সাঈদা মিমি






চেয়েছি, যুক্তা স্বগোতক্তি করলো । বয়োঃসন্ধিকালের প্রতিটি দিন যখন স্বপ্নেরা অপেক্ষা করতো ঘুমের জন্য! সেইসব পদ্যঘ্রাণের স্বপ্ন আমি দেখতাম, একটা বিচ্ছিন্ন দ্বীপ, পাহাড়চূঁড়ার মন্দির, অনেকটা অ্যাজটেক সভ্যতার মতন। একটা বলিষ্ঠ অবয়ব, ছাইরঙের চাদর জড়ানো আর আশ্চর্য ধোঁয়ার মেঘ, কোনদিন তোমার মুখটা আমার দেখা হয়নি । তুমি ডাকতে না, কিন্তু আমি অনুভব করতাম, আশ্চর্য এক আকুলতা নিয়ে আমাকে দেখছো, বাদামী চোখ, তামাটে অবয়ব । 

তারপর একদিন প্রেম এলো, বল্গাহীন কিংবা রূপকথার মত করে নয় । প্রেম উদ্বেল হয়েছিলো, কিছুদিন নেচেছিলো পার্কে, ক্যাম্পাসে, রেস্টুরেন্টে, একদিন তন্দ্রা এলো, নীরা, মহিমা, সোমা, আমি জেনে গেলাম এখানে কোন সম্পর্কের আঠা নেই, তুমি অনেকের । আরেক বিস্ময় ছিলো, স্বপ্ন সে আসতোই, অ্যাজটেক যুবক ,অপেক্ষা করতো আমার জন্য, কিন্তু আমি তো জানি না, কিভাবে ওখানে যাওয়া যায়! না ছিলো পথ না ইশারা । আমার খাওয়ার রুচি কমে এলো, মনোযোগ শূন্যে এসে ধুকে ধুকে শ্বাস নিতে থাকলো । আমি মৃত্যু চাইলাম, কিন্তু এসবের কিছুই হলো না । 

স্বপ্ন আসতে থাকলো এবং তুমি । কখনও চারণভূমিতে, কখনও মন্দিরের প্রার্থনা কক্ষে, উপত্যকার সব রঙে, অথচ তোমার মুখ দেখা হয় না, আর একখণ্ড কুয়াশা তোমাকে ঘিরেই থাকে । আমি কেবল তোমার চোখ দেখতে পাই, গভীর, চিন্তাশীল, কৌতুকপূর্ণ, বিষন্ন এবং বাদামী । এইসব গোপন সত্য আমাকে কোন পথ দেখালো না । একদিন আমি বিয়ের পিঁড়িতে বসলাম ।

যাক, এবার থিতু হবার পালা, জীবনের মোড় আরেক মাইলস্টোন ছুঁলো । এবার সে প্রেমের বৃষ্টিতে ভিজবে, অন্যরকম স্বপ্ন সাজাবে । কি বিস্ময়, বাসররাতে একই স্বপ্ন, ধূলোপথে সেই বিষন্ন যুবক, দিকভ্রান্ত হতাশ বিবর্ণ । আমার ঘুম ভেঙ্গে গেলো, পাশে নতুন বর ঘুমিয়ে আছে । কে তুমি? আমি মনে মনে চিৎকার করে উঠি। যদি অপেক্ষায় রয়েছো, তবে পথের ইঙ্গিত নেই কেনো? কোন সূত্র ধরে আমি তোমার কাছে যাবো? সেইরাত ভোর হলো, আরও অনেক রাত এবং সকাল, একদিন স্বপ্নটা অদৃশ্য হয়ে গেলো । 

প্রথমে ছেলে জন্মালো, তারপরেও ছেলে, এরপর একটি মেয়ে । আমি সংসারী হলাম, ঘরকে ভালোবাসলাম, বাচ্চাদের নিয়ে ব্যাস্ত হলাম । দেড়যুগ পর আমার স্বামী আরেকটা বিয়ে করলো । আমি এখন তাকে সঙ্গ দিতে পারছি না । এইপর্যন্ত বলে যুক্তা থেমে গেলো । আর একটা কথাও বললো না সে, কোন গোপন দীর্ঘশ্বাসও নয় ।

শেষ দুপুর, যুক্তা ঘুমিয়ে আছে । মেয়েটার বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর একা হয়ে পড়েছিলো সে । আবির এই সংসারের কেবল যোগানদাতা হয়ে সাপোর্ট দিয়ে গিয়েছিলো, দ্বিতীয় বিবাহ এই সমাজে বড় কোন বিষয় নয়, যদিও দূরত্ব থেকেই গেলো । মধ্যবয়সের একাকীত্ব তাকে ঘিরে ধরেছিলো, অস্বাভাবিক কিছু নয়। এই সময়গুলি ভয়াবহ অনিশ্চয়তার মধ্যে পার করেছে। তারপর ছেলেরা বিয়েশাদি করলো, তার ঘর আবার ভরে উঠলো।

এখন যুক্তা ঘুমাতে পারে, সেই দুপুরেও ঘুমিয়েছিলো, হঠাৎ মায়া সভ্যতা থেকে বেরিয়ে আসা এক দীর্ঘকায় তামাটে যুবক কুয়াশা ফুঁড়ে বেরিয়ে এলো । এই প্রথম সম্পূর্ণ তাকে দেখতে পেলো যুক্তা, এমনকি যাবার পথটাও । বড় ছেলের বৌ তখন প্ল্যান করছিলো, স্বামী কে আজ ক্যাণ্ডেল লাইট ডিনারে নিয়ে যাওয়ার জন্য পটাবে । ছোট ছেলের বৌয়ের শরীরটা ভালো লাগছে না, সে শ্বাশুড়ির পরামর্শ নেয়ার কথা ভাবছিলো । অবশ্য এসব থেকে বিযুক্ত হয়ে যাচ্ছিলো যুক্তা ক্রমশ, অবশেষে সে পথটা খুঁজে পেয়েছে; চুম্বক সময় সুড়ঙ্গ।

পরিচিতি  
সাঈদা মিমি সাঈদা মিমি Reviewed by Pd on মার্চ ২৬, ২০১৫ Rating: 5

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সুচিন্তিত মতামত দিন

Blogger দ্বারা পরিচালিত.