষের বিরুদ্ধেও আমার কোন নালিশ নেই। আমি কাউকে কিছুকে প্রতিপক্ষ ভাবতে পারিনা। ভালো কবিতা লিখতে চাই ? হায় তাও কি পারি---আমি শুধু ভাবতে ভালোবাসি । আহা , কত ভাবনা আমার ----

‘ বিজিতা, বিজিতা বলে ডাকতে ইচ্ছে করে আজ / বিজিতা শৈশবের নাম’... তোমার কবিতায় নাছোড় শৈশব , তোমার কবিতায় তোমার মা , বাবা , নানী , পরিবার ঘুরেফিরে ... এটা কেন ? তুমি কি কোথাও নসট্যালজিক বা ‘এস্কেপিস্ট’ , কচি ? পেছন পানে এত পক্ষপাতিত্ব কেন ?

বিজিতা যে খুব উন্নত মানের লেখা , তা আমি মনে করিনা। সাধারন ভাবে এটি মেয়েদের প্রতি মায়ের সতর্কতার কথা। কিছু কবিতা  খুব্'ই সাধারন মনে হয় আমার ।

‘আমি কেন তোর প্রথম নেশা নই / কেন আব-হাওয়া সংবাদের মত ঘোষনা দিস নি বেতারে’ অথবা ‘অর্ধেক ভালোবেসেছি বলে তোমাকে পাওয়া হলো না / অর্ধেক ভালোবাসি নি বলে তোমাকে পাওয়া হলো না ‘ , তোমার কবিতা মানেই দুরন্ত প্রেম , কি অপার প্রেমিক তুমি ... আছে নাকি এমন কোন না পাওয়া প্রেম যার জন্য এমন কবিতা লেখ ?

প্রেম ছাড়া কিছু হয়? আমি কেন তোর প্রথম নেশা নই –হা হা হা হা । এটি নিউ ইয়র্কে লেখা । মাদাম বোভিয়ার পড়ছিলাম কদিন তারি একটা বহির্প্রকাশ , হয়ত।

‘একদিনও আমি তোমাকে না দেখে থাকতে পারি না একটি বেলাও / তবু এই শীতে পরিযায়ী পাখি হয়ে উড়ে যেতে চাই না / কোনো শীতকালেই আমি যাব না তোমার কাছে / ভালবেসে স্বস্তি হারিয়ে গেছে পৃথিবী থেকে, আমারও সংস্রব নেই / চোখের সংগে , পাঁজরের হাড় খুলতে কীরকম কষ্ট তবু আমি / এক এক করে তা খুলেছি,’ ... এত কেন কষ্ট লেখ ? তোমার লেখা পড়ি , আয়না হয়ে যায় তারা , আমাদের অনেকের না বলতে পারা কথা সব বলে দাও তুমি ... এসব কবিতার ভাষা , গঠনগত সারল্য আর তোমার ইমেজারি , সাররিয়ালিজম সমৃদ্ধ কবিতার টেকসচার এর ভিন্নতা কি দু ধরণের পাঠককেই কাছে টানার জন্য সচেতন ভাবে করা ? নাকি এটা তোমার বিবর্তন ? ‘ আমিযে এখন মুক্তি চাই কবিতা-অসুখ থেকে / ঘোর লাগা চোখে , বুকের আগুনে ,ঘুরে ঘুরে মরি একা ‘ ... সত্যি কচি ? এক পলও বাঁচবে তুমি কবিতা ছাড়া ? কিসের জন্য এ শ্মশানবৈরাগ্য ? 

কাব্য ভাষার কথা বলছ? একদিনে হয়নি । অনেক শত শত লেখা লিখেছি  নিজের চিৎকার নিজে দিতে চেয়ে । একটা কিছু যদি হয়ে যায় সে বহু পরিশ্রমে । তাকে কি সাধনা বলবে? না গো, এ যে আমার আনন্দ-যাত্রা । কবিতা লেখার উল্লাস স্বপনেও  দেখি আর শুরু হয় আমার মানব যাত্রা । আমি উড়ে উড়ে উড়ে পাখিকে হারিয়ে দিই । আমি ঈশ্বরী হয়ে উঠি আমারি । কারণ কবিতা দৈব কিছু নয়। একে বানাতে হয় । বই পড়া ছাড়া আমার কোনো শখ নেই । এমন কি আমি খেতেও ভালোবাসিনা। যদিও কিছু প্রিয় খাবার আমার পছন্দের ।

‘পায়ে নয়, পায়ে বড্ড ধুলো, বড়ো হাঁটাহাঁটি পায়ের / প্রণাম করো যদি, এই নাও হাত ‘ ... কি অদ্ভুত বিনয় দেখি আমি তোমার যাপনে ! কি সরল কাছে আসা , কি তুমুল প্রত্যয় তোমায় নিয়ে আসে মাটির এমন কাছাকাছি ... একি তোমারই অন্তর্গত মৌলিকতা নাকি পরিশীলিত হয়ে ওঠা অন্য প্রেরণায় ? 

 আমি তো তীব্র ভাবে নত এই জগতের কাছে। এমন মানব জনম পেয়েছি কি  অহংকারী হওয়ার জন্য?


‘আমার জন্মগ্রহণ কখনও শেষ হয় না তাই জন্ম নয় , মৃত্যুর তারিখ আমি দিয়ে যাবো ' ... আমরা প্রত্যেকেই এক জন্মে অনেক জন্ম বাঁচি ... তুমি কি জন্মান্তরবাদে বিশ্বাস কর ? ফের জন্ম নিতে পেলে , আবার কি আমাদের ‘কচি’ হবে , নাকি অন্য কিছু ?

চিতায় কি সব শেষ ? মাটি হবো । সার হবো । বীজ হবো। গাছ হবো, জানি । মানুষ হতেও পারি । এইসব বিষয় আসলে কল্পনা বিলাস । প্রিয়জন  অথবা নিজের প্রিয় শরীরের কেউ চিরবিনাশ দেখতে চায়না। তাই আবার আসিব ফিরে । নাহ।  ফেরার কোনো-ই চান্স নেই।

‘কাস্তে-হাতুড়ির স্লোগান তুলে স্বাপ্নিক মানুষ যারা / অন্ধকারে চলে গেছে সব, সান্ত্বনার অলীক সেই দেশপ্রেমিক / স্লোগান তুলে কারা যেন প্রতিদিন কপাট নাড়ায়, আমি তবু / ষোলোবার ভেটো দিয়ে প্রতিবাদ জানাবো জাতিসঙ্ঘে।‘... কোন রাজনৈতিক মতবাদের প্রতি বিশ্বস্ততা আছে ? শাহবাগ আন্দোলন নিয়ে তোমার কি অবস্থান ? কবিতা আর রাজনীতি কি সমান্তরাল চলা উচিৎ ? নাকি কবিও রাজনীতি সচেতন সামাজিক জীব বলে ভাব ?  

 শাহবাগ আন্দোলনে প্রথম দিকে গিয়েছি । পরে তো কি সব হলো । আর আমি অলস মানুষ । আমি জেনেছি , ওইসব সক্রিয় রাজনীতি আমি পারব না। বিশ্বাস নয় , ভালোবাসা আছে। শিশুদের প্রতি । 

প্রখ্যাত কবি ও সাহিত্যিক বারীন ঘোষাল তোমার কবিতার পর্যালোচনা করতে গিয়ে যেমন প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন , তেমনি নবীন যুবা উঠতি কবি ও সমালোচক অত্রি ভট্টাচার্য তোমার কবিতার গুণমুগ্ধ ... কি করে মেলালে কচি দুই প্রজন্মের দুই ধারাকে ? কবিতার কোন সে বিশেষ উপাদান যা ইউনিভার্সাল ?

বারীণ দাদা আর অত্রি? দুজনে  আমার কবিতা ভালোবাসে ? গ্রুপে যারা অত্রির বকা বেশি খেয়েছে লেখা নিয়ে তার ভিতরে আমি অন্যতম। তবে হ্যা , কবিতার প্রতি , নিজের বিশেষ শব্দবন্ধ , গড়নের প্রতি আসক্তি আমি অত্রির জন্য কাটিয়ে উঠতে পেরেছি। তাতে উপকার-ই হয়েছে। আর বারীণ দাদা, ওই যে যৌথ কবিতার বই যেখানে নন্দিতার , শর্মিষ্ঠার , রত্নাদ্বিপের , মেঘ অদিতির আর আমার কিছু কবিতা নিয়ে  কোলকাতা থেকে প্রকাশিত বই –নাকছাবির ইতিকথা বের হল , ওই বই বারীণ দাদা পড়েছেন । একটা আলোচনাও লিখেছেন । হ্যা তাতে উনি দূর্লভ প্রশংসা করেছেন –এটা ঠিক । দাদাকে আমার কৃতজ্ঞতা ও প্রণাম। অত্রিকে ভালোবাসা।

এখনও অবধি তোমার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা কত? কবিতার বাইরে গদ্য ভাবনা আছে কি ভবিষ্যতের ? ভারতে কোথায় পাওয়া যায় তোমার বই? এ দেশেও তো তোমার ফ্যান ফলোয়িং ব্যাপক ...

বই তো অনেকগুলো । আমি নিজে দুটি মাত্র বইকে স্বীকৃতি দিই। অবিশ্বাস বেড়ালের নূপুর  আর মমি ও কাচের গুঞ্জন । এই বইদুটিতে কিছু কবিতা আছে আর গুলো বলার মত নয়। নিজের লেখাকে আমি বিচার করি আর শাস্তি দিই । এব্যাপারে মোহ কাজ করেনা। তাই বেশ কতগুলি প্রকাশিত থাকলেও আমি মাত্র ২টি বইকে স্বীকৃতি দেই। ১নং অবিশ্বাস বেড়ালের নূপুর ২ নং মমিও কাচের গুঞ্জন । গদ্য ? ২টি ছোট গল্পের বই আছে । ওই মুখো আর হবো না—

জীবনের অনেকটা সময় ধরে প্রবাসী । কবিতায় তাও বেশীরভাগ সময়ই সজল বাংলা । একি শেকড়ের টান ? নাকি ‘ফাস্ট লাইফে’ অনাসক্তি ?  তুমি তো প্যারিস চললে । বেড়াতে ? কাজে ? নাকি সংস্কৃতির প্রাণস্পন্দন অনুভবের তৃষ্ণায় ? । এত এত পড়াশুনো কর । এত এত ঘুরে বেড়াও । এই যে সাধিকা বৈরাগী জীবন । কিসের জন্য ? নেশা ? নাকি অস্থিরতা ?

বাইরে আসলে ঘুরতে চাইনা । আমি খুব'ই আজিব । নিজের ঘর নিজের শহর আর তার লোকজন আর সেই শহরের উপরে যে আকাশ আর সেই আকাশের মেঘ বৃষ্টি আমার মন জুড়ায়।  বাইরে বাইরে থেকেছি সম্পুর্ণ পারিবারিক কারনে। প্যারিসে ভাই থাকে তাই যেতে চেয়েছি । আর এভাবে বলা যায় জার্মানি , সিডনি, লন্ডন এইসব জায়গায় আত্মীয় স্বজন আছে বলেই যাওয়া । আমেরিকায় অর্ধেক আত্মীয় । সেখানেও তাই থাকতে হয়।

সম্প্রতি গণমাধ্যমে সমসাময়িক পঞ্চাশজন জনপ্রিয় কবির তালিকা নিয়ে ভোটাভুটি হয়েছিল।তাতে তোমার নাম ছিল। এ জাতীয় ভোটাভুটিকে তুমি কতটা গুরুত্ব দাও? কেমন লেগেছে তালিকায় স্থান পেয়ে ?

 গন মাধ্যমের কবি নির্বাচনে  আছি বলে ভালো না লাগার কিছু নেই । এই স্বীকৃতি তো আরো সযত্ন হবার সতর্ক সংকেত ।

‘কেন আমি নিঃস্ব মানুষ তোমাকে বুঝাতে চাই / কেন আমার হাত রাখার জন্য একটি হাত , ব্যথা ভোলার জন্য স্পর্শ দরকার / তোমাকে বুঝাতে চাই, বুঝিয়ে দেয়ার আগে আমি অপেক্ষা করি / শাড়ির রং বদলাবার’... পাওয়া যায় কচি তেমন হাত ? শুধু কবিতায় ডাক দিলে ? তোমার রোম্যান্টিক ‘তুমি’ কে কিভাবে মোটিভেট কর সংযত কবিতায় ? কতটা উদার সমাজ এবং সংসার তার স্বীকৃতিতে ?

বাব্বাহ । তোমার প্রশ্নের উত্তরে জীবন কাহিনি লেখা হয়ে গেল তো? এত সুন্দর প্রশ্নের আমি যথাযথ উত্তর কি করতে পেরেছি? প্রতিটি লাইনের ভিতর পড়ে নিও । ভালোবাসা । অনেক ধন্য হলাম । চমৎকার প্রশ্ন ছিল ।

তোমাকেও আভূমি কৃতজ্ঞতা , ধন্যবাদ তোমার দামী সময়ের এতটা আমাদের দেবার জন্য । ভালো থেকো , ভালো লিখে চলো বন্ধু , আমাদের জন্য , শুধু আমাদের জন্য ।  


শর্মিষ্ঠা ঘোষ
নীরজা কামাল
পরিচিতি
পরিচিতি
নীরজা কামাল নীরজা কামাল Reviewed by Pd on নভেম্বর ২১, ২০১৪ Rating: 5

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সুচিন্তিত মতামত দিন

Blogger দ্বারা পরিচালিত.