ভুলে যাওয়া বাস স্টপ

“ আসলে আমি একজন লিফ্ট চালক
আজ সিঁড়ি বেয়ে উঠেছি ...।

প্রাত্যহিক সুবিধাগুলোতে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়া যখন একটা মুদ্রাদোষ ছাড়া আর কিছুই নয় তখন এই সিস্টেমকে নস্যাৎ করে দিল এই দুটো লাইন।কবি সৌম্যজিৎ আচার্য’র বই ‘ভুলে যাওয়া বাসস্টপ’ বইয়ের শুরুয়াৎ আমাদের চমকে দেয়।

আসলে জীবনে তো সবটুকুই পাওয়া।সে দুঃখই হোক বা আনন্দ অথবা আসঙ্গ। অবশ্যই আপেক্ষিক বা point of view ও বলা যেতে পারে। কথামুখের কবিতার লাইনদুটির আগের পাতায় কী লেখা আছে আসুন দেখি ---

“ধৃ তোকে , ...
বড়ো হয়ে গুনিস,ঠিক কতগুলো পাথর লেগেছিল আমাদের গায়ে ...।“–এ কথাতো আমি লিখতে পারিনি , কিন্তু কেন মনে হচ্ছে এ আমারই কথা ?কবিতা মনস্ক আর কবিতা নিমগ্ন এই শব্দদুটির মধ্যে সৌম্য কবিতা নিমগ্নতাকেই বেছে নিয়েছেন।হয়ত তাই অনেক সত্য দর্শনের অভিজ্ঞতা নিমেষেই আমাদের পরের পাতা উল্টে দেখতে বাধ্য করবে।

সৌম্য’র একটা কবিতা থেকে ২/৩ টে স্তবক সবার জন্য। কবিতার নাম ‘চুমু’ ‘একদিন চুমু খাবার ঠিক আগে এক মেয়ে আমাকে বলল,আমার বাবা তোমাকে মানবে না।যারা পার্টি করে না তাদেরকে ওঁর পছন্দ নয়।আমি বললাম,আজ তোমাকে ঠিক করতে হবে ,ও শরীরে তুমি কাকে হাত বোলাতে দেবে,লেলিন নাকি আমাকে? উত্তরে মেয়েটি চুল থেকে দুটো পালক বের করল।একটা আমাকে ধরতে বলে অন্যটা নিয়ে উড়ে গেল এশিয়া ছেড়ে ...’

কবির দায়বদ্ধতার সম্পর্কে এক অসাধারন ইঙ্গিত ! ১) বাবা ,২) পার্টি। ওরাই সিদ্ধান্ত নেবে কে কবি , কে কবি না। যেন বন্ডে সই করে একটা চুমুর পরিণতি স্বাধীনতাকেই বেছে নিলো।সঙ্গে নিয়ে গেল একটি পালক – এই দেশ ছেড়ে এই রাষ্ট্র ছেড়ে ,এমন কি এশিয়া ছেড়ে ---
এই কবিতারই আরেকটি স্তবকে যাই ---
‘একদিন চুমু খেতে খেতে আর এক মেয়ে আমাকে বলল, এমন একটা শহরে নিয়ে চলো, যেখানে রাস্তা আর প্ল্যাটফর্মের পাশে এত বিষণ্ণ কুকুর নেই... ঐ গণতন্ত্র আমার পছন্দ নয়। আমি বললাম পৃথিবীতে এমন রাস্তা কোথায়,যার বুকে রক্ত লেগে নেই? এমন ব্যক্তি কে, যার ছোটবেলা হারিয়ে যায়নি ? উত্তরে লকেট থেকে একটা নদী বের করল মেয়েটা। আমাকে দুটো ঢেউ ছুঁইয়ে নৌকা ছোটাল রাষ্ট্রপুঞ্জের দিকে ......’ একটা প্রায়-বিলুপ্ত শব্দ গণতন্ত্রের প্রতি কী অদ্ভুত শ্লেষ! ‘এ গণতন্ত্র আমার পছন্দ নয়’ ---!!!

ভুলে যাওয়া বাসস্টপে দাঁড়িয়ে যার ছোটবেলা হারিয়ে গেছে এবার তার উপার্জন দুটো ঢেউ ছোঁয়া লকেটমাত্র !  সৌম্য’র অন্য কবিতার বিশদে যাব না। শুধু কিছু শব্দের বিদ্যুৎ মুহূর্ত নিজের ভালোলাগার তাগিদেই রাখলাম –

১) তুমি কাঠি করা সত্ত্বেও, আমার চৈত্রমাস এল
২) জাতিকাটি পিপাসার্ত, জ্যোৎস্না ধোয়া ঠোঁট /  জাতিকা মকর রাশি, লগনে কর্কট
৩) যারা স্তন দেখলেই ব্যথাকে ভোলে আর স্মৃতিকে মোছে সার্ফ দিয়ে / তাদের জন্য দু-মিনিট নীরবতা পালন করুন
৪) বাথরুমও আসলে সমুদ্র গোনা শিখে গেলে ঢেউগুলো অগুনতি মনে হয়...


সংগ্রহে রাখার মত একটা বই, যা উপহার স্বরূপ পেয়েছি। কিছুদিন এতেই বুঁদ। কবিতার বই – ভুলে যাওয়া বাস স্টপ  / কবি – সৌম্যজিৎ আচার্য  / প্রকাশনা- প্রতিভাস  / প্রচ্ছদ – সুদীপ্ত দত্ত  / মূল্য – ১০০ টাকা


পাঠ প্রতিক্রিয়ায় -
 বিদিশা সরকার 
কলকাতা 




ভুলে যাওয়া বাস স্টপ  ভুলে যাওয়া বাস স্টপ Reviewed by Pd on জুন ৩০, ২০১৭ Rating: 5

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সুচিন্তিত মতামত দিন

Blogger দ্বারা পরিচালিত.