কুন্তল কুণ্ডু



একটা বর্ষার দিন। সারাদিন ধরে অবিশ্রান্ত বৃষ্টি। ঘরে বসে জানালার বাইরে চোখ। চোখের দৃষ্টি বহুদূর চলে যায়, শুধু জল আর জল। যেন মেতে উঠেছে প্রকৃতিকে ভেজানোর উচ্ছ্বাসে। কানে আসে জলের শব্দ। পাতা ধোয়া জল। ছাদের জল ওপর থেকে নিচে পড়লে একটা শব্দ তৈরি হয়। খুব সুন্দর লাগে। একমনে শুনি সেই শব্দ। 

চোখ লেগে আসে। এক অদ্ভুত আমেজ। জল তরঙ্গ মনকে করে আচ্ছন্ন। এই ছন্দ উপেক্ষণীয় নয়। তবু ঘুম পায়। জলের কণা মেশানো হাওয়া বাইরে থেকে ঘরে ঢোকে। জানালার পাশে থাকলে টের পাই। হাওয়া গায়ে লাগলে অনুভূতিরা জেগে ওঠে। ঘর থেকে বেরনোর ডাক দেয় বৃষ্টি। 

জানালা গুলো যেন ঘরের সাথে বাইরের সেতু। ওরাই জানিয়ে দেয়, এবার সময় বাইরে আসার। দরজা স্বাগত জানায়! কালো আকাশ হাতছানি দেয়। দিনের আলো চুরি করেছে জল ভরা মেঘ। সন্ধ্যা নেমে আসে তাড়াতাড়ি। আকাশে চোখ রাখলে দেখি বায়স কুলের ঘরে ফেরার ব্যস্ততা। সে যার মতো ঘরে ফেরে। মেঘের গর্জন ওদের ফেরার গতি বাড়িয়ে দেয়। দিনের আলো কমে আসার আগে দেখি, চারদিক স্বপ্নসুন্দর। রাস্তায় মাঠে জল জমেছে। শহরের জল নিকাশি ব্যবস্থা প্রকৃতির কাছে হার মেনেছে। সেই জমা জলে ছোটরা তুমুল দাপাদাপি করছে। ছোটবেলার কথা মনে পড়ে। 

বৃষ্টির বেগ একটু কমে এলেই দেখি অন্ধকার নেমে আসার সেই বিপদজনক মুহূর্তে ছাদে উড়ে এসেছে কয়েকটা পাখি। চোখে মুখে পায়ে তুমুল ব্যস্ততা। চোখ দেখে বুঝি খিদে পেয়েছে। খাবারের খোঁজে শেষ বেলায় এটা ওদের একটা মরিয়া অথচ নিশ্চিত প্রচেষ্টা। দুটো মুড়ি ছিটিয়ে দিই। 

সন্ধ্যে নেমে আসে। তখনো  জলের ফোঁটা পড়ার শব্দ। সময় পেরিয়ে যাওয়ার শব্দ। সময়টাকে ধরতে চাই। তাই হাতে তুলে নিতে হয় কলম। খাতাবন্দী করি এই বৃষ্টি ভেজা প্রহর। জানালার ধারে বসে তাকাই অন্ধকার বাইরের দিকে। আবার বৃষ্টি নামে, কলম এগিয়ে চলে।


পরিচিতি 

কুন্তল কুণ্ডু কুন্তল কুণ্ডু Reviewed by Pd on নভেম্বর ২১, ২০১৪ Rating: 5

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সুচিন্তিত মতামত দিন

Blogger দ্বারা পরিচালিত.