কোথায় রেখেছি প্রেসক্রিপশনটা খুঁজে পাচ্ছিনা। আলমারিতেই তো থাকার কথা। সদ্য কেনা নতুন দামী ব্লাউজখানাও বেপাত্তা। শখের শাড়িটা এতদিন পড়েই ছিল মানানসই ব্লাউজের অভাবে। এই সেদিন কিনলাম। কতগুলো দোকান ঘুরে ঘুরে ঐ রংটা পাওয়া গেল। এত বেশি বাড়তি জামা কাপড়, কাগজপত্র যে জরুরি জিনিসটা হারিয়ে যায়।
সময়মতো প্রয়োজনীয় বস্তু না পেলে সোমনাথ খিটখিট করে আমার অগোছালো স্বভাবের জন্য। শুধু ও কেন, আমারই তো নিজের ওপর রাগ লাগে অপ্রয়োজনে হাবিজাবি কিনে ঘর বোঝাই করি, আর প্রয়োজনীয় বস্তু হারিয়ে ফেলি বলে। তার ওপর বিভিন্ন উপলক্ষে শাড়ি উপহারও পাই। একগাদা সিন্থেটিক শাড়ি পরা হয় না, এমনিই পড়ে আছে আলমারিতে। তোলা কাজের মহিলা বা রাঁধুনি দুজনের কেউই সিন্থেটিক পরবে না, সূতীর ছাপা শাড়ি চাই, গরম কম লাগে। বাসনওয়ালিরাও কৃত্রিম তন্তুজাত কাপড়ের বদলে সূতী কিংবা তাঁত খোঁজে। ডোরির ছোটবেলার বেশ কিছু ভালো জামা ও গরম জামা জমে রয়েছে যেগুলো রাঁধুনি আরতির নাতনির ছোট হবে। আবার সদ্য বাতিল করা জামাগুলো তার অনেকটাই বড়ো হবে বলে এখনই নিতে চাইছে না। আর তোলা কাজের অসীমার তো নাতি। আমার কয়েকটা পুরোনো সালোয়ার কামিজের রং চটেনি, কিন্তু কোথাও কোথাও সেলাই খুলে গেছে বা অল্প ফেঁসে গেছে। কয়েকটা আবার অক্ষত কিন্তু বিবর্ণ। আরতি অসীমার মেয়েদের জন্য প্রায়ই নিজের পোশাক দিয়ে দিই। কিন্তু এগুলো দিতে পারছি না; কারণ মানুষকে দিলে তো খুঁতো জিনিস দেওয়া যায় না, পুরোনো হলেও ভালো দেখেই দিতে হয়। নিজে অবশ্য সেলাই করে পরতেই পারি।
কিন্তু তার দরকার কী? বাজারে গেলে পোশাক-আশাক নকল গয়না থেকে পেয়ালা পিরিচ চিনামাটি বা কাচের বাসন – যা চোখে লেগে যায় কিনে ফেলি। তার ওপর গাদা গাদা বই খাতা। ফলে ছোট দুই শোবার ঘর বিশিষ্ট ফ্ল্যাটে তিল ধারণের জায়গা নেই। বরং তালগুলো তিলের মতো ফাঁক-ফোকর গলে কোথায় হারিয়ে যায়। দু’খানা আলমারিই খুললে গায়ের ওপর কাপড়-কানি ঝাঁপিয়ে পড়ে। কাজের মহিলাদের গুষ্টিশুদ্ধকে দিয়েও ফুরোনো যায় না। কয়েকটা অল্প ছিঁড়ে যাওয়া বিছানার চাদরও আছে জিনিসে ঠাসা দেওয়াল আলমারিতে। এতগুলো কাপড় চোপড় কারও কাজেও লাগছে না, অথচ ফেলে দিতেও মায়া লাগে। আবার পুজোর কেনাকাটার আগে আলমারিটা হাল্কা করাও জরুরি।
একটু গুছিয়ে থিতিয়ে টিভি দেখতে বসলাম। কদিন ধরেই খবরে দেখাচ্ছে রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতি কী ভয়াবহ। প্রতি বছর বর্ষার সময় প্রশাসনের টনক নড়ে, আগে থাকতে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা মাথায় থাকে না। চলভাষের আন্তর্জালক চালুই ছিল। একটা হোয়াটস্অ্যাপ গ্রুপে দেখলাম কোনও এক সংস্থা বন্যা পীড়িতদের সাহায্যার্থে পুরোনো পোশাক, শুকনো খাবার, ওষুধ, নগদ টাকা ইত্যাদি সংগ্রহ করছে। যোগাযোগের ফোন নম্বর দেওয়া আছে।
তড়াং করে লাফিয়ে উঠলাম। পেয়েছি। নম্বর দেখে ডায়াল করলাম। একটু পরেই স্টেশনের চার নম্বর টিকিট কাউন্টারে সমবেত হবে স্বেচ্ছাসেবী ও অনুদানকারীরা। একটা ছেঁড়া ধূলো ধূসরিত পেল্লায় ব্যাগ খাটের তলা থেকে বার করলাম। তারপর একে একে সব বাতিল পোশাক পরিচ্ছদ, পুরোনো ছাতা, সময়সীমা না পেরোনো অপ্রয়োজণীয় ওষুধ গোছাতে লাগলাম। ভাগ্যিস মাঝে মধ্যে এসব দুর্যোগ দুর্ভোগ হয়। তাই ত্রাণ দিয়ে আবর্জনা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।
শ্রীপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়
Reviewed by Pd
on
অক্টোবর ২৬, ২০১৭
Rating:
Reviewed by Pd
on
অক্টোবর ২৬, ২০১৭
Rating:

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
সুচিন্তিত মতামত দিন