দীপুমালা

dipumala

অনেক দিন আগের কথা- তখন আমাদের ওখানে, মানে আমাদের শহরে বেবি টেক্সি বলে তিন চাকা ওয়ালা একটা যন্ত্র, যানবাহন মহা শব্দ করে রাস্তা দাবড়িয়ে, শব্দ দুষণ, বায়ু দুষন, করে বেড়াতো। একদিন আমি ওই দানবে চড়ে বসেছি, কি আর করা, উপায় নেই গোলাম হোসেন। ওই দানবের পিছনের সিটে তিন জন আর ড্রাইভারের পাশে দুই জন যাত্রী।  চলছে গাড়ি মহা শব্দ করে, নো সিগনাল, নো ভেঁপু, এ গাড়ির জন্য এসবের কোন প্রয়োজন নেই।  টাটা বাবাজি এ গাড়ি কবে তৈরী করেছিল আমার জানা নেই, তবে এর জান হল কই মাছের মতো, চলছে তো চলছেই আর থামা থামির কোন কারবার নেই। 

শহরের পথে আমাদের বেবি টেক্সি ছুটে চলছে, আমি চালকের পাশে বসেছি।  এই গাড়ির চালককে কি ড্রাইভার বলবো, নাকি ওস্তাদ বলবো, বুঝতে পারছি না।  তবে অনেকে এদের ওস্তাদ বলে ডাকে।  যা হোক গাড়ির চালকের গাড়ির সাথে সাথে তার মুখও সমানে ছুটে চলেছে। উনি রাস্তায় যেতে যেতে যখনই কোন মেয়ে মানুষকে দেখছেন আর তখনই বলে উঠছেন হায় আল্লাহ্ দেশটা গেল, যাহান্নাম এসে গেল, বেপর্দা মাতারি (মানে মহিলা) নিজে যাহান্নামে গেছে আর অন্যদেরও যাহান্নামে নিয়ে যাবে, এরা ঘর থেকে বের হয় কেন? ইত্যাদি যা তা বাজে বাজে গালাগালি করতে করতে গাড়ি চালাচ্ছেন। তার সব রাগ মহিলাদের উপর, আমি জানি না কেন? তার এতো রাগ।  যখনই সে মহিলাদেরকে রাস্তায় দেখছে তখনই আজে বাজে কথা বলা শুরু করছে। আমি বুঝার চেষ্টা করতে থাকলাম আর সেই সাথে আমি ওই লোকের আচরনে বিরক্ত হয়ে গেলাম।   এক সময় আমাদের গাড়ি নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে গেল।  সমস্ত যাত্রি ভাড়া মিটিয়ে যার যার গন্তব্যে চলে গেল, আমি ভাড়া মিটিয়ে দিতে দিতে ওই ড্রাইভারকে বললাম- আমারতো মনে হয় যদি মহিলারা খারাপ হয়; তাহলে তো এর জন্য পুরুষরাই দায়ি। লোকটা বললো- কি করে পুরুষরা দায়ি? আমি বললাম- একটা সত্য কথা বলবেন? বুকে হাত দিয়ে একটা সত্য কথা বলবেন? বলল, হ্যাঁ বলবো।  আমি বললাম- বুকে হাত দিয়া কন তো, আপনার বিয়ের আগে, আপনি কোন মেয়েকে নষ্ট করেন নাই? লোকটা নির্বাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো; কি আর করা, তারপর আমি সময় নষ্ট না করে চলে আসলাম। ফালতু সব লোকজন....  

এই কিছুদিন আগের কথা- এখন আমাদের শহরটা বেশ ঝলমলে হয়ে উঠেছে। এখন আর আগের মতো বেবি টেক্সি নাই, আগের মতো কি, ওই যানবাহনটা আর দেখাই যায় না। এখন শুরু হয়েছে বেটারি চালিত অটো রিক্সা বা ইজি বাইক, পা চালিত রিক্সা প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। অটো রিক্সার দৌড়াত্বে শহর এখন জ্যামের শহরে পরিনত হয়ে যাচ্ছে। তবে ঐ শব্দ আর বায়ু দুষণ নেই, এখন খুব সহজেই এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় চলাচল করা যায়।  রোজা রমজানের দিন, কিছু দিন বাদেই ঈদ আসছে, তাই সব দিকে সাজসাজ রব, কেনা-বেচার ধুম আর রাস্তা ভরা যানবাহন।  আমি সকাল সকাল গোপালগঞ্জ যাব বলে বাসা থেকে বের হয়েছি, বাইরে টুপটাপ বৃষ্টি পড়ছে, আমি আজ একটা ইজি বাইকে চড়ে বসলাম- পুরো পথে আর কোন যাত্রি ছিল না; আমাদের ইজি বাইকের সামনে দিয়ে একটা ইজি বাইক ক্রস করে চলে গেল আমি তাকিয়ে দেখলাম- ঐ বাইকে একজন সুন্দরী মহিলা চুপচাপ বসে আছে, সেলোয়ার কামিজ পরা মাথায় কাপড় দেয়া, মনে হল কোন সম্ভ্রান্ত পরিবারের মহিলা; এক ঝলক দেখলাম ছিমছাম, মার্জিত, সুন্দরী।  ড্রাইভারেরও চোখ এড়ালো না; ড্রাইভার ভাইজান খেকিয়ে উঠল- মাল একটা, যদি ..... পারতাম.......হতো, ইত্যাদি বাজে বাজে কথা অকপটে বলতে থাকলো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিয়ে যা আমার পক্ষে বলা সম্ভব না।  বলে রাখা দরকার, এই ড্রাইভারের বয়স একটু বেশিই হবে, ৫০-৫৫ হবে হয়তো। 

আমি দেখেছি যে বেশির ভাগ পুরুষরা যখন একটু বয়স হয়ে আসে তখন তাদের হুঁশ ফিরে আসে, আর তখন একটু ধর্মকর্ম নিয়ে মাতামাতি করে আর যতসব দোষ ফোস খুঁজে বের করতে থাকে।  মনে হয় সে একজন কলম্বাস, আমেরিকা আবিস্কার করে ফেলেছে। তার আবিস্কারটা হল- মহিলাদের কারণে সব ধর্মকর্ম শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাই সব মহিলাদেরকে পর্দা দিয়ে ঘরে বসে থাকতে হবে; যেন তাদের নখ, কান, পা, চোখ কিছুই দেখা না যায়।  কিন্তু পুরুষ, তার চোখ আছে, সে দেখবে; কান আছে, সে শুনবে; পা আছে, সে যেখানে ইচ্ছা যাবে; তার শিহরণ আছে, সে শিহরিত হবে।  আমি আমার নিজের বিবেকের কাছে প্রশ্ন করলাম ......................  

“তুমি মন্দের দ্বারা পরাজিত হইও না; কিন্তু উত্তমের দ্বারা মন্দকে পরাজিত কর।”



dipumala
পরিচিতি

দীপুমালা দীপুমালা Reviewed by Pd on আগস্ট ১৫, ২০১৫ Rating: 5

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সুচিন্তিত মতামত দিন

Blogger দ্বারা পরিচালিত.