নিজের সাথে আমার নিজের ছিলো অনেক কথা, খুনসুটি, ঝগড়া, আবদার, মান, অভিমান।এতো কথার মধ্যেও আমি কিন্তু কোনোদিন কথা দিইনি গুছিয়ে সংসার, নিকানো উঠোন আর পরিপাটি আলনার অথবা, রান্নায় নিখুঁত টক-ঝাল-মিষ্টির মাপ।কিংবা নির্ভুল পুজোর আসন। এইসব আমার জন্য নয়। আমার জন্য খোলা মাঠ, চু কিতকিত, কিংবা মাঞ্জা দেওয়া ঘুড়ি।
বড় বেশী দামাল ছিলাম আমি। সারাদিন দস্যিপনায় ভরপুর। দাদু ডাকতেন,আদুরে বিড়াল। খেতে বসেই বলতেন বিড়াল কিন্তু আমার পাশে বসবে। আমিও লেজ গুটিয়ে দাদুর পাশে। দাদুর গল্পের ঝুলি থেকে গল্পেরা তখন টুপ করে চলে আসতো আমার ঝুলিতে।
মাঝেমধ্যে বিকেলে ছাদে যেতাম আর আমার প্রিয় পায়রাগুলো পায়ের কাছে এসে ভীড় করতো। দুহাতের মুঠো ভর্তি থাকতো ওদের জন্য খাবার। ওদের সাথে বকম বকম করতে গিয়ে কখন যে সন্ধ্যে হয়ে যেতো খেয়ালই করতাম না। তারপর ঠাম্মা উঠতেন হাতে চিরুনি নিয়ে ছাদে উঠেই বকুনি আমাকে। এই ভরসন্ধ্যে বেলায় চুল খুলে কেউ ছাদে ঘোরে! বেশ লম্বা চুল ছিলো আমার। ঠাম্মা বাঁধাতে গিয়ে হিমশিম খেতেন। আবার কখনো জানলার খড়খড়িতে লুকিয়ে থাকা চোখ। দুপুর বেলার এক্কাদোক্কার ছক। আমি তখন বড্ডো আলস। হাত ব্যাথা হবার ভয়ে চুল খোলাই রাখতাম।আমার তখন আলসেমিতেই সুখ।
আমি কিন্তু কোনোদিন কথা দিইনি শুধুমাত্র সুখের, প্রশ্নহীন বাধ্যতার, আর অনেক সম্মানের। অথবা, লোক-দেখানো তোয়াজ, মায়াবী ব্যবহার।
ঠাম্মা ডাকতো,রানী বলে। এই শব্দটায় কেমন যেনো দাম্ভিকতার ছোঁয়া। শব্দটায় তখনও কোন পেঁয়াজ, রসুন সাঁতলানো আঁতলেমি ফোড়ন পড়েনি। তখনও পাভেল, ইভান আর তাতিয়ানা গেরস্ত ঘরের নাম হয়ে ওঠেনি। তখনও রদ্ধশ্বাসে পড়ে ফেলতাম, “ইস্পাত”, "মাদার"। রানী নামেই হয়তো অলক্ষ্যে হেসেছিলেন সেই সুপার ন্যাচারাল পাওয়ার।
যখন বৃষ্টি হতো। লুকিয়ে যেতাম ছাদে, ভিজতাম ইচ্ছেমত। আর তারপর হ্যাচ্চো হ্যাচ্চো। সারা সিঁড়ি ভিজিয়ে নেমে আসা নীচে। আবার কখনো রোদ পোহানো ছাদের রেলিং ধরা মন। আবার কখনো মেঘবিলাসি ঠাকুরঘরের হাজার আলোর প্রদীপ। ঘরের কোনের খাঁজে খাঁজে চড়ুই পাখির পালক। আমি বড্ডো সেকেলে। হাতের রেখায়, পথ চিনেছি গহীন বনের তুমুল ঝড়ের। আলতা পাতা-কাজল লতা চোখের কোণের জল। তুলসি মঞ্চ, আকাশ প্রদীপ, হীমেল হাওয়ার রাত।একলা ছাদের, একলা দুপুর, একলা মনের সাথ।
বড্ডো অনিয়মে চলি আমি। নিয়ম মেনে চলার নামতাই মুখস্থ নেই আমার। বদলে যাওয়া, নিয়মগুলোয় বদলে নেওয়া সহজ? তবুও রোজ বদলাই আমি, দিনের সাথে রাতের হাওয়া চাদরে রোজ বদলাই। রেখে দিই ঠোঁটের কোণে আলতো হাসির ছোঁয়া।
এইতো, শুধু এইটকুনই, ভুল নামতার সাথ। তবুও হাসতে পারি যখন তখন সন্ধ্যে কিংবা রাত। কখনও মেঘ পেরিয়ে আসতে মাস কয়েকের দেরি, মন খারাপের বাদলা দিনে বৃষ্টি বিলাস বাড়ি।
রিয়া চক্রবর্তী
Reviewed by Pd
on
নভেম্বর ২৫, ২০১৬
Rating:
Reviewed by Pd
on
নভেম্বর ২৫, ২০১৬
Rating:

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
সুচিন্তিত মতামত দিন