চিরশ্রী ব্যানার্জী



ঘুম ভেঙ্গে দেখলাম হলুদে কমলায় ঝকঝকে, সোনা রোদে ঝলমলে চারিপাশ। দিনটা ছিল রবিবার। শুরু থেকেই পুরো মনেই ছুটির মেজাজ। হঠাৎ হঠাৎ ইলশে গুঁড়ি বৃষ্টির মতো - ইচ্ছে হল আজ সারাদিনে দুজনে দুজনায় গায়ে মেখে নেবো রোদ, উপভোগ করব শঙ্খ সোনায় চুপিচুপি প্রকৃতির অনাবিল শোভা। সুইজারল্যান্ডের লাউসান থেকে বেড়িয়ে পড়লাম।  ট্রেনে করে পৌঁছে গেলাম স্তাদ।


স্তাদ অবস্থিত সুইজারল্যান্ড এর জার্মান অংশে। আল্পস পর্বত মালা দিয়ে ঘেরা এই ছোট্ট গ্রামটি কে দেখতে আসেন, ভালবাসতে আসেন বহু দেশ থেকে ভ্রমণ পিপাসু মানুষ। ভারতবর্ষের বলিউড সিনেমা যেমন, দিল ওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে, চাঁদনি, বাচনা এ হাসিনও ইত্যাদি সিনেমার শুটিং হয়েছে এখানে। সৈয়ফ আলি খান, কারিনা কাপুর, শাহরুখ খান, ছাড়াও হলিউড এর বহু তারকা’রা স্তাদে আসেন ছুটি কাটাতে। 



ট্রেন থেকে নেমেই দেখতে পাওয়া যায় একটি সুসজ্জিত পথ। ঠিক যেন কোন শিল্পির আঁকা ছবি। নানান বিলাস বহুল হোটেল, কফি শপ নানান ভাস্কর্য দিয়ে সাজানো পথে হাঁটতে হাঁটতে মনে হচ্ছিল সময়টা যেন আস্তে আস্তে হাঁটছে আমাদের সাথে আমাদেরই গতিতে। রেস্তোরাঁ গুলোর ভেতরে না বসে কেউ কেউ বাইরে বসে রোদে ভিজে সকাল এর জলখাবার খেতে খেতে মুগ্ধ হয়ে দূরের সবুজ পাহাড় এর দিকে নিস্পলক তাকিয়ে আছেন। আবার কেউ একান্ত কাছের মানুষটার হাত ধরে ... সঙ্গোপনে ভালোবাসার স্নাত মাধুরে ডুবে আছেন। 

অবিশ্বাস্য দৃশ্যস্নানে রবি ঠাকুরের একটি কবিতার কয়েকটি লাইন প্রকৃতির এই উজ্জ্বল শোভার সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে নিয়েছিল আমায়।  

“ তোমাতে আমাতে মিলিত নিবিড় একা, স্থির আনন্দ, মৌন মাধুরীধারা, 
মুগ্ধ প্রহর ভরিয়া তোমারে দেখা, তব করতল মোর করতলে হারা।”



প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সেই সাথে গুণী মানুষের অসামান্য সব সৃষ্টির সমাগমে এক অনন্য পরিবেশে বারে বারেই মুগ্ধ হয়েছিলাম, ঋদ্ধ হয়েছিলাম সার্বিক বোধে।  অনেকটা দূর হেঁটে যাওয়ার পর একটা জলের শব্দ শুনতে পেলাম। কোনও নদী কি বয়ে চলেছে আপন বেগে  নাকি কোন ঝরনা ?



জলের শব্দটি অনুসরণ করতে করতে খুঁজে পেলাম তার উৎস। এক কিশোরী ঝরনা। তারপর শুধু বিস্ময়ের পালা। চোখ জুড়ানো, মন হারানো এক অপরূপ দৃশ্য। এক সমুদ্র সবুজের হাতছানি। একটু দুরেই, দুহাত বাড়িয়ে পাহাড়টি দাড়িয়ে যেন অপেক্ষা করছে অনন্ত - আমার’ই জন্য। বার বার’ই মনে হল ওখানে গেলেই শুনতে পাবো জীবনের ডাক – হয়তো ওখান থেকেই শুরু হবে স্পন্দনের নতুন কোন বাঁক।

ছোট্ট গ্রামটি ছেড়ে রওনা হলাম পাহারের উদ্দেশ্যে।



হাল্কা রোদের নরম ছোঁয়ায় , সবুজের সমারাহ আর নীল দিগন্ত দেখতে দেখতে হেঁটে চলছি বেশ খানিকটা পথ। সব মুহূর্ত গুলো বন্দী করছি মনের মণিকোঠায়। কেননা সব সুন্দরের বর্ননা ভাষা কেন ধ্বনিতেও সামগ্রিক ভাবে মেলে ধরা খুব ই কঠিন।


এই অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন রকমের শ্যালে বা কাঠের তৈরি বাড়ি গুলি দেখবার মতো। হাঁটতে হাঁটতে অনেকবার মনে হয়েছিল কোন রূপকথা বই বা ম্যাগাজিনের ছবি দেখছি বুঝি। টুকরো টুকরো রোদের মিছিলে, শান্ত হিমেল হাওয়া বইয়ে দিচ্ছিল একটি নিরাবতা, একটি নিভৃত মুগ্ধময়তা, একটি শুধুই ভালোবাসার গন্ধ। আমাদের সাথে সাথে সময়ের সরণী,  আহ্লাদিত ধরণী’ ও পারি দিয়েছিল স্বপ্নিল ডানায় ...




অবশেষে পৌঁছলাম রোপোয়ের সন্নিকটে। 

এবারে নিজেকে যেন হারিয়ে দেবার পালা, পাহাড়ের শিখরে। শান্তি আর সম্পূর্ণ নীরবতা কে ছুঁয়ে দেখে ঠিক কেমন লেগেছিল আমার ? কিরকম ছিল পাহাড়ের চুড়ার সৌন্দর্য ?  একটু অপেক্ষা। সব জানাবো শব্দের মিছিলের আগামী সঙ্কলনে।  

  


লেখিকা পরিচিতি


চিরশ্রী ব্যানার্জী চিরশ্রী ব্যানার্জী Reviewed by Pd on অক্টোবর ২৩, ২০১৪ Rating: 5

৪টি মন্তব্য:

  1. Ami janina ki montobbo debo.. sudhu ei tukui bolbo.. tomar lekhay r chobite sotti aj ami hariye gechi oi chotto sobuj deshe.. pranhin mone tumi jano jibon dan kore gele ei sundor post ta upload kore.. mon chuye gelo..

    উত্তরমুছুন
  2. Apnar onobodyo lekhar style r tar sathe sathe eto sundor chhobi .....ohh jeno mone hochche ami oi chhotto sobuj gram a pouche gechi. Poroborti bornonar jonyo odhir agrohe opekhkha korchi.

    উত্তরমুছুন

সুচিন্তিত মতামত দিন

Blogger দ্বারা পরিচালিত.