জুয়েল মাজহার

পরিচিতি









চাঁদে পাওয়া গাধা ও উজবুক



একটি নৌকায়           যেকোনো সন্ধ্যায়
সবার অগোচরে         সুদূরে যেতে চাই
অথচ নদী নেই        দখলি জল ঘিরে
উঠেছে বাবেলের        হর্ম্যমিনার;

নৌকা? সে-ও নেই;        আকাশগঙ্গায়
থুবড়ে পড়ে আছে            চন্দ্র সদাগর

তোমাকে ধরা যেতো         একটি শব্দে
সান্দ্র মেঘস্বরে          তোমাকে বলা যেতো
লম্বা মেহগনি            গাছের শীর্ষে
তোমাকে বসিয়ে          দিলেই উড়তে

ক্লান্ত পরিযায়ী

পাখিরা আসতো
লম্বা লেজঝোলা
আসতো দলে দলে;


শিশুর মতো তারা
নিতো কি বিশ্রাম
তোমার কুচযুগে
নিবিড় আশ্রয়ে?

শব্দ নেই তাই          তুমিও নেই আর
সাঁতরে চলে গেছ         অধরা পিচ্ছিল;
অনেক জলসিঁড়ি        অনেক ঘুরপথ
স্নান ও সাঁতারের        অনেক কৌশল
রপ্ত করে তবু          বনেছি উজবুক;

ঘুরছি দিশেহারা        চাঁদের রাস্তায়
বক্র ঘেরাটোপে       একাকী মিনোতার;
- সস্তা হোটেলের       করুণ খদ্দের

চাঁদ সে দূরে বসে
দিচ্ছে টিটকারি
করছে পরিহাস
তরল ঠাট্টা;

চাঁদের নিচে আর
আকাশগঙ্গায়
জাহাজ ভাসাবার
আঁটছি ফন্দি;

- আপাদমস্তক আদার ব্যাপারী

কিছুই হবে না         বকছি নিজেকে
খিস্তিখেউড়ে         তুবড়ি ছুটিয়ে
কানের পর্দায়         শরম লাগছে
[গরম লাগছে         কানের পর্দায়]
গাধার কান যেন        টানছি প্রাণপণ!

স্বপ্নে উপহার         পেয়েছি গাধাটিরে
নিজের মুকুরেই        পেয়েছি একে আমি
চড়বো এর পিঠে         মওকা মোক্ষম;

বলবো চলো ভাই,         এখানে আর নয়
আমায় করো আজ        তোমার সওয়ারি;
চলো হে, চলো ভাই        যে-তুমি তৃণভোজী
দ্যুলোক ত্রিলোকের        অমর ভারবাহী;

চলো হে, চলো ভাই
সেখানে যাই চলো
যেখানে মাঠে মাঠে
মেঘের গোরু চরে;
বাতাসে মাথা নাড়ে


শষ্প, ফুল

তৃণের গালিচা         সেখানে প্রসারিত
ঘাসের উৎসব          সেখানে অবারিত
সেখানে গিয়ে তুমি       চরবে দিলখোশ
দুলিয়ে শিশ্ন          পেণ্ডুলাম;

শর্ত একটাই!
শিশুর মতো এই
     অবুঝ শিশ্নকে
          পাড়াতে হবে ঘুম;
                রাখতে হবে একে
                     ত্বকের খাপে ভরে


[ও বড়ো বেয়াড়া ,অনেক আব্দার!]

চলো হে, চলো ভাই
অনেক পথ বাকি
চড়াই উৎরাই
খানা ও খন্দ

অতল গহ্বর
লম্বা পথ বাকি;

চলো হে, চলো ভাই
ভোরের আগে চলো;
প্রচুর ভাঁটফুল
সেখানে ফুটে আছে
হ্রদের পাড়ে গাছ
ঝাঁকড়া উন্নত
জলের আয়নায়
মীনেরা কেলিরত
মণি ও মরকতে
পরিরা হাই তোলে
কোমল শয্যায়
পরির মনভার
- রাতের জঙ্গলে মোরগ ডাকছে;

গাজর শালগম
সাজানো থরে থরে
ভরেছে কান্তার
ভরেছে মাঠঘাট
মটরশুঁটি আর
সবুজ গুল্মে;

সেখানে পৌঁছে
তোমার দিলখোশ!
তোমাকে  ডাকছে

নবীন দুর্বার
আগামী মহাভোজ
আকাশ, রামধনু
তোমাকে ডাকছে
- একটু পা চালাও।

ক্লান্তি যদি পায়
গাঁজলা ঝরিয়ে
একটু থামো আর
জিরিয়ে নাও এই

কল্পহ্রদপাড়ে;
জিরিয়ে নাও আর
জিরনো হলে শেষ
আবার পা চালাও
- জিরোবে আর কতো?

কিন্তু এ কী তুমি হঠাৎ মরীচিকা!
আমায় একা ফেলে
কোথায় কই গেলে
- স্বপ্নসম্ভব চতুষ্পদ?

রাতের শ্রোণিতলে তোমায় নিলো টেনে
শ্বাপদ-পিশাচের নিবিড় অশনি?

এ-গিরিসঙ্কটে আমার কেউ নেই!
আমার চারপাশে ছায়ার দৈত্যেরা
হাঁ-মুখ জতুগৃহ। হাঁ-মুখ আজদাহা
খুন্তি হাতে ওই ভল্ল তাক করে
মিত্ররূপে আজ আসছে দুশমন;
- আসছে কিরাতেরা উঁচিয়ে বাঁকনল

আমাকে ঘিরে আজ আগুন গ্লেসিয়ার
ভল্ল পাশুপত ছায়ার অশরীরী
পত্রমোচী গাছ ঝরায় ভয়পাতা
প্রলয় মেঘজালে আমায় ঢেকে দিতে
দৈত্য দুরাচার দিচ্ছে হুঙ্কার;

আমার ঘাড়ে আজ গরুড়-নিশ্বাস
প্রেতের পাখসাটে উড়ছে রাত্রি;

কাঁপছে থরো থরো আকাশে শামাদান
রাত্রি-রৌরবে আমার বলিদান!
আমায় ঘিরে আজ মুখোশবন্ধুরা
তাদের উপহার ভ্রামরী মিত্রতা


সৌর মাকড়ের

  ধর্ষকামী জাল
         হচ্ছে প্রসারিত
              আমার চারপাশে

আমায় ঘিরে আজ
     ঘুরছে অবিরাম
            ঘুরছে পিপাসায়
  পর্নো ডাইনিরা;

ঈষৎ পিঙ্গল
তাদের কুচযুগ
তাদের জঘনের
তীব্র আলোড়নে
কাঁপছে কৈলাস
চূড়ায় মহামুনি

আমার বন্ধুরা চেয়েছে বলিদান
আমার স্বজনেরা আমার লোহু চায়
অশ্বমেধ আর স্বপ্নমেধ চায়
রাতের টেবিলে আমাকে চায় তারা
সোমের গেলাসে আমাকে ভরে নিয়ে
চেয়েছে চেখে নিতে আমারই রক্ত

কম্বুগ্রীবা নেড়ে তাহারা হাসছে
এনেছে ক্রুশ আর খড়্গ হাড়িকাঠ
আমার বলিদানে নড়ছে কপিকল!
কার্পেথিয়া থেকে আসছে ড্রাকুলাও

হে মাতঃ বঙ্গ তাপিত অঙ্গ
বক্ষে তব আজ দাসেরে ঠাঁই দাও
স্বপ্নপরাহত এ-মহাপাতকীরে
তোমার নিদালির দাও হে, পরশন
দুঃখতাপহরা তোমার পয়োধরে
শান্ত করো আর করো হে, মশগুল

ফিরিয়ে নাও মোরে
       এ-হেন কীটাণুরে

              তোমার জরায়ুর
                           
অশেষ নির্ঝরে






জুয়েল মাজহার জুয়েল মাজহার Reviewed by Pd on নভেম্বর ২১, ২০১৪ Rating: 5

কোন মন্তব্য নেই:

সুচিন্তিত মতামত দিন

banner image
Blogger দ্বারা পরিচালিত.