মন্দিরা ঘোষ

 মন্দিরা  ঘোষ
 উৎসবের দিনগুলি 

১।

ফর্সা মুখে লাল সুর্যরং
কপালের টিপের ভেতর
ঘামে ভেজা এলোমেলো চুল
একটু দূরে লাউ মাচায়
তোমার হাতের যত্ন খুব
গনগনে কাঠের আঁচে
মাটি লেপা পেতলের হাঁড়িতে
ভাত ফুটছে টগ বগ

২।

তালাইয়ের মতন বুনন পরস্পরে
জড়িয়ে থাকার সুখ
শীতের রাতে উনুনের ধারে
গল্পের আসর বসত
পিঠেপুলি  সরুচাকলি
 গরম গরম ভেজা হাতে
আকাশ নামত তখন
আমাদের উঠোনে

৩।

অভাব গুলো মাড়িয়ে মাড়িয়ে
হাত ধরে থাকতাম
অনেকগুলো মুখ একসাথে
ছুঁয়ে যাওয়া সুখ দুঃখ ভাগ হোত
জ্যাঠা কাকার ভেদ ছিল না
বন্ধুবাবার কোল আর
পকেটভর্তি লজেন্স আমার
অধিকারে সবসম
বন্ধুবাবাকে মোস্তাকদা বলে
ডাকতেন বাবা

৪।

বিকেলগুলো ফুরফুরে বসন্তকাল
দাওয়ার ওপর হাসি গানের
সোনার বুনন
পথচলতি মানুষও থেমে যেত
পুরু লেন্সের চশমা লাঠি
আর চওড়া বুকের উদারতায়
আসর জমে উঠত

৫।

রাতের অন্ধকারে দূরের জঙ্গল
বারে বারে চোখ চলে যেত
রাজবাড়ির ছায়াকথার
ছমছমে দিন
অশ্বত্থের গায়ে হাজার জোনাকিচোখ
ঝিঁঝিঁ  পোকার ডাকে
পিছন ফেরা ভয় ছুঁয়ে থাকত
সারারাত

৬।

ইজিচেয়ারের সামনে ঢাউস রেডিও
সেদিন ভোরবেলা ঘুম ভাঙ্গত
সবাই দাদুর ঘরে জড়াজড়ি
বড়রা চায়ের চুমুকে আর
কচি ঘুমচোখে মহালয়া শুনতে শুনতে
ঘুমে ঢলে পড়া
পূজোর দিনগুলো ভেসে থাকত
শরতের সাদা মেঘের মত

৭।

অরণ্যের গভীর হাতছানি
ডাক দিত খুব
ভেসে থাকত জীবন পালকসুখে
কচি শালপাতায় সোনাপোকা
করমচা ফুলের সুগন্ধ আর
পিয়ালবনের নেশায় পথ হারানো
রূপকথা হয়ে ওঠা সব দিন
স্বাধীন বাতাস বইত দিনভোর
খোয়াইয়ের ঢালে খাড়াই উৎরাইয়ে
বয়ে যেত সময়

৮।

সেই লাল মাটির রস
কৃষ্ণচূড়ার ছায়াপাতা দুপুর
শিউলিতলার অন্ধকারে
শিবদালানের চেয়ে থাকা
ইতিহাসের জানলায় মুখ  বাড়ায়
পড়ে থাকা একটুকরো
পৈত্রিক জমির মত উত্তরাধিকারী
এক সময় সারণী...।




মন্দিরা ঘোষ  মন্দিরা  ঘোষ Reviewed by Pd on সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৭ Rating: 5

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সুচিন্তিত মতামত দিন

Blogger দ্বারা পরিচালিত.