পার্থ ভট্টাচার্য

partha

“ত্যাগ জিনিসটা শূন্যতা নয়, তা অধিকারের পূর্ণতা।  নাবালক যখন সম্পত্তিতে পূর্ণ অধিকারী না হয় তখন সে দান বিক্রয় করতে পারে না--তখন তার কেবল ভোগের ক্ষুদ্র অধিকার থাকে ত্যাগের মহৎ অধিকার থাকে না।  আমরা যে অবস্থায় কেবল জমাতে পারি কিন্তু প্রাণ ধরে দিতে পারি নে সে অবস্থায় আমাদের সেই সঞ্চিত সামগ্রীর সম্বন্ধে আমাদের স্বাধীনতা থাকে না”। রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন।

বিপুল অবশ্য এতকথা পড়েনি।  মা মাঝে মাঝে শোনান।  কোথাকার কার উক্তি, দার্শনিক না নাট্যকার…মাথার ওপর দিয়ে চলে যায় বিপুলের।  হু হা করে কাট মারে ডেস্কটপে গেমস খেলতে।  বড়ো হচ্ছে ছেলেটা।  কবে যে বুঝতে শিখবে? বাবাকে মনে পড়ে না বিপুলের।  পড়ার কথাও নয়।  দু’বছরের ছিল তখন।  ব্রেকফেল করেছিল তমালের বাইকটার।

পিপিএফের টাকা ভালোই পেয়েছিলো অতসী।  কিন্তু টাকা দিয়ে কি এই অকুল পাথার পেরোন যায়? দাদাদের কাছে যাবে? সাহসে কুলিয়ে উঠতে পারেনি পুরনো সম্পর্কের অভিজ্ঞতায়।   মহীরূহের ছায়া নিয়ে এগিয়ে এসেছিলো বিমল, অতসীর দেওর।  ভ্যাগাবন্ড টাইপের ছেলেটি যে এভাবে আগলে রাখবে ভাইপো-বৌদিকে কেউ ভাবতেই পারেনি।  সেদিনের ২২ বছরের বিমল আজ ৩৫ বছরের যুবনেতা।  ঠিকাদারি ব্যবসায় অভূতপূর্ব সাফল্য সাহায্যই করেছিল ওকে রাজনৈতিক জগতে প্রভাব বিস্তারে। অথবা উল্টোটাও হতে পারে।  তবে নিজের ছায়াকেও কখনো সরতে দেয়নি ওদের ওপর থেকে। অসম্ভব ভালোবাসে ভাইপোকে। যতরাজ্যের আজে বাজে আবদার মিটিয়ে মিটিয়ে গোল্লায় পাঠাচ্ছে বিপুলটাকে।  রেগে ওঠে অতসী আজকাল।

মাধ্যমিক ভালোভাবেই পাশ করে গেল বিপুল।  দিনগোনে অতসী।  এখনো অকৃতদার বিমল।
-জীবনটাকেই নষ্ট করে দেবে এভাবে, আমাদের জন্য? বিয়ে করো তুমি।

শুধু হাসে।  হাজার চেষ্টাতেও রাজি করাতে পারেনি দেওরকে।  এবার শোনা যাচ্ছে পঞ্চায়েতে জেলা-সভাধিপতির টিকিট পেতে পারে বিপুল।   আসলে নিঃস্বার্থ, সৎ, অকৃতদার এই মানুষটিকে সবাই ভালোবাসে।  কম আত্মত্যাগ তো করেননি মানুষটি।

শুধু  অন্ধকারে অক্ষমতায় কুঁকড়ে যাওয়া অতসীর কান্নায় ভিঁজে যাওয়া বালিশগুলো সাক্ষী পাশবিক অত্যাচারের।  রাতের পর রাত। সময় গোনে ত্যাগ।  কবে পূর্ণ হবে আঠারো বছর।




পার্থ ভট্টাচার্য পার্থ ভট্টাচার্য Reviewed by Pd on অক্টোবর ০৬, ২০১৫ Rating: 5

1 টি মন্তব্য:

সুচিন্তিত মতামত দিন

Blogger দ্বারা পরিচালিত.