মনদরিয়ার পানসি ~
১।
সেদিন হঠাৎ সখ করে গেলাম ছোট ভাইয়ের স্কুলে......
স্কুলে গেলেই আমার মনটা যেন কেমন করে ওঠে......ইচ্ছে করে আবার ছুটে যাই ফেলে আসা সময়ে......passed time…:)
গিয়ে আবার কান ধরে দাঁড়িয়ে যাই বেঞ্চির ওপর......কিংবা স্যারের বেতের ভয়ে আবার স্কুল পালাই পেছনের দেয়াল পেরিয়ে......escape wall……হা হা হা…
অনেক সুধীজনকে বলতে শুনি আবার যদি ফিরে পেতাম সময়গুলো হেন করতাম তেন করতাম......বাবাও মাঝে মধ্যে বলেন আবার যদি ছোট হতে পারতাম কোমর কষে পড়ালেখা করতাম, তোর মত গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরতাম না......wind in body…!!
বড়ই আজিব প্রকৃতির উক্তি......গুণীজনরা যেকোন কিছু বললেই তা সুধীসমাজ জোরেসোরে জাপটে ধরে......যদি তিনি পেট ব্যথায় আক্রান্ত হয়ে বলে ওঠেন পেটের ভেতর ঘোৎ ঘোৎ শব্দ হচ্ছে......সাথে সাথে সুধীসমাজ হাতে তালি দিয়ে বলে উঠবেন......আহা !! জ্ঞানের কি অপার মহিমা......কি অপূর্ব শব্দবিন্যাস......পেটের ভিতরে বইছে তরঙ্গ লহরী......আর কি সুন্দর উপমা !! মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকতে হয় জ্ঞানীজনের ওই ঘোৎ ঘোৎ শব্দালংকারের দিকে......এহেন প্রশংসাবাণী শুনে গুণীজন নিজেই চুল ছিঁড়েন......কেন যে এই কথা বলতে গেলেন…!!
বাবা আমার জন্য গুণীজন……তাই তার উক্তি নিয়ে আমিও চিন্তায় পড়ে গেলাম……
মানুষের বড় স্বভাব গুরুত্বপূর্ণ মূহূর্তগুলিতে ঘাড় ফিরিয়ে দেখা...কেন জানি সে তখন সোজা তাকানোর চেয়ে ঘাড় ফিরিয়ে তাকানোতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে...
সেদিন একখানা মুভি দেখলাম নায়ক কান্না কান্না (এটা চেহারার একটা বিশেষ টাইপ...এসময় মুখের ভঙ্গি হতে হবে হ্যারিকেনের আগের আকাশের মতো...ঝড় হবে কি হবে না মার্কা...নায়িকাকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করার জন্য এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ...যত বেশি মুখ অন্ধকার করা যাবে সফলতার চান্স তত বেশি...নায়িকা খালি একবার চিরাচরিত স্বভাবে ঘাড় ফিরিয়ে তাকালেই হয়...হৃদয়ে হঠাৎ মোচড়জনিত বেদনায় আক্রান্ত হয়ে দিলওয়ালে দুলহানিয়া মার্কা হানড্রেড মিটার দৌড়ে ঠিক এসে নায়কের বুকে বুক মিলিয়ে হার্ট আ্যাটাক থেকে বাঁচার চেষ্টা করবে...কান্না কান্না মুখভঙ্গি তাই কাজের জিনিস...পরীক্ষা প্রার্থনীয়......examination wanting……হা হা হা......) মুখ করে রক্তাক্ত দাঁড়িয়ে আছে হাত বাড়িয়ে......stand raising hand…… সেই চিরাচরিত দৃশ্যপট দেখার আশায় ছিলাম...কিন্তু কোত্থেকে যেন বেরসিক পুলিশ এসে গুলি করে ভবলীলার সাথে সাথে মুভিটাও সাঙ্গ করে দিল......
এই স্বভাবের তাড়নাতেই মানুষ সহজভাবে চলমান জীবনের দিকে না তাকিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনের ফেলে আসা জীবনে তাকায়...আর সেই সাথে আফসোস করে পুরনো জীবনের...তাই বাবার মতো, সবার মতো আমি পেছনে ফিরতে চাই না...no want, see back……
পেছনে বারবার ফিরলে আমার ঘাড়ে ব্যথা হতে থাকে......মনে হয় কখন না জানি স্ক্রুর মতো মাথাটা টুক করে খুলে পড়ে যায়......তখন যেতে হবে মেকারের কাছে......আর সাত আসমানের ওপারে মেকারের কাছে যাওয়া সম্ভব না......তাই খালি খালি পিছে তাকিয়ে মাখা বনবন চক্কর না খাইয়ে বর্তমানকে নিয়ে থাকাই উত্তম......
তারপরও যদি মন খচখচ করে...গলা বাড়িয়ে ভবিষ্যত দেখার চেষ্টা কোরো......তবুও গলা ঘুরিয়ে পিছে তাকিয়ে মরাকান্না জুড়ে দিও না......
মরাকান্নায় ক্যালরি লস হয়......এবং ক্যালরি খুবই গুরুত্বপূর্ণ জিনিস......
২।
হঠাৎ করেই আছাড়টা খেলাম…একবারে সোজা ফ্ল্যাট……তবে এই ফ্ল্যাটের দরজা জানালা কিংবা বারান্দা কিছুই নেই……এবং অকস্মাৎ ফ্ল্যাটের মালিক হয়ে আমি কিছুমাত্র খুশি হতে পারলাম না……no happy…..
তার মূল কারণ আমি যেখানে ভূপাতিত হয়েছি সেখানে প্রচুর কাদা……আর কাদা থেকে বিকট বদখত গন্ধ আসছে...এসময় আমার প্রচুর আবেগ নিয়ে গাওয়া উচিত “ ও আমার দেশের মাটি তোমার পরে ঠেকাই মাথা ” ……head on your foot……:)
কিন্তু গলা দিয়ে কিছুতেই গান আনতে পারলাম না……মনে হচ্ছে মাথার ভেতর শিরা উপশিরা আর স্নায়ু ঘিলু সব জট পাকিয়ে গেছে……বুঝতে পারলাম জট খোলা অত্যাবশ্যক……আর জট খোলার জন্য বুদ্ধিমত্তার প্রয়োজন……কিন্তু আমার জানামতে আমার বুদ্ধি অতি স্বল্প…এবং পক্ষপাতহীন নির্বাচন হলে আমি বোকাদের রাজ্যের একটা গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট পেয়ে যেতাম……:)
এখন মোদ্দা কথা জট খোলা দরকার……কিন্তু যে আমি সুতোর জট লাগলে সেটা খুলতেই ভিমরি খাই সে আমি মাথার মত এত সফিসটিকেটেড জিনিসের জট খোলার রিস্ক কেমনে নিই !! গুণীজন বলেন যখন কোন কিছু বুঝতে পারা যায় না তখন নিজেকে বাদ দিয়ে ভাবতে হয়……কথাটা মনে আছে; কিন্তু এহেন গুরুত্বপূর্ণ কথা বলা গুণীজনের নামটা মনে পড়ছে না……অতএব বোঝা গেল মানুষের নামের চেয়ে তার রেখে যাওয়া কাজ বেশি ইমপর্ট্যান্ট…..সুতরাং নামে নয়, কাজেই মানুষের পরিচয় [ প্রমাণিত ]
গণিত পরীক্ষার খাতায় এই প্রমাণিত শব্দটা লিখার জন্য অংকের সাথে কুস্তি লড়তাম……boxing with math…. কোন সময় অংকের টাইসন মার্কা ঘুষি খেয়ে চিৎপটাং হতাম……কখনো ছলচাতুরীতে অংককে ল্যাং মেরে প্রমাণিত পর্যন্ত পৌছে যেতাম……ল্যাং বড় মজাদার জিনিস……খেতেও মজা দিতেও মজা……তবে হাড়ের জয়েন্ট না ভাঙলে হয়……:)
যেদিন প্রমাণিত পর্যন্ত পৌছুতে পারতাম সেদিন বড় আনন্দ হত……আজও সেই প্রকার আনন্দ হচ্ছে গুণীজন সংক্রান্ত প্রবাদ প্রমাণ করতে পেরে…… তবে গুণীজনের কথাটাও মান্য করা দরকার……নিজেকে বাদ দিয়ে চিন্তা করতে গেলে আগে দেশের চিন্তা করতে হয়……দেশ জাতি বড়ই গুরুত্বপূর্ণ……nation very important……দেশ চলে তার নাগরিকের উপর ভর করে……তবে নাগরিক মাঝে মধ্যে আছাড় খায়……আর সেই সাথে দেশও ধপাস করে পড়ে যায়……তাই যোগ্য নাগরিকের উপর ভর করে দেশের চলা উচিত……
অযোগ্য ব্যক্তির খপ্পরে পড়লে দেশকে কাদায় গড়াগড়ি হয়ে গাইতে হবে……“ ও আমার দেশের মাটি তোমার পড়ে ঠেকাই মাথা………”
অংকন নন্দী
Reviewed by Pd
on
আগস্ট ১৪, ২০১২
Rating:
Reviewed by Pd
on
আগস্ট ১৪, ২০১২
Rating:

রম্য হলেও নিজেদের না বলা কথা
উত্তরমুছুন