পাঞ্চালী দত্ত



...তোকে সঙ্গ দিতে পারি, কিন্তু খবরদার খাওয়ার জন্য জোর করবি না । যতই কচি খুকি বলে লাফালাফি করি না কেন আজকাল পেটটা বড্ড বেইমানি করছে । সারাক্ষন তাকে সমঝে চলতে হয় । মেয়ে অলরেডি উল্টো পথে হাঁটা শুরু করে দিয়েছে । জাপটে ধরলাম ।
... আরে যাস কোথায় ? খেয়ে যা । এতদূর এলাম , ন্যাকামো হচ্ছে বুঝি ? 
...ঠিক আছে মা । অন্তত দু একটা খেয়ো । বুঝতে চেষ্টা কর , পার্টনার না থাকলে খেয়ে ঠিক মজা নেই ।
আজকালকার মেয়ে। সমীহ করে চলতে চলতে ... ঠ্যালা সামলাও । লতি বেটি বলে কথা । লতি তো নয় , সাক্ষাৎ কচু । ফুচকাওয়ালাটি বেশ পরিষ্কার , দেখতে শুনতে ভদ্র । বৈশেখের গরমে টুপটাপ ঘাম একটু আধটু যা ঝরছে ! ওই ঘাম না থাকলে  স্বাদ ঠিক জমে না  । তেঁতুল জল যে গামলায় রয়েছে, দেখলাম সেটা খোলা।  ঢাকনা নেই কেন জিজ্ঞেস করতে, কন্যাদেবী কটমট করে তাকালেন বার কয়েক আমার দিকে । ওহ, অপরাধ তো বটেই। আজকাল আশীর্বাদ অপরাধ সব গুলিয়ে খেয়েছি কি না! আলু মাখায় যখন ব্যস্ত ফুচুবাবু , এক জোড়া কপোত – কপোতী ... উহু , উহু ... স্বামী স্ত্রী ও হতে পারে ( ওই যে বললাম না আজকাল সবকিছু একটু কম বুঝি ) কায়দা মেরে শালপাতার বাটি নিয়ে দাঁড়িয়ে পরলেন । ভাবটা এমন ... ইশ , মাইরি আমার বরটা এখন থাকলে দেখিয়ে দিতাম ! তবে বাপু , মানে ইয়ে আর কি , শোনা কথা । বরের সঙ্গে ওই রোমান্স টোমান্স ব্যাপার গুলো  নাকি ঠিক জমে না ! ইতিমধ্যে গুটি গুটি পায়ে  বছর তিনেকের একটি মেয়ে হাজির মায়ের হাত ধরে । --- মা যত বোঝায় এতে ঝাল রয়েছে , মেয়ে ততই বলে ওটা নাকি মিষ্টি আলু । দাদ্ভাইএর সঙ্গে সে নাকি কবে একদিন খেয়েছিল ।

আলু মাখা শেষ । ফুচুবাবু আমাকে বাটি এগোতে প্রায় চেঁচিয়েই বললাম ,বাটির দরকার নেই । খাব তো একটা আর দুটো । মেয়ের ওখান থেকেই নিয়ে নেব । এবার ফুচুবাবু যেই না ফুচকা টি বাটিতে রেখেছে , ছোঁ মেরে সঙ্গেসঙ্গে  মুখে । কেসটা কি ? এদিকে গোটাটা মুখেও পুরতে পারছি না । একটা দাঁত ওয়েটিং লিস্ট এ রয়েছে যে !  ভেঙ্গেভুঙ্গে কোনমতে ফুচকাটি মুখে পুরলাম। ঝালের চোটে চোখের জলে নাকের জলে একাকার। ফুচুবাবু ত হেসেই ফেলল । দিদি , আপ কো দুসরা আলু দেঙ্গে । ওদিকে দেখি ধানিয়ালঙ্কা  মানে সেই পুচকু দিব্বি কাচুমকুচুম করে খেয়ে চলেছে । রাগের ঠেলায় বললাম --- আলু মে মুঝে কই দিক্কত নেহি । ... পাক্কা দশটা ফুচকা ততক্ষনে সাটিয়েছি । হটাত দেখি জোড়া কবুতর বাইকে উঠেও আবার নেমে পরলেন। তেনার ফাউটি নাকি বাকি রয়েছে । বাহ, বয়স তো আর কম নয় রে ছুড়ি । হিসেব করলাম , মা মেয়ে সমান সমান ফুচকা খেয়েছি। আজকাল অবশ্য আমি সবকিছুতেই মেয়ের সঙ্গে পাল্লা দেই । সেদিন তো মেয়ে বলেই ফেলল , তুমি বাবাকে মাঝেমাঝে ‘ বাবা’ বলে ডাক কেন গো ? ওটা কিন্তু শুধু আমার বাবা ...

আরে বাবা , তোর বাবা তোর ই থাকবে । মানে একটু আধটু শপিং টপিং ...বাবা বানাতে হয় । পরে বুঝবি । যাইহোক , পেটের কথা ভাবতে ভাবতে পার্স থেকে টাকা বের করলাম । ভাবছি এই কটা ফুচকা খাবার জন্য আবার হাজার দু এক না খসে ! নিজের ওপর থেকে ভরসা উঠে গেছে , মাইরি । মেয়ে তার ফাউ হাসিল করতেই আমরা এগিয়ে চললাম বড় রাস্তা ধরে । 

...আচ্ছা রে , জয়েন্ট এ খেলে বুঝি একটাই ফাউ মেলে ?
...ওহ , তোমার ফাউ টা যে রয়ে গেল মা । চল , খেয়ে আসবে ।
...মাথা খারাপ । বেচারা গরীব । কি দরকার অত ফাউ মাউ খাওয়ার ?
লোকটা ততক্ষনে আমার জন্য বানিয়ে ফেলেছে মাসালাদার ফুচকা । মুখে পুরে দাঁত সামলাতে সামলাতে যখন এগচ্ছি , দেখছিলাম কপোতের কোমর ধরে কপোতী বাইক এ বসে । যত সব আদিখ্যেতা !





পাঞ্চালী দত্ত পাঞ্চালী দত্ত Reviewed by Pd on মে ০৯, ২০১৫ Rating: 5

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সুচিন্তিত মতামত দিন

Blogger দ্বারা পরিচালিত.